somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যি কারের দেশ প্রেমিক কারা?

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা ৮ ফাল্গুন অর্থ্যাৎ ভাষা শহীদ দিবস এলেই চেচিয়ে উঠি বাঙলা ভাষা বাঙলা ভাষা বলে। কিন্তু তার পরদিন আর কোন খবর থাকে না। অর্থ্যাৎ আমাদের চেচামেচি শুধু মাত্র একটি দিনের জন্য। আবার পহেলা বৈশাখ এলেই উঠে পড়ে লাগি বাঙালিপনা প্রকাশ করার জন্য। পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ি, রমনায় গিয়ে ইলিশ-পান্তা খাই। খুব করে বাঙালিপনা জাহির করি। কিন্তু পরদিন?
এ হচ্ছে আমাদের দেশ প্রেম। একে যদি আমরা মাতৃভাষা প্রেম, শেকড়ের টান বলি তাহলে কি এটা বলা খুব অপরাধ হবে যে আমরা কেবল একটি দিনের জন্য দেশকে ভালবাসি।
এবার আসল প্রশ্নে আসি। আমরা যারা বাঙলা সাহিত্যের উপর গবেষণা করি তারা জানি যে, বাঙলা ভাষার ইতিহাস রচয়িতাদের অধিকাংশই হিন্দু। অর্থ্যাৎ ১২০৪ সালে ইখতিয়ারুদ্দীনের হাতে পরাজিত লক্ষ্মণ সেনের উত্তরসূরী। তারা মধ্যযুগের বাঙলা সাহিত্যের অনগ্রসরতার জন্য মুসলমান শাসকদের দায়ী করেছে খুব করে। আমার কথার বাস্তবতা আপনারা বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসের কোন একটি বইয়ের মাত্র কয়েক পৃষ্ঠা হাতড়ালেই খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। তারা খুব করে মুসলমান শাসকদের উপর বিষোদগার করেছেন। আর আজকের মুসলমানের সন্তানেরাও কোন রূপ যাচাই বাচাই ছাড়াই ঐ ইতিহাসগুলো পড়ছে এবং নিজেদের মুসলমানিত্ব কে মনে মনে হেয় প্রতিপন্ন করছে। আর যারা এ ব্যাপারে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে চায় (আলেম সমাজ) তাদের কে স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী মনে করছে। আমি জানি তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে ঠিক, কিন্তু গবেষণাহীন ভুল ইতিহাস পড়ে বলেই এরা ভুলের মধ্যে রয়েছে। ঐ সব ভাইদের কাছে আমার প্রশ্ন আপনারা জানেন কি কাদের জন্য এ ভারত উপমহাদেশে বাঙলা ভাষা টিকে আছে? জানেন না । জানেন না বলেই আপনার সেই লক্ষ্মণ সেনের উত্তরসূরীদের কথার উপর অন্ধের মত এতটা নির্ভরশীল।
আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর হচ্ছে দেওবন্দপন্থী আলেম সমাজ। তারা যদি সেদিন এ ফতোয়া না দিতেন " ইংরেজি শিক্ষা মুসলমানদের জন্য হারাম" । তাহলে মুসলমানরা হিন্দুদের মত ইংরেজির প্রতি পঙ্গপালের মত ঝুকতো এবং দুনিয় থেকে বাঙলা ভাষা চিরতরে বিদায় নিত। অতএব এ কথা প্রমাণিত হল যে বাঙলা ভাষা পৃথিবীতে ওলামায়ে দেওবন্দর ফতোয়ার উপর নির্ভর করে মুসলমানদের মাধ্যমে টিকে আছে। কারণ হিন্দুরা ইংরেজদের থেকে ফায়দা হাসিলের জন্য ইংরেজি শিক্ষার প্রতি উইপোকার মত ঝুকে পড়েছিল আর মুসলমানরা দেওবন্দী আলেমদের ফতোয়ার কারণে এর থেকে বিরত রয়েছে। সেদিন এ ফতোয়া না দিলে ভাষা দিবসের জন্ম হতো না।


এর নজর দেই আজকের বাংলাদেশের পরিস্থির দিকে। আজকে বাংলাদেশের বাঙলা ভাষার দিবস টাকে সেই গোড়া থেকেই ইংরেজিতে পালন করা হচ্চে। এ লজ্জা রাখি কোথায়? ভাষার জন্য জীবন দিলাম অথচ সেই দিবস টিকে অন্য ভাষার তারিখে পালন করা হচ্ছে। কেন ঈদ, পূজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান কি আন্তর্জাতিক বিশ্বে পালিত হয় না? অথচ কি আশ্চর্য দেখুন, গ্রামের সেই অশিক্ষিত মহিলাটি ঠিকই বাঙলা তারিখ টিকে সরণ রাখে। আলেম সমাজের কথা না হয় বাদই দিলাম। কারণ এ আলেম সমাজ যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাঙলা ভাষা রক্ষার একমাত্র পতাকাবাহী সমাজ তাতে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কারন যারা ভদ্র? সমাজ হিসেবে পরিচিত তারা বাঙলা ভাষা বলা কে নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য হেয় মনে করে বিদায় তারা যতটা সম্ভব জোড়াতালি দিয়ে ইংরেজি বলার চেষ্টা করে। কিন্তু কোন আলেমকে আমি এমনটি করতে দেখিনি। যদি আলেম সমাজের অনেকে মাদ্রাসা শিক্ষা সমাপ্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত লেখা পড়া করে। তারা এমনটি না করার কারণ হচ্ছে মাতৃভাষা প্রীতি।

বাঙালিপনার ক্ষেত্রেও আলেম সমাজ এগিয়ে। বাংলার ঐতিহ্য হচ্ছে পাঞ্জাবি-পাজামা। যা ১০০% একমাত্র আলেম সমাজের মাঝেই দেখা যায়।

দেশপ্রেম বলতে গেলে বাংলাদেশের কোন রজনৈতিক দলের মধ্যেই দেখা যায় না। কারণ যারাই সরকার গঠন করে তারাই চুরি নিয়ে ব্যস্ত থাকে । দেশের কথা কেউ ভাবলে এতটা চুরি করতে পারে তা কোন বিবেকবান মানুষ সমর্থন করতে পারে না। ক্ষমতায় থাকতে চুরি-জালিয়াতি করে দেশকে পঙ্গু করে আর ক্ষমতায় না যেতে পারলে হরতাল, দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে দেশকে পঙ্গু করে। অথচ কোন আলেম সমাজ এমনটি করেও না এবং তা সমর্থনও করে না। আর সুশীল সমাজ নামে যারা পরিচিত তারাতো রাজনৈতিক নেতাদের চাইতেও খারাপ। রাজনৈতিক নেতা এবং তাদের চামচারা তো কিছু টাকা পয়সা খরচ করে সরল মনা জনগণকে ধোকা দেয়। আর সুশীল শ্রেণির শিকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের উচু তলার লোক পর্যন্ত। এরা সুযোগ সন্ধানী। সব সময় নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। "গায় মানে না আপনি মোড়ল" বাংলা সাহিত্যে এ প্রবাদটি বোধ হয় তাদের জন্যেই জন্ম হয়েছে। তারা সব কাজেই মোড়লীপনা করতে চায়। কেউ যদি তাদের মোড়লীপনা মানতে না চায় তখনই ঘটে যায় বিপত্তি। আদাজল খেয়ে নানা অজুহাতে কেচু খুড়তে নামে। ঘটনাক্রমে যদি কেচুর গর্তে সাপের গন্ধ পায়, তখন আর এদের কে খুজে পায় কে? এই হল বাংলাদেশের চরম বাস্তবতা। এটা কি কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষের কাম্য হতে পারে?
অথচ বাংলাদেশেই আরেকটি প্রজাতির লোক রয়েছে যারা সব সময়ই মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। সে সমাজটি হচ্ছে আলেম সমাজ। অথচ ঐসব লোভাতুর ভন্ডরা সব সময়ই সাধারণ মানুষদেরকে আলেম শ্রেণির কাছে ঘেষতে দেয় না নিজেদের বিভৎস চেহারা প্রকাশ হওয়ার ভয়ে। আর এ মনোভাব থেকেই অসাধু শ্রেণির লোকেরা সব সময় আলেম সমাজ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কান ভারি করে রাখতে চায়। সত্য হল সুর্যের মত। তাই আধার তাকে গ্রাস করতে পারে না।
ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আলেম সমাজের অবদান কোন ভাবেই অস্বীকার করার জো নেই। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আলেম সমাজ এ দেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে ছায়া হয়ে আছে, থাকবেও। অতএব ষড়যন্ত্র করে মৌলভীর লেবাস পরিয়ে যতই জঙ্গি ট্রাজেডির জন্ম দেয়া হোক না কেন, আলেম সমাজের উত্থান কিছুতেই রোধ করা যাবে না।
সাবধান! হে ষড়যন্ত্রকারীরা, আগুন নিয়ে খেলা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

মোট কথা সার্বিক দিক বিবেচনা করলে একজন বিবেকবান মানুষকে এ কথাই মানতে হবে যে, সত্যিকারের দেশপ্রেমিক সমাজ হচ্ছে একমাত্র আলেম সমাজ।


লেখক পরিচিতিঃ
কবি ও কথাসাহিত্যিক
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×