somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রেন্ধুমি( বন্ধুহীন কিংবা বন্ধুত্বের গল্প )

২১ শে জুন, ২০১২ সকাল ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় এক বন্ধু ছিলো - শুভ্রদ্বিপ । আমি আর সে এক সাথে বসতাম। একসাথে টিফিন করতাম। আমি আরেকটা আকাজ করতাম। খালি ওরে মারতাম ! দমাদম কিল , চটাচট থাপ্পর ! এই কাজ কেনো করতাম সেটা এখন ভাবলে অবাক হই ! সে মুখ বুঝে সহ্য করতো !
তবুও আমরা ছিলাম ২ বন্ধু। পুরো ক্লাস ,পুরো স্কুলের মধ্যে . . . . . . .
এখন ওর সাথে দেখা হলেও শুধু হাই হ্যালো হয় ! আজব ! বন্ধুত্ব কোন গাঙে ভাইসস্যা গেলো !
হয়তো আমার ছোটবেলার মনটাও গাঙে দা ভাইসস্যা গেছে !

মৃদুল ছিলো আমার হাইস্কুল লাইফের একমাত্র বন্ধু . . . . .
যদিও ওর সাথে বসতাম , হাসি মজা করতাম কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা পাকাপোক্ত ছিলো না। কারণটা পড়াশোনা . . . .
আমি ফার্স্ট , ও সেকেন্ড . . . কিংবা ও ফার্স্ট , আমি সেকেন্ড ।
মনের মিল ছিলো না। তবুও আমরা বন্ধু ছিলাম . কারণ মনের মিল - অমিল এইসব জিনিস ঐ সময় বুঝতাম কিনা সন্দেহ আছে ! আর বুঝতাম না বলেই শান্তিতে ছিলাম ।
এখন ও এক জায়গায় আর আমি আরেক জায়গায় . . . .
দেখা হলে আড্ডা , হাসাহাসি হয় । কিন্তু আমি এখন মিশতে পারি না ওর সাথে ।
কারণ এখন মনের মিল-অমিল খুব ভালো ভাবে বুঝি আর এটাই ঝামেলা লাগাইসে ! আর ওর একটা সমস্যা আছে - নিজের কথা ভুল হলেও সেটা সে মানবে না। একটা প্রভুত্ব করার ইচ্ছা ওর ব্যবহারে বিদ্যমান । এটা আমার চরম বিরক্ত লাগে !
মৃদুলও হারায় গেলো মনের অতল কুয়ায় !
তবুও ওদের আমি বন্ধু বলি । ওরা আমার সাথে সারাজীবন থাকলেই ভালো হতো ।

স্কুল লাইফের শেষ দুই বছর অন্য একটা স্কুলে ট্রান্সফার হই । সেখানে সব অচেনা । অচেনা আধুনিক সেই স্কুলে ভর্তি না হলেই ভাল করতাম । খুব ভয় লাগতো ! স্কুলকে , টিচারদের , ওদের সাথে কথা বলতেও ভয় পেতাম ! সে ভয় কাটেনি আমার ! এখনও মনে গেঁড়ে আছে । তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এখনও ভোগ করছি । অথচ আগে অনেক ভালো ছিলাম । স্কুলে নিয়মিত যেতাম , সবার প্রিয়পাত্র ছিলাম । ভয় ছিল না মোটেও । কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল ! বুঝতে পারলাম খুব দেরীতে !
এমন এক স্কুলে বন্ধু হবার প্রশ্নই আসে না ! খুব কম মিশতাম সবার সাথে । আমার রোল ছিল ১ । সেখান থেকে আমি চলে এলাম ৯ তে !! গোল্ডেন না পাবার পেছনে এই স্কুলের প্রতি ভয় আর বন্ধুহীনতা চরম ইন্ধন জুগিয়েছে !

থাক ! কোত্থেকে কই চলে এলাম ! বন্ধুর কথা বলতে বলতে আমার ব্যর্থতার কথা শুরু করলাম দেখি ! আমার কথা থাক ।

কলেজ লাইফটা কে এখন ভালো মনে হয় । ক্লাস করতাম না কলেজে । সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোচিঙে কোচিঙে দৌড়াতাম । ওহ ! এখন খুব মিস করি সময়টাকে ! ঐ সময়ও ভালো লাগতো ! স্কুলের অনেকে কলেজেও একসাথে ছিল । ওদের সাথে কথা বার্তা , পড়াশোনার আলাপ হতো । কিন্তু বন্ধুত্ব হয়নি । কারণ – ক্লাস নাইন থেকে আমি পুরোপুরি বদলে গেলাম একগাদা ভয় নিয়ে আর তখন থেকেই সবার হাসির পাত্র হলাম । সেই ধারা কলেজ লাইফেও বজায় ছিল । সবার আমাকে হাসাহাসি মনে পড়লে এখনও কষ্ট পাই । ভাবি – বন্ধু আরেক বন্ধুকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে ? পরে জানলাম , আসলে আমার বন্ধু ছিল না কেউ । শুভ্রদ্বিপ আর মৃদুলের সাথে সম্পর্ক শেষ হবার সাথে সাথেই বন্ধুত্বের স্বাদ হারালাম ।
কলেজে উঠে কি যেন হলো ! পড়াশোনা করতাম না ! এমন না যে আমি আড্ডাবাজ ছিলাম বা আছি । তবুও পড়া জমিয়ে রাখতাম । ফলাফল – ইন্টারে আমার ভালো ছাত্রের সিল উঠে গেলো এ প্লাস না পেয়ে ।

এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি । ২ বছর হতে চলল। কেউ না ! ভার্সিটির কেউ বন্ধু নয় সেটা খুব ভালোমতই বুঝে গেছি । প্রথম সেমিস্টার থেকে পলাশের সাথে থেকেছি । ওকে একঅর্থে বন্ধু বলা যায় । কিন্তু ভার্সিটির ভেতরে , জীবনের বন্ধু নয় । ভার্সিটি বন্ধ হলেই আমাদের আর যোগাযোগ নেই । ওর সাথে আমি অনেকটা ফ্রি থাকি , অনেক ফাইজলামি করি , অনেক কথাই বলি । কিন্তু মনের পাগলামি বলার মত বন্ধু ও নয় । তবুও নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো । ও আছে বলেই হয়তো অনেক অনেক বেশি খারাপ নেই আমি ।

এবার একটু অন্য দিকে মোড় নেই । ইন্টারে ম্যাথ ব্যাচে পরিচয় ইসমীর সাথে । এখন একই ভার্সিটিতে পড়ি – ও EEE তে আছে । একই ভার্সিটিতে পড়লেও দেখা হয়না বেশি । ক্লাস টাইম , ডিপার্টমেন্ট সব ভিন্ন । বাসে চলতি পথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় । ওকে এখন আমি একজন বন্ধু মানি , চমৎকার ছেলে ! অনেক পাগলামি ভরা কথাই ওর সাথে শেয়ার করি । আর ও আমার জন্য লাকী । ওকে পেলেই মন ভালো হয়ে যায় । হয়তো পথ শেষ হলেই আমাদের কথা ফুরায় । কিন্তু ভালোলাগার রেশ রয়ে যায় । যে বন্ধু মন ভালো কর দিতে পারে , যাকে কিছু কথা বলতে একবারও ভাবতে হয়না সেই তো বন্ধু ! তাই সঙ্গত কারণেই ওকে বলতে পারি – লাভ ইউ দোস্তো !

মিথুনদা আমার মামাতো ভাই । ওর সাথে হঠাৎ করে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো । প্রতিবছর মামার বাড়ি যেতাম কিন্তু আমাদের মাঝে কথা হত খুবি কম ! এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে – এবার আমি অনেক বাঁধা সত্ত্বেও একঘণ্টার জন্য মামারবাড়ি গেলাম শুধু দাদার সাথে দেখা করবো বলে ! দাদা আমার বন্ধু ।

বাবা মা আমাদের অনেক বড় বন্ধু কিন্তু এই কথা কেউ এমনকি আমি নিজেও এখন স্বীকার করবো না । কারণ আমরাই ওদের বন্ধু বলে ভাবিনা । বাবা মা কে বন্ধু বানাতে পারলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যেত আর অনেক দুশ্চিন্তা থেকেও মুক্তি পেতাম ! কিন্তু সে এখন আর হবার নয় ।যাক সে কথা ।

বন্ধুত্ব ! ভার্চুয়াল লাইফ থেকে রিয়েল লাইফে প্রবেশ করেছে কিছু বন্ধু । এমনটা যে হবে সেটা আমি ১ বছর আগেও চিন্তা করিনি ! ফেসবুকে এমন কয়েকজনকে পেয়েছি যাদের আমি এখন আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু , ভাই মানি !

কিভাবে হলো সে কাহিনি থাক । সে কাহিনি আমিও বলতে পারব না ভালমত ।
নাফিজ আমার ছোট । ৩-৪ বছরের । ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু এখনও পর্যন্ত । চুটকিতে মন ভালো হয়ে যায় ওর সাথে কথা বললে । আগে ফেসবুকে কথা হত আর এখন ফোনে , এসএমএসে । আমরা কেউ কাউকে দেখিনি । সম্পর্কটা আমাদের চমৎকার ! হাসিমজা , কথাবার্তা ...... চলতে থাকে । আমি চাইব ওর সাথে আমার এই বন্ধুত্ব যেন শেষ না হয় । কি হবে সেটা জানিনা । অপ্রত্যাশিত অনেক কিছুই হয় ! সেগুলোর জন্য তৈরি হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ।
ইভান দা আমাদের ভার্সিটি থেকে গ্রেজুয়েশন করেছে। দাদা আমাকে নিজের ভাই মানে । আমিও দাদাকে ভাই বলেই জানি । ওর সাথেও আমার বন্ধুত্ব খুব ভালো । ইভানদা কেও দেখিনি ।
জুয়েল নামে একটা ছেলে আছে । ও একই সাথে আমার ছোটভাই , বন্ধু আর আমার কাছে একটা শিশুর মত । আমাকে দাদাভাই বলে ডাকে । দাদাভাই ডাকটা শুনলে আমার অন্যরকম অনুভূতি হয় ! আমি ওকে একটু আদরে রাখার চেষ্টা করি । ওর যেন মন খারাপ না হয় সে খেয়াল রাখতে আমার ইচ্ছা করে। ওর সাথেও মনের সম্পর্ক জুড়ে গেছে ।

এখন কথা হলো , নাফিজ , ইভানদা কিংবা জুয়েলের সাথে আমার দেখা হয়নি । তবুও আমরা বন্ধু , ভাই । কিন্তু দেখা হয়নি বলেই কি আমাদের বন্ধুত্ব এত সুন্দর ? এত গভীর ! ??? যদি তাই হয় , তবে আমি চাইবো আমাদের যেন কখনও দেখা না হয় ।দেখা হলে যদি আমাদের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে , তবে সে আমি চাইনা । আমরা এভাবেই ভালো আছি । দূর থেকে কাছাকাছি । যারা নিমেষেই আমার মন ভালো করে দিতে পারে । যারা সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে ! আমি তোদেরকে খুব ভালোবাসি । সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এই বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে । তোরা কি চাস সেটা জানিনা । কিন্ত সম্পর্কে ছেদ পড়লেও আমি তোদের ভুলতে পারব না ।

আমার জীবনের এইমুহূর্ত পর্যন্ত বন্ধুত্বের গল্প এটাই ।


*** এই পোস্টের শিরনামের ( বন্ধুহীন কিংবা বন্ধুত্বের গল্প ) অংশটুকু ঠিক করে দেয়ার জন্য সাইফুলহাসানসিপাত কে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা । ওর দেয়া শিরোনাম টা চমৎকার লেগেছে আমার কাছে !
:):):)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:১৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×