ছোট বেলায় এক বন্ধু ছিলো - শুভ্রদ্বিপ । আমি আর সে এক সাথে বসতাম। একসাথে টিফিন করতাম। আমি আরেকটা আকাজ করতাম। খালি ওরে মারতাম ! দমাদম কিল , চটাচট থাপ্পর ! এই কাজ কেনো করতাম সেটা এখন ভাবলে অবাক হই ! সে মুখ বুঝে সহ্য করতো !
তবুও আমরা ছিলাম ২ বন্ধু। পুরো ক্লাস ,পুরো স্কুলের মধ্যে . . . . . . .
এখন ওর সাথে দেখা হলেও শুধু হাই হ্যালো হয় ! আজব ! বন্ধুত্ব কোন গাঙে ভাইসস্যা গেলো !
হয়তো আমার ছোটবেলার মনটাও গাঙে দা ভাইসস্যা গেছে !
মৃদুল ছিলো আমার হাইস্কুল লাইফের একমাত্র বন্ধু . . . . .
যদিও ওর সাথে বসতাম , হাসি মজা করতাম কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা পাকাপোক্ত ছিলো না। কারণটা পড়াশোনা . . . .
আমি ফার্স্ট , ও সেকেন্ড . . . কিংবা ও ফার্স্ট , আমি সেকেন্ড ।
মনের মিল ছিলো না। তবুও আমরা বন্ধু ছিলাম . কারণ মনের মিল - অমিল এইসব জিনিস ঐ সময় বুঝতাম কিনা সন্দেহ আছে ! আর বুঝতাম না বলেই শান্তিতে ছিলাম ।
এখন ও এক জায়গায় আর আমি আরেক জায়গায় . . . .
দেখা হলে আড্ডা , হাসাহাসি হয় । কিন্তু আমি এখন মিশতে পারি না ওর সাথে ।
কারণ এখন মনের মিল-অমিল খুব ভালো ভাবে বুঝি আর এটাই ঝামেলা লাগাইসে ! আর ওর একটা সমস্যা আছে - নিজের কথা ভুল হলেও সেটা সে মানবে না। একটা প্রভুত্ব করার ইচ্ছা ওর ব্যবহারে বিদ্যমান । এটা আমার চরম বিরক্ত লাগে !
মৃদুলও হারায় গেলো মনের অতল কুয়ায় !
তবুও ওদের আমি বন্ধু বলি । ওরা আমার সাথে সারাজীবন থাকলেই ভালো হতো ।
স্কুল লাইফের শেষ দুই বছর অন্য একটা স্কুলে ট্রান্সফার হই । সেখানে সব অচেনা । অচেনা আধুনিক সেই স্কুলে ভর্তি না হলেই ভাল করতাম । খুব ভয় লাগতো ! স্কুলকে , টিচারদের , ওদের সাথে কথা বলতেও ভয় পেতাম ! সে ভয় কাটেনি আমার ! এখনও মনে গেঁড়ে আছে । তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এখনও ভোগ করছি । অথচ আগে অনেক ভালো ছিলাম । স্কুলে নিয়মিত যেতাম , সবার প্রিয়পাত্র ছিলাম । ভয় ছিল না মোটেও । কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল ! বুঝতে পারলাম খুব দেরীতে !
এমন এক স্কুলে বন্ধু হবার প্রশ্নই আসে না ! খুব কম মিশতাম সবার সাথে । আমার রোল ছিল ১ । সেখান থেকে আমি চলে এলাম ৯ তে !! গোল্ডেন না পাবার পেছনে এই স্কুলের প্রতি ভয় আর বন্ধুহীনতা চরম ইন্ধন জুগিয়েছে !
থাক ! কোত্থেকে কই চলে এলাম ! বন্ধুর কথা বলতে বলতে আমার ব্যর্থতার কথা শুরু করলাম দেখি ! আমার কথা থাক ।
কলেজ লাইফটা কে এখন ভালো মনে হয় । ক্লাস করতাম না কলেজে । সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোচিঙে কোচিঙে দৌড়াতাম । ওহ ! এখন খুব মিস করি সময়টাকে ! ঐ সময়ও ভালো লাগতো ! স্কুলের অনেকে কলেজেও একসাথে ছিল । ওদের সাথে কথা বার্তা , পড়াশোনার আলাপ হতো । কিন্তু বন্ধুত্ব হয়নি । কারণ – ক্লাস নাইন থেকে আমি পুরোপুরি বদলে গেলাম একগাদা ভয় নিয়ে আর তখন থেকেই সবার হাসির পাত্র হলাম । সেই ধারা কলেজ লাইফেও বজায় ছিল । সবার আমাকে হাসাহাসি মনে পড়লে এখনও কষ্ট পাই । ভাবি – বন্ধু আরেক বন্ধুকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে ? পরে জানলাম , আসলে আমার বন্ধু ছিল না কেউ । শুভ্রদ্বিপ আর মৃদুলের সাথে সম্পর্ক শেষ হবার সাথে সাথেই বন্ধুত্বের স্বাদ হারালাম ।
কলেজে উঠে কি যেন হলো ! পড়াশোনা করতাম না ! এমন না যে আমি আড্ডাবাজ ছিলাম বা আছি । তবুও পড়া জমিয়ে রাখতাম । ফলাফল – ইন্টারে আমার ভালো ছাত্রের সিল উঠে গেলো এ প্লাস না পেয়ে ।
এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি । ২ বছর হতে চলল। কেউ না ! ভার্সিটির কেউ বন্ধু নয় সেটা খুব ভালোমতই বুঝে গেছি । প্রথম সেমিস্টার থেকে পলাশের সাথে থেকেছি । ওকে একঅর্থে বন্ধু বলা যায় । কিন্তু ভার্সিটির ভেতরে , জীবনের বন্ধু নয় । ভার্সিটি বন্ধ হলেই আমাদের আর যোগাযোগ নেই । ওর সাথে আমি অনেকটা ফ্রি থাকি , অনেক ফাইজলামি করি , অনেক কথাই বলি । কিন্তু মনের পাগলামি বলার মত বন্ধু ও নয় । তবুও নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো । ও আছে বলেই হয়তো অনেক অনেক বেশি খারাপ নেই আমি ।
এবার একটু অন্য দিকে মোড় নেই । ইন্টারে ম্যাথ ব্যাচে পরিচয় ইসমীর সাথে । এখন একই ভার্সিটিতে পড়ি – ও EEE তে আছে । একই ভার্সিটিতে পড়লেও দেখা হয়না বেশি । ক্লাস টাইম , ডিপার্টমেন্ট সব ভিন্ন । বাসে চলতি পথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় । ওকে এখন আমি একজন বন্ধু মানি , চমৎকার ছেলে ! অনেক পাগলামি ভরা কথাই ওর সাথে শেয়ার করি । আর ও আমার জন্য লাকী । ওকে পেলেই মন ভালো হয়ে যায় । হয়তো পথ শেষ হলেই আমাদের কথা ফুরায় । কিন্তু ভালোলাগার রেশ রয়ে যায় । যে বন্ধু মন ভালো কর দিতে পারে , যাকে কিছু কথা বলতে একবারও ভাবতে হয়না সেই তো বন্ধু ! তাই সঙ্গত কারণেই ওকে বলতে পারি – লাভ ইউ দোস্তো !
মিথুনদা আমার মামাতো ভাই । ওর সাথে হঠাৎ করে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলো । প্রতিবছর মামার বাড়ি যেতাম কিন্তু আমাদের মাঝে কথা হত খুবি কম ! এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে – এবার আমি অনেক বাঁধা সত্ত্বেও একঘণ্টার জন্য মামারবাড়ি গেলাম শুধু দাদার সাথে দেখা করবো বলে ! দাদা আমার বন্ধু ।
বাবা মা আমাদের অনেক বড় বন্ধু কিন্তু এই কথা কেউ এমনকি আমি নিজেও এখন স্বীকার করবো না । কারণ আমরাই ওদের বন্ধু বলে ভাবিনা । বাবা মা কে বন্ধু বানাতে পারলে অনেক কাজ সহজ হয়ে যেত আর অনেক দুশ্চিন্তা থেকেও মুক্তি পেতাম ! কিন্তু সে এখন আর হবার নয় ।যাক সে কথা ।
বন্ধুত্ব ! ভার্চুয়াল লাইফ থেকে রিয়েল লাইফে প্রবেশ করেছে কিছু বন্ধু । এমনটা যে হবে সেটা আমি ১ বছর আগেও চিন্তা করিনি ! ফেসবুকে এমন কয়েকজনকে পেয়েছি যাদের আমি এখন আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু , ভাই মানি !
কিভাবে হলো সে কাহিনি থাক । সে কাহিনি আমিও বলতে পারব না ভালমত ।
নাফিজ আমার ছোট । ৩-৪ বছরের । ও আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু এখনও পর্যন্ত । চুটকিতে মন ভালো হয়ে যায় ওর সাথে কথা বললে । আগে ফেসবুকে কথা হত আর এখন ফোনে , এসএমএসে । আমরা কেউ কাউকে দেখিনি । সম্পর্কটা আমাদের চমৎকার ! হাসিমজা , কথাবার্তা ...... চলতে থাকে । আমি চাইব ওর সাথে আমার এই বন্ধুত্ব যেন শেষ না হয় । কি হবে সেটা জানিনা । অপ্রত্যাশিত অনেক কিছুই হয় ! সেগুলোর জন্য তৈরি হয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই ।
ইভান দা আমাদের ভার্সিটি থেকে গ্রেজুয়েশন করেছে। দাদা আমাকে নিজের ভাই মানে । আমিও দাদাকে ভাই বলেই জানি । ওর সাথেও আমার বন্ধুত্ব খুব ভালো । ইভানদা কেও দেখিনি ।
জুয়েল নামে একটা ছেলে আছে । ও একই সাথে আমার ছোটভাই , বন্ধু আর আমার কাছে একটা শিশুর মত । আমাকে দাদাভাই বলে ডাকে । দাদাভাই ডাকটা শুনলে আমার অন্যরকম অনুভূতি হয় ! আমি ওকে একটু আদরে রাখার চেষ্টা করি । ওর যেন মন খারাপ না হয় সে খেয়াল রাখতে আমার ইচ্ছা করে। ওর সাথেও মনের সম্পর্ক জুড়ে গেছে ।
এখন কথা হলো , নাফিজ , ইভানদা কিংবা জুয়েলের সাথে আমার দেখা হয়নি । তবুও আমরা বন্ধু , ভাই । কিন্তু দেখা হয়নি বলেই কি আমাদের বন্ধুত্ব এত সুন্দর ? এত গভীর ! ??? যদি তাই হয় , তবে আমি চাইবো আমাদের যেন কখনও দেখা না হয় ।দেখা হলে যদি আমাদের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে , তবে সে আমি চাইনা । আমরা এভাবেই ভালো আছি । দূর থেকে কাছাকাছি । যারা নিমেষেই আমার মন ভালো করে দিতে পারে । যারা সব সম্পর্কের ঊর্ধ্বে ! আমি তোদেরকে খুব ভালোবাসি । সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এই বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে । তোরা কি চাস সেটা জানিনা । কিন্ত সম্পর্কে ছেদ পড়লেও আমি তোদের ভুলতে পারব না ।
আমার জীবনের এইমুহূর্ত পর্যন্ত বন্ধুত্বের গল্প এটাই ।
*** এই পোস্টের শিরনামের ( বন্ধুহীন কিংবা বন্ধুত্বের গল্প ) অংশটুকু ঠিক করে দেয়ার জন্য সাইফুলহাসানসিপাত কে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা । ওর দেয়া শিরোনাম টা চমৎকার লেগেছে আমার কাছে !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১২ রাত ৮:১৫