somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প নয় সত্যি

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উত্তুরে হাওয়াটা সবে ধরে এসেছে,ফাগুনের জানান দিচ্ছিল বাহির বাড়ীর উঠোনের বেগুনী জারুল ফুলের ঝাড়। এলাকার সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি জামিল শেখের বাড়ীতে আজ হালকা উৎসব আমেজ। ভিতর বাড়ীর উঠোন থেকে বাটনা বাটার শব্দ আসছে ক্রমাগত, বাড়ীর কর্ত্রীর রান্নার হাতযশ, সারা বাড়ীময় ছড়ানো সুঘ্রান ঘোষনা করে যাচ্ছে যেন। বাহির বাড়ির উঠোনে বড় মেয়ের ঘরের নাতি আরাফ আর তার সব থেকে ছোট ছেলে রোমেল খেলা করছে কাঠাল গাছের ছায়ায়, মামা ভাগনে প্রায় সমবয়সী। ঝরে পড়া সুপারি খোলে আদরের ভাগনেকে বসিয়ে সাত বছর বয়সি মামা অপর প্রান্ত ধরে টেনে নিয়ে গাড়ী গাড়ী খেলছে। আর তাতে মজা পেয়ে খলখল করে হাসছে ভাগ্নে।

জামিল শেখের তিন ছেলে তিন মেয়ে। বড় মেয়েকেই শুধু বিয়ে দিয়েছেন, দিয়েছেন না বলে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলা যায়। ঘটকের পীড়া পিড়ীতে মাত্র তের বছরের মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়েছে, বলাই বাহুল্য পাত্র হিসেবে ছেলেটি বেশ ভাল এবং দক্ষিনাঞ্চলের এক বনেদি ঘরের। সেই জামাই এখন ব্যাংকের বড় অফিসার। তাদেরই সন্তান আরাফ। অনেক সাধনার ধন এই আরাফ! তিন তিনটি মৃত সন্তান জন্মের পর আরাফের জন্ম তাও বিয়ের দশ বছর পর, তাই আদরটা একটু বেশী রকমের। মেয়েকে অন্ধের মত ভালবাসেন শেখ সাহেব,তাইতো মেয়ের বিয়ের চৌদ্দ বছর হওয়া সত্বেও নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। জামাইয়ের অফিস ফার্মগেটে, এখান থেকে যাতায়াতে বেশ সুবিধা হয়। অন্য দুই মেয়ে স্কুল কলেজে পড়ে। বড় ছেলেটা পারিবারিক ব্যাবসায় হাত লাগিয়েছে, মেজো ছেলে সবেমাত্র পড়ালেখার পাট চুকিয়েছে।

বাড়ির এমন উৎসব মুখর পরিবেশের মাঝেও কোথাও একটা চাপা টেনশন কাজ করছিলো যা শেখ সাহেবকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তিনি ভিতর বাড়ির খোলা উঠোন লাগোয়া বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে গভীর ভাবনায় ডুবে আছেন। কারন তার মেঝো মেয়ে রাত্রি। এই মেয়েটি তার মায়ের মতই অত্যন্ত রুপবতী হয়েছে। চাদের আলোর সাথে একটু খানি হলুদ মিশিয়ে যেন বানানো হয়েছে তার গায়ের রঙ। হঠাৎ করেই পাগলামি শুরু করে মেয়েটা। বলে ঘরের জানালায় কে নাকি ছুরি হাতে বসে থাকে,তাকে মারার জন্য এক্ষুনি নাকি নেমে আসবে! মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙ্গলে দেখে অপরিচিত কোন মানুষ তার পাশে বসে আছে আবার একটু পরে দেখে কেউ নাই। আশে পাশে সবাই এক বাক্যে বলল জ্বীনের কারবার! সুন্দরী মেয়েদের জ্বীনে ধরে এ আর নতুন কি! ডাক্তার,কবিরাজ কিছুই আর বাকি রাখলেন না শেখ সাহেব। কিন্তু অবস্থার বিশেষ উন্নতি হল না। অবশেষে এলাকারই এক বিশেষ ব্যাক্তির খবর পাওয়া গেলো যে কিনা সাত সাতটি পরীকে অর্থাৎ সাতটি জ্বীনকে বশ করে রেখেছেন! এদের দিয়ে তিনি মানুষের চিকিৎসা করেন।

দুপুর নাগাদ বাড়ীর গেটের সামনে শেখ সাহেবের ক্রিম রঙ্গা ফিয়াট গাড়ী থেকে মাঝ বয়সী একজন ভদ্রলোক সহ মেঝো ছেলেকে নামতে দেখা গেলো। দুপুরের এলাহি ভোজের পর বাড়ির সবচেয়ে দক্ষিণের ঘরটায় সেই ভদ্রলোক আসন পেতে বসলেন।পুরো ঘর অন্ধকার করা হয়েছে। ঠিক পেছনেই হাতির ঝিল থেকে আসা উদ্দাম হাওয়া জানালার কপাটে হালকা আঘাত করে বার বার ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইছে যেন। কিন্তু না রাত্রি সহ দু চার জন মুরুব্বী ছাড়া সেখানে আর কারো প্রবেশের অনুমতি নেই। মূল দরজায় লক দেয়া নেই কেবল ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে নির্দেশ মত,একটুকু ফাক আর তার উপর ভারী পর্দা। নানান রিতী নিতী, আচার পালনের পর ঘরটা এক সময় বেশ ভারী বোধ হয়,কারা যেন এসেছে ঘরে! হালকা শন শন বাতাসে ভারী পর্দাটা ঈষৎ দুলছে। অন্ধকারেরও একটা আলো থাকে,সেই অতি আবছা আলোয় দীর্ঘকায়া সাদা পোষাক পরিহিতা কজন ঘরময় গোল গোল হয়ে ঘুরছে আর ঘুরছে,বাতাস কেটে কেটে তাদের চলা,যেন কোন ব্রতে নিমগ্ন।দীর্ঘ অতি দীর্ঘ তাদের চুল বাতাসে উড়ছে।

বাড়ীর ছোটরা বসে নেই তারা ঠিক টের পেয়ে গেছে বাড়ীতে কিছু একটা হচ্ছে আর তা তাদেরকে দেখতেই হবে! বিশেষ করে আরাফ দেখতে শান্তটি হলেও ভিতরে ভিতরে দারুন চঞ্চল। দরজায় পাহাড়া বসা ছোট খালামনির চোখ ফাকি দিয়ে সে ঠিক ডুকে গেলো ওই বিশেষ ঘরে। হঠাৎ আলো থেকে অন্ধকারে এসে তার চোখ আধারের তীব্রতায় ধাধিয়ে উঠলো,কোন কিছু ঠাওর করতে না পেরে অবলম্বনের জন্য সে হাত বাড়িয়ে দিল সামনে। কি যেন একটা হাতে এসে লাগলো।আর অমনি সেটাকে জোরে আকড়ে ধরলো।সাথে সাথে অন্ধকার ফুড়ে ভারী রাগী একটি মেয়েলি গলার আওয়াজ শোনা গেলো,"কে রে আমার চুল ধরে টেনেছে"।সবাই আসন্ন বিপদের সম্ভাবনা টের পেলো।এরা রেগে গেলে খুব ভয়ংকর হয়ে যায়, চরম কোন ক্ষতি এমন কি প্রান নাশ ও করতে পারে! আরাফের বুদ্ধিমতী ছোট খালা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো-

- এ আমার ভাগনে একদম ছোট মানুষতো বুঝতে পারেনি,ভুল করেছে ক্ষমা করে দিন।

তারপর কবিরাজ সাহেবের অনুনয়ের পর তিনি শান্ত হলেন। বললেন
- ছোট মানুষ বলে ছেড়ে দিলাম নয়তো!!!

খুব সন্তর্পনে শেখ সাহেব স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন,কত বড় ফাড়া থেকে যে আজ বেচেছেন! মেয়ের অসুখ সারাতে গিয়ে কলিজার টুকরা নাতিটাকে হারাতে বসেছিলেন! শোকরানা নামাযের নিয়্যত করে ফেলেন তখনি।

রাত্রি তারপর কিছু দিন ভালো থাকে কিন্তু পুরোপুরি সেরে উঠে না। এই যান্ত্রনা গুলো তাকে বইতে হয় আরো অনেক গুলো বছর। কথিত আছে শেখ সাহেবের মৃত্যুর অনেক দিন পর ঐ দুষ্টু জ্বীনকে বোতলে বন্দী করা হয় তারপর গেড়ে ফেলা হয় মাটিতে। তাই সাবধান কখনও মাটি খুড়ে বোতল পেলে ছিপি খুলতে যাবেন না যেন। মানুষের জ্বালায় যেখানে বাচা যায় না সেখানে আবার জ্বীনের উপদ্রব!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×