সেদিন সন্ধ্যায় বর অফিস থেকে ফিরে বললো আজ একজন তোমায় খুজেছে!! আমি বেশ অবাক হলাম কারণ ফ্রান্সে এসেছি বছর ঘুরেনি এখনো,কে আমাকে আবার খুজবে!! অবশেষে তিনি রহস্য খোলাসা করলেন,খুজেছে বাসের সহযাত্রীনি কোন এক কৃষ্ণকলি তরুনী। এখানে বাস ট্রেন মোটামুটি বেশ টাইম মেইনটেইন করে চলে তাই অফিসগামী অন্য যাত্রীদের সাথে দেখা হয়ে যায় প্রায়ই। সেনেগালের অরিজিন ফরাসি এই তরুনীর সাথেও দেখা হয় যেমন প্রায়ই। আমাকে ওই দিন বাসে না দেখে মেয়েটি নাকি জিজ্ঞেস করেছে --
--তোমার বোন আজকে আসেনি?
বোন শুনে হাসতে হাসতে আমার আধমরা অবস্থা। বর নাকি রাগত স্বরে বলেছে,
কে বলল তোমাকে সে আমার বোন?
--আরে তোমাদের চেহারায়তো দারুন মিল। তোমার বোন খুব জলি।ফরাসিতে জলি মানে সুন্দর(কথা বাড়ানোর জন্য পাম মারা আরকি!!)
সে আমার বোন না বউ !
মেয়ে আকাশ থেকে পড়ে নাকি বলেছে,
--কি বল? ওতো ছোট একটা মেয়ে! বয়স উনিশের বেশী হবে না।
এই পর্যায়ে ওই মেয়ের উপর খুশী না হয়ে আর পারলাম না। বাবা বেচে থাকো আর উনিশই ভেবো সব সময়!! আহা গেবন বড়ই মধুময়!! জী বুযিয়াছি ইহাও রাম পাম!!
তারপর থেকে বর বাসায় ফিরলেই জিজ্ঞেস করি, কিগো তোমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে আজ দেখা হলো?
তিনিও মধুর হাসি দিয়ে বলেন,আরে কি যে বল,বউ থাকতে গার্লফ্রেন্ড হতে যাবে কোন দুঃখে! মেয়ে আমাকে বারি মেরে দেখলো আমি সিংগেল না ম্যারিড!
দুই দিন পরে আবার তরুনীর সাথে তার দেখা, এবার ফিরতি ট্রেনে। মেয়ে নাকি জিজ্ঞেস করেছে,
--তোমার বোন কই?
(কওতো দেখি কেমন লাগে--এটা বরের ডায়ালগ,আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই) আরে তোমারে না বলছি ও আমার বোন না বউ।
--ওহ মনেই থাকে না,সরি। তুমি কি পাকিস্তানি?
নাহ বাংলাদেশী
-- তোমার গায়ের রঙ দেখে ভাবছিলাম পাকিস্তানি। তুমি কোন দিকে থাকো?
হপিটালের দিকে। তুমি?
--প্লাতো। আগে সিটিতেই ছিলাম,কাজের জায়গাটাও ছিল একদম পাশে। কিন্তু কিছু দিন হলো এই শহরে। রোজ এখান থেকেই অফিস করি।
এই উলটো দিকে আসা কেন? কেনইবা এত কষ্ট করছো?
-- আমি আসলে একজনকে খুজছি? শুনেছি সে এই শহরে থাকে তাই এখানে বাসা নেয়া।
কে সে?
-- এক পাকিস্তানিকে বিয়ে করেছিলাম। বছর তিনেক সংসারও করেছিলাম।খুব ভালবাসতো আমায়। তখনো বুঝিনি সে আমাকে বিয়ে করেছিল এখানে বৈধ ভাবে থাকার কাগজের জন্য। কাগজ পাবার পরই সে বদলে গেল। আমাকে ডাইভোর্স দিয়ে পাকিস্তান চলে গেল। ফিরে এলো দেশ থেকে নতুন বিয়ে করা বউ নিয়ে। এই শহরেই থাকে। ভাবলাম তুমি হয়তো চেনো তাকে,তোমরা হয়তো একই দেশের!!
নাহ চিনি না।
মেয়েটার গল্প শোনার পর রহস্য পরিষ্কার হলো,বুঝলাম কেন আমার বরের সাথে এই যেচে পরিচিত হওয়া ! বোকা মেয়েটার জন্য মনটাও কষ্টে মুচড়ে উঠলো! মেয়ে গুলা সব জায়গাতেই বোকা দেখি! মনে মনে বললাম,"ও বোকা মেয়ে তুমি কার জন্য এই কষ্ট করে মরছো?যে তোমাকে তিনটি বছর শুধু ব্যবহার করেছে ! তোমাকে ছেড়ে ঠিকই দেশ থেকে বাবা মার পছন্দ করা মেয়ে বিয়ে করে এনে এখানে সুখে সংসার করছে! ও বোকা মেয়ে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো? কি পাবে তুমি তাকে খুজে! তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আর কি হবে? এই চরম ভাবে প্রতারিত হবার শাস্তি হলো তোমার ভীষণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো ও ভাল থাকা।
আগে সাদা ফরাসি মেয়েগুলোর সাথে পাকিরা এমন করতো এখন সাদারা সর্তক হয়ে গেছে! তাই এখন বেছে নিয়েছে ফ্রান্সের আফ্রিকান কলোনি গুলো থেকে আসা কালো মেয়েগুলোকে। কলোনি ছিল বলে সহজেই ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেয়ে যায় কালোরা। জানতাম বিদেশীদের কাছে প্রেম বিয়ে ডাল ভাত তবু এই মেয়েটার এমন পাগলামী দেখে কষ্টে গলাটা ভার হয়ে এলো ভাবলাম তার সাথে দেখা হলে বলবো মেয়ে তুমি আজ থেকে আমার বন্ধু! তুমি শুধু ভাল থাকো। ঐ ভন্ড চিটার গুলোর জন্য আর কষ্ট পেয়ো না। তুমি যদি শাস্তি নাও দাও প্রকৃতি ঠিক ঠিক প্রতিশোধ নেবে দেখে নিও। কিছু শাস্তি চোখে দেখা যায় আর কিছু দেখা যায়না।