চার দেয়ালের শহুরে জীবনে ব্যাস্ত টেবিলে, হুটহাট ম্যাসেজ মনিটরের স্ক্রীনের কোনায়।মনে হয় এই এক কোনাতেই এক পশলা বৃষ্টি ঝরছে!!
---এইযে ছেলে যাবে নাকি আজ পদ্মার চরে,শুনেছি বালিহাস উড়ে সেখানে!!ছইওয়ালা নৌকায় বসে বাদাম আর চা খাওয়ার সুযোগ থাকছে।
-কি যে বল আমি নিজেই বালিহাস হয়ে গেছি।কাজের চাপে কান দিয়ে ধোয়া বেরুচ্ছে!! এক ঘন্টা পরে মিটিং, প্রেজেন্টেশন আছে,এখনো কাজ সব রেডি হয়নি।
---এইটা কিছু হলো!কানের সাথে নাক দিয়ে ধোয়া বের হলে দেখতে আরো জম্পেস হতো!!একদম কার্টুন ছবির রাগী ষাড়ের মতো,এক কাজ করি একটা লাল কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে যাই তোমার সামনে!হি হি হি!!ওকে মিস্টার বিজি,আমি তবে যাই।
-হা হা হা বুলের মেটাডর হয়ে দাঁড়িয়ে যাও সামনে,এক কাজ কর লাল জামদানী পড়ে এসো,খোপায় কৃষ্ণচূড়া,লাল কাচের চূড়ি আর কপালে লাল সূর্য। মেয়ে,তুমি আছো আনন্দে আর দুষ্টুমিতে!তা আজ বুঝি কাধে কবি ভর করেছে তাই এত প্রকৃতিতে যাবার তাড়া!!তুমি নক দিলে আমারো হা হা হি হি শুরু হয়ে যায়।আর একটু থাকো না আমার স্ক্রীনের কোনায়,কাজের ফাকে তুমি হলে এক ঝলক শীতল বাতাস,প্রশান্তি দাও। আর এই, আমি বুঝি ষাড়?জানো কত মেয়ে পাগল আমার জন্য!! হুহ
---তাতো বটেই!!হ্যান্ডসাম ষাড় বলে কথা!একটু প্রেসার পড়লেই নাকি কান দিয়ে ধোয়া বের হয়!আচ্ছা এভাবে কেন লুকিয়ে থাকো মনপিঞ্জীরায়?কি আনন্দ পাও নিজেকে কষ্ট দিয়ে?এই যে কাজ করো একগাদা টাকা পাও,সত্যিই কি সুখ পাও?পরিবারকে সুখী করে সুখ পাও জানি কিন্তু আত্মাকে যে কষ্ট দিচ্ছ দিনের পর দিন তার কি হবে!!তার ডাক কি শুনতে পাও না?সে যে ভীষণ কাদে একটু সুখের আশায়!এই এসোতো হাত ধরো,চলো আকাশ দেখি। আজ না হয় হুড খুলে লাগাম ছাড়া রিকশায় ঘুরি ঘন্টা দুয়েক। সব অপূর্ণ চাওয়া পূরণ করি।জানো, খুব ইচ্ছে ওয়ারীর ঐ বলদা গার্ডেনে ভাসমান বিশালাকার পদ্মপাতা দেখি,রুপকথার মতো তাতে পা ফেলে ফেলে সারা পুকুরময় ঘুরি। তারপর বিউটি বোর্ডিং এ বসে লেবুচা খাই আর পুরনো জানালা দিয়ে চেয়ে চেয়ে ঘ্রান নেই পুরনো দিনের।তারপর তোমার সেই আবিষ্কার করা জায়গাটায় যাবো।যেখানে সন্ধ্যায় জোনাক উড়ে,নয়নতারা ফোটে,সেখানে পুকুর ঘাটে পা ডুবিয়ে বসে হাসনুহেনার মদিরতায় ডুবে যাবো,নিশুত আধারে গাছগাছালির আবছায়ায় হাত ধরে হাটবো,একটুও ভয় পাবোনা। সাথে যে তুমি থাকবে!!একটা দিন না হয় বিদায় নিলে কাজ থেকে,সমাজের চোখ রাঙ্গানীকে আজ না হয় থোরাই কেয়ার করলে!!
-আর কি ইচ্ছে করে এই মহিলা মেটাডরের বলা যাবে?
---ইচ্ছে করে টাংগুয়ার হাওরে যাই।ডিংগী নৌকায় বসে সারা হাওর জুড়ে ফুটে থাকা লাল শাপলা দেখি সেখানে জল ফড়িং উড়ে!ফুলের রেনুতে গড়াগড়ি খায় হলুদ কালো ভ্রমরা,বিকেলে ফিরবো হাত ভর্তি কচুরিপানার ফুল নিয়ে।নীলগিরীর ঐ মেঘদল দেখবো পাখির চোখে,মেঘের রাজ্যে সাতার কাটবো, সাংগু নদীতে ভাসবো বাশের ভেলায় সারা দিনমান!!তারপর পাহাড়ি মাচাঙ্গ ঘরের খোলা বারান্দায় শুয়ে অগুনিত তারা দেখবো রাতভোর।তোমাকে নিয়ে যাবো আমার গ্রামের বাড়ী,সেখানে সান বাধানো ঘাট,হরিতকী আর গাব গাছের আলোছায়া খেলা করে জলে,সবুজ জলে পা ডুবিয়ে জলে চেয়ে থাকায় কিযে শান্তি না গেলে বুঝবে না।
-কি শোনালে! দিলেতো মনটা কেমন করে!! ঘুমিয়ে থাকা আনন্দময় আমিটাকে দিলেতো জাগিয়ে!!জানো কত তৃষ্ণা ভিতরে পাললিক শিলার মত স্তরে স্তরে জমেছে বহুকাল!! মনে পড়ে না শেষ কবে আকাশ দেখেছি উদাস চোখে,এককালে কত অজস্র সময় কাটিয়েছি মেঘে ভেসে ভেসে,দেখতাম মেঘের পরে মেঘের জমে উঠা,শেষ কবে হেটেছি খালি পায়ে ঘাসের উপর মনে নেই। ভুলেই গেছি বেগুনী সিম ফুলে ভোরের শিশির কিভাবে জমে থাকে।শেষ কবে পাগলের মতো হেসেছি হা হা করে,আমার ফুসফুস ভরে গিয়েছিল বৃষ্টিস্নাত বিকেলের শুদ্ধ বাতাসে,শেষ কবে রাত জেগে জোছনায় ভিজেছি মনে পড়েনা।বৃষ্টি ভেজা দমকা বাতাসের মত এক ঝটকায় যেন সব মনে করিয়ে দিলে।সত্যিই ইচ্ছে করছে আবারো অপরাহ্নের আলোয় হেলান দিয়ে বসি কৈশর আমি।কথা দিচ্ছি যদি আবার সুযোগ পাই তোমাকে চিনে নিতে একটুও ভুল হবে না।দুজনে ইচ্ছে ঘুড়ি নিয়ে নাটাই হাতে ঐ প্রান্তরে সারাদিন উড়ে বেড়াবো।পূরণ করবো না পাওয়া সব গুলো সাধ। এমন বৃষ্টি ভেজা বেলী ফুলের মতো মেয়ে আমি আর কই পাবো!নীল ডানার প্রজাপতি মেয়ে আবার ঠিক এমনি করে জীবনে এসো,কৈশরেই চলে এসো কেমন,কেউকে আর ভাগে দিবনা মন একদম,কথা দিচ্ছি ভীষণ!!
---আমরা কেবল কথা দেয়ার এক অলীক স্বান্তনার জালে নিজেদের জড়িয়ে রাখি।কথাটা আসলে কাকে দেই,নিজেকে নাকি আর কেউকে?আর কি ফেরা হয় আমাদের!!খুব ভাল করে জানি এই ছোট ছোট চাওয়া গুলো কখনো পূরণ হবার নয়!অথচ পূরণ হয়ে যায় বাড়ী,গাড়ী,উপরে উঠার সংগ্রাম!!!লেখা হয় না কেবল রোদে ভিজে শালুক তোলার গল্পের,সুর দেয়া হয়না মুখে মুখে রচিত সেই জলজোছনা কবিতার।পাতাদের কত শত কাব্য নীরবেই ঝরে যায়।ভাল থেকো বুল।মেটাডররা বুলের আঘাতে আহত হয়েই ফেরে এটাই তার নিয়তি!!