বাসা কিছুটা দূরে হবার কারনে ক্লাসের জন্য আগে ভাগেই বের হই। সময় মেনে ট্রেনে চেপে মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে যাই প্যারিসের মার্কাদে নামক জায়গায়। তারপর উঁচু নিচু পথ পেরিয়ে একটা সময় ক্লাসের সামনে। প্রতিদিন প্রায় ত্রিশ চল্লিশ মিনিট আগে পৌঁছাই।এই আগে আসার আরো একটা কারন হলো ট্রেন গুলো একটা নির্দিষ্ট সময় মেনে চলে যা আমার ক্লাশের সময়ের সাথে ঠিক মেলে না। বলে নেই আমি একটা কোর্স করছি। এই সময়টা উল্টোদিকের এক খোলামেলা ফরাসি রেস্টুরেন্টে বসে সময় কাটাই। চোখ বুলাই খাতার পাতায়, পাশ ঘেষে কুকুর নিয়ে হেটে যায় যোয়ান,বুড়োর দল। তাদের বাহারী কুকুর দেখি আর তাদের একাকীত্বের কথা ভাবি!
তাদের কুকুরের সাজ গোজের কথা না বললেই নয়। মালিকেরা শত শত ইউরো ঢালেন কুকুরের স্টাইলিং এ।ফুটপাত ধরে হাটলে নজর কাড়ে পোষা প্রানীদের পার্লার! ছোট ছোট কুকুর গুলো বেশ কিউট,রোমশ শরীরে ঢাকা,কুই কুই করে রোমের ফাক গলে কালো চোখে চেয়ে থাকে,গুটি গুটি পায়ে দৌড়ে যায় মালিকের পাশে। আবার কত গুলো আছে বাঘের মত বিশালাকার,দেখলেই ভয় জাগে। বুল ডগ বলে আরেক জাত দেখি, ছোট খাটো, মুখটা বড় গোলগাল,চেহারায় অনেক ভাজ আর ভাব কি! যেন এই দিন দুনিয়ার উপর মহা বিরক্ত সে। কুকুর গুলোকে এরা সন্তানের মতোই লালন করে।
আজো তেমনি বসে ছিলাম রেস্টুরেন্টে। হঠাৎ শুনি,"বুঁজো শাহমিন"! চেয়ে দেখি কোর্স ইন্সট্রাকটর ফিলিপ তার প্রিয় কুকুরকে নিয়ে হাটতে বেরিয়েছে। সৌজন্য মূলক আলাপ শেষে জানালো তার কুকুরকেও যেন বুঁজো(ফরাসি ভাষায় হ্যালো) বলি। আড় চোখে চেয়ে দেখি সেও উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার দিকে এটেনশন দিচ্ছি না দেখে খেক খেক করে উঠলো। বাধ্য হয়ে বুঁজো বললাম। ফিলিপকে বললাম,
ওর নাম কি?,
মায়া!!(মনে মনে ভাবলাম, উরেব্বাস!! কি লুমান্টিক নাম কুকুরের!!)
"হি ইজ কিউট",
ফিলিপ হেসে বললো,"সী ইজ কিউট"।
রাতে বাসায় এসে হাজব্যন্ডকে বললাম,
জানো বেচারা ফিলিপ চিরকুমার বুড়ো একজন মানুষ,কুকুর নিয়ে অবসর কাটে। দেখা হলে তার কুকুরকে আবার বুঁজোও বলতে হয়।
(তিনি হাসতে হাসতে বললেন) আরে তুমি জানো না,এখানকার কুকুরদের বুঁজো না বললে এরা মারাত্মক মাইন্ড করে,খেক খেক শুরু করে দেয়!!
তাইতো দেখলাম আজ।
বিচিত্র এই জগত! মানুষে মানুষে যেখানে এত হানাহানি, সেখানে আবার কুকুর কিনা আশা করে তাকে যেন হাই হ্যালো বলা হয়!!