somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাভ লক ব্রীজ

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে একটা ব্রীজের গল্প বলবো। বেশ কয়েক বছর আগে প্রথম আলো পত্রিকার মাধ্যমে এই ব্রীজের কথা প্রথম জেনেছিলাম। সেই থেকেই তাকে দেখবার একটা গোপন ইচ্ছার বীজ মনের ইচ্ছে ভূমিতে রোপিত হয়েছিল। তো সেখানে ফরাসিদের পাগলামিপণার এক নিদর্শন হিসেবে ব্রীজটাকে তুলে ধরা হয়েছিল। ব্রীজ খানা ফ্রান্সের প্যারিস শহরে এবং সীন নদীর উপরে অবস্থিত। সৌভাগ্যক্রমে গেলো সপ্তাহে ইচ্ছে খানা পরম করুনাময় পূরন করেছেন। যদিও ব্রীজের চেহারা পালটে গেছে বেশ অনেকটাই।


এবার আসল কথায় আসি,কেন এই ব্রীজ নিয়ে এত মাতামাতি। কারন তামাম দুনিয়ার রোমান্টিক যুগলরা এসে এই ব্রীজের রেলিং এ তালা ঝুলান। না না হুদাই ঝুলান না, এই আজাইরা পয়সা খরচের পিছনে একটা সেই রকম উদ্দেশ্য আছে বৈকি,যদিও অনেকের কাছে তা পাগলামীপণার নামান্তর মাত্র। প্রথমে তালার গায়ে নিজেদের নামের প্রথম অক্ষর লিখেন, কেউ কেউ লাভ ম্যাসেজ লিখেন তারপর লক করেন ব্রীজের গ্রীলে আর ফাইনালি চাবি খানি সীন নদীতে ছুড়ে মারেন। তারা মনে করেন এতে তাদের ভালোবাসাও লক হলো মানে চিরস্থায়ী হলো আজীবনের জন্য। এই কর্ম সাধিত করতে দুনিয়ার তাবৎ টুরিস্টরা এখানে জমা হয়। তো বুঝতেই পারছেন সারা ব্রীজ জুড়ে অসংখ্য অসংখ্য তালা ঝুলে আছে! সে এক দেখার মতো জিনিস।


এইবার ব্রীজের ইতিহাস ধরে একটু টান দেই। জনাব নেপোলিয়ান সাহেবের আমলে প্যারিসের "পন্ট দা আর্টস" নামক স্থানে ১৮০২-১৮০৪ সালে পথচারীদের জন্য প্রথম এই ব্রীজ তৈরী হয়েছিল। নয় আর্চের তৈরী এই ব্রীজই প্যারিসের প্রথম লোহার ব্রীজ যা যুক্ত করেছে institute da France এবং the central square of the Palais du Louvre কে। কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে পর্যবেক্ষনে দেখা গেল ব্রীজে বেশ কিছু ত্রূটি তৈরী হয়েছে যার জন্য দায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের বোমা বিস্ফোরন এবং নৌযান গুলোর একাধিক আঘাত। তাই ১৯৮১-১৯৮৪ সালে সংস্কার করা হয় বর্তমান ব্রীজ। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের আন্ডারে নেয়া হয় "পন্ট দা আর্টস" এলাকাকে।


সংস্কারের পর থেকেই ভালোবাসার ঝামেলা লাগা শুরু হয়। ২০০৮ থেকে টুরিস্টরা এই ব্রীজে তালা দেয়া শুরু করে আর ধীরে ধীরে নাম হয়ে যায় "লাভ লক ব্রীজ"। ২০১৪ তে এসে পুরো ব্রীজ তালায় ঢেকে যায়। প্রায় ৭লক্ষ তালা ইতিমধ্যে আটকানো হয়েছে। যার ওজন গিয়ে দাঁড়ায় ৪৫ টন যা বিশটি হাতীর ওজনের সমান। জায়গা না পেয়ে তখন তালার উপর তালা দেয়া হচ্ছিল। এই অতি ওজনের কারনে ইতোমধ্যে ব্রীজের একটি প্যানেল ক্ষতিগ্রস্তও হয়। বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ ২০১৫তে এই তালা অপসারন করা শুরু করে। আর ক্যাম্পেইন করা শুরু করে "লাভ উইদাউট লক" আর "তালার বদলে সেলফি তোল"।


আমিতো ভেবেছিলাম এত্ত এত্ত তালা একসাথে দেখবো,দারুন ব্যাপার হবে। সেই রকম ব্রীজতো খুজেই পাচ্ছিলাম না,পুরো এলাকাটায় অনেক গুলো ব্রীজ। সব গুলো ব্রীজ দেখি একদম ফকফকা। শেষে একটা ব্রীজে দেখলাম বেশ মোটা গ্রীল লাগানো,তার উপর আবার গ্লাস বসানো,বুঝলাম এটাই সেই ব্রীজ, নো চান্স ফর তালা দেয়া। কোথাও যেন পড়েছিলাম তালা অপসারনের খবর,শিওর ছিলাম না, মনের কোনে ক্ষীণ আশা ঘাপটি দিয়ে বসে ছিল তালা দেখবো বলে! ব্রীজে ঢুকার মুখে আমার আশা কিঞ্চিত পূরণ হলো। সেখানে ব্রীজ সংলগ্ন পার্কের গেটে অতিশয় রোমান্টিক কিছু টুরিস্ট তালা ঝুলায়ছেন। ভাগ্যিস তালা কিনি নাই,বের হবার মুখে লাইফ পার্টনার অবশ্য বলতেছিল তালা কেনার কথা!!!!


ঐতিহাসিক এই লোকেশন বেশ সুন্দর, ঘুরে আসতে পারেন প্রিয় জনকে সাথে নিয়ে। সম্পূর্ণ এলাকাটাই তৈরী হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে। নদীর পাড়ে বিনোদনের সব ব্যবস্থা আছে, মানুষ শুয়ে বসে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাচ্ছে। চাইলে রিভার ক্রজ রাইড নিতে পারেন। কিছু ক্রজ দেখলাম পুরোটাই রেস্টুরেন্ট। পছন্দের খাবার খেতে খেতে ভালোবাসার মানুষের সাথে নদী দেখার মজা নিশ্চয়ই আলাদা হবার কথা।

ছবি গুগল থেকে এবং আমার তোলা





লাভ লক ব্রীজের বর্তমান অবস্থা

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:০৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×