somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময় কেটে যায় তার নিয়মে। কোন বাধাই মানে না। ছোটকালে যখন কেউ জিজ্ঞেস করত "বড় হয়ে কি হবে?" কখনো জবাব দিতাম না। কেন যেন মনে হত, আমি কখনো বড় হতে পারব না। সেই আমি আজ অনেক বড় হয়েছি। প্রবেশ করেছি জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়ে।

একজন মানুষের সম্পূর্ণ জীবনে এত বিচিত্র সব ঘটনা ঘটে, যা কল্পনাকেও হার মানায়। কোন কিছুই যেন থেমে থাকে না। ধীরে ধীরে খুব আপন মানুষগুলো দূরে সরে যেতে থাকে। এক সময় খুব অবাক হয়ে একটি নির্মম সত্য আবিস্কার করতে হয় - মানুষ আসলে খুব একা।

এতটা বছর পার করে এসে মনে পড়ছে সেই সব বন্ধুদের কথা, যারা আজ আমার পাশে নেই।

স্কুল লাইফ টা পার করেছি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে। এমন একটি জায়গা, যারা ছিল এখানে তাদের সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে আছে এই কলেজ।

ক্লাস সেভেন পর্যন্ত ছিলাম কুদরত-ই-খুদা হাউজে। তারপর লালন-শাহ হাউজ। মনে পড়ছে - সুমিত, রনি, ম্উদুদ, সুমন, লূৎফল হায়দার সুমন,আরাফাত...আরো কত নাম। আমার আর রনির বেড ছিল পাশাপাশি। "কফি হাউজ" গানটা দুজনেরই খুব প্রিয় ছিল। আমরা একসাথে গান গাইতাম আর বলতাম "আচ্ছা, আজ থেকে ১০ বছর পরে আমরা কে কোথায় থাকব জানি না, তখন কি মনে থাকবে সবার কথা?" রনি আজ অস্ট্রেলিয়ায়। জানি না, কেমন আছে?

সুমিত ক্লাস এইটে ছিল আমার পাশের বেডে। আমরা অনেক জাতীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে একসাথে অনেক পুরস্কার এনেছি কলেজের জন্য। ভার্সিটিতেও একসাথে ছিলাম। একদিন শুনি সুমিত আর নেই। মৃত্যুর কিছুদিন আগে ও মাজার নিয়ে ইন্টারেস্টেট ছিল। তাই গিয়েছিল লালনের মাজারে। কে বা কারা যেন ওকে মেরে ফেলেছে। পারিনি মানতে। ওর নিজস্ব ব্যান্ড ছিল। আজো যেন কানে বাজে - ২০০৫ এর পহেলা বৈশাখে ওর গাওয়া "মেলায় যাই রে"। পুরো মাঠ ও মাতিয়ে রেখেছিল।

আরাফাত ছিল অন্য হাউজে। আমরা ক্লাস এইটে প্রতিদিন একসাথে বসতাম। ও হাউজ টিমের মেইন স্ট্রাইকার ছিল। ওদের হাউজের সাথে যখন খেলা পড়ত, তখন খুব সমস্যায় পড়তাম। চাইতাম যেন আমরা জিতি কিন্তু আরাফাত যেন গোল করে। আজ ও এখনো ডাক্তারি পড়ছে।

আরাফাত নাইনে অন্য সেকশনে যাওয়ায় আমি আর লূৎফর হায়দার সুমন একসাথে বসতাম। আমাকে সব সময় বলত কফি হাউজ গানটা লিখে দিতে কারণ,আমি পুরো গান পারতাম। দিব দিব করেও দেয়া হয়নি। রোল একসাথে হওয়ায় ওর সিট সব সময় আমার পিছনে পড়ত। একবার সমাজ পরীক্ষা ও ৪০ মিনিট এ দিয়ে আমাকে বারবার খোচাচ্ছিল কি লিখিস এত বলে। আমি বুঝতে পারছিলাম না ওর মত এত ভাল ছাত্রের পরীক্ষা এত তাড়াতাড়ি কিভাবে শেষ হয়? পরে ও দেখল প্রশ্নের ওপর পৃষ্ঠা ও উলটে দেখেনি। কত স্মৃতি। ও এখন টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং এ।

ম্উদুদ "মদা গ্রুপ" হেড। আমাদের হাউজে, আমাদের ব্যাচে যাদের নামের শুরু 'ম' দিয়ে শুরু তারা ছিল এই গ্রুপ এর অন্তর্ভুক্ত। নাম যাই হোক না কেন, ওরা সবাই বেশি চালাম ছিল। আজ শুনি ও নাকি অসুস্থ। স্ট্যামফোর্ড এ ও।

সুমন এখন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক। পড়ত আমার সাথে ইউনিভার্সিটিতে। ওর সাথেই কিছুটা যোগাযোগ আছে।

ঈসাধ আমার বাসা থেকে ২ কিমি দূরে থাকলেও দেখা হয় না প্রায় ৪/৫ বছর। ও ব্র্যাক এ।

মনে হয় আরেকটি বার ফিরে যাই সেই জীবনে। কারেন্ট চলে গেলে নাইট ক্লাস শেষে সিনিয়র ভাইদের সাথে গল্প করা, হাউজ ফাংশন এর আগের সেই রাতগুলো, হাউজ ছুটি হলে অনেকের ই যেতে না চাওয়া। কোন জটিলতা নেই, নির্মল সুন্দর একটি আনন্দের জীবন।

কত বন্ধু ছড়িয়ে আছে কত জায়গায়, রাস্তায় চলতে চলতে দেখা হয়ে যায় অনেকের সাথে- তাদের দেখলে সবাই জড়ি্য়ে ধরি। শশী,জুবেরুল,শাওন,জুনি,মারুফ,শরীফ,সবুজ,সৈকত,মিথুন,
রাশেদ-শাহেদ,শিপলু,মনোজ - কত নাম, কত স্মৃতি দোলা দেয় মনের মণিকোঠায়।

দেখা হয় না প্রায় ৮/৯ বছর, কিন্তু হৃদয়ের মাঝে ওরা আছে, থাকবে সব সময়। কারন,ছোটকালের বন্ধু বলেই নি:স্বার্থ আর প্রচন্ড ভালবাসায় ভরা সেই সম্পর্ক। কারন, রেসিডেন্সিয়াল আমাদের এমন ই এক মায়ার বাঁধনে জড়ি্য়েছে,যা অনুভব করি প্রতিটি মুহূর্তে।

মনে হয় কাকতলীয়ভাবে সবার সাথে যদি আবার দেখা হত! হবে কিনা জানি না। যেখানেই থাকুক, যেভাবেই থাকুক ভাল থাকুক আমার সব বন্ধুরা। আমাদের হৃদয়ের বন্ধন অটুট থাকবে সব সময় : কারন আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় - আমরা REMIANS।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০৬
৩৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×