জানি না লেখাটা তোমার নজরে আসবে কিনা,পড়বে কিনা,তবে বলে রাখি,কোন ধরনের নজরে আনার বা পড়িয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে লিখছি না,লিখছি কেন তা লেখার শেষে বলবো।
তোমার সাথে আক্ষরিক অর্থেই এখন আর আমার আর কোন স্পর্শ নেই,আমাদের সম্পর্কের উত্তাপ উবে গেছে অনেক অনেক দিন আগে,সব ধরনের লেনদেন নীরবেই চুকে বুকে গিয়েছিল,কথা ছিল শেষ পর্যন্ত যাই হোক,বন্ধুত্বটা অন্তত অপমানিত হবে না,অপমানিত হবে না যতদিন আমরা কাছাকাছি ছিলাম,সেই সময়গুলি।
কথা ছিল,আমরা ঘৃণা করতে পারবো না।
কথা ছিল,আমরা সবচেয়ে কঠিন কোন মুহুর্তেও ভুলে যাব না সেই হাজার হাজার নির্নিমেষ ভাল লাগার চিত্রকল্প যা খন্ডে খন্ডে জোড়া লাগিয়ে জীবন্ত করেছিলাম তুমি আর আমি মিলে।
কথা ছিল কতগুলি দিন-তারিখ কোনদিন কোন অবস্থাতেই বিস্মৃত না হবার।
আমি জানি তোমার খুব রাগ হচ্ছে আমার মুখে "কথা ছিল" কথাটা শুন্তে,আমি জানি কেউ যদি এই কথাগুলো সবার আগে ভুলে যায়,সেই মানুষটা আর কেউ নয়,এই আমি।
আমি ভুলে গেছি সব কথা রাখার দায়বদ্ধতা,তোমার কাছে আমার প্রতিটা ঋণ,তোমার দেয়া সীমাহীন আদর,ভালবাসা,খুনসুটি....সবকিছু.....
আমি জানি আমার উপর মনে হয় এখন অভিযোগের সুর তোলাটাও তোমার কাছে ঘৃণার কিছু।সব কিছু ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করার পেছনে অনেকটা একক কারিগরের ভুমিকাটা আমারই ছিল।আমি সব স্বীকার করে নিতে বিন্দুপরিমাণ কার্পণ্য করতে চাই না।
আজ কি জানি হল,যে জিনিসটা পড়তে চাই না,সেটা আবার পড়ে ফেল্লাম,আমার জন্যে তোমার সেই নীল কালিতে লেখা অসমাপ্ত ডাইরীটা। কন্সেপ্টা খুব লোভনীয় যে কোন ভালবাসায় কাঙ্গাল মানুষের জন্যে। আজকালকের ইমেইল,ফেসবুকের জামানায় হাতে লেখা চিঠি যখন জাদুঘরে যায়গা করে নিচ্ছে,ঠিক সেই সময়টায় আমার জন্যে শুরু করা তোমার লেখা এক খানা আস্ত ডাইরী,শুধু আমার জন্যে লেখা,ডাইরীর শুরু থেকে শেষ অবধি শুধু আমি আর আমি।
আমি আর আমার জন্যে তোমার জমিয়ে রাখা সব মায়ার শব্দকল্প।
আমি আর আমার জন্যে চেপে রাখা তোমার সব অভিমান,অভিযোগ আর হতাশা যা তুমি আমার মুখের উপর কখনো বলতে পারনি তোমার চোখ দেখে আমি সব বুঝে নিব এই প্রত্যাশায়।
আমার স্বভাব অনুযায়ী আমি কখনোই তোমার সে ভাষা বুঝার আকুতিতে সাড়া দেইনি,বরং উল্টোটাই আমার কাছ থেকে পেয়েছ তুমি,আমার তীক্ষ্ণ গলাবাজি আর অসহযোগীতা।
উপরের লেখাটুকু এ বছরের ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখের,শুরু হয়েছিল কিন্তু আর শেষ হয়নি,ড্রাফট হয়ে পড়ে ছিল এতদিন।তোমার কাছে যতদিনই লিখতে বসেছি,কোনদিন শেষটা নামাতে পারিনি,সব অসমাপ্তই থেকে যায়,অনেকটা তোমার আমার সম্পর্কের মত।সেদিন ড্রয়ার পরিষ্কার করতে গিয়ে একটা খাতার মধ্যে তোমাকে লেখা কতগুলো এমন কাগজ পেলাম,সব অসমাপ্ত। এর মধ্যে সাত পাতার একটা লেখা ছিল,তোমার ডায়েরী পড়ার পর লেখা শুরু করেছিলাম,সেটা ওভাবেই পড়ে আছে,ভাগ্যিস দেইনি তোমাকে।
খুব অবাক লাগে,তোমার আমার দূরত্ব তো খুব বেশি না,তোমার ভার্সিটির সামনে দিয়ে প্রতিবার যাবার সময় মনে হয় আজ বুঝি দেখেই ফেলবো তোমাকে,দেখি না। একই শহরে এতো কাছাকাছি থেকেও দুজনের দেখা হয়ে যাবার ভুলটা কখনো হয় না। তবে তোমার কথা বেশ শুনতে পাই,খুব অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু মানুষ অনেক জৌলুশ মাখিয়ে আজো তোমার কথা বলে যায়।আমার মেজাজ ঠিক থাকে না।তুমি বল, ওরা কি সেই তোমাকে চেনে যাকে আমি চিনতাম?
কেউ কি সেই তোমাকে চিনে যে আমার কাছে ঠোট উলটে বায়না করত?
দিনের মধ্যে ডাকার জন্যে হাজারটা নতুন নামে প্রাণ সঞ্চার করতো?
ছোট্র ছোট্র দুই চোখে সিন্ধুজমাট অভিমান ওরা কি দেখেছে?
আমি কেন ওদের কথা শুনবো?
মাঝে মাঝে তোমার ওই ঘরটায় শুয়ে আবার বৃষ্টি দেখতে ইচ্ছে করে,আমার জন্যে একটা একটা খাবারের হাড়ি বয়ে এনে আমার সামনে রাখছো,এটা দেখতে ইচ্ছে করে।এখন তুমি শখ করে রান্না করে কাকে খাওয়াও দেখতে খুব ইচ্ছা করে।তোমার বাড়িঘর ডিজাইন করে কাকে প্রথম দেখাও জানতে ইচ্ছা করে।কার সাথে বাইরে খেতে যাও,ঘুরো,শপিং কর,বর্ষায় নিজে ভিজে রিক্সা ঠিক করে আন....
তুমি আমি আর শুধু আমাদের দুইজনের সেই দুনিয়া ছাড়া আলাদা দিনগুলো।কেউ,কোনকিছুই এর অংশ ছিল না।
আমি জানি,এখনো আমাদের সময়গুলি কেটেই যাচ্ছে,অকেশনালি হয়তো কখনো কেউ কাউকে মনে করি,হয়তো তাও করি না।বড্ড ব্যস্ত আমাদের জীবনচক্র,মনে করার,দাড়াবার,ক্ষণিকের পিছনে মোড়ার এত সময় কই।
হয়তো এইসব পড়লে তোমার এখন হাসি পাবে,হয়তো এখন তোমার জীবনে অন্য কেউ অথবা অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত তুমি। কিংবা হয়তো কিছু সময়ের জন্য মন বিট্রে করবে।আমি জানি না কি হবে,জানতে চাই ও না। কেন জান?
তুমি একরকম ছিলে,ওই সময়টা অন্যরকম ছিলো...দুনিয়া গোল্লায় যাক,আমি চোর আর তুমি পুলিশ হয়ে যাই,আমরা কেউ কোনদিন আর কারো মুখ না দেখি,অথবা আবার স্বাভাবিকভাবে কথা বলি,যাই হোক না কেন,ঐ সময়,ঐ মুহুর্ত,ঐ অনুভুতিগুলো ফিরবে না ,আবার মরবেও না।
ঐ সময়,ঐ তুমি,ঐ আমি,আমাদের ওই বাড়িটা ঠিক ওভাবেই থাকবে,ঠিক ঐ ঠিকানাতেই থাকবে,অন্তত আমার কাছে। মিস করবো,ফিরে পেতে ইচ্ছে করবে,নানা সিদ্ধান্তের দুর্বলতা পীড়া দিবে,তবু সব ওরকমই থাকবে,কিচ্ছু পাল্টাবে না,নতুন কোন চমক আসবে না।
কিছুদিন আগে সিলেট ট্রিপের একটা অফার আসছিল,যেতে পারলাম না। ওদের বলেছিলাম,প্রথম ঢাকার বাইরে পা রাখা এই শহরটায় আমার কিছু অন্যরকম স্মৃতি আছে,ওগুলোর উপর অন্য স্মৃতি জমাতে চাই না। যত বড় হচ্ছি,স্মৃতি রক্ষার প্রবণতা তত বাড়ছে,আমার পেটে বেড়েই যাচ্ছে স্মৃতি জমাবার ক্ষুধা !
লেখার শুরুতে বলছিলাম,এই লেখা তুমি পড় কিনা তাতে আমার কিছু যায় আসে না।সেটা চার মাস আগের কথা,ঐ লেখার অনেক কিছুই আরো পালটে গেছে এখন।এখন মনে হচ্ছে লেখাটা শুধু তোমার জন্যে,ব্লগের আর কারো পড়ার দরকার নেই.....
ভাল থাক।এক আকাশের তলায় হাটতে হাটতে হয়তো একদিন তোমার সামনে পড়েই যাব,তখন না হয় তোমার বাকি খবর জিজ্ঞাস করে নিব।