somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা তো বেশ আছি

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি তো সেই আমি, যে তোমাকে ভালোবেসে গেছি জন্ম-জন্মান্তরে
এমন কি নুহের নৌকায় যখন আশ্রিত ছিলাম
অথবা তারও অযুত নিযুত শতক পরে
কুরুক্ষেত্রের দুর্বিসহ রণাঙ্গণে; তার পরের আরও কয়েক নিযুত শতক অতিক্রান্তের পর
জাপানিরা যখন ফেলছিল বোমা পার্ল হারবারে
কিংবা নিতে প্রতিশোধ নির্মমভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল আমেরিকা জীবন্ত হিরোশিমাকে;
তীব্র ধোঁয়া আর বারুদের গন্ধে ধূলোমাখা, কাদামাখা মুমূর্ষু আমি
শুধু ভালোবেসে গেছি তোমাকেই, জপে গেছি প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমারই নাম।

'৫০এর মন্বন্তরে অথবা '৭৪এর হাভাতে দিনে নগরের খা-খা ডাস্টবিনের মতন দুর্ভিক্ষের বছর
ক্ষুধাক্লিষ্ট অনাহারী আমি বাঁচতে আকুল হয়েছি শুধু তোমাকেই মনে করে;
'৭১এ ঘাতকেরা যখন বেয়নেট বাঁধা বন্দুক হাতে ঘরে ঘরে দিয়েছিল হানা
খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে করেছিল রক্তাক্ত আমার জন্মভূমিকে
ব্যথা কাতর আমি তখনও কেবল তোমাকে ভালোবেসেই
একটি স্বাধীন দেশের আশায়
অকুতোভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি মহান মুক্তিযুদ্ধে।

পাহাড়ি বালিকা জাসিন্তা যখন আমার আশপাশে দিনরাত
হাসি গানে, অভিমানে, বুননে ব্যস্ত ছিল অনাগত দিনের নির্বিরোধ স্বপ্নগুলো
তখনও আসলে নতুন ধানের মিহি সুবাসের মতো তুমি লেপ্টে ছিলে আমার মননে।

শুধু কি তাই?

সখিনা যখন আমাকে ভালো বেসে বেসে মুখে মুখে তুলে ফেলেছিল অফুরান ফেনা
সাদিয়া তখন নকশীকাঁথা আর নীল পাঞ্জাবি কিনে বন্ধুর প্রেমিককে অমরতা দিতে দৃঢ় কল্প;
(যদিও পরে জেনেছি মামুনই ছিল তার উপলক্ষ্য);
তবু মামুদ হোসেনের অনিশ্চিত ভালবাসায় আস্থা হারিয়ে একদা আমাকে যে দেখিয়েছিল
ভাটির দেশে ধাবমান তার ঐতিহ্যবাহী জরাজীর্ণ সাম্পান;
বিনিময়ে আমি তাকে দিয়েছিলাম দোর্দণ্ড প্রতাপের এক স্থিরচিত্র মাত্র;
অথচ তখনও তোমার শ্রী মুখ উঁকিঝুঁকি মেরে গেছে আঁধার ছাপানো জোনাকীর মতো।

মানুষের মন!

সে নারী হোক অথবা পুরুষ পুঙ্গব
ভালোবাসার ছলাকলা, নানা কলা আরও কত কলা পাকিয়ে ফেলে লহমায়
অথচ ফতুল্লাবাসী বাবুরামের বোনকে পাকানোর আগেই
হাঁচিতে-কাশিতে হয়েছিল জরজর কতিপয় চতুর ললনা আর দুর্বিনীত পাঁকাল;
যারা আমাকে উড়িয়ে নিচ্ছিল শরতের খণ্ডিত মেঘের মতন;
তবু হিমাচল হয়ে তুমি অধরের উষ্ণ বাধে দেখিয়েছিলে নতুন ঘর;
সমুদয় অতীত বুকে নিয়ে নদীভাঙা গ্রাম যেমন লীন হয়ে যায় মেটে জলে।
মূলত সেদিন থেকেই বুঝেছি জীবনের স্থিরতা।

তারপর দেখ, পিতার মূর্খ সন্তানেরা যখন যুথবদ্ধ হয়ে
ঈর্ষাতুর কেউটে সাপের খোলসের মতো আমাদের করেছিল পরিত্যাগ
তবু আমি ছাড়িনি তোমাকে; কতিপয় দালালের কারসাজি সত্ত্বেও অবাক, মুগ্ধ ছিল গ্রামবাসী।
পরিজন-স্বজনহীন আমি তখনও তোমাকে ভালোবেসেছি বিপুল;
যেন বটবৃক্ষ নিরলস বিলায় সঘন নির্মল ছায়া।

কিংবা যখন আমাদের বিরুদ্ধ সময়ে মাঠ থেকে শাকপাতা তুলে
নিদারুণ অভাবে কাটছিল কাল; কথিত বন্ধুরা আমার এসওএস পেয়েও
কী যে কঠিন এক নীরবতায় এড়িয়ে গেছিল আমাকে। হতবাক আমার ঘরে
ধারকরা চালে প্রতিদিন চুলায় চড়েছে হাড়ি
তখনও ম্লান হয়নি তোমার প্রতি আমার দুর্নিবার প্রেম।

অবশ্য ওরা তো জানে না, কে তুমি?
দেখেনি তোমার হৃদসিন্দুকে বৈভবের চ্ছটা
আমাকে নিবিড় আলিঙ্গনে বেঁধে রাখা
তোমার সুদৃঢ় বাহুবন্ধন...

আচ্ছা, আজ না হয় বন্ধ থাকুক ওসব বাখানি;
এখন কী বা আসে যায় তাদের জ্ঞান বা অজ্ঞানতায়?
তারা তো আজ দূর অতীতের বিচ্ছিন্ন কংকাল;
পুরাকালের নোনাধরা ধূসর ফসিল!

আমরা তো বেশ আছি! নাকি সন্দেহ আছে কোনো?


৬ অক্টোবর, ২০১৯
কারবালা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৫:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×