somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলোচিত বক্ল

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(১)
কঙ্গনা রানাঔত। আহ, কি মনোহর সে রূপ। একমাথা ঝাঁকড়া একটু বেশীই কোঁকড়ানো চুলগুলি একটু ঝাঁকিয়ে, সরু লম্বা ঘাড়টা একটু বাঁকা করে পাতলা ঠোঁটে আর চোখের কোনায় সারা দুনিয়ার দিকে তাচ্ছিল্য ছুড়ে দিয়ে তিনি বললেন, 'আমি আমার কোন কিছু নিয়েই লজ্জিত নই, আমার অতীত নিয়ে না, আমার শরীর নিয়ে না, আমার প্রণয় নিয়ে না, আর আমার কামনা নিয়ে তো অবশ্যই না। আমাকে দুশ্চরিত্রা বলে যে শরম দিবেন সেটা পারবেন না।'

কঙ্গনা আমার সালাম গ্রহণ করুন। নিজের নারী জন্ম নিয়ে, নারীর শরীর নিয়ে, যা কিছু নারীসুলভ কোনকিছু নিয়েই তিনি লজ্জার কিছু দেখেন না। কঙ্গনা আপনি আমার সালাম গ্রহণ করুন। কোনরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়া স্পষ্ট উচ্চারণে তিনি বলেন, 'আমি আমার পলকা শরীর আর সেই সাথে তীক্ষ্ণ মনন দুইটা নিয়েই অহংকার করি।' কঙ্গনা রানাঔত আপনি আমার সালাম গ্রহণ করুন।

পাহাড়ের মেয়ে কঙ্গনা, সিমলা থেকে বোম্বেতে সিনেমা করতে আসা লিকলিকে সেই মেয়েটা বড় হয়ে গেছে। সাহসী এই মেয়েটা নিজের চেষ্টায় নিজের জন্যে বোম্বাইয়া সিনেমার বিশাল বাজারে একটা শক্ত জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। এর মধ্যে তিন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। এক সময় যারা ওকে একরকম বাতিলের খাতায় লিখে রেখেছিল, ওরাও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, না, এই মেয়েটার মধ্যে প্রতিভা আছে।

সেই লিকলিকে পেন্সিল আকৃতির কিশোরীটি আজকে বড় হয়েছে। এই মেয়ে নাকি আগে ইংরেজি বলতে পারতো না। এখন তো ওর ভাষার দক্ষতাও আপনাকে মুগ্ধ করবে। যা বলতে চায় যেটা বলতে চায় যথাযথ শব্দে ঠিক সেই কথাটিই বলবে, কোনপ্রকার বাগাড়ম্বর ছাড়াই।

আমি মুগ্ধ।

(২)
তৃতীয়বার জাতীয় পুরস্কার গ্রহণের একটু আগে বা পরে এনডিটিভির বরখা দত্ত ওর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। সাক্ষাৎকারটা আমি আগে দেখিনাই, দেখেছি বেশ পরে।

আপনারা যারা হিন্দি সিনেমা জগতের খোঁজ খবর রাখেন, আপনারা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে জানেন যে কঙ্গনা রানাঔত আর ওর একসময়ের প্রেমিক হৃত্বিক রোশন এর মধ্যে মিডিয়ায় বাক্য বিনিময়, ঝগড়া ইত্যাদি হয়ে গেছে, ঘটনা এখন মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে- হৃত্বিক রোশন মামলা করেছেন কঙ্গনার বিরুদ্ধে।

মামলা করেছে, সেটা ঠিক আছে। মামলা করবেন, আদালত বিচার করবে, এটা তো একটা সভ্য প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই সাথে কঙ্গনার উপর নাজেল হয়েছে গালাগালি বর্ষণ আর চরিত্র হননের এক তীব্র আক্রমণ। আর কে চালাচ্ছে এই আক্রমণ? কে নয়? একজন দুইজন বাদে, যারাই কোন না কোনভাবে এই বিতণ্ডায় অংশ গ্রহণ করতে পারছেন, সকলেই কঙ্গনাকে দুই কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। নারী পুরুষ বাদ নাই, সবাই।

কিসব কথা বলা হচ্ছে কঙ্গনাকে সেটা তো বুঝতেই পারেন। আমাদের এখানে কি এরকমই হয় না? আজকে যদি আমাদের এখানে দুইজন সেলিব্রিটি ধরনের মানুষের একই রকম ব্যক্তিগত সম্পর্কের খবর বাইরে আসে, আমাদের এখানে বেশিরভাগ মানুষ কি করবে? নারীটাকেই গালি দিবে। এর মধ্যে যদি আরও জানা যায় যে সেই নারীটির একাধিক এরকম সম্পর্ক ছিল, তাইলে তো আর কথাই নাই। ভয়ংকর সেই সব গালি। বোম্বেতেও তাই হচ্ছে। সকলেই কঙ্গনাকে গালি দিচ্ছেন। আর ভদ্রলোকেরা কি সব গালি যে সাধারণত নারীকে দিয়ে থাকেন সে কি আপনি জানেন না? জানেনই তো।

বরখা দত্ত জানতে চাচ্ছিলেন, এই আপনাকে এইসব গালি দিচ্ছে, আপনার খারাপ তো লাগে নিশ্চয়ই। কঙ্গনা কি বলেছেন জানেন? কঙ্গনা রানাঔত স্পষ্ট করে বলেছেন, "I don't find it humiliating when they call me a psychopath, witch or whore, না, ওরা যখন আমাকে সাইকোপ্যাথ, ডাইনি বা বেশ্যা বলে গালি দেয় সেটাকে আমি অপমানজনক মনে করিনা।"

(৩)
এইসব ভয়ংকর গালি, যেসব শুনলে 'ভদ্রসমাজের' যে কোন মানুষেরই লজ্জা পাওয়ার কথা, সেইসব গালিকে কঙ্গনা অপমানজনক মনে করছেন না কেন?

এই কথার উত্তরে কঙ্গনা বলেছেন একটি নিতান্ত সত্যি কথা, 'এইগুলি তো ভাই নারীর বিরুদ্ধে হাজার বছরের পুরাণ অস্ত্র, এখনো নারীর সাফল্য যখন কাউকে ঈর্ষান্বিত করে তখন ওরা নারীর বিরুদ্ধে এইগুলি ব্যাবহার করে। ...if she's crazily successful, she becomes a psychopath, and if a woman is sexually active, she becomes a whore."

এবং চমৎকার জিনিস কি জানেন? এই যে 'সাইকো' বা 'হোর' এইসব শব্দকে কঙ্গনা গালি হিসেবেই বিবেচনা করতে চান না। তিনি বললেন, যে শিল্পী হিসাবে আমি সাইকপ্যাথ আর হোর এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি, এদের অবস্থা নিয়ে আমাকে জানতে হয়েছে। মানসিক রোগাক্রান্ত একজন মানুষ তার ব্যাধির বিরুদ্ধে কিরকম সংগ্রাম করে সে তো আমি জানি। একজন বাইপোলার বা সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংগ্রাম এটার মধ্যে অসম্মানজনক না নোংরা কি আছে? আর বেশ্যার চরিত্রেও আমি অভিনয় করেছি, আমার অভিনয় আর ওদের সাথে কথাবার্তার সূত্র থেকে আমি কেবল বেশ্যাদের প্রতি সহানুভূতিশীলই হয়েছি। এইসজন্যেই সাইকপ্যাথ বা হোর বললে এগুলি আমার কাছে গালি মনে হয়না।

এখন আমাকে বলেন। এই মেয়েটাকে আপনি সম্মান না করে পারবেন? আমি তো আমার জীবনে এরকম অনেক মানুষ দেখেছি- বুড়া হয়ে গেছে, বয়সের ভারে ব্যাকা হয়ে গেছে, আইন কানুন মানবাধিকার গণতন্ত্র কোন কিছুই কারো চেয়ে কম জানেন না, শিল্প সাহিত্যও বহুত জানেন, বক্তৃতা শুনলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন- কিন্তু নারীর প্রসঙ্গে এখনো সেই হাজার বছরের পুরাণ আবর্জনায়ই খুলি ভরে রেখেছেন।

(৪)
কঙ্গনা রানাঔতএর নাকি অধ্যয়ন সুমন নামে এক ছোকরার সাথে কিছুদিন সম্পর্ক ছিল। কে এই অধ্যয়ন সুমন? বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক অসফল বাপের ততোধিক অসফল কুপুত্র এই অধ্যয়ন সুমন। ওর বাপ শেখর সুমন- উৎসব নামে একটা খুবই ভাল ছবি করার সুবাদে সে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে একটা জায়গা করে নিয়েছিল বটে- কিন্তু ঐটুকুই। এরপর ভাঁড়ামো থেকে শুরু করে রাজনৈতিক চাটুবৃত্তি কোনটাই বাদ রাখেনাই চেষ্টা করতে। সবখানেই ফেল। সেই শেখর সুমনের ছেলে এই ছোকরা। সেই এসেছিল সিনেমা করতে- কতদূর কি করেছে জানিনা।

এই ছোকরা অভিযোগ করেছে যে কঙ্গনা রানাঔত নাকি ওকে মারধর করেছে আর ওকে ঋতুস্রাবের নোংরা রক্ত খাইয়ে দিয়েছে। মারধর প্রসঙ্গে কঙ্গনা শুধু বলেছেন যে তিনি তাঁর একজন সাবেক বয়ফ্রেন্ডকে একবার স্টিলেটো দিয়ে ধোলাই দিয়েছেন, এছাড়া আর কখনো কারো সাথে মারামারি করেননি। (স্টিলেটো চিনেছেন তো? ঐ যে চোখা লম্বা হিলওয়ালা জুতা পরে মেয়েরা, সেই জিনিস।) তাও সেঁতা করেছিলেন কেবল নিজেকে রক্ষা করার জন্যেই।

কঙ্গনা রেগেছেন ঋতুস্রাবকে নোংরা বলার জন্যে- ওর কথা হচ্ছে ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড-ব্লাড এটার মধ্যে নোংরা কি আছে। কঙ্গনা বলছেন, 'আমাকে গালাগালি করেন বা আমার ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা করেন তাতে আমার কিছু যায় আসেন না। কিন্তু মেহেরবানী করে ঋতুস্রাবকে নোংরা বলবেন না। ঋতুস্রাবের মধ্যে নোংরামির কিছু নাই। ঋতুস্রাব কোন নোংরা ব্যাপার না। আপনি যখন ঋতুস্রাবের কথা ভাববেন- এটা হচ্ছে আমার প্রজনন ক্ষমতা, আমার সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা। পুরুষের দেহ নির্গত তরল পদার্থে যদি নোংরা কিছু না থাকে তাইলে নারীর দেহ নির্গত তরলের মধ্যেও নোংরা কিছু নাই।'

কঙ্গনা যখন তাঁর ঐ বিশেষ ধরনের উচ্চারণে কিন্তু একদম স্পষ্ট শব্দে এই কথা বলছেন বরখা দত্তকে- বরখা দত্তের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, চোখ ছলছল করতে থাকে। তিনিও কণ্ঠ মেলান কঙ্গনার সাথে। আমি কঙ্গনার চেহারায় আর বরখা দত্তের চেহারায় দুই নারীকে দেখি, যারা নারীত্বের হাজার বছরের মরছে ধরা শিকল ভাঙতে চেষ্টা করছেন নিজের জন্যে আর পৃথিবীর সকল নারীর মুক্তির জন্যে।

(৫)
দেখেন, আমি নিজে বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে মফস্বলে ছোট শহরে বড় হয়েছি। আমি আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান প্রত্যক্ষ করেছি। আপনারাও করেছেন। এটা নিয়ে ফেনিয়ে ফাঁপিয়ে বলার আর কি আছে। নারীর ঋতুস্রাবকে আমাদের সমাজেও তো নোংরা বিবেচনা করা হয়। হয় না?

ঐ অধ্যয়ন সুমন ছোকরাটার কথার সূত্রে মনে পড়লো, আমাদের দেশের অনেক জায়গায় আঞ্চলিক ভাষায় পিরিয়ড-ব্লাডকে 'লেড়' বা কথাও উচ্চারণ ভেদে 'লের' বলে। এই লেড় কথাটা আমাদের এখানেও একটা গালি হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। ক্রিয়াপদে গালি দিতে চাইলে বলে, '----র পোলা, যা লেড় খা' বা বিশেষণে গালি দিতে চাইলে বলে 'লেড় খাওরা' বা ময়মনসিংহের দিকে বলে 'লেড় হাওরা'। চাকমা ভাষায়ও সম্ভবত শব্দটা 'লের' এবং একই রকমভাবে চাকমা ভাষায়ও গালি দিতে গিয়ে বলে 'লের হা'। এই 'লেড় খা' বলে গালিটা 'গু খা'র চেয়েও নাকি মন্দ।

আমাকে বলেন, ঋতুস্রাব একটা গালির বিষয় কেন হবে? এটা তো নারীত্বের প্রতীক, মাতৃত্বের প্রতীক। এটা মধ্যে নোংরা কি আছে? ঋতুস্রাব একটা গালি কারণ আমাদের সমাজে নারী শব্দটাই একটা গালি। কোন পুরুষকে 'মাইগ্যা' বা 'মেয়েলি' বলা কি একটা গালি না? নারীকে আমাদের সমাজে আমাদের ধর্মে নিচু করা হয় এবং ঋতুকালটাতে বা পিরিয়ডের সময়টাতে নারীকে বিবেচনা করা হয় নোংরা এবং অপবিত্র হিসাবে। এটা তো ন্যায় না, যুক্তিসঙ্গত না এবং ডাক্তাররাও তো বলেই দিয়েছেন যে এইসব কথার কোন ভিত্তিই নাই। তবুও আমরা বলি।

কেন বলি? ঐ যে কঙ্গনা তো বলেইছেন, এইগুলি হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে ব্যাবহারের জন্যে আমাদের হাজার বছরের পুরানা অস্ত্র। এই অস্ত্র আমরা এখনো ব্যবহার করি। বিশেষ করে যখন আমরা কোন নারীর সাফল্যে বা অন্য কোন কারণে তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হই।

(৬)
এই যে নারীর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বা বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে নারীকে ছোট করা এটা তো আমি আমাদের সমাজে সে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি। আপনারাও দেখেছেন। এবং এখনো এটা হয়।

আমি তো মফস্বল শহরে আর ছোট শহরে বড় হয়েছি। সেইসব জায়গায় তো গোটা শহরে সবচেয়ে সুন্দরী, গুণবতী, যারা একটু গান করে বা নাচ করে বা খেলাধুলা করে এদেরকে সকলেই চট করে চিনে যায়। সবাই। এরপর ছেলে বুড়া অনেকেই হাড় বাড়ায় এদের দিকে- অনেকে প্রেমে পরে আর অনেকে কেবলই 'খেয়ে দেওয়ার' মতলবে। আর যখন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়, বা মতলব ফেইল করে তখন শুরু করে দেয় সেই মেয়েটির নামে খারাপ কথা বলা। হেন মন্দ কথা নাই যেটা এরা মেয়েদের সম্পর্কে বলে না। আর যদি একটা মেয়ে একটু সুন্দরী হয়, এবং তার যদি একাধিক ছেলের সাথে অন্তরঙ্গতা থাকে- যেটা কৈশোরে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, তাইলে তো আর রক্ষা নাই আরকি।

আমি সেই কৈশোর থেকেই এইসব দেখেছি। আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন আরকি। আমার ক্ষেত্রে ফলাফল যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, আমার সামনে যখন কেউ কোন মেয়ের বদনাম করে আমি সেটা অবিশ্বাস করি। এবং আমি এটা বলি। আমি জানি যে মেয়েদের নামে এইসব মন্দ কথা যখন লোকে বলে, ঈর্ষা থেকেই এইসবের সূচনা হয় এবং একশটার মধ্যে আশিটা এই ধরনের কথাই মিথ্যা কথা থাকে। ব্যক্তিগত জীবনে আমার বন্ধুরা আমার এই বিশেষ অবিশ্বাস প্রবণতাটির কথা জানেন। দুই একজন এইটা নিয়ে আমার সাথে রাগও করেছেন।

কঙ্গনা রানাঔত কিন্তু এই কথাগুলিই বলেছেন। সংক্ষিপ্ত আকারে বলেছেন, কিন্তু স্পষ্ট করেই বলেছেন। ব্যক্তিগত কন্টেক্সটেই বলেছেন, কিন্তু যখন তিনি বলেন যে, It's unbelievable that women have been treated like object, এই কথাটা কি সর্বত্রই সত্যি নয়?

(৭)
এবং তিনি কি বললেন? My success is my sweet revenge against controversy- আমার সাফল্যই সকল অপবাদের বিরুদ্ধে আমার মধুর প্রতিশোধ। তৃতীয়বার যখন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এই কথা বলেছেন। সেইসব ফালতু ছোকরারা যারা কোন না কোন এক সময় কঙ্গনার সাথে প্রেম করেছে, বা করতে চেয়েছ, আর এখন ওকে গালাগালি করে নিজেদের প্রকৃত চেহারা দেখাচ্ছে, ওদের বিরুদ্ধে এর চেয়ে মধুর প্রতিশোধ আর কঙ্গনার কি হতে পারে।

আমাদের মেয়েদেরকেও আমি এই কথাই বলি। শোনেন, মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটতে শিখেন, নিজের নারী পরিচয়ে অহংকারী হবেন। নারী হওয়া কোন গ্লানির বিষয় না। আপনার নারীত্ব, আপনার শরীর, আপনার মন এই সবকিছুই আপনার। আপনি আপনার জীবন আপনার টার্মেই যাপন করার চেষ্টা করেন। নিজের জীবনযাপনের জন্যে যেন পুরুষের মুখাপেক্ষী হতে না হয় সেই চেষ্টা করবেন। সাফল্য যদি আসে ভাল কথা, যদি নাও আসে হাল ছাড়বেন না, লড়ে যাবেন। আর জানেনই তো লড়ার ক্ষমতা কিন্তু পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশী।

একটা ছেলেকে তার লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে বিশেষ কোন চিন্তা করতে হয়না- কেননা আমাদের পৃথিবীটা পুরুষ শাসিত সমাজ। কিন্তু নারীকে লড়তে হয়। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই লড়তে হয়। আপনি যখন আপনার ক্ষেত্রে লড়ছেন, নারী পরিচয়ে কখনো যেন নিজেকে ছোট বা অক্ষম বা কম ভাববেন না। লড়াইটা অব্যাহত রাখবেন। নিজে পুরুষ হয়েও এই অনুরোধ আমি সকল নারীকে করি কারণ আমি জানি নারীরই মুক্তি পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর করবে, ভালো করবে অগ্রসর করবে। নিজের স্বার্থেই এইসব কথা বলছি।

লম্বা কথা হয়ে গেছে। কঙ্গনা রানাঔত প্রসঙ্গে এত কথা- কঙ্গনাকে সালাম। আরেকবার সালাম।
(১)
কঙ্গনা রানাঔত। আহ, কি মনোহর সে রূপ। একমাথা ঝাঁকড়া একটু বেশীই কোঁকড়ানো চুলগুলি একটু ঝাঁকিয়ে, সরু লম্বা ঘাড়টা একটু বাঁকা করে পাতলা ঠোঁটে আর চোখের কোনায় সারা দুনিয়ার দিকে তাচ্ছিল্য ছুড়ে দিয়ে তিনি বললেন, 'আমি আমার কোন কিছু নিয়েই লজ্জিত নই, আমার অতীত নিয়ে না, আমার শরীর নিয়ে না, আমার প্রণয় নিয়ে না, আর আমার কামনা নিয়ে তো অবশ্যই না। আমাকে দুশ্চরিত্রা বলে যে শরম দিবেন সেটা পারবেন না।'

কঙ্গনা আমার সালাম গ্রহণ করুন। নিজের নারী জন্ম নিয়ে, নারীর শরীর নিয়ে, যা কিছু নারীসুলভ কোনকিছু নিয়েই তিনি লজ্জার কিছু দেখেন না। কঙ্গনা আপনি আমার সালাম গ্রহণ করুন। কোনরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়া স্পষ্ট উচ্চারণে তিনি বলেন, 'আমি আমার পলকা শরীর আর সেই সাথে তীক্ষ্ণ মনন দুইটা নিয়েই অহংকার করি।' কঙ্গনা রানাঔত আপনি আমার সালাম গ্রহণ করুন।

পাহাড়ের মেয়ে কঙ্গনা, সিমলা থেকে বোম্বেতে সিনেমা করতে আসা লিকলিকে সেই মেয়েটা বড় হয়ে গেছে। সাহসী এই মেয়েটা নিজের চেষ্টায় নিজের জন্যে বোম্বাইয়া সিনেমার বিশাল বাজারে একটা শক্ত জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। এর মধ্যে তিন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। এক সময় যারা ওকে একরকম বাতিলের খাতায় লিখে রেখেছিল, ওরাও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, না, এই মেয়েটার মধ্যে প্রতিভা আছে।

সেই লিকলিকে পেন্সিল আকৃতির কিশোরীটি আজকে বড় হয়েছে। এই মেয়ে নাকি আগে ইংরেজি বলতে পারতো না। এখন তো ওর ভাষার দক্ষতাও আপনাকে মুগ্ধ করবে। যা বলতে চায় যেটা বলতে চায় যথাযথ শব্দে ঠিক সেই কথাটিই বলবে, কোনপ্রকার বাগাড়ম্বর ছাড়াই।

আমি মুগ্ধ।

(২)
তৃতীয়বার জাতীয় পুরস্কার গ্রহণের একটু আগে বা পরে এনডিটিভির বরখা দত্ত ওর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। সাক্ষাৎকারটা আমি আগে দেখিনাই, দেখেছি বেশ পরে।

আপনারা যারা হিন্দি সিনেমা জগতের খোঁজ খবর রাখেন, আপনারা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে জানেন যে কঙ্গনা রানাঔত আর ওর একসময়ের প্রেমিক হৃত্বিক রোশন এর মধ্যে মিডিয়ায় বাক্য বিনিময়, ঝগড়া ইত্যাদি হয়ে গেছে, ঘটনা এখন মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে- হৃত্বিক রোশন মামলা করেছেন কঙ্গনার বিরুদ্ধে।

মামলা করেছে, সেটা ঠিক আছে। মামলা করবেন, আদালত বিচার করবে, এটা তো একটা সভ্য প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই সাথে কঙ্গনার উপর নাজেল হয়েছে গালাগালি বর্ষণ আর চরিত্র হননের এক তীব্র আক্রমণ। আর কে চালাচ্ছে এই আক্রমণ? কে নয়? একজন দুইজন বাদে, যারাই কোন না কোনভাবে এই বিতণ্ডায় অংশ গ্রহণ করতে পারছেন, সকলেই কঙ্গনাকে দুই কথা শুনিয়ে দিচ্ছে। নারী পুরুষ বাদ নাই, সবাই।

কিসব কথা বলা হচ্ছে কঙ্গনাকে সেটা তো বুঝতেই পারেন। আমাদের এখানে কি এরকমই হয় না? আজকে যদি আমাদের এখানে দুইজন সেলিব্রিটি ধরনের মানুষের একই রকম ব্যক্তিগত সম্পর্কের খবর বাইরে আসে, আমাদের এখানে বেশিরভাগ মানুষ কি করবে? নারীটাকেই গালি দিবে। এর মধ্যে যদি আরও জানা যায় যে সেই নারীটির একাধিক এরকম সম্পর্ক ছিল, তাইলে তো আর কথাই নাই। ভয়ংকর সেই সব গালি। বোম্বেতেও তাই হচ্ছে। সকলেই কঙ্গনাকে গালি দিচ্ছেন। আর ভদ্রলোকেরা কি সব গালি যে সাধারণত নারীকে দিয়ে থাকেন সে কি আপনি জানেন না? জানেনই তো।

বরখা দত্ত জানতে চাচ্ছিলেন, এই আপনাকে এইসব গালি দিচ্ছে, আপনার খারাপ তো লাগে নিশ্চয়ই। কঙ্গনা কি বলেছেন জানেন? কঙ্গনা রানাঔত স্পষ্ট করে বলেছেন, "I don't find it humiliating when they call me a psychopath, witch or whore, না, ওরা যখন আমাকে সাইকোপ্যাথ, ডাইনি বা বেশ্যা বলে গালি দেয় সেটাকে আমি অপমানজনক মনে করিনা।"

(৩)
এইসব ভয়ংকর গালি, যেসব শুনলে 'ভদ্রসমাজের' যে কোন মানুষেরই লজ্জা পাওয়ার কথা, সেইসব গালিকে কঙ্গনা অপমানজনক মনে করছেন না কেন?

এই কথার উত্তরে কঙ্গনা বলেছেন একটি নিতান্ত সত্যি কথা, 'এইগুলি তো ভাই নারীর বিরুদ্ধে হাজার বছরের পুরাণ অস্ত্র, এখনো নারীর সাফল্য যখন কাউকে ঈর্ষান্বিত করে তখন ওরা নারীর বিরুদ্ধে এইগুলি ব্যাবহার করে। ...if she's crazily successful, she becomes a psychopath, and if a woman is sexually active, she becomes a whore."

এবং চমৎকার জিনিস কি জানেন? এই যে 'সাইকো' বা 'হোর' এইসব শব্দকে কঙ্গনা গালি হিসেবেই বিবেচনা করতে চান না। তিনি বললেন, যে শিল্পী হিসাবে আমি সাইকপ্যাথ আর হোর এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি, এদের অবস্থা নিয়ে আমাকে জানতে হয়েছে। মানসিক রোগাক্রান্ত একজন মানুষ তার ব্যাধির বিরুদ্ধে কিরকম সংগ্রাম করে সে তো আমি জানি। একজন বাইপোলার বা সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংগ্রাম এটার মধ্যে অসম্মানজনক না নোংরা কি আছে? আর বেশ্যার চরিত্রেও আমি অভিনয় করেছি, আমার অভিনয় আর ওদের সাথে কথাবার্তার সূত্র থেকে আমি কেবল বেশ্যাদের প্রতি সহানুভূতিশীলই হয়েছি। এইসজন্যেই সাইকপ্যাথ বা হোর বললে এগুলি আমার কাছে গালি মনে হয়না।

এখন আমাকে বলেন। এই মেয়েটাকে আপনি সম্মান না করে পারবেন? আমি তো আমার জীবনে এরকম অনেক মানুষ দেখেছি- বুড়া হয়ে গেছে, বয়সের ভারে ব্যাকা হয়ে গেছে, আইন কানুন মানবাধিকার গণতন্ত্র কোন কিছুই কারো চেয়ে কম জানেন না, শিল্প সাহিত্যও বহুত জানেন, বক্তৃতা শুনলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন- কিন্তু নারীর প্রসঙ্গে এখনো সেই হাজার বছরের পুরাণ আবর্জনায়ই খুলি ভরে রেখেছেন।

(৪)
কঙ্গনা রানাঔতএর নাকি অধ্যয়ন সুমন নামে এক ছোকরার সাথে কিছুদিন সম্পর্ক ছিল। কে এই অধ্যয়ন সুমন? বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক অসফল বাপের ততোধিক অসফল কুপুত্র এই অধ্যয়ন সুমন। ওর বাপ শেখর সুমন- উৎসব নামে একটা খুবই ভাল ছবি করার সুবাদে সে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে একটা জায়গা করে নিয়েছিল বটে- কিন্তু ঐটুকুই। এরপর ভাঁড়ামো থেকে শুরু করে রাজনৈতিক চাটুবৃত্তি কোনটাই বাদ রাখেনাই চেষ্টা করতে। সবখানেই ফেল। সেই শেখর সুমনের ছেলে এই ছোকরা। সেই এসেছিল সিনেমা করতে- কতদূর কি করেছে জানিনা।

এই ছোকরা অভিযোগ করেছে যে কঙ্গনা রানাঔত নাকি ওকে মারধর করেছে আর ওকে ঋতুস্রাবের নোংরা রক্ত খাইয়ে দিয়েছে। মারধর প্রসঙ্গে কঙ্গনা শুধু বলেছেন যে তিনি তাঁর একজন সাবেক বয়ফ্রেন্ডকে একবার স্টিলেটো দিয়ে ধোলাই দিয়েছেন, এছাড়া আর কখনো কারো সাথে মারামারি করেননি। (স্টিলেটো চিনেছেন তো? ঐ যে চোখা লম্বা হিলওয়ালা জুতা পরে মেয়েরা, সেই জিনিস।) তাও সেঁতা করেছিলেন কেবল নিজেকে রক্ষা করার জন্যেই।

কঙ্গনা রেগেছেন ঋতুস্রাবকে নোংরা বলার জন্যে- ওর কথা হচ্ছে ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড-ব্লাড এটার মধ্যে নোংরা কি আছে। কঙ্গনা বলছেন, 'আমাকে গালাগালি করেন বা আমার ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা করেন তাতে আমার কিছু যায় আসেন না। কিন্তু মেহেরবানী করে ঋতুস্রাবকে নোংরা বলবেন না। ঋতুস্রাবের মধ্যে নোংরামির কিছু নাই। ঋতুস্রাব কোন নোংরা ব্যাপার না। আপনি যখন ঋতুস্রাবের কথা ভাববেন- এটা হচ্ছে আমার প্রজনন ক্ষমতা, আমার সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা। পুরুষের দেহ নির্গত তরল পদার্থে যদি নোংরা কিছু না থাকে তাইলে নারীর দেহ নির্গত তরলের মধ্যেও নোংরা কিছু নাই।'

কঙ্গনা যখন তাঁর ঐ বিশেষ ধরনের উচ্চারণে কিন্তু একদম স্পষ্ট শব্দে এই কথা বলছেন বরখা দত্তকে- বরখা দত্তের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, চোখ ছলছল করতে থাকে। তিনিও কণ্ঠ মেলান কঙ্গনার সাথে। আমি কঙ্গনার চেহারায় আর বরখা দত্তের চেহারায় দুই নারীকে দেখি, যারা নারীত্বের হাজার বছরের মরছে ধরা শিকল ভাঙতে চেষ্টা করছেন নিজের জন্যে আর পৃথিবীর সকল নারীর মুক্তির জন্যে।

(৫)
দেখেন, আমি নিজে বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে মফস্বলে ছোট শহরে বড় হয়েছি। আমি আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান প্রত্যক্ষ করেছি। আপনারাও করেছেন। এটা নিয়ে ফেনিয়ে ফাঁপিয়ে বলার আর কি আছে। নারীর ঋতুস্রাবকে আমাদের সমাজেও তো নোংরা বিবেচনা করা হয়। হয় না?

ঐ অধ্যয়ন সুমন ছোকরাটার কথার সূত্রে মনে পড়লো, আমাদের দেশের অনেক জায়গায় আঞ্চলিক ভাষায় পিরিয়ড-ব্লাডকে 'লেড়' বা কথাও উচ্চারণ ভেদে 'লের' বলে। এই লেড় কথাটা আমাদের এখানেও একটা গালি হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। ক্রিয়াপদে গালি দিতে চাইলে বলে, '----র পোলা, যা লেড় খা' বা বিশেষণে গালি দিতে চাইলে বলে 'লেড় খাওরা' বা ময়মনসিংহের দিকে বলে 'লেড় হাওরা'। চাকমা ভাষায়ও সম্ভবত শব্দটা 'লের' এবং একই রকমভাবে চাকমা ভাষায়ও গালি দিতে গিয়ে বলে 'লের হা'। এই 'লেড় খা' বলে গালিটা 'গু খা'র চেয়েও নাকি মন্দ।

আমাকে বলেন, ঋতুস্রাব একটা গালির বিষয় কেন হবে? এটা তো নারীত্বের প্রতীক, মাতৃত্বের প্রতীক। এটা মধ্যে নোংরা কি আছে? ঋতুস্রাব একটা গালি কারণ আমাদের সমাজে নারী শব্দটাই একটা গালি। কোন পুরুষকে 'মাইগ্যা' বা 'মেয়েলি' বলা কি একটা গালি না? নারীকে আমাদের সমাজে আমাদের ধর্মে নিচু করা হয় এবং ঋতুকালটাতে বা পিরিয়ডের সময়টাতে নারীকে বিবেচনা করা হয় নোংরা এবং অপবিত্র হিসাবে। এটা তো ন্যায় না, যুক্তিসঙ্গত না এবং ডাক্তাররাও তো বলেই দিয়েছেন যে এইসব কথার কোন ভিত্তিই নাই। তবুও আমরা বলি।

কেন বলি? ঐ যে কঙ্গনা তো বলেইছেন, এইগুলি হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে ব্যাবহারের জন্যে আমাদের হাজার বছরের পুরানা অস্ত্র। এই অস্ত্র আমরা এখনো ব্যবহার করি। বিশেষ করে যখন আমরা কোন নারীর সাফল্যে বা অন্য কোন কারণে তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হই।

(৬)
এই যে নারীর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বা বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে নারীকে ছোট করা এটা তো আমি আমাদের সমাজে সে ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি। আপনারাও দেখেছেন। এবং এখনো এটা হয়।

আমি তো মফস্বল শহরে আর ছোট শহরে বড় হয়েছি। সেইসব জায়গায় তো গোটা শহরে সবচেয়ে সুন্দরী, গুণবতী, যারা একটু গান করে বা নাচ করে বা খেলাধুলা করে এদেরকে সকলেই চট করে চিনে যায়। সবাই। এরপর ছেলে বুড়া অনেকেই হাড় বাড়ায় এদের দিকে- অনেকে প্রেমে পরে আর অনেকে কেবলই 'খেয়ে দেওয়ার' মতলবে। আর যখন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়, বা মতলব ফেইল করে তখন শুরু করে দেয় সেই মেয়েটির নামে খারাপ কথা বলা। হেন মন্দ কথা নাই যেটা এরা মেয়েদের সম্পর্কে বলে না। আর যদি একটা মেয়ে একটু সুন্দরী হয়, এবং তার যদি একাধিক ছেলের সাথে অন্তরঙ্গতা থাকে- যেটা কৈশোরে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, তাইলে তো আর রক্ষা নাই আরকি।

আমি সেই কৈশোর থেকেই এইসব দেখেছি। আপনারাও নিশ্চয়ই দেখেছেন আরকি। আমার ক্ষেত্রে ফলাফল যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, আমার সামনে যখন কেউ কোন মেয়ের বদনাম করে আমি সেটা অবিশ্বাস করি। এবং আমি এটা বলি। আমি জানি যে মেয়েদের নামে এইসব মন্দ কথা যখন লোকে বলে, ঈর্ষা থেকেই এইসবের সূচনা হয় এবং একশটার মধ্যে আশিটা এই ধরনের কথাই মিথ্যা কথা থাকে। ব্যক্তিগত জীবনে আমার বন্ধুরা আমার এই বিশেষ অবিশ্বাস প্রবণতাটির কথা জানেন। দুই একজন এইটা নিয়ে আমার সাথে রাগও করেছেন।

কঙ্গনা রানাঔত কিন্তু এই কথাগুলিই বলেছেন। সংক্ষিপ্ত আকারে বলেছেন, কিন্তু স্পষ্ট করেই বলেছেন। ব্যক্তিগত কন্টেক্সটেই বলেছেন, কিন্তু যখন তিনি বলেন যে, It's unbelievable that women have been treated like object, এই কথাটা কি সর্বত্রই সত্যি নয়?

(৭)
এবং তিনি কি বললেন? My success is my sweet revenge against controversy- আমার সাফল্যই সকল অপবাদের বিরুদ্ধে আমার মধুর প্রতিশোধ। তৃতীয়বার যখন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি এই কথা বলেছেন। সেইসব ফালতু ছোকরারা যারা কোন না কোন এক সময় কঙ্গনার সাথে প্রেম করেছে, বা করতে চেয়েছ, আর এখন ওকে গালাগালি করে নিজেদের প্রকৃত চেহারা দেখাচ্ছে, ওদের বিরুদ্ধে এর চেয়ে মধুর প্রতিশোধ আর কঙ্গনার কি হতে পারে।

আমাদের মেয়েদেরকেও আমি এই কথাই বলি। শোনেন, মেরুদণ্ড সোজা করে হাঁটতে শিখেন, নিজের নারী পরিচয়ে অহংকারী হবেন। নারী হওয়া কোন গ্লানির বিষয় না। আপনার নারীত্ব, আপনার শরীর, আপনার মন এই সবকিছুই আপনার। আপনি আপনার জীবন আপনার টার্মেই যাপন করার চেষ্টা করেন। নিজের জীবনযাপনের জন্যে যেন পুরুষের মুখাপেক্ষী হতে না হয় সেই চেষ্টা করবেন। সাফল্য যদি আসে ভাল কথা, যদি নাও আসে হাল ছাড়বেন না, লড়ে যাবেন। আর জানেনই তো লড়ার ক্ষমতা কিন্তু পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশী।

একটা ছেলেকে তার লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে বিশেষ কোন চিন্তা করতে হয়না- কেননা আমাদের পৃথিবীটা পুরুষ শাসিত সমাজ। কিন্তু নারীকে লড়তে হয়। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই লড়তে হয়। আপনি যখন আপনার ক্ষেত্রে লড়ছেন, নারী পরিচয়ে কখনো যেন নিজেকে ছোট বা অক্ষম বা কম ভাববেন না। লড়াইটা অব্যাহত রাখবেন। নিজে পুরুষ হয়েও এই অনুরোধ আমি সকল নারীকে করি কারণ আমি জানি নারীরই মুক্তি পৃথিবীটাকে আরও সুন্দর করবে, ভালো করবে অগ্রসর করবে। নিজের স্বার্থেই এইসব কথা বলছি।

লম্বা কথা হয়ে গেছে। কঙ্গনা রানাঔত প্রসঙ্গে এত কথা- কঙ্গনাকে সালাম। আরেকবার সালাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×