somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীরের জাতি আমরা, সমস্ত ষড়যন্ত্র কে প্রতিরোধ করবো

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইংরেজ শাসন পরবর্তী সময়ে আমাদের উপমহাদেশের জনতা মুলত দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত হয়েছিল - হিন্দু ও ধর্মনিরপেক্ষ গ্র“প এবং মুসলমান ও ধর্মনিরপেক্ষ গ্র“প। এখানে প্রথম অংশে নেতৃত্বে জহলাল নেহেরু আমার দ্বিতীয় অংশের নেতৃত্বে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ। এর ফলশ্র“তিতে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম নেয় - ভারত আর পাকিস্তান। আমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান নাম ধারণ করি। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হলাম কেন ? হাজার বছরের জাতির ইতিহাস দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়, সিন্ধু ও পালি সভ্যতার উত্তরাধিকারী আমরা মূলত সনাতন ধর্মাবলী, প্রাচ্য থেকে আগত সুফি দরবেশ, ধর্মপ্রচারক, মাইগ্রেট করে আসা মুসলমান ও ধর্মান্তরিত মুসলমানরা এই ভূখন্ডের বাসিন্দা। ধর্মান্ধতা আমাদের সামাজিক বৈশিষ্ট্য নয়, সম্মিলিত সকল ধর্মের সমন্বয়ে সামাজিক সম্প্রতির আবহে আমাদের বসবাস। তবু আমরা পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়েছি হয়তো তিনটি কারণে - (১) এ ভূখন্ডে মুসলমান সংখ্যাগড়িষ্ঠ ও গরিবশ্রেণীবদ্ধ (২) এ ভূখন্ডে সিদ্ধান্ত নেয়ার মত কোন যোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিল না, যারা ছিল তারা মূলত ব্যক্তি জিন্নাহ সাহেব কে ভক্তি করতো এবং তার সাথে থাকতে চাইছিল। (৩) মুহম্মদ আলী জিন্নাহ-এর অসম্ভব বুদ্ধিদিপ্ত ব্যক্তিত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং আদর্শের বিপরীতে গান্ধী পরিবারের উত্তরসুরী জহরাল নেহেরু শুধু গান্ধী পরিবারে জন্ম নেয়া ছাড়া কোন অতিরিক্ত যোগ্যতা ছিল না, আবার মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যদি সর্বভারতীয় কংগ্রেস এ থাকে তবে কংগ্রেস এর সভাপতি তথা ভারতীয় রাজনীতির পরিচালক হবে এটা তৎকালীন ভারতীয় উগ্র হিন্দুবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতার বলয় তৈরী করা গান্ধী পরিবার সমর্থন করতে পারেনি বিধায় তারা জিন্নাহ সাহেব এর জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে সচেষ্ট হন আর তাকে সন্তুষ্ট করতেই এই ভুখন্ডকে ‘ভেট’ হিসাবে প্রদান করা হয়।
গান্ধী পরিবার ও ভারতীয় জনতার কল্যাণে আমরা সেদিন ‘বলির পাঠা’ হিসাবে পাকিস্তানের অন্তভূক্ত হই। জিন্নাহ সাহেব এর সবসময়ই সর্বভারতীয় শাসন ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার মনোবাসনা ছিল। গান্ধী পরিবার একজন মুসলমান ভারতের শাসন ক্ষমতার অধিকারী হবে এটা মানতে পারেনি। ভারত-পাকিস্তানের এই দ্বৈরথে আমরা এই ভূখন্ডে উভয় পক্ষের রাজনৈতিক শত্র“তার শিকার। জিন্নাহ সাহেব গান্ধী পরিবারের উপর রাগ মিটাতে বাঙালীকে নির্যাতন করেছে। এই ভূখন্ডকে তাদের আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত করে মূলত গান্ধী পরিবারের উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। তারই ফলশ্র“তিতে এ ভূখন্ডে উর্দুকে জাতীয় ভাষা ঘোষণা করে আমাদেরকে উর্দু বলতে বাধ্য করতে চাইছিল। এটা তার ভারতকে সক্ষমতার জাহির এর অংশমাত্র। হাজার বছরের ইতিহাস বলে এই ভূখন্ড বীরযোদ্ধাদের জন্মদাতা। ইংরেজ শাসনামলে এই উপমহাদেশে ঐতিহাসিক ঘটনা ‘তেভাগা আন্দোলন’, ‘নীলকর বিরোধী আন্দোলন’, ‘সিপাহী বিদ্রোহ’, ‘লাঠিয়াল আন্দোলন’ ইত্যাদি সমস্ত বীরোচিত যুদ্ধ আমাদের পূর্বপুরুষরা শুরু করেছে, সফলও হয়েছে। সফল হয়েছিল এই জন্য বলছি যে, তারা তাদের প্রাথমিক সফলটা ঠিকই অর্জন করেছিল। কিন্তু ভারতীয় উচ্চবংশীয় সম্প্রদায় আমাদের নিু শ্রেণীর নেতৃত্বে আসতে চাইনি, তাই তারা ষড়যন্ত্র করেছে এবং ইংরেজদের সহযোগিতা করে ঐসব যোদ্ধাদের পরাজয়বরণ করতে বাধ্য করেছে। তবুও আমরা বীরের জাতি, যুগ যুগ ধরে আমরা এই জগতে বসবাস করছি আমাদের বীরত্ব প্রদর্শন করে। তাই জিন্নাহ সাহেবের প্রতিশোধনেশাকে ধুলিসাৎ করে প্রতিবাদী জনতা সেদিন মাতৃভাষাকে রক্ষা করেছিল যা ’৫২ ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত (আমরা প্রতিবছর ঐ বছরের ২১ ফেব্র“য়ারীতে ভাষার জন্য আমাদের যে সকল বীর যোদ্ধারা আত্ম-উৎসর্গ করেছি তাদের স্মরণে ‘ভাষা শহীদ দিবস’ পালন করি। জাতিসংঘও আমাদের এই আত্ম-ত্যাগের মহিমায় অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ দিনকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করেছে)। জিন্নাহ ও তার পরবর্তী পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠি একই পথ অবলম্বন করে, ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে আমাদেরকে তাদের আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত করার যাবতীয় অপকৌশল অবলম্বন করতে থাকে। ভারতও তার শত্র“কে শায়েস্তা করতে ভুলে যায়নি। তারাও পাকিস্তানের প্রতি রাগের বহিঃপ্রকাশ করেছে এই ভূখন্ডে বার বার আক্রমণ ও ধ্বংশ করে। কিন্তু তাদের সক্ষমতা হয়নি পাকিস্তানের একচুল পরিমাণ মাটি দখল করার। মূলত ’৫২ ভাষা আন্দোলনের সফলতা ভারতীয় রাজনীতিবীদদের নতুন কৌশল অবলম্বনে উৎসাহিত করে। তারা যুদ্ধ ময়দান ছেড়ে এবার কুটনৈতিক মিশন হাতে নেয়। পাকিস্তান বিরোধী এদেশীয় রাজনীতিবিদদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে থাকে একসময় প্রধান টার্গেট হিসাবে বেছে নেয় শেখ মুজিবুর রহমান কে। রামায়নে রাম লঙ্কা অধিকার কারতে যেমন ‘বিভীষণ’ তেমনি ভারতেরও পাকিস্তান শায়েস্তা করতে শেখ মুজিবর রহমানকে প্রয়োজন ছিল। বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, স্বাধীনচেতা, অকুতোভয় এক সৈনিক শেখ মুজিবর রহমান সেই সময়ের জন্য বাংলার যোগ্য নেতৃত্ব ছিল। তাকে দেবতাসমতূল্য পর্যায়ে পৌছাতে ভারতীয় ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ ‘র’ বিপুল অর্থ নিয়ে বাংলাদেশে তাদের মিশন পরিচালনা করতে থাকে। অর্থ, সম্মান ও ভারতীয় দালালদের পরিবেষ্টিত করে শেখ মুজিবর রহমানকে সেদিন ভারতীয় লবিং মেইনটেইন করতে বাধ্য করা হয়। ’৬৯ এর নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে এই ভূখন্ডের বাসিন্দারা স্বপ্ন দেখে শাসন-শোষন-নির্যাতনের হাত মুক্তি পাওয়ার। পক্ষান্তরে পাকিস্তান ও তাদের এদেশীয় সুবিধাভোগী শ্রেণী নিজেদের এমন পরাজয় মানতে পারছিল না। পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের গোলামী ছেড়ে ভারতে গোলাম-এ পরিণত হবে এটা অন্তত পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কোন ভাবে মেনে নিতে পারেনি। বিজয়ী রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতা না দিয়ে আর্মির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় মূলত তাদের গোলাম অন্য কারো গোলামী করবে এটা মানতে না পারার কারণ। তাদের ভয় ছিল শেখ মুজিবর রহমান যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে সমগ্র পাকিস্তানকে ভারতের গোলামে পরিণত করবে। ’৬৯ এর শেখ মুজিবরের বিজয়ে ভারত প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। তাদের সম্পূর্ণ লক্ষ্য অর্জন করতে শেখ মুজিবর রহমানকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানোর প্রয়োজন ছিল কিন্তু পাকিস্তানীরাও এ ষড়যন্ত্রে বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হিসাবে দেশ রক্ষা, ধর্ম রক্ষা ইত্যাদি অজুহাত দাড় করায় এবং গঠন করে ‘রাজাকার’,‘আল-বদর’, ‘আল-শামস’ ইত্যাদি বাহিনী। এই সব দালাল শ্রেণী আর পাকিস্তানীরা মিলে এ জাতিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করতে থাকে, উর্দুতে কথা বলতে বাধ্য করে, শোষণেও মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। ভারত নতুন অর্থের যোগান দেয়, ভারতীয় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এদেশীয় হিন্দু সম্প্রদায় ও ভারত প্রভাবিত সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রগুলো ভারতীয়দের কাছে বিক্রি হয়ে একপ্রকার ‘ত্রাণ’কারীর ভূমিকা অবতীর্ণ হয়। যার ফলে পাকিস্তানী আর্মি এ ভূখন্ডে বসবাসকারীদের সাথে জানোয়ারের মত আচরণ করে। ’৭০ ও তার পরবর্তী ’৭১ সালে মূলত লড়াই হতে থাকে এই ভূখন্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে। দুইদেশই আমাদেরকে তাদের গোলামে পরিণত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে, একপক্ষ পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের এদেশীয় দালাল শ্রেণী, অন্যপক্ষ শেখ মুজিবর রহমান, আওয়ামীলীগ ও হিন্দুধর্মাম্বলী আর ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওরানো ভারতীয় দালাল। ভারত-পাকিস্তানের এই যুদ্ধে ‘বলির পাঠা’ আমরা এই ভূখন্ডের বাসিন্দা। ইতিহাস পড়ে যতটুকু অন্ততঃ আমার মনে হয়েছে যে, তখন আমাদের সমর্থনের জন্য একটা সুইচ নির্ধারণ করা হয়েছিল - (অন) মুজিবকে সমর্থন ও ভারতীয় গোলামী বরণ করা (অফ) পাকিস্তানের গোলাম করা। দ্বিধাগ্রস্থ জাতি কখনো চায়নি কারো দালালী করবে। কিন্তু উপায়ও ছিল না, কারণ মধ্যমপন্থা বলে কিছু ছিল না। কোন পক্ষ যারা নেয়নি তারা দুইপক্ষের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বীরের জাতি নিজেকে রক্ষা করতে সুবিধাজনক অবস্থান মুজিবকে সমর্থন করাটাই শ্রেয় মনে করে এবং পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। পাকিস্তানীরা এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে নিরস্ত্র জনতার উপর সশস্ত্র হামলা করে। দেয়ালে পীঠ থেকে যাওয়া বাঘের অবস্থা যেমন হয় তেমনি বীরের জন্য বিখ্যাত জাতি পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে শেখ মুজিব গ্রেফতার উত্তর সময়ে ভারতও ত্রাণকর্তার ভূমিকায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে। এটা আমাদেরকে সহযোগিতার জন্য নয় পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে। তাদের উভয়দিকে লাভ ছিল - যদি মুক্তিযোদ্ধা জিতে পারে তবে আমরা তাদের গোলামে পরিণত হবো (বর্তমান অবস্থা) আর যদি জিততে না পারে তবে পাকিস্তানকে তাদের নিজেরই আগুন ধরিয়ে যতটুকু পারা যায় ক্ষতিগ্রস্থ করা। নির্যাতিত, আপমানিত এ জাতি বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকে। বাংলার অকুতোভয় সৈনিক-জনতা তথা সমগ্র জাতির সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সম্পুর্ণ ভূখন্ড পাকিস্তানীদের জন্য মুত্যুকুপে পরিণত করে।
বাঙালী জাতির এ বিজয় ভারতীয়দের জন্য নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে। বিজয়ী বীর সেনানীরা যদি নিজেরা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে চায় তবে ভারতীয়দের চিরকালের আকাঙ্খা এ ভূখন্ডবাসীকে গোলামে পরিণত করার, তা আর সম্ভব হবে না। অতএব সক্রিয়ভাবে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে, বিজয় ও বিজয় পরবর্তী সিচুয়েশন নিজেদের পক্ষে রাখতেই মূলত সেদিন ভারতীয় সেনাবাহিনী সরাসরি যুদ্ধ করতে এসেছিল। এ সহযোগিতা এ ভূখন্ডবাসীকে নয়, ভারতীয়রা বহুকাল ধরে যে সুযোগের অপেক্ষায় মেধা-অর্থ-শ্রম ব্যয় করেছে সেই সুযোগ গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ গ্রহণ করতে। তারা তাদের ক্ষতিপূরণ সুদে আসলে উসুল করছে এমনকি আগামী ১০০বছরে ভারত আমাদেরকে গোলাম বানাতে আরো যত অর্থ প্রয়োজন হতে পারে তার আনুমানিক হিসাব করেছে নিয়ে গেছে, পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া সম্পদ, রিজার্ভেশনে থাকা স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা, যুদ্ধে ও পাকিস্তানী সরকার ব্যবহৃত যানবাহন ইত্যাদি যা কিছু ছিল তা ‘নিরাপদ অবস্থান’এ রাখার অজুহাতে সীমান্ত পার করে নিয়ে গেছে যা আমরা কখনো ফেরত পাইনি। এমন কি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের আদলে তারাও দির্ঘ্যস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তুতি নেয় কিন্তু স্বাধীনচেতা শেখ মুজিবর সম্ভাব্য ভবিষ্যত জাতীয় বাধা উপলদ্ধি করে মূলত তাদেরকে এদেশ থেকে সেনাক্যাম্প গুটিয়ে নিতে বাধ্য করে।
শুনেছি ’৭১ এর ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানীরা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়ে আত্মসমার্পন এর প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু ভারতীয় কোন কমান্ডিং সেনা কর্মকর্তা তখনও যুদ্ধ ক্ষেত্রে না থাকায় তারা অযথা সময় ক্ষেপন করে, অতপর বিজয়ের কৃতিত্ব একক ভারতীয়দের জাহির করতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে মিসগাইড করে সিলেট সেনানিবাসে নজরবন্দী রাখে, যাতে আত্ম-সমার্পন নাট্যমঞ্চে দুটি পক্ষ (১) ভারত (২) পাকিস্তান হয়। এমনকি আত্মসমার্পন চুক্তিপত্রে সরাসরি লেখা হয় পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্ম-সমার্পন করছে। তাহলে আমরা কি করলাম ? আমাদের যোদ্ধা কি করল ? যুদ্ধ কি তাহলে ভারত-পাকিস্তান হয়েছে ? আমি আরো হতবাক হয়ে যায় যখন দেখতে সম্পূর্ণ চুক্তিপত্রে কোথায় ‘বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীনতা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’, ‘মুক্তিযুদ্ধা’ এই জাতীয় কোন শব্দের উল্লেখ নাই। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির স্বাধীনতা বা মুক্তির মুহুর্তে একটি স্মারক আছে, আমাদের আছে একটি চুক্তি যেখানে আমার দেশের নাম বা ঐ জাতীয় কোন শব্দের উল্লেখ নাই। এমন কি এই আত্ম-সমার্পন পত্র দ্বারা কোনদিন প্রমাণ করা যাবে না যে ওটা আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল।
কোন সাক্ষী থাক বা না থাক, সত্য ইতিহাস হল আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি, ভারত আমাদের বিজয়ী মুহুর্তে এসে আমাদের বিজয়কে আত্মসাৎ করেছে কিন্তু আমি গর্বিত ’৭১ এর বীরদের জন্য। কিন্তু কোনভাবে আমরা অন্যের গোলামী করতে পারি না। ভারতের সমস্ত চক্রান্ত একদিন অবশ্যই আমরা নিশ্চিহ্ন করবো। আর যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে যে প্রহসন চলছে তার বিচার একদিন আমরা করবো। বর্তমান বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার-আলবদর-আলশামস্-শান্তি বাহিনী তথা ’৭১ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতা বা এ ভূখন্ডের বাসিন্দাদের নির্যাতনকারীদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। ২০১০ সালের দিকে যখন এ বিষয়ে ট্রাইবুনাল গঠন হল আমি খুশি হয়েছিলাম। আমি কমিউনিজম-এ বিশ্বাসী হওয়ায় প্রচলিত রাজনীতি আমি পছন্দ করি। তবুও সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ আমাকে কিছুটা হলেও আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার প্রতি দুর্বল করেছিল। কিন্তু আজ ২০১৩ সালের পরিস্থিতি আমাকে মর্মাহত করেছে। গত ৩বছর ধরে সরকার মাত্র ৮ জন যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করেছে, মাত্র দুজনের শান্তি নির্ধারণ করতে পেরেছে। আমি বুঝতে পারছি না এসব রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার কেন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে, তাও মাত্র ৮ জনের জন্য। আমি আজ শুধু এটুকু বলতে চাই বাংলাদেশে মাত্র ৮জন রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী ছিল না। আমাদেরই মাঝে ঘুরে বেড়ানো মুখোশধারী শয়তান, সকলের বিচার করতে হবে। যদি সরকার এর বিচার না করতে পারে তবে শুধু আমাদের এটুকু সহযোগিতা করুক; সমস্ত রাজাকার-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা ও অপরাধের বিবরণ প্রকাশ করুক। আমারা জনতারা আজো প্রতিশোধের নেশায় প্রহর গুনছি। এ দেশের আনাচে-কানাচে বা আমাদের সাথে ঘুরে বেড়ানো সমস্ত যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার-দালাল বিচার আমরা নিজের হাতে করবো।
আজ যারা যুদ্ধাপরাধী বা ’৭১ এর রাজাকার-দালালদের প্রতিরোধের নামে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে যে সকল অপ-প্রচার চালাচ্ছেন দয়া করে তা বন্ধ করুন। ইসলাম ধর্ম আপনাদের কোন ক্ষতি করেনি। ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদাগার না করে ঐ সব লোকের সন্ধান করুন যারা ’৭১ আমাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করুন, অপরাধের বিবরণ সংগ্রহ করুন, সাক্ষীদের সাথে কথা বলুন এবং সংরক্ষণ করুন, আমরা অবশ্যই ঐ শুয়োর-কুত্তা-হায়েনাদের বিচার করবো। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান শতাব্দীব্যাপী যুদ্ধ আমাদের ভূখন্ডে শুরু করবেন না দয়া করে। পাকিস্তান ইসলাম ধর্মের নামে যে অপকর্ম করেছে তার শাস্তি দাবী করুন, ইসলাম ধর্মের নয়। ভারতীয় দালালদের কথা শুনে নাস্তিক হতে যাবেন না। ভারত বা পাকিস্তান কেউ আমাদের বন্ধু নয়, সবাই আমাদেরকে তাদের গোলামে পরিণত করতে চাই, এদেরকে প্রতিরোধ করুন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×