somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাব্যপ্রেমী রিফাত
মায়াবতী বেঁচে থাকবে আমার গল্পে, গল্পেই তার জন্ম, গল্পেই তার অস্তিত্ব আর আমার অস্তিত্ব মায়াবতীর কল্পনায়...... অসাধারন কল্পনা থেকে বাস্তবতায় সাধারন বেশে হেঁটে হেঁটে পৃথিবীর ধূলিকণা খাই...

REVENGE !

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- ফারিহা , জানিস মেঘ মারা গেছে ?
: কোন মেঘ ?
- আশ্চর্য ! দুবছর খুব না চুটিয়ে প্রেম করলি।
: ওহ ! কিভাবে ? আর জাস্ট ওয়েস্ট ছিলো আর দশটার মত । সে জাস্ট এক্স বয়ফ্রেন্ড। নাথিং এলস।
- শুনলাম ! ছাদ থেকে পিছলে পড়ে গেছে !
: আহারে বেচারা ! বড্ড ভালোবাসতো ! কিন্তু ক্ষ্যাত ছিলো ।
- মরা মানুষরে কেউ এমনে বলে ?
: আন্টিকে ফোন দিয়ে একটু কান্নাকাটি করি ! আন্টি মানুষটা ভালো।মেঘটাও খারাপ ছিলো না । এনি এয়ে খারাপ লাগতেছে।

বান্ধবীকে বিদায় দিয়ে ফারিহা খানিকটা বিরক্ত হয়ে ফোন করে মেঘদের বাসায়। মেঘের মা ফোন ধরে একটি কথাও বলেনি।এমনকি করে নি টু শব্দও!ফারিহা হ্যালো হ্যালো বলে রেখে দিয়েছে।কদিনের মাথায় মেঘের মা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্হ হয়ে পড়েন।

মেঘের ছোট ভাই ফারিহার ব্যাচমেট বলে জানতো ফারিহা।নাম্বারটা দিয়েছিলো একবার মেঘ।খুঁজতে গিয়ে অনেক অনুনয় আর ক্ষমা চাওয়ার মেসেজগুলো খানিকক্ষন চোখ আটকে যায়।
ফোন দেয় মেঘের ভাইকেঃ
মেঘের ভাই কেবল চুপ করে শোনে আর বলেঃ কেবল সে স্মার্ট না বলে তুমি রিজেক্ট করায় ভাইয়া সুইসাইড করেছে। তুমি জানো ?
ফারিহা উল্টো বলেঃ সেটা তোমার ভাইয়ের প্রবলেম । আমার কি?
মেঘের ভাই ফোনটা রেখে দিয়ে একটা টেক্সট করেঃ
Oneday you will pay!
ফারিহা পাত্তা দেয় না।লিখে পাঠায়ঃ
হু কেয়ারস !

একবছর পরঃ
ফারিহা ফেসবুকে ঢুকে দেখে এক মডেল তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে।নামঃ আকাশ চৌধুরী।কয়েক হাজার ফলোয়ার তার।ছবিতে হাজারের ওপরে লাইক।দেখতে দারুন হ্যান্ডসাম।
ফারিহা সাথে সাথে একসেপ্ট করে নক দেয় না।ভাবের একটা ব্যাপার আছে।

আকাশই প্রথমে নক করে।কথা হতে থাকে প্রায়ই।আর ফারিহাও গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়।

দুজনের ভেতর অসাধারণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং।কথায় কথায় আকাশ ফারিহাকে প্রস্তাব দেয়ঃ প্রফেশনাল মডেল হওয়ার জন্য পত্রিকার ফটোশ্যুটের।

ফারিহার ড্রিম ছিলো মডেল হওয়ার।বান্ধবীদের দেখিয়ে দিতে পারবে সে কত সুন্দরী।

আকাশই জুটিয়ে দেয় একটা এড।এডে কাজ করার পর থেকে নাটক আর টেলিফিল্মে ডাক আসে।

এদিকে আকাশের প্রতি দুর্বল হতে থাকে ফারিহা।ছেলেটার মধ্যে কি একটা ব্যাপার আছে যেন।
ফারিহা যদি ইচ্ছে করে হাতটাও ধরে ছেলেটার চেহারা বদলে যায় রাগী রাগী একটা ভঙ্গিতে।
কেমন জানি নিজেকে ছোট লাগে।এতদিন ধরে পরিচয় অথচ ফারিহার প্রতি এতটুকু দুর্বলতা নেই ? কেন ?

ফারিহার জেদ চেপে যায়।অহংকারের চূড়ায় উঠে যাওয়া ফারিহা সিদ্ধান্ত নেয় ছেলেটার সাথে অভিনয় করে ছেড়ে দিবে মেঘের মত।ছেলেটার চেহারার সাথে খানিকটা মিলে যায় ফারিহার চেহারা।প্রতিবার যখন আকাশ ফারিহার হাত ছেড়ে দেয় কেন জানি মেঘের চেহারা দেখতে পায়।

ফারিহার জন্মদিনের আগের রাতে সবাইকে বার্থডেতে ইনভাইট করে ফিরতে রাত হয়ে যায়।সারাদিন আকাশ সাথে ছিলো।সব কাজ শেষ হতেই আকাশ প্রস্তাব দেয়ঃ
তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।

বলে ফারিহার চোখ বেঁধে দেয়।দুজন ইচ্ছেমত বারে ড্রিংকস করে।তারপর আকাশ ফারিহার ড্রিংকসে অতিরিক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে দেয়।

নেশার ঘোরে আচ্ছন্ন ফারিহাকে টানবাজারে রেখে আসে মহিলা ব্যাপারীর কাছে।একলক্ষ টাকা দিয়ে বলে আসেঃ
মেয়েটাকে যেন কেউ স্পর্শ করতে না পারে কাল দুপুর পর্যন্ত ও এখানেই থাকবে।
মিডিয়া আসবে।তুমি শুধু বলবেঃ সে সারারাত এখানে ছিলো।

দুপুর বারোটায় ছিল ফারিহার জন্মদিন।পুরো বাড়ি গেস্টে ভরে গেছে।অথচ রাত থেকে ফারিহা নিঁখোজ।আকাশ সকাল থেকে দাঁড়িয়ে সাজিয়েছে পুরো বাড়ি।

সবকিছু প্লানমতই ঘটে।ফারিহার ফোন বন্ধ।হঠ্যাত্‍ টিভিতে ব্রেকিং নিউজে দেখায় টানবাজার থেকে মাতাল অবস্হায় বেসামাল ফারিহাকে।আর সাথে থাকে অনেক নোংরা তথ্য।

পুরো বাড়ি ভর্তি গেস্টের সামনে একমুহূর্তে চূর্ণ হয়ে যায়।
ফারিহার মা অজ্ঞান হয়ে যায়।বাবা বসে পড়ে।
লোকজন ছিঃ ছিঃ করতে করতে চলে যায়।

ফারিহা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা আকাশের ঠিকানা বের করে।

কিন্তু

বাড়িতে ঢুকতেই অবাক হয়ে যায় ফারিহা।
বসার ঘরের দেয়ালে ঝুলছে আকাশের ছবি।

আকাশ হুইলচেয়ারে বসা একজন মহিলাকে নিয়ে ঘরে আসে।
মহিলাকে খুব চেনা চেনা লাগে।
ঘোরের মধ্যে চলে গেছে ফারিহা।

আকাশ শীতল কন্ঠে বলেঃ
চিনতে পারছো না ? আমি মেঘের ছোট ভাই।এই যে আমার মা।
যে কিনা তোমার অপরাধে হারিয়ে ছিলো তার আদরের ছেলেকে!

থেমে যোগ করেঃ
ভাইয়া কখনো তোমাকে ছুঁয়ে দেখতো না এটা তার অপরাধ ছিলো ? অথচ যখন তার বিশ্বাস ভেঙে অন্য ছেলেদের সাথে রুম ডেটিং এ যেতে এতটুকু বাঁধেনি তোমার? সবকিছু মেনে নিয়েছিলো আমার ভাই।তবু তুমি তার কাছে ছোট থাকতে চাও নি বলে একের পর এক অপমান করেছো?
নিয়মিত মানসিকভাবে দুর্বল করে ঠেলে দিয়েছো মৃত্যুর দিকে।

ফারিহা বলতে ধরেঃ কিন্তু তুমি যা করেছো ,,

মুখের কথা কেড়ে নেয় আকাশঃ
হ্যাঁ । আমিও অপরাধ করেছি।কিন্তু তোমার কোন ক্ষতি করি নি।তুমি তো কম পুরুষের কাছে যাওনি।
হয়তো কালও যাবে।
এটাই তুমি।
আমি কেবল তোমার চেহারাটা দেখিয়েছি।

আমি আমার ভাইয়ের মৃত্যু দেখেছি।আমার মায়ের কান্নাভরা লক্ষ্যহীন দৃষ্টি দেখেছি।হাসতে দেখি নি সেদিনের পর।
তুমি আমার সব কেড়ে নিয়েছো।অথচ চাইলেই পশুদের দিয়ে কুড়ে কুঁড়ে খাইয়ে নিতে পারতাম।পারতাম খুন করতে । কিংবা পশুত্ব দেখাতে।
আমি তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি।
তোমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে।

ফারিহা কিছু না বলে উঠে যায়। পৃথিবীটা তার কাছে শূন্য লাগছে।
মেঘের মত সেও অপরাধ বোধে ভুগছে।সবাই তাকে দেখছে নোংরা চোখে।
ফারিহা আত্মহত্যা করে নি।
কিন্তু
বেঁচে থাকা জীবনটা তার কাছে মৃত্যুর চেয়ে কঠিন।

অনেকদিন পর আকাশ মেঘের সুইসাইড নোটটা আবার পড়েঃ
I QUIT.

আকাশে কালো মেঘ জড়ো হয়েছে।বিদ্যুত্‍ চমকাচ্ছে।একটু পরে খুব জোরে বৃষ্টি নামে।আকাশ মায়ের পাশে বসে আছে।হঠ্যাত্‍ মা বড় ছেলের নাম ধরে ডেকে ওঠেনঃ
মেঘ !
দু ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে মায়ের গাল বেয়ে।

লিখাঃ কাব্যপ্রেমী রিফাত।।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×