somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনান্দের বনলতা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৮ই ফেব্রুয়ারী রুপসীবাংলার কবি জীবনান্দ দাসের জন্মদিন,তার সবচেয়ে জনপ্রিয় চির সবুজ কবিতা"বনলতা সেন"আজও হাজার প্রেমিক হৃদয়ের শান্তির এক প্রতিক হয়ে আছে,,,
নাটোরের কথা উঠলে আসে বনলতা সেনের
নাম। নাটোরের মানুষ পরিচিতি পায়
বনলতা সেনের দেশের মানুষ হিসেবে। কবি
জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নকন্যা। অপার
শান্তির এক রহস্যময় চিত্রকল্প। কিন্তু কে
এই বনলতা সেন? তার সম্পর্কে কবি নিজে
কখনও স্পষ্ট করে কিছু বলেন নি। বনলতা সেন
নামে বাস্তবে কেউ ছিল কিনা সে
প্রশ্নের জবাব মেলে নি আজও। তবে তার
যে নারী চিত্র কবি অঙ্কন করেছেন তা
বাংলা কবিতার ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
বনলতা সেন কবিতাটি পড়ে কোটি তরুণ
হূদয় এখনও আপ্লুত হয়। ক্লান্তির ছায়া
নামে প্রাণের গভীরে। রাত্রির অন্ধকারে
মন চায় মুখোমুখি বসতে।
কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম ১৮৯৯ সালের
১৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শহরে। যৌবনে
কলকাতায় পথ চলা শুরু। বিষাদময় জীবনের
ধূসর জগতে কবি হেঁটেছেন হাজার বছর ধরে।
সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগর ঘুরে
অশোকের বিম্বিসার আর বিদর্ভ নগরীর
পথে পথে। ক্লান্ত প্রাণ কবিকে দু'দন্ড
শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
১৮ পংতির কবিতাটির মধ্যে জীবনানন্দ
দাশ মোট তিন জায়গায় বনলতা সেনের
নাম উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ও
দ্বিতীয় স্তবকে 'নাটোরের বনলতা সেন'
শব্দকয়টি দিয়ে এক বিশেষ স্থানকে
সুষমামন্ডিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায়
বনলতা সেনের পরিচয় জানার কৌতূহল
পাঠকের হতেই পারে। শ্রান্ত পথিকের
মুখোমুখি এক চিরচেনা বাঙালি রমণী
অন্ধকারে কি কথা শুনিয়েছিল? কবি কেন
লিখলেন,'এই ডাঙা ছেড়ে হায় রূপ কে
খুঁজিতে যায় পৃথিবীর পথে
বটের শুকনো ঝরা পাতা যেন এক যুগান্তের
গল্প ডেকে আনে
ছড়ায়ে রয়েছে তারা প্রান্তরের পথে পথে
নির্জন আঘ্রাণে
তাদের উপেক্ষা করে কে যাবে বিদেশে
বল- আমি কোনোমতে
বাসমতি ধানক্ষেত ছেড়ে দিয়ে মালবারে-
উটির পর্বতে
যাব নাক- দেখিব না পামগাছ মাথা নাড়ে
সমুদ্রের গানে
কোন্ দেশে- কোথায় এলাচি ফুল
দারুচিনি বারুণীর প্রাণে
বিনুনি খসায়ে বসে থাকিবার স্বপ্ন আনে-
পৃথিবীর পথে......
অশ্বত্থের পাতাগুলো পড়ে আছে ম্লান
সাদা ধুলোর ভিতর
এই পথ ছেড়ে দিয়ে এ জীবন কোনো খানে
গেল নাক তাই'
কবি কি সেই
জোনাকির রঙে ঝিলমিল সন্ধ্যার পর
নাটোরে কোন এক বনলতা সেনের
মুখোমুখি বসেছিলেন? কবি ছিলেন
অনেকটা নিভৃতচারী। তেমন কারও সঙ্গে
দেখা করতেন না, কথাও বলতেন খুবই কম।
কবিতা ও সাহিত্য বিষয়ে অন্যের সাথে
তার আলাপচারিতা ছিল অতি সামান্য।
তো বনলতা সেন কবিতাটি লেখার পর তার
নিকটাত্মীয়দের কয়েকজন প্রশ্ন করেছেন,
মেয়েটি কে, কি তার পরিচয়? বিবাহিত
একজন পুরুষের সাথে অপর নারীর সঙ্গে
সম্পর্ক কেন? এছাড়া কবিতাটির জন্য
সমালোচিত হয়েছেন তিনি। সজনীকান্ত
দাস শনিবারের চিঠিতে লিখেছেন,
'...জলসিঁড়ি নদীর ধারে যেখানে ধানসিঁড়ি
ক্ষেত তাহারই পাশে জাম হিজলের বনে
তাঁহার মন এতকাল পড়িয়া ছিল। নাটোরের
বনলতা সেন সেখান হইতে তাঁহাকে উদ্ধার
করিয়া কাঁচাগোল্লা খাওয়াইয়া অনেকটা
দুরস্ত করিয়া আনিয়াছিলেন। কিন্তু জাল
ছিড়িয়া তিনি আবার ভাসিয়াছেন— চিতা
বাঘিনীর ঘ্রাণে ব্যাকুল ঘাই হরিণীর মত।
আর তাঁহাকে ফিরিয়া পাওয়া যাইবে না।'
তবে এ নিয়ে জীবনানন্দ দাশ কোন মন্তব্য
করেন নি।
বনলতা সেন কবিতাটি বাংলার মাটি,
মানুষ ও নিসর্গ নিয়ে তার মায়াবী কলমে
লেখা বর্তমান ও অতীতের সমস্ত
প্রিয়তমাদের মুখ। অর্ধ শতাব্দিকাল পূর্বে
রচিত এই কবিতা একান্তই বাঙালি ও
বাংলাদেশের। নতুন শতাব্দির বাতাস
বইতে শুরু করলেও পুরনো হয় নি এতটুকু।
যেভাবে সমুদ্রের ঢেউ পুরনো হয় না,
পুরনো হয় না নদীর স্রোত, পাখির গান
কিংবা ফুলের সৌরভ।
নাটোরে বনলতা সেনকে খোঁজার অন্ত
নেই। প্রবীণজনের মতে নাটোরে
এসেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। নাটোরের
সাহিত্যামোদী জমিদার তারা প্রসাদ
সুকুলের আমন্ত্রণে তার বাড়িতে রাত্রি
যাপন করেন। তারা প্রসাদের ম্যানেজার
ভুবন সেনের বিধবা ভগ্নি বনলতা সেন। এক
সময় উভয়ের সাক্ষাত্ হয়। এই ঘটনার কোন
ঐতিহাসিক প্রমাণাদি নেই। কিন্তু
বিশ্বাস করতে মন চায়।
আজন্ম বিষন্নতায় ডুবে থেকে কবি
দেখেছেন বাংলার ধূসর সবুজ বৃক্ষের ডালে
হলুদ পাখি। শুনেছেন ঘুঘুর ডাক। শরতের
শুভ্রতায় লীন হওয়া ভোরের আকাশ।
বিষন্ন মন অজান্তেই জলময়ুরের নাচ দেখে
অতি সন্তর্পণে, নীরবেই ভেসে চলে
প্রমোদতরী। স্ফটিকস্বচ্ছ কপালের নিচে
মায়বী চোখ খোঁজে রূপালী চাঁদের
আলো। দুলে ওঠে স্বপ্নের শাড়ি আর
পৃথিবীটা ভরে ওঠে পরাজিতের কবরে।
থাকে শুধু অন্ধকার।
প্রায় গতিহীন ট্রামের নিচে পড়ে ১৯৫৪
সালের ২২ অক্টোবর জীবনানন্দ দাশের
জীবনাবসান হয়। কবির জন্য দেয়ার কিছুই
নেই। আছে শুধু দুই ফোঁটা অশ্রু।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×