বল্গটা বাঙালি নামের এক ভদ্রলোকের দেয়া। একজন রোহিঙ্গা শরনার্থীর কীর্তিকলাপ নিয়ে লিখিত পোষ্ট।
সেখানে অনেককেই দেখলাম কমেন্টও করেছেন। কেউ কেউ শাস্তিও দিয়েছেন বা চেয়েছেন। আবার একজন তার ৮ দিনের ক্যাম্পিং অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করলেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা সম্পর্কে আপনারা কতটা জানেন বা কেউ কি কুতুপালং/নয়াপাড়া/লেদা/খাংড়া এসব ক্যাম্পে গেছেন?
আমার মনে হয় কেউই যান নি আপনারা। কারণ ওরকম টয়লেটের দুর্বিসহ গন্ধ আর চামড়া পোড়ানো তাপ সয়ে ওদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে বেড়ানো আসলেই চাট্টিখানি কথা না। মোটামুটি হিম্মতের ব্যাপার। ঘুরে আসার পর নির্ঘাত টয়লেট টু বিছানা বারবার। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমি এর সবকটি ক্যাম্পেই বেশ কয়েকবার করে গিয়েছি। না, কারও বা কোনো এনজিওর পক্ষ হয়ে নয়। শুধুমাত্র নিজের জন্য, সত্য অনুসন্ধানের জন্য,মানবাধিকারের জন্য,জিও পলিটিক্যাল ইস্যুর জন্য আমার এ ঘুরে বেড়ানো।
রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে শরনার্থী। ১৯৯২ সালে তারা নাফ নদী পার হয়ে আমাদের দেশে ঢুকে পরে। তাদের দেশে সামরিক সরকারের কারণে তারা থাকতে না পেরে আমাদের এখানে তারা আশ্রয় গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছে। একঅর্থে তারা আমাদেরই মানবিক মেহমান। কিন্তু আমরা তা চিন্তা না করে উল্টো পশুর মতো ব্যবহার করি। কারণ আমরা জাতি হিসেবেই একটু নিমকহারাম কিনা। আমরা ভুলে যাই ৭১ সালে আমরাও শরনার্থী ছিলাম পাশের দেশে। আমাদের দেশেও সামরিক বাহিনীর দৌরাত্ম ছিলো।
যাই হোক এবার কাজের কথায় আসি। নিউজটা লিখেছেন নুরুল করিম রাসেল নামের এক সাংবাদিক। এই সাংবাদিকের বহু আগে থেকেই এমন ভুড়ি ভুড়ি নিউজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এমনও দেখা গেছে ঘটনা ঘটার আগেই নিউজ চলে গেছে ট্রেসিং রুমে। এই হলো নুরুল করিম রাসেল। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে হাতে গোনা ২জন সাংবাদিক কাজ করেন ওখানে। এই দুই জনের কাছ থেকেই বাংলাদেশের সকল পত্রিকায় নিউজ যায়। তারমানে এই দুজন যদি বলে কুতুপালং ক্যাম্পে ছেলেরা ভয়ে গাছে উঠে আছে আর তাদের বীর্যে সিক্ত হবার জন্য সাত সাতজন করে রোহিঙ্গা নারী রীতিমতো নাচনকোদন করছে তাহলে সেটাই পরদিন সব পত্রিকায় আসবে এবং আমাদেরকে সেটাই বিশ্বাস করতে হবে। একেই বলে আধিপত্যবাদীতা। তানা হলে তিনি কিভাবে লিখতে পারেন " রোহিঙ্গা নরপশুর কান্ড " । একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষকে না জেনে না চিনে কিভাবে নরপশু বলা সম্ভব।
আমি মাত্র ২ দিন আগে ওই ক্যাম্প থেকে এসেছি। ক্যাম্পটি কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্পের গা লাগেয়া।(এখানে বলে রাখা বিবেচ্য, ওখানে ক্যাম্প দু প্রকার। এক হলো রেজিস্টার্ড ও অন্যটি ননরেজিস্টার্ড। রেজিস্টার্ডে থাকে প্রায় ১৫০ পরিবারের মতোন এবং তাদের জীবন জীবিকা মোটামুটি ভালোই, সরকারী রেশন তাদের নিত্য প্রাপ্য বিষয়। কিন্তু আন রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে থাকে আমার দেখা মতে প্রায় ৪৫০০০(শুধুমাত্র কুতুপালং ননরেজিস্টার্ড ক্যাম্প) লোক এবং তাদের জীবন যাপন পুরোই মানবেতর এবং আদিম) সেখানে একপ্রকার অস্থিরতা চলছে। বর্তমানে বিরাজমান এ অস্থিরতা মূলত ভোটার কার্ড এবং বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক রোহিঙ্গাদের বিদেশে প্রেরন সংক্রান্ত। এক শ্রেনীর বদমাইশ বাঙালি স্থানীয় ভোটে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার জন্য তাদের ভোটার আইডি কার্ডের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এতে করে সাধারণ রোহিঙ্গা যারা ননরেজিস্টার্ড ক্যাম্পে থাকে, তাদের ভেতর উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ ওই কার্ডের বিনিময়ে সেই রোহিঙ্গা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারছে এবং সন্মান পাচ্ছে একজন বাঙালি হিসেবে। আর অন্যদিকে বেশকিছু বিদেশী এনজিও রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের বিভিন্ন পরিবারকে বিভিন্ন মেয়াদে তৃতীয় কোনো দেশে মাইগ্রেট করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এতে করেও অসন্তোষ দানা বেধে উঠেছে ওখানে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে যেসকল রোহিঙ্গাই কথা বলতে গেছে হয় তাদেরকে নাফ নদীতে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে নতুবা মাদক থেকে শুরু করে নারী নির্যাতনের মতো জটিলতায় ফাসিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছে ক্যাম্প বাঙালিরা। আর এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা।
আজ অবধি রোহিঙ্গা সংক্রান্ত কোনো পজেটিভ নিউজই কোনো পত্রিকায় আসেনি। সেটা ওখানকার আঞ্চলিক পত্রিকা হোক বা রাষ্ট্রীয় বড় কোনো পত্রিকাই হোক। বারংবারই শুধু পত্রিকার পাতায় রোহিঙ্গাদের দেখা যায় ভিলেনের ভুমিকায়। আমি অনেক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেছি, যারা কেউই এই দেশে এরকম মানবেতর জীবন যাপন করতে চায়না। তাদের গ্রাম ছিলো, মসজিদ ছিলো, উঠোন ছিলো। ছিলো তাদের চোখ ভরা স্বপ্ন। অথচ তাদের আজ কিছু নেই। তবুও তারা আশা করে। যদি কোনোদিন তাদের দেশে আবার সুদিন আসে তাহলে তারা আবার ফিরে যাবে তাদের মকানে।
সেই ব্লগ লেখা ( Click This Link )