somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলের বদলে ছেলে বিসর্জন!

১৩ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কল্লোল কর্মকার, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম


তপ্ত মরুভূমির মধ্য দিয়ে ছোট দুটি সন্তান নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে হাঁটছেন এক মা। দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচতেই তিনি সন্তানদের নিয়ে ছুটছেন শরণার্থী শিবিরের পথে। কাছে পান করার মতো যতটুকু পানি ছিল তা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সামনে বাকি আছে আরও দীর্ঘ পথ।

এমন অবস্থায় রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়লো চার বছরের ছেলে। অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে তার মাথায় পানি ঢালতে হবে। কিন্তু যেটুকু পানি আছে তা ছেলের মাথয় ঢাললে বাঁকি পথ চলতে গিয়ে তৃষ্ণায় মারা যাবে কোলের এক বছরের মেয়েটি। এমন অবস্থায় কী করতে পারেন ওই মা? ছেলেকে বাঁচাবেন নাকি মেয়েকে? তাকে সিদ্ধান্ত নিতেই হয়, কোন সন্তানকে তিনি বাঁচাবেন।

করুণ এ কাহিনী সোমালিয়ার এক মায়ের। এক বছরের মেয়ে আর চার বছরের ছেলেকে নিয়ে মা ওয়ার্দো মাহমুদ ইউসুফ দুই সপ্তাহ ধরে হাঁটছেন দাবাব শরণার্থী শিবিরের পথে। সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষ থেকে প্রাণ বাঁচাতেই তার এই ছুটে চলা।

দীর্ঘ যাত্রার শেষ পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লো তার চার বছরের ছেলে। ওয়ার্দো ভাবলেন, ছেলের মাথায় একটু পানি ঢাললে হয়তোবা সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু তার কাছে আছে অল্প একটু খাবার পানি। সেই পানি দিয়ে দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিতে হবে। না হলে মারা যাবে কোলের সন্তান।

এ মুহূর্তে তিনি সফরসঙ্গী অন্য পরিবারগুলোর কাছে সাহায্য চাইলেন। কিন্তু কেউই তার কথা শুনে থামল না তাকে সাহায্য করার জন্য। যাদের কাছে ওয়ার্দো সাহায্য চাইলেন তারাও তারই মতো দীর্ঘ যাত্রায় নেমেছেন জীবন বাঁচাতে। তারা সবাই নিজেদের টিকিয়ে রাখা নিয়েই চিন্তিত।

এমন সঙ্কটময় আর উপায়হীন পরিস্থিতিতে ২৯ বছর বয়সী এই মাকে এমন এক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হলো যা কোনোদিন কোনো বাবা-মা নিতে পারে না।

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দাবাব শরণার্থী শিবিরে কোনোমতে পৌঁছতে পারা ওয়ার্দো নিজেই জানান তার জীবনের এই করুণ কাহিনী। তিনি বলেন, ‘শেষমেষ বুকে পাথর বেঁধে আমার অসুস্থ সন্তানকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে এলাম।

তবে তিনি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, সে বেঁচে আছে। এটা আমার মন বলছে।’

চলতি দুর্ভিক্ষ এমন নির্দয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে অনেক সোমালী বাবা-মাকে।

সোমালিয়া থেকে দাবাব শরণার্থী শিবিরের দূরত্ব অনেক। এতোটা পথ একটু পানির জোরে আসা এক কথায় অসম্ভব। আর তাই পথে অসুস্থ হয়ে যাওয়া সন্তানকে আল্লাহর ভরসায় পথেই রেখে আসতে হয় অনেক সময়।

ওয়ার্দো বলেন, ‘আমার জীবনে এমন উভয় সঙ্কটের মধ্যে পড়িনি। এখন আমি সন্তান হারানোর কষ্ট বোধ করছি। রাতের বেলা ছেলেকে স্বপ্নে দেখি। ঘুম ভেঙে যায়। ওর বয়সী কোনো বাচ্চাকে দেখলে আমি আঁতকে উঠি।’

দাবাব শরণার্থী শিবিরে আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দলের মানসিক ডাক্তার জন কিভেলেঞ্জ বলেন, ‘বড় কোনো মানসিক ধাক্কা পরবর্তী সময়ে এমন হয়। এটা একটা সাধারণ প্রতিক্রিয়া।’

তারা ভাবতে শুরু করে, যে সন্তানটিকে তারা ছেড়ে চলে আসছে সেই সন্তানটিই ফিরে এসে তাদের হত্যা করছে। তাদের ঘুম হয় না বলেও জানান ডাক্তার জন কিভেলেঞ্জ।

এদিকে জতিসংঘ দাবি করছে, সোমালিয়ায় গত তিন মাসে পাঁচ বছরের নিচে বয়স এমন ২৯ হাজার শিশু দুর্ভিক্ষের কারণে মারা গেছে। অগনিত শিশু দুর্বল এবং অপুষ্টিতে ভুগছে। তারা দাঁড়াতে পারে না, হাঁটতে পারে না এমনকি ভালো করে কথাও বলতে পারে না।

২৯ বছর বয়সী বিধবা ফাদুমা সাখো আবদুল্লাহি। তিনি তার চার সন্তানকে নিয়ে দাবাব শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন। দাবাবে পৌঁছার একদিন আগেই তার ৪ বছরের কন্যা শিশু এবং ৫ বছরের ছেলে সন্তান মারা যায়।
আবদুল্লাহি বলেন, ‘আমার কাছে অল্প একটু পানি ছিল খাবার জন্য। আমি সেই পানি অপচয় করতে চাইনি। আমি জানতাম না সামনের পথ আর কতদূর। তাই আমি ওদের পানি দিতে পারিনি। দুই সন্তানকে রাস্তার পাশের গাছ তলায় ফেলে রেখে আসতে হয়েছে।’

দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় পূর্ব আফ্রিকার এক কোটি ২০ লাখ মানুষের খাবার দরকার। জাতিসংঘ বলছে, ৩০ লাখ মানুষের এই মুহূর্তেই খাবার দরকার, না হলে তাদের জীবন বাঁচানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১১
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×