somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাম দিয়ে কি হয় (রম্য গল্প)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জয়নাল স্যার এত নি:শ্বব্দে হাটতেন, পিঁপড়ার সম্ভবত হাটার শব্দ হয় ওনার হতো না। তিনি আমাদের স্যার ছিলেন। তেতুলিয়া পাড়ে অবস্থিত জ্ঞানদায়ীনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আমাদের বাংলা ব্যকরণ পড়াতেন তিনি। সৈয়দ মুজতবা আলী মশায়ের মতো আমাদের এই স্যারও ধুতি পরে আসতেন কাসে।
খুব নি:শব্দে একদিন তিনি কাসে ঢুকে চুপচাপ চেয়ারে বসলেন। প্রতিদিনের মতো হাসিমুখে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে সেই ভাবেই বসে রইলেন। বেশ কিছুন পর শব্দ করে একটা নি:শ্বাস ছেড়ে একটু সোজা হয়ে বসে তিনি বললেন, ‘রনি কোথায় রে?’
রনি শুধু আমাদের কাস এইটে নয়, আমাদের পুরো স্কুলের খুব দুষ্ট ছাত্র ছিল। পেছনের কোনার বেঞ্চ থেকে মাথা চুলকাতে চুলকাতে দাড়িয়ে বলল,‘আমি এখানে স্যার।’
‘তুই সাড়াজীবন পেছনেই বসলি, আয় একটু সামনে এসে বস।’
শঙ্কিত পায়ে রনি সামনে এসে বসে। সামনে একটা খালী সিটে দ্বিধান্বিত হৃদয়ে বসতেই স্যার বললো, ‘মনটা খারাপ হয়ে আছে রে। আমি জানি তুই মাঝে মাঝে চিৎকার করে গান গাস। আমাকে আজ একটা গান শোনাতো।’
বাংলা সিনেমা দেখার একেবারে পোকা ছিল রনি। প্রতি মাসে নতুন ছবি আসলে রনি দেখতোই। সকালে বাজার করতে গিয়ে টাকা মেরে ছবি দেখতো রনি।
গানের কথা শুনে রনি প্রায় লাফিয়ে উঠে গান ধরলো, ‘একটুস কথা শোন, একখান কথা রাখো, ভালোবাইসা একবার তুমি বউ কইয়া ডাকো।’
‘আরে গাধা ও গান নয়।’ জয়নাল স্যার লাজ মাখা চেহারায় বললেন,‘নাম নিয়ে একটা গান গা তো।’
দু তিন সেকেন্ড ভেবেই রনি চিৎকার করে গাইতে থাকে,‘আমার নাম কিশোর কুমার গাঙ্গুলি, ব্যানার্জি নয় চ্যাটার্জি নয় গাঙ্গুলী...।’
স্যার তরিঘরি করে রনিকে থামাতেই ও আর একটা গেয়ে ওঠে,‘তোমার নাম লিখে দেও, সাদা কাগজে নয়, শাড়ীর আচলে নয়, রক্তে ভরা এই অন্তরে...।’
- ‘না না না, নাম নিয়া আরো ভালো গান গা তো।’
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে রনি গেয়ে ওঠে,‘গোলাপকে যে নামে ডাকি সে তো গোলাপ, তোমাকে যে নামে ডাকি তা হবে মোর প্রলাপ, ও ও ও...।’
- ‘আরে এটা না।’ স্যার আগের চেয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো,‘নাম নিয়ে তোর কাছে আর কোন ভালো গান নেই?’
রনি মাথা চুলকাতে থাকে। বেশ কিছুন পর স্যার সুর করে বললেন,‘ নামের বড়াই করো নাকো, নাম দিয়ে কি হয়, নামের পাবে নাকো আসল পরিচয়।’ গাওয়া থামিয়ে স্যার রনির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই গান শুনিস নি?’
স্যার আবার চুপ হয়ে যান। বেশ কিছুন পর তিনি বলেন,‘ আমাদের পাশের বাসায় একটা চোর ধরা পরেছে আজ সকালে নাম রিপন।’ স্যার আবার একটু থেমে বললেন,‘ঐবাসার মালিকের নাম কি জানিস? ঐ বাসার মালিকের নামও রিপন। কয়েকদিন আগে ঐ বাসা থেকে একটা কাজের ছেলে তারিয়ে দিয়েছিল তারা। কারণ কি জানিস? ঐ ছেলের নাম ছিল আলামিন আর ঐ মালিকের ছেলের নামও ছিল আলামিন।’ স্যার মনটা আরো খারাপ করে বললো,‘কি বুঝলি?’ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন, ‘গত পঞ্চাশ বছরে এই পৃথিবীতে যত গুলো মানুষের নাম সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত হয়েছে তার মধ্যে একটি নাম হিটলার। তিনি কেমন মানুষ ছিলেন? একটা নাম বেশী উচ্চারিত হলেই কি তিনি ভালো মানুষ? তাহলে সবচেয়ে ভালো ছিল ইবলিশ শয়তান। পাশের বাসায় ধরা পড়া চোরটাকে ওরা এভাবে মেরেছে যে মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেছে। আমার মনে হয়েছে ঐ চোরটা যতটা না মার খেয়েছে চুরি অপরাদের জন্য তার চেয়ে বেশী খেয়েছে ওর নামের জন্য। বাড়ীর মালিকের নামও যে রিপন। ওই গানটা তো জানিস, যদি কাগজে লেখ নাম সে নাম মুছে যাবে, পাথরে লেখ নাম সে নাম য়ে যাবে, হৃদয়ে লেখ নাম সে নাম রয়ে যাবে।
জয়নাল স্যার আবর একটু থেমে বললেন,‘কি হয় এসব নামে নামে।’ শব্দ করে আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি, সেই শব্দে কান্না ঝরলো, মানবতার প্রহসন ঝরলো, ঝরলো মনুষত্বের কপটতা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×