somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীরব ঘাতক হেপাটাইটিস সি

০১ লা আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে ১৭ কোটিরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত৷ আফ্রিকা ও এশিয়ায় এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়৷ এই ভাইরাস লিভারে সংক্রমণ সৃষ্টি করে, যা থেকে কঠিন অসুখও দেখা দিতে পারে৷

হেপাটাইটিস সি রোগটি সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই৷ হেপাটাইটিস ভাইরাসগুলির মধ্যে সি ভাইরাস সবচেয়ে মারাত্মক বলে মনে করা হয়৷ এই অসুখটিকে চিকিত্সা বিজ্ঞানে নীরব ঘাতক বলেও অভিহিত করা হয়৷ তাই এই ভাইরাসের মোকাবেলায় মাথা ঘামাচ্ছেন এখন গবেষকরা৷

বহু মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত :বাংলাদেশে আনুমানিক ৩ থেকে ৬ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের বাহক৷ বিশেষ করে পেশাদার রক্তদাতাদের মধ্যে অনেকেই এই ভাইরাস বহন করেন৷ হেপাটাইটিস সি’র ভাইরাস সাধারণত দূষিত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়৷ তাই শেভিং রেজার, ব্লেড, টুথব্রাশ ও ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ইত্যাদি সাবধানে ব্যবহার করা উচিত৷ একই সুচ দিয়ে মাদক সেবন করলেও বিস্তৃত হতে পারে হেপাটাইটাইস সি ভাইরাস৷

সাধারণত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রথম কয়েক বছর সুস্পষ্ট কিছু বোঝা যায় না৷ শরীর ম্যাজম্যাজ করা, বমি বমি ভাব, চোখ জ্বালা করা, পেশিতে যন্ত্রণা, এই সব রোগের প্রাথমিক লক্ষণ বলে মনে করা হয়৷ রোগীদের খাওয়ায় রুচি কম থাকে, লেগে থাকে পেটের অসুখ৷ এই সব উপসর্গ থেকে লিভার সিরোসিস, লিভার অকার্যকর হয়ে যাওয়া কিংবা লিভার ক্যান্সারের মত কঠিন রোগও দেখা দিতে পারে৷

এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার মত টিকা বের হয়নি৷ এক ধরনের প্রোটিন বা ইন্টারফেরন দিয়ে থেরাপি দেয়া হয় রোগীদের৷ এর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি পায়৷ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন ওষুধ ছাড়পত্র পেয়েছে, যেটি আরো কার্যকর বলে মনে করা হয়৷

নতুন থেরাপি :পদার্থটির নাম টেলাপ্রেভির৷ এতদিন পর্যন্ত ইন্টারফেরনের সঙ্গে রাইবাভাইরিন নামে এক ধরনের ভাইরাস দমনকারী ওষুধ যুক্ত করে থেরাপি দেয়া হত৷ নতুন ওষুধ টেলাপ্রেভির প্রচলিত থেরাপির বিকল্প হবে না, বরং পরিপূরক হবে৷ তার মানে রোগটির বিরুদ্ধে ত্রিমুখী আক্রমণ করা হবে৷

কয়েকটি সমীক্ষার ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হানোফার শহরের মেডিকেল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হাইনার ভেডেমায়ার বলেন, ‘‘প্রচলিত থেরাপিতে ৫০ শতাংশ রোগী আরোগ্য লাভ করেন৷ কিন্তু নতুন ওষুধকে পরিপূরক হিসাবে নেয়ার পর ৭৫ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন৷

তার মানে প্রায় ৩০ শতাংশের মত বেশি রোগী উপকৃত হয়েছেন নতুন থেরাপিতে৷ বলা যায়, প্রতি পাঁচ জনে চার জন থেরাপির শেষে সুস্থ হতে পারেন৷ অন্য আরেক বিশ্লেষণে ৮০ শতাংশ রোগীর আরোগ্য লাভের কথা বলা হয়েছে৷”

জটিল ও ব্যয়বহুল :প্রচলিত পদ্ধতির ইন্টারফেরন-থেরাপিটা এমনিতেই বেশ জটিল৷ প্রতি সপ্তাহে একবার ইঞ্জেকশন নিতে হয়৷ তার ওপর ইন্টারফেরনকে শক্তিশালী করার জন্য আরেক ওষুধ ট্যাবলেটের আকারে দিনে দুবার খেতে হয়৷ এই ভাবে ৪৮ সপ্তাহ বা এক বছরের মত চালাতে হয় থেরাপি৷

এর সঙ্গে টেলাপ্রেভির যুক্ত হলে থেরাপির সময়টা কমে ২৪ সপ্তাহে দাঁড়াবে৷ যে সব রোগী প্রচলিত পদ্ধতিতে ভাল হননি, তাদের মধ্যেও ৩০ শতাংশ নতুন থেরাপিতে ভাল হয়েছেন৷ তবে এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে৷

প্রফেসর ভেডেমায়ার জানান, ‘‘টেলাপ্রেভিরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ত্বকের ক্ষতি হতে পারে৷ শরীরের অর্ধেকই আক্রান্ত হতে পারে৷ চামড়া লাল হওয়া থেকে শুরু করে ফোসকা পড়া এসব কিছুই লক্ষ্য করা যায়৷ অনেক সময় দেখা যায় ডায়রিয়া৷

১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এটা হতে পারে৷ তা হলে এই চিকিত্সা বন্ধ করে দেয়া উচিত৷”

অন্যান্য ওষুধের সঙ্গেও এর মিথস্ক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন বাতের ওষুধের সঙ্গে এটি ব্যবহার করলে৷ প্রফেসর ভেডেমায়ারের ভাষায়, ‘‘এই থেরাপির জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন৷ থেরাপিটা বেশ জটিল, শুধু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার জন্যই নয়৷

এই থেরাপি সঠিক ভাবে না চালালে কিংবা ওষুধ নিয়মিত না খেলে এক ধরনের প্রতিরোধক সৃষ্টি হতে পারে৷ যা রোগীদের জন্য বেশ বিপজ্জনক৷”

নতুন থেরাপিতে নিয়মটাও বেশ কঠোর৷

৮ ঘন্টা পর পর ক্যাপসুল খেতে হয়৷ এজন্য রোগীকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল হতে হয়৷ এই ওষুধকে খুব সস্তাও বলা যায় না৷ সপ্তাহে খরচ পড়ে এক হাজার ডলার৷

ছয় মাসের খরচ ১৭ হাজার ইউরোর মত৷ বলা যায়, হেপাটাইটিস সি দমন করার জন্য নতুন থেরাপি বের করা গেলেও দামটা আকাশচুম্বী৷ তাই এই রোগে আক্রান্ত সব রোগীর চিকিত্সা এই থেরাপির মাধ্যমে দেয়া এখন পর্যন্ত সম্ভব নয়৷
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×