ফ্রেশ হয়ে ছাদে আমার এক রুমের ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি মেঘালয়ের পাহাড় দেখা যাচ্ছে। উত্তরের হাল্কা ঠাণ্ডা বাতাস আমার শরীরে কাপুনি ধরিয়ে দেয়। মনে হয়, এই দেশটাকে আমি অসম্ভব ভালবাসি। আর স্নিগ্ধ প্রকৃতি আমায় যেন বলে যায় এই তো স্বর্গ । আমার ডানে লাল সাদা টেলি টাওয়ার। এক নীরব মূর্তি কিন্তু দেখে বুঝার উপায় নেই যে প্রতি মুহূর্তে সে পৃথিবীর নানা প্রান্তে হাজারো তথ্য পাঠাচ্ছে । বাতাসে সামনের বাশ ঝারের মাথা গুলো একবার এইদিকে আরেকবার ওইদিকে দুলছে। ঠাণ্ডা বাতাসে তারা যেন নেচে নেচে গা গরম করছে। উত্তরে বহুদুরে অনেক গুলো চিল। বৃত্তাকার পথে ঘুরে ঘুরে খাবারের সন্ধানে মগ্ন। মনে হয় নিশ্চিন্ত মনে বারবার ঘুরছে। চিলের সাথে চারকোনা ঘুড়ি গুলো দেখে ভ্রম হতে পারে। কারা যেন এত সকালে ঘুড়ি উরাচ্ছে। একটা দুটো নয় , পাচ ছয়তি হবে। এখন আর এমন দেখা যায় না। কার অত সময় আছে!! তারপরেও আজ ঘুড়ি গুলো উড়ছে। সময়ের কথা চিন্তা করতে গিয়ে মনে হল আজ হরতাল। গতকাল পিকেটারদের আগুনে নয় জন মারা গেছে। ভাবতে ভালো লাগে না। এত সুন্দর সকালে মনটা খারাপ হয়ে যায়। আজকের দিনের মত ঘরে বন্দী আমি। ইংলিশ স্কুলের মাষ্টার আমি, হয়ত শুক্র ও শনি দুইদিন ই ক্লাস নেয়া লাগতে পারে কিন্তু মাস শেষের সামান্য বেতন পেয়ে যাব। কিন্তু অই যে ঠিক সামনের বস্তিটা থেকে যে শিশুর কান্না ভেসে আসছে তার বাবা হয়ত আজ চার দিন কাজে যেতে পারে নি। ওই ছোট শিশু আর তার ভাই বোন গুলো হয়ত সকালে নাস্তা করে নি। নিপা আমার কথা শুনে হয়ত হাসবে, হয়ত বলবে নিজের চিন্তা আগে কর, আরও হয়ত বলবে যে তার মাস্টার্সের ফরম ফিল আপ এর ফিস ই এখনো দিতে পারি নাই আর এখন কি না চিন্তা করছ ওদের নিয়ে, তারা ঠিকই সবকিছু ঠিকমত পাচ্ছে। হয়ত ও ঠিক বলবে। কারন টিভি অন করলেই দেখি চালের দাম কমেছে, মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু বাজারে গিয়ে তো দেখি গতমাসে কমদামী যে চাল কেজিতে ৩৭ টাকা ছিল এখন তা ৩৯ টাকা। হয়ত দোকানদার আমার কাছ থেকে বেশি চেয়েছে এই ভেবে আরেক দোকান চেক করি। কিন্তু না , কেউ দাম কমায় না। দামটা শুধু বাড়ে।
তারপরেও এই দেশটাকে আমি ভালবাসি, এই দেশ নিয়ে সপ্ন দেখি।