২০১০ সাল। আম্মা প্রচণ্ড অসুস্থ ।মামা চাঁদপুরে মামার পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তারের খুব তাড়াহুড়া । রাত বারটার তুতুল লঞ্চে ঢাকা চলে যাবেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ডাক্তার আসলেন। আগেই বলেছিলেন যে তাড়াহুড়া করে ঢাকা যেতে হবে। মামা আম্মাকে নিয়ে চেম্বারের ভিতরে গেল। আমি আর বাবা বসে ছিলাম। কিছুক্ষন পর মামা আর আম্মা বেরিয়ে আসলেন। বললেন যে কাছের কোন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আমরা নিছে নেমে আসলাম।মামা বললেন, কেন যে ডাক্তারি পড়লিনা, এই দেখ দুই মিনিটে পাঁচশ টাকা নিয়ে নিল। আমি আর কিছু বললাম না। চান্স পেলে তো পড়ব।
কিছুক্ষন মামার সাথে বাক বিতণ্ডার পরে বাবা আম্মাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে রাজি হলেন। আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা ওনার খুব পছন্দ। বাবার মতে হোমিওপ্যাথের উপর কোন চিকিৎসা নাই। এসব বলে আম্মাকে হোমিওপ্যাথ ঔষধে চিকিৎসা করিয়েচেন। এখন অবস্থা খুবই খারাপের দিকে তাই হয়ত আর হোমিওপ্যাথ এর উপর ভরসা করতে পারছেন না এবং জোর গলায় কিছু বলতেও পারছেন না। তাছাড়া আমি আর মামা তো পুরাই হোমিওপ্যাথ এর বিপক্ষে।
মামা চলে গেলেন ট্যাক্সি খুজতে ( বেবি ট্যাক্সি ) । আমি বাবার দিকে তাকালাম। দেখলাম , বাবা তাকিয়ে আছেন অন্ধকার নদীর দিকে। ( ডাক্তারের বাসা ডাকাতিয়া নদীর পারে। ) আমি বুঝলাম। এতটুকু এখন বুঝতে পারি। অন্ধকার নদীতে কিছুই দেখা যায় না, কিন্তু অনেক কিছু ভাবা যায়। মাসের শেষ । পকেট খালি। বেতন পেতে হয়ত আরও দশ বারো দিন। ছেলে আর শালার সামনে এই কথাগুলো কিভাবে শেয়ার করবেন। আর তারপরে আমার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসল আসল সত্য। আমি উপলব্ধি করলাম। কেন বাবা হোমিওপ্যাথ এত পছন্দ করেন? আমার মনে হল, উত্তরটা আমি জানি। হোমিওপ্যাথ এ ডাক্তারের ভিজিট দিতে হয় না। ঔষধের দাম তো নগন্য। আমার বাবার মত শিক্ষকের হোমিওপ্যাথ পছন্দ না করে কি উপায় আছে!!