somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেপালে কাটালাম পহেলা বৈশাখ-২০৭০।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
HAPPY NEW YEAR- 2070




অবাক হবেন না। আমি সময়কে আরো ৬৫০ বছর এগিয়ে নিয়ে যাইনি। সময়টা ২০১৩। সে বছর বাংলা নববর্ষে আমি নেপাল-এ ছিলাম। ১৪-ই এপ্রিল আমাদের পহেলা বৈশাখ- ১৪২০, নেপালে ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ-২০৭০। একই দিনে, প্রায় পাশাপাশি দুটি দেশের সময়কাল ৬৫০বছর এগিয়ে কেন, এ তথ্য আমি উদ্ধার করতে পারিনি। আমি ১৮ তারিখে নেপাল ছেড়েছি। শেষের ক’দিন অনেক ঘোরাঘুরির উপরে ছিলাম, তাই সম্ভব হয়নি।

নেপালের বর্ষবরণঃ- আমি নেপালের পূর্বাঞ্চলের একটি ছোট শহর ধারান থেকে পর্যটন শহর পোখরার দিকে যাত্রা শুরু করলাম ১২ তারিখ ফজর নামাজ পড়েই। পথে যাত্রাবিরতি দিলাম অযোধ্যার রাজপুত্র রামচন্দ্রের পত্নি সীতার বাবার বাড়ী ‘জনকপুর’-এ। ওখানে ঘন্টা দুই সময় কাটিয়ে, চললাম পোখরার পথে। পোখরায় পৌছুতে সন্ধ্যে গড়িয়ে গেল। সে রাতে আর ঘুরতে বেরোলাম না।


পরদিন ১৩ই এপ্রিল, চৈত্র সংক্রান্তি। নেপালীদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুরু। বছরের শেষ দিন আর পরের বছরের প্রথম দিন, এই দু’দিন উৎসবে মুখর হয়ে ওঠে নেপাল। ঘোরাঘুরির করতে যেয়ে অনেক অনুষ্ঠান আমি মিস করেছি। ১২ তারিখ রাতে ঘোষণা হলো, “পরদিন ভোরবেলা ম্যারাথন দৌড় শুরু হবে। সবাইকে অংশগ্রহনের আমন্ত্রণ জানানো হলো।“ পরদিন ভোরে উঠে হোটেলের ছাদ থেকে আমার ছেলেরা প্রথম অন্নপূর্ণা দেখলো। তারপর আমরা চললাম ‘ফিউয়া’ লেক-এর পাড়ে। ‘ফিউয়া’ লেকের পাড় থেকে শুরু হলো ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগীতা। দেখতে গেলাম আমরা, অংশগ্রহন করতে নয়। এই পর্যটন শহরে, প্রতিযোগীরা সবাই পর্যটক। কারো হাতে পানির বোতল, কারো হাতে ড্রিংকস্‌। সবাই উপভোগ করছে সেই প্রতিযোগীতা। এটা দেখে, আমরা গেলাম পোখরা লেক-এ। জেনে গেলাম রাতে সঙ্গীতানুষ্ঠান হবে। লেক-এ বেড়িয়ে, বেরিয়ে পড়লাম আরো বিভিন্ন স্পট দেখতে।এ বিষয়ে পরে লিখব। সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে, রাতের সঙ্গীতানুষ্ঠান দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। অসম্পূর্ণ রয়ে গেল প্রথম দিনের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান দেখা।






ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগীতার ছবি



ঐ রাস্তায়ই ঘোড়ায় চড়ে বেড়াচ্ছেন এক পর্যটক


পরদিন ১৪ই এপ্রিল। নববর্ষ, ২০৭০ সালের প্রথম দিন। আমরা পোখরা থেকে বেরোলাম কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে। পথে একটু ঘুরে ‘মনোকামনা মন্দিরে’ ঢুকবো এটা মনে করে রেখেছি। উদ্দেশ্য কেব্‌ল, কার ভ্রমণ। রাস্তা থেকে নদী, পাহাড় পেরিয়ে ১৩০২ মিটার পথ পেরোতে হয় কেবল কার-এ চড়ে। মনোকামনা মন্দিরে যাবার ওই একটাই পথ। ওখানে গেলে কেবল কার-এ সফরের লোভটা সামলাতে পারি না।

নেপালীদের যে কোনো উৎসবের প্রধান করনিয় মন্দির দর্শন। সে দিন আর কোনো মন্দিরে ঠাঁই নাই। মন্দিরে এসে চোখে পড়লো বিশাল লাইন। ছোট ছেলেকে নামিয়ে দিলাম, লাইনে দাঁড়াবার জন্য। আমরা গাড়িতে এগিয়ে যাচ্ছিতো, যাচ্ছিই। লাইন আর শেষ হয় না। কয়েক হাজার মানুষের লাইন। শেষে সিদ্ধান্ত হলো মূল মন্দিরে আর যাব না। টেলিফোনে ছেলেকে ডেকে আনা হলো। পাশেই সুন্দর পাহাড়ী নদী, সেখানে পানিতে কয়েকটা ছবি তুললো ছেলেরা। অনেক বাচ্চারা নদীর পাড়ে খেলছে, নদীর ভেজা বালি দিয়ে মন্দির বানাচ্ছে।




মনোকামনা মন্দিরের পাশেই পাহাড়ী নদীটি



নদীর উপরে ঝুলন্ত সেতু





ছোট-বড় সবাই নদীর বালি দিয়ে মন্দির তৈরী করছে



নদীর পাথর দিয়ে তৈরী মন্দীর-ওদেরই তৈরী


ওখানে কিছু সময় কাটিয়ে চললাম কাঠমান্ডুর পথে। রাস্তার ডানপাশে সুউচ্চ পাহাড়, বামপাশে গভীর পাহাড়ী নদী। মনোকামনা মন্দির থেকে কাঠমান্ডু ৪/৫ ঘন্টার পথ। পথে আমদের দৃষ্টি কেড়ে নিল পাহাড়ী নদীতে র‍্যাফটিং । যাত্রাবিরতি দিতেই হলো। নদীর পাড় ঘেঁসে গাড়ী থামিয়ে নেমে পড়লাম সবাই। আচ্ছন্ন হয়ে দেখলাম ওদের ঐ র্যা্ফটিং। ছুটির দিন, অনেকেই এসেছে। কিছু নৌকাতে কয়েকজন, কিছু একজনের নৌকা। সারি সারি রঙ বেরঙের নৌকা, মহা আনন্দে ঝাঁপা-ঝাঁপি করছে। এপ্রিল মাস, নদীতে পানি কম। তবুও ওদের উৎসাহের কমতি নেই। ওদের মাঝে পর্যটকও আছে, এমনকি মেয়েরাও আছে। আমাদের দেশে পাহাড়ী নদীতে হয়তো এমন র্যারফটিং চলে, কিন্তু কখোনো আমার তা দেখবার সৌভাগ্য হয়নি। নদীর পাড়ে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে, আমাদের কাঠমান্ডূ পৌছুতে আঁধার নেমে এল। শেষ হলো নতুন বছরের প্রথম দিন।

র‍্যাফটিং -এর কিছু ছবিঃ-













***************************************
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×