somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্লামডগ মিলিওনেয়ার

২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা যারা খাড়ায়া খাড়ায়া সিনমার পোস্টারের নায়িকার উন্নত বক্ষ দেইখা সিনমা হলে ঢুকি না, তারা কোনো সিনমা দেখার সিদ্ধান্ত লওনের আগে ওই সিনমার ঘটনা জাইনা লই প্রথমে। সিনমা হলে গিয়া হুট কইরা কোনো একটা সিনমার টিকিট কাইটা হলে ঢুইকা যাওনের ঘটনা খুব কমই ঘটছে জীবনে। সিনমা দেখনের আগে তাই সিনপসিস পইড়া (ইন্টারনেটে ডাউনলোডের বেলায়) অথবা মাইনষের মুখে, পত্রিকায় পইড়া সিনমায় যাই। স্লামডগ মিলিওনেয়ার ঠিক এই জায়গাতে পুরোপুরি সফল। অর্থাৎ স্লামডগ মিলিওনেয়ার সিনমাটা দেখুম কিনা এইটা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হইছে এর কাহিনী।

তো এই সিনমার কাহিনী আমি এরকম শুনছি যে - একটা মুর্খ, অশিক্ষিত বস্তির পোলা কৌন বনেগা ক্রোড়পতি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়া কোটি টাকা জিতছে। তো পোলাটা প্রশ্নের উত্তর ক্যামনে দিছে! জানা গেল প্রতিটা প্রশ্নরে ঘিরা তার জীবনে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে যার কারণে ওই পোলাটা প্রতিটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারছে। এই কাহিনীটুকু জানার পর আমি বুঝতে পারলাম ছবিটা ভালো হইব। কারণ নিজেরে দিয়া বিচার করলাম, কেউ যদি আইয়া আমারে কয়, এই হলো মেইন এসটোরি, আপনে পুরাটা লেইখা ছবি বানান। আমি তখন কি করুম? আমি কিছু প্রশ্ন তৈরি করুম, প্রশ্নের উত্তর মিলানোর লাইগা ওই পোলার জীবনে কিছু ঘটনা ঘটামু, যেইটা পাবলিকগো বিশ্বাসযোগ্য হইতে হইব। পুরা বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং রাইটার এবং ডিরেক্টরের লাইগা। এতোসব চিন্তা কইরা আমি ডিসিশান লইলাম স্লামডগ মিলিওনেয়ার সিনমাটা দেখতে হইব।

আমি সবসময় কই, কোনো ছবির উপজীব্য ওই ছবির দেশ নির্দেশ করে। বৃটিশ পরিচালক ডেনী বয়েল নির্মিত এই ছবিরে 'বৃটিশ ছবি' কওয়া হইলেও আমি 'বৃটিশ পরিচালক কর্তৃক নির্মিত একটা বলিউড ছবি' ভাইবা নিছি। সিনমা শুরু হয় থানা থিকা, যেখানে জামাল নামের ওই বস্তির পোলারে টর্চার করা হইতাছিল, কেননা পুলিশ সন্দেহ করছে এই কোটি টাকার গেম শো-এ পোলাটা নিশ্চয়ই কোনো ট্রিকস করছে। নইলে অশিক্ষিত হইয়া এমুন কঠিন কঠিন প্রশ্নে উত্তর দ্যায় ক্যামনে? অনেক মাইর খাওনের পরও জামাল কইতে থাকে যে অয় কোনো ট্রিকস করে নাই। প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর অয় তার জীবন থিকা দিছে। এরমধ্যে বড় অফিসারের আগমন ঘটে। জামালরে হের টেবিলের সামনে বসাইয়া গত রাইতে হইয়া যাওয়া শো-এর রেকর্ডকৃত ক্যাসেট দেখা শুরু করে। প্রতিটা প্রশ্নের শেষে পজ কইরা জামালরে জিগায় প্রশ্নের উত্তরগুলা সে ক্যামনে দিছে। জামাল তখন অর জীবনের হিশটোরি কইতে থাকে।

এইখান থিকা ছবির কাহিনী আরো গতি পায়। বড় অফিসার আর জামাল মিলা গত রাইতের শো দেখে, সেইখান থিকা জামাল ফেলাশব্যাকে অর অতীত জীবনে ফিরা যায় তারপর আবার পুলিশ অফিসারের লগে বাস্তবে ফিরা আসে। এই যে বর্তমান (থানা-পুলিশ অফিসার)-নিকটবর্তী অতীত (গত রাইতের শো)-দূরবর্তী অতীত (জামাইল্যার অতীত, যেইটারে ক্রমান্বয়ে বর্তমানের দিকে লইয়া আসা) এই তিন কালরে এমন কইরা বৃটিশ পরিচালক ডেনী বয়েল গাঁথুনী দিছে যে দর্শকগো চোখে জার্ক লাগে নাই। দর্শক কখন যে কোন কালে চইলা যাইতাছে এইটা টের পায় নাই। দর্শক যখনই যেই কালটা দেখতে চাইব চাইব ভাবতাছে ঠিক তখনই ডিরেক্টর ওই কালেই দর্শকগো লইয়া গেছে বইলা আমার মনে হইছে।

এইবার আসা যাক এ্যাক্টিং নিয়া। পুরা পারফেক্ট। শুধু অনিল কাপুর আরেকটু যত্নবান হইলে ভালো হইত বইলা মনে হইছে। আর থানার মইধ্যে পুলিশের লগে বাতচিতের জায়গাটুকু ছাড়া সকল জামাইল্যার অভিনয় ফাস্ট কেলাশ হইছে। মাইয়াটারে মাঝে মাঝে আমার বিপাশা বসুর মতো মনে হইলেও অর এ্যাক্টিংও ভালো হইছে।



ছবির মইধ্যে অসংগতি খুব একটা নাই। ঝিলের পাড়ের পায়খানার গুয়ের মধ্যে ছোট জামাইল্যার ঝাপাইয়া পড়ার দৃশ্যরে কেউ কেউ অতিরঞ্জিত কইতে চাইলেও আমার তা মনে হয় নাই। কারণ আমার মনে পড়ছে আমার বড় ভাই ছুডুবেলায় টেনিস বল কুড়াইতে গিয়া, এমনই কোনো পায়খানার শুকাইয়া যাওয়া গুয়ের (যার উপরে হালকা দুর্বাঘাস জন্মাইছিল) উপর দৌড় দিতে গিয়া কোমর পর্যন্ত ডুইবা গেছিল। আমার আরো মনে পইড়া যায় দিল্লির সিনমা হলে (আমগো দেশের রূপমহল কিংবা মানসী মানের) 'কুচ কুচ হোতা হ্যায়' ছবিতে সালমান খান যখন ব্যাকশটে পরথম এন্ট্রি লইল তখন সারা হলের দর্শকেরা চেয়ার থাবড়ানি থিকা শুরু কইরা সিটি বাজানি আর চিক্কুর পাড়তাছিল। আমার চউক্ষে তখন পানি আইছিল হেগো সিনমার প্রতি আর আর্টিস্টগো প্রতি 'লভ' দেইখা। ইন্ডিয়ানগো তিনটা ধর্ম, সনাতন ধর্ম-বলিউড-কিরকেট। তো জামাইল্যার অমিতাভরে দেখনের লাইগা গুয়ের মধ্যে ঝাপাইয়া পড়নরে আমার অতি স্বাভাবিক মনে হইছে। তবে মাগীপাড়া থিকা লতিকারে উদ্ধারে রিয়েলিজম কম আছে। একটা মাগীপাড়া দালাল/ সুবিধাভোগী কর্তৃক কতোটা সুরক্ষিত হইতারে এইটা সম্পর্কে বিদেশী ডিরেক্টররে ইন্ডিয়ানরা ভ্রান্ত ধারণা দিছে।

গুয়ের মধ্যে ঝাপাইয়া পড়া নিয়া ব্যাপক আলোচনা হইলেও আমি এখন একটা শটের কথা কমু যেইটা ছবিতে না থাকলেও চলত। তার আগে অন্য আরেকটা শটের কথা কই। দাঙ্গার কথা। হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা দেখানি হইছে। ওই দাঙ্গার শুরুতে মিউজিক অফ রাইখা শুধু ন্যাচারাল সাউন্ড রাইখা দৃশ্যের অবতাড়না ভালো হইছে। জামাল-কামালের মায়ের হঠাৎ উপলব্ধি কি জানি ঘটতে যাইতেছে টাইপের টেনশন দেইখা আমার প্রাণীজগতের কথা মনে হইছে। সকল মায় মনে হয় সন্তানগো বিপদ এমনে আগেভাগেই টের পাইয়া যায়। দাঙ্গাকারীগো দেইখা জামাইল্যার মায়ের চিক্কুর দেওন আর মাথায় বাড়ি দিয়া মাইরা ফালানোর দৃশ্য আমার কাছে বড়ই মর্মান্তিক ঠেকছে। এইটা ছাড়া দাঙ্গার অন্যান্য দৃশ্য বম্বে ফিলমের চেয়ে খুব বেশি আহামরি কিছু না। এখন আসি যেই শটের কথা কইতে চাইতাছি। সেইটা হইল এ্যাকশনে যাওনের আগে কামালের নামাজ পড়নের দৃশ্য। বর্তমান বিশ্বে মুসলিমরাই যে টেররিস্ট এইটা প্রমাণের চলমান চর্চার বাইরে যাইতে পারে নাই ডিরেক্টর। সারা ছবিতে ধম্মকম্ম না দেখাইলেও হঠাৎ কইরা একজন সন্ত্রাসীর নামাজ পড়নের দৃশ্য ছবিতে বড় একটা কালো দাগ।

আরো একটা দৃশ্যে বিরক্ত লাগছে। একটা প্রশ্ন জিগানোর পর শো এর ব্রেক আসে। তখন জামাল আর অনিল কাপুর দুইজনেই টয়লেটে যায়। ওই প্রশ্নরে ঘিরা জামালের জীবনে কোনো ঘটনা ঘটে নাই তাই জামাল উত্তর দিতে পারতাছিল না। টয়লেটে অনিল কাপুর আয়নায় ওই প্রশ্নের উত্তর লিখা বায়রাইয়া যায়। জামাল উত্তরটা দেখে। কিন্তু এই সিকোয়েন্স দেহনের লগে লগে আমার মনে হইছে অনিল কাপুর ভুল উত্তর লিখছে জামাইল্যা যেন না জিততে পারে। পরে দেখা গেল আমার ভাবনাটাই ঠিক।

ছবির ভাষা ইংরেজি এবং এইটা বস্তির অশিক্ষিত পোলারা ক্যামনে কইতাছে এইটাও নিয়াও অনেক বেকুব দর্শকের গাত্রদাহ হইছে। হেরা কিন্তু আবার শরৎচন্দ্রের বাঙালি চরিত্রগুলার মুখে হিন্দি শুইনা চমকায় নাই।

যাউগ্গ এখন কথা হইল ছবিটা হিট ক্যান? প্রধান কারণ আমার মনে হইছে এইটার ভিতরের মালমশলা। সারা বিশ্ব ইন্ডিয়ান বস্তির পোলাগো কাম কারবার দেইখা মজা পাইছে এইটাই হইল সত্য। দু:খ কষ্ট দেখতে ভালোই লাগে যদি আপনে দু:খ কষ্টের মধ্যে না থাকেন। ডেনী বয়েলের সার্থকতা এই জায়গাতেই যে মুম্বাইয়ের বস্তির জীবন অনেক সুন্দর (?) কইরা তুইলা আনছে। পাশাপাশি একজন অসফলের সফল হওনের গল্পও আছে। সেই গল্পটা সুন্দর কইরা বলা হইছে।

আগেই কইছিলাম যে ছবির উপজীব্য ওই ছবির দেশ নির্দেশ করে। এইটারে আরো ভালোভাবে বুঝানোর লাইগাই মনে হয় ডেনী বয়েল ছবির শেষে একটা বলিউডি নাচ-গান রাখছে। তবে সেটা যুইতের মনে হয় নাই। হয়তো শখ থিকাই ডিরেক্টর এইটা করছে। গানের চিত্রায়ণে বলিউডি মুন্সীয়ানা নাই।

মোটকথা ছবি দেইখা মজা পাইছি। আমদর্শক এতো পন্ডিতি বুঝে না। হেরা ভালো কইলেই সেইটা অস্কার আর গ্লোডেন এওয়ার্ড ভাইবা নিতে হইব। ছবি দেখনের আগে কাহিনীর লাইগা ডিরেক্টর আর স্ক্রিপ্টরাইটাররে যেমুন সাধুবাদ দেয়া শুরু করছিলাম ছবির শেষে টেলপে দেখলাম এই কাহিনী নিয়া একটা বই বাইরাইছিল। স্ল্যামডগ মিলিওনেয়ার কাহিনী ওই বই থিকা অনুপ্রাণিত। উইকির সৌজন্যে নিচে ছবির ক্রেডিটলাইন দিয়া দিলাম।

Directed by
Danny Boyle
Loveleen Tandan (co-director)
Produced by
Christian Colson
Written by
Simon Beaufoy
Vikas Swarup (novel)

Starring
Dev Patel
Freida Pinto
Anil Kapoor
Irrfan Khan
Tanay Chheda
Saurabh Shukla
Mahesh Manjrekar

Music by
A. R. Rahman
Cinematography
Anthony Dod Mantle
Editing by
Chris Dickens
Distributed by
Fox Searchlight Pictures
Warner Bros. (US)
Pathé (Intl.)

Release date(s)
12 November 2008 (US, limited)
26 December 2008 (US, wide)
9 January 2009 (UK)
23 January 2009 (India)

Running time
120 min.
Country
United Kingdom
Language
English
Hindi

Budget
$15 million
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫৩
৫৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×