গাঁজার নাম শুনলে যেটি আমাদের মনের মধ্যে প্রথমেই উঁকিঝুঁকি মারবে, সেটি হয়ত আমাদের কাছে এক ধরনের নেশাদ্রব্য। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কিছু লোক এটাকে নেশার কাজে ব্যবহার করলেও, কানাডার এক যন্ত্রপ্রকৌশলী এটাকে ব্যবহার করেছেন চিকিৎসার মত মহৎ কাজে। চিকিৎসা বিদ্যায় শিক্ষিত না হলেও, স্বশিক্ষিত ডাক্তার রিক সিম্পসন গাঁজার মাধ্যমে নিজের ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা করার পর সুস্থ করেছেন ৫ হাজারেরও বেশি রোগিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনলাইন পত্রিকা অ্যনোনেইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে রিক জানিয়েছেন তার সুস্থ হয়ে ওঠার বিরল গল্প আর তারপর, অন্যদের চিকিৎসার কথা।
অনেক আগে রিকের মুখের একটি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিলো স্ক্রিন ক্যান্সারের। বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ঘুরে চিকিৎসা করানোর তিনি যখন সুস্থ হচ্ছিলেন না। তখন কাকতালিয়ভাবে গাঁজার তেলই তাকে মুক্তি দেয় ক্যান্সার থেকে।
তিনি জানান, তখন কানাডায় গাঁজার বৈধতা দাবির আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তিনি। আন্দোলন প্রেক্ষিতে নিজবাড়িতে শখের বসে লাগান গাঁজার গাছ। একদিন তিনি কৌতুহল বসত তার ক্যান্সার আক্রান্ত মুখের ক্ষততে ব্যবহার করেন গাঁজার নির্যাস। তাতেই পান সফলতা।
যন্ত্রপ্রকৌশল বিদ্যায় পড়াশোনা করা স্বশিক্ষিত ডাক্তার রিক সেদিনের পর আবিষ্কার করেন গাঁজার তেলে ভালো হতে পারে ক্যান্সারসহ কয়েকটি জটিল রোগ।
এ প্রসঙ্গে টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, কীভাবে তিনি স্ক্রিন ক্যান্সার কার্সিনোমা আর দূর্নীতিগ্রস্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি গাঁজা ব্যবহার করে ৯০ দিনের মধ্যে সুস্থ করেছেন ডায়াবেটিকস, ধমনি সংক্রান্ত রোগ, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, মৃগীরোগ, হাঁপানি, সিরোসিস রোগ।
সাক্ষাতকারের এক পর্যায়ে রিক জানান, ‘আমার মুখের ক্ষতগুলির জন্যে আমি নিজেকে আয়নায় দেখতে ভয় পেতাম। এটা ছিলো ২০০২ সালের কথা। আমার মুখের ক্ষত আরো বেশি সংক্রামিত হবে শুনে, আমি ডাক্তারদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলাম। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় আমি জানতে পেরেছিলাম ক্যান্সার নিরাময়ে গাঁজার আছে টিএইসি নামক এক উপাদান। মন্ত্রিসভায় নিষিদ্ধ হবার আগেই আমি কিছু গাঁজার তেল সংগ্রহ করে রাখি। সেখান থেকে কয়েক ফোঁটা আমার মুখের চারটি ক্ষতে লাগিয়ে ব্যন্ডেজ করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘চারদিন পর যখন ব্যন্ডেজ খুলি, তখন আমি নিজের চোখকে আর বিশ্বাস করতে পারছিলামনা। যারা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো তারা সবাই অবাক হল। আজ এত বছর হয়ে গেলো ক্যান্সার আর ফিরে আসেনি। তারপর আমি গাঁজার তেল দিয়ে স্ক্রীন ক্যান্সার নিরাময় করতে মানুষের জন্যে কাজ শুরু করি।’
রিক একজন সুস্থ হওয়া রোগির উদাহরন টেনে বলেন, ‘৮০ বছরের একজন বৃদ্ধ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রায় মৃত্যশয্যয়ে চলে গিয়েছিলেন। এ ধরনের এক হাজারের মধ্যে একজন রোগি ইনসুলিন দিয়ে কোমতে বেঁচে থাকেন। এটা প্রয়োগের পর অবিশ্বাস্যরকম ভাবে তা আর ইনসুলিনের প্রয়োজন হয়নি। পরবর্তী ছয় সপ্তাহে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
রিকের জন্যে এই অভিযান কোভাবেই সহজ ছিল না। গাঁজা গাছ চাষের দায়ে তাকে ২০০৫ সালে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে চার দিনের কারাভোগও করতে হয়। এক পর্যায়ে ১২ বছরের জেল দিলে, সে যাত্রায় তিনি ২ হাজার ডলার জরিমানা দিয়ে মুক্তি পান।
সংগ্রহ- দ্য রিপোর্ট২৪ থেকে।