somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি প্যাঁচার আত্মচিৎকার

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা ছোট বাচ্চা কাঁক আর বাচ্চা প্যাঁচা একই লোকালয়ে বাস করত। বাচ্চা প্যাঁচাটা সারাদিন ই প্যাঁচ প্যাঁচ করে আর বাচ্চা কাঁকটাকে বিরক্ত করে।বাচ্চা কাকটার তার কাল মসৃণ পালক গুলো খুব পছন্দের । কিন্তু বাচ্চা প্যাঁচাটার প্রধান কাজ ই ছিল কাকের পালক গুলোকে ময়লা করে দেয়া।বাচ্চা কাকটা তাই রাগ করে মুখ ফুলিয়ে, গাল ফুলিয়ে বসে থাকত। আর এদিকে প্যাচপ্যাচে প্যাঁচাটা কাঁকটাকে রাগাত ঠিক ই কিন্তু রাগ কিভাবে ভাঙ্গানো যায় সেটা জানত না।বর্তমান যুগের প্যাঁচাদের মত এত স্মার্ট প্যাঁচা সে ছিল না।সব কিছুর পরেও বাচ্চা কাঁক এবং প্যাঁচাটার ভাল বন্ধুতা ছিল।
একদিন আগুন লাগল ,সবকিছু পুড়ে ভস্ম হয়ে গেল।অনেকেই মারা গেল,
বাচ্চা প্যাঁচাটা বাচ্চা কাকটাকে অনেক খুজল কিন্তু কোথাও পেল না ।শুধু দেখল কিছু পুড়ে যাওয়া পালক মাটিতে আনমনে লুটোপুটি খাচ্ছে।সেই থেকে প্যাঁচাটা পালক গুলো স্রিতি করে বেঁচে থাকে।মাঝেই মাঝেই আনমনে ভাবে শৈশবের দিনগুলো ।ভাবে আর আকাশে আকাশে ঘুরে বেরায়।আকাশ দেখার রোগটা চরম ভাবে বাসা বাধে প্যাঁচার শরীরে ,মনে,আত্তায়।সারাদিন আকাশের পথে পথে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়,আর সারা রাত ধরে আকাশ দেখে।

অনেকদিন পরের কথা,
বাচ্চা কাকটি আর ছোট নেই,যেমন নেই প্যাঁচাটাও । কিন্তু কাকটা তার শৈশবের স্রিতি কোন একা অজানা কারনে গভীরভাবে ভুলে গেছে,ঠিক তার বিপরীতভাবেই প্যাঁচা কাকটাকে মনে রেখেছে,স্রিতিগুলো সাজিয়ে রেখে খুব যত্ন করে। কারন প্যাঁচাটার শৈশবের যদি ভাল কিছু স্রিতি থেকে থাকে তার বেশিরভাগ জুড়েই আছে কাঁক।
একদিন হঠাট কাকটার সাথে প্যাঁচার দেখা হয়।প্যাচা আকস্মিক পাওয়ার খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।কই করবে,কাক কে কই বলবে ভেবেই পায় না।সাত পাচ না ভেবে প্যাঁচাটা আকর্ণলম্বিত হাসি দিয়ে বলে ,
প্যাঁচা- আমায় চিনতে পেরেছ কাঁক?
কাঁক- চোখে মুখে চরম বিরক্তি নিয়ে কাঁক বলে নাহ,আমি তোমায় চিনতে পারিনি।চেনাটা আমার জন্য জরুরী ও না।
অবুঝ জন্তুরা যখন চেনা মানুষের কাছে যায়,একটু পরিচিত ভালবাসা পাবার আশায়, একটু সম অনুভুতি পাবার আসায়,এবং না পেলে হতাশায় কিছুই বলে না,শুধু চুপচাপ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।প্যাঁচাটাও তেমনি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।প্যাঁচাটা অনেক চেষ্টা করে কাঁকটাকে চেনাবার।তখন কাঁক বলে ছোট বেলায় আমি যে প্যাঁচাকে চিনতাম তার পালক এমন ছিল না।সে প্যাঁচার পালক ছিল অনেক কালচে ফ্যাঁকাসে । কিন্তু তোমার পালক তোঁ তেমন নেই, তোমার পালক অনেক রঙিন ।তাহলে আমি তোমায় কি করে চিনব?
প্যাঁচা মনে মনে চিন্তা করে কাঁক ত সত্যিই বলছে । কাঁক আমাকে চিনবে কি করে?তখন সে ভাবে আমি যদি আবার আমার পালক ফ্যাঁকাসে করতে পারি তাহলেই কাক আমাকে চিনবে। কিন্তু কিভাবে ফ্যাঁকাসে করবে সে উপায় খুজে পায় না।হঠাত দেখে কিছু দূরে আগুন জলছে। প্যাঁচাটা ভাবে আমি যদি আমার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেই তাহলেই আমার পালক গুলো কালচে ফ্যাঁকাসে হয়ে যাবে।যেই ভাবা সেই কাজ।প্যাঁচা আগুনে যাপ দেয়। আগুনের লকলকে শিখায় আস্তে আস্তে পুড়তে থাকে প্যাঁচার রঙিন পালক।
এদিকে কাঁক নির্বিকার । কিছুক্ষণ পরেই প্যাঁচার শরীরে আগুন লেগে যায়।প্যাঁচাটা যন্ত্রনায় চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে,
কাঁক এখন কি তুমি আমায় চিনতে পেরেছ। কাঁক বলে না।প্যাঁচার দুটি ডানাই জ্বল জ্বল হয়ে পুড়তে থাকে,দেখে মনে হয় এক ঝাক জোনাকি আনমনে আগুনের চারপাশে উড়ছে,একটা রঙিন সপ্নিল আবহ তৈরি হয়।
প্যাঁচা আবার জিজ্ঞেস করে এখনো কি আমায় চিনতে পারনি কাঁক?কাকের নির্লিপ্ত উত্তর –না।
কাকা প্যাঁচাকে জিজ্ঞেস করে ,প্যাঁচা তোমাকে আমার চেনাটা কি খুব ই জরুরী । এতটাই জরুরী যে নিজেকে আগুনে পুরিয়ে প্রমান করতে চাইছ।
তখন প্যাঁচা বলে,
তোমাকে চেনানোটা আমার জন্য জরুরী না কাঁক, এটা আমার প্রয়োজন ।ছোট বেলায় আগুন লাগার পর আমি সব হারিয়েছি,নিজেকে ছাড়া।এতদিনে আমি নিজেকে ভুলতে বসেছি।অতীতের প্রতিটা মুহূর্ত এখন ও আমার কানে হাহাকার হয়ে বাজে। আমি চোখ বন্ধ করলে এক টুকরো ভাল স্রিতি ও পাই না।শুধু বুক ভরে হুহু করা দুঃখ আর কিছু আগুনের শিখার আর তোমার সাথে কিছু খুনসুটি করে কাটান সময় ই আমার সম্বল।অতীতের সুখ স্রিতি ছাড়া বেঁচে থাকাটা যন্ত্রনার ।বুকের খাচার প্রতিটা শিকে যে ব্যথা বন্ধি তাকে যদি মুক্ত করতে না পারি,বেচে থাকাতাই মনে হবে অর্থহীন। এত বছর ধরে জীবনের মানে খুজে খুজে ক্লান্ত আমি,আমি বার বার পথ খুজেছি,তেমন ই সে পথ আমি বার বার হারিয়েছি।কতবার ভেবেছি,যদি কাঁক বেচে থাকে,কখনো যদি অদৃষ্টের কৃপায় খুজে পাই কাঁক,আর কাঁক যদি আমাকে চিনতে পারে।আমিও হয়ত নিজেকে চিনতে পারব।খুজে পাব আমার অস্তিত । বেঁচে থাকার জন্য পাব কিছু সুখ স্রিতি,কিছু দুরাশা সাথে প্রিয় পরিচিত কোনো আত্মার সংস্পর্শ । তাই তোমার আমায় চিনতে পারাটা অনেক প্রয়োজন কাঁক।

কিন্তু কাকটা প্যাঁচাকে চিনতে পারে না।চেনার চেষ্টাও করে না।মনে মনে ভাবে এতখন এই ফালতু প্যাঁচার বকবকানি না শুনে নিজের কাজ করলেও ভাল হত।খুব বিরক্তি নিয়ে বলে-শোন কাঁক,আমি সত্যিই দুঃখিত যে তোমাকে আমি চিনতে পারছি না। আর তোমাকে চেনাটা আমার জন্য জরুরী ও নয় প্রয়োজন ও নয়।তাই এখানে থেকে আমি আমার নিজের সময় নষ্ট করতে চাই না।এই বলে কাঁক টা সাই করে উড়াল দেয়।একটি বারের জন্য প্যাঁচাটার দিকে তাকিয়েও দেখে না।
প্যাঁচাটা ব্যথায়,হতাশায় কুঁকড়ে যেতে থাকে ।অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে কাকের চলে যাওয়া। টপ টপ করে গড়িয়ে পড়তে থাকে হৃদয় নিংড়ানো অশ্রু ।আকাশে দিকে দুটি ডানা মেলে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে আত্ত চিৎকারে মেতে উঠে প্যাঁচা ...।আহহহহহহহহহহহহহহহহহ।
যতটা আগুনে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলার যন্ত্রনায় তার থেকে বেশি নিজেকে হারিয়ে ফেলার হতাশায়।
ধীরে ধীরে প্যাঁচার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে আগুন, গ্রীবায়,বুকে।প্যাঁচা মুচকি হাসে।দুটি ডানা মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে নির্লিপ্ত নয়নে,যেমনি করে তাকিয়ে থেকেছে সারটা জীবন।যে চোখ দিয়ে অহর্নিশ খুজেছে জীবনের মানে,সেই চোখে আজ আর কোনো জিজ্ঞাসা নেই।আছে শুধু বিহ্বলতা,অজানা এক বিস্ময়ের ঘোর।
প্যাঁচা ভাবে, জীবনটা কত ভয়ঙ্কর সুন্দর,প্রিথিবিটা কত স্নিগ্ধ রুপ নিয়ে প্রতিনিয়ত তার সাথে ভ্রমের খেলা খেলেছে,বার বার মায়ায় কাছে ডেকে খুব তাচ্ছিল্যর সাথে ছুড়ে ফেলেছে হতাশা আর অন্ধকারে।

প্যাঁচা শেষবারের মত বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়।তারপড় তার শরীর এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অস্তিত নিয়ে ঝাপ দেয় আগুন নামক নতুন জীবনের মাঝে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×