গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখলাম রোগিরা আউটডোরে ডাক্তার দেখিয়ে বেরোলেই একদল সু্যট-প্যান্ট পরা লোক তাদের ছেঁকে ধরছেন। তারা রোগির ব্যবস্থাপত্রটি দেখতে চাইছেন। উদ্দেশ্য যে কী, তা বুঝতে কারো এক মিনিটও লাগার কথা নয়। লোকগুলো বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি। ভদ্র ভাষায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। তাদের চাপে ও দৌরাত্বে কিংবা প্রলোভনে ডাক্তাররা বাধ্য হচ্ছেন রোগিদের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ লিখে দিতে। এর অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় বলেও অভিযোগ করে থাকেন রোগিরা। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল চত্বরে এই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দৌরাত্ব্য কখনোই কাম্য নয়।
হাসপাতালে ডাক্তাররা সাংবাদিক দেখলে জোটবদ্ধ হয়ে আক্রমণ করতেও দ্বিধা করেন না। অথচ এই দালালরুপি মানুষগুলো দিব্যি হাসপাতালে ঘুরে বেড়ান। রোগিদের বিরক্ত করেন আর ডাক্তারদের চাপ দেন। এমনো দেখেছি, সরকারি হাসপাতালে বেসরকারি ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন টেস্ট করানোর জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করছেন। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগ পর্যন্ত প্রশাসন চোখ-কান বুঁজে থাকেন। অথবা অর্থের অনেক শক্তি, যা তাদের চক্ষু এবং কর্ণকে বুজিয়ে রাখে।
যখন এ ব্যাপারে নিউজ করার জন্য তাদের কাছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা কমেন্ট জানতে চান তখন তারা মুখস্ত বুলি আওড়ান, 'এ ধরনের তৎপরতা এই হাসপাতালে নিষিদ্ধ। কেউ এরকম করছে বলে আমার জানা নেই। যদি কেউ করে থাকেন তাহলে তাকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' আরে ভাই এই বস্তাপঁচা বুলি আর কত! ক্যামেরা হাতে সাংবাদিক হাসপাতালে ঢোকার সাথে সাথে যদি আপনার হাসপাতাল কতৃপক্ষের পেশাগত নৈতিকতা আর চেতনা জাগ্রত হয়ে ওঠে তাহলে এই দালালগুলো ঢোকার সময় কোথায় থাকে আপনার সিকিউরিটি গার্ড, সিসি ক্যামেরা আর আপনার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। সোজা বলে দিলেই হয়, এটা বৈধ তৎপরতা, ইহা চলবে। হয়তো চাখের চামড়া একটু কমবে এতে, কিন্তু শব্দের হঠকারিতা থেকে তো জনগন রক্ষা পাবে।
আর যদি সেটা না হয়, যদি সত্যিই স্বাস্থ্যসেবা খাতের কর্তারা সত্যিই সেবার মানসিকতা ধারন করেন তবে এই দালালদের দৌরাত্ব বন্ধ করা এক দিনের কাজ। ভাই আপনাদের হাতে ক্ষমতা আছে, কাজে লাগান। আর যতদিন না করবেন, কলম সৈনিকরা তো খোঁচাতেই থাকবে। যদিও জানি, আপনাদের চামড়া বেশ মোটা, খোঁচায় কিছুই হয়না।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৪