একবার ইব্রাহিম আঃ বকরীর পাল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন- হঠাৎ দেখলেন এক পথচারী পাশ দিয়ে যাচ্ছে, আর গুন গুন করে এ তাসবীহটি পড়ছে-
“সুবহানাযিলমুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানা যিল আ’যযাতি
ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়াহি ওয়াল যাবারুত।”
এমন সুন্দর শব্দমালায় আল্লাহ তাআলার গুনগান শুনে হযরত ইব্রাহিম আঃ এর অন্তর নেচে উঠল। তিনি আত্নহারা হয়ে গেলেন। ব্যাকুল মনে কামনা করলেন-
“তোমার বন্দনা প্রভু, চলুক অবিরাম।”
ইব্রাহিম আঃ : আকুতি ভরা কন্ঠে আরয করলেন, প্রানের ভাই আমার! আরেকবার গাওনা ঐ সুমধুর গান!
পথচারী : আচ্ছা ঠিক আছে গাব। তবে বিনিময়ে আমাকে কী দিবে?
ইব্রাহিম আঃ : এই যে বকরীর পাল দেখছ, এর অর্ধেকটা তোমাকে দিয়ে দিব।
পথচারী ঐ তাসবীহ খানা আবার শুনালেন।
হযরত ইব্রাহিম আঃ এর কাছে মনে হল, জগতের সব মধু, সব রস তার কর্ণে ঢেলে দেয়া হয়েছে।
ইব্রাহিম আঃ : তাসবীহটি আরেকবার শুনাও।
পথচারী : এবার কী দিবে?
ইব্রাহিম আঃ : অবশিষ্ট সব বকরী তোমায় দিয়ে দিব।
পথচারী ঐ তাসবীহ খানা আবার শুনালেন।
হযরত ইব্রাহিম আঃ এর মন ভরলনা। বরং ব্যাকুলতা যেন আরও বেড়ে গেল। তাসবীহটি শুনার জন্য মন অস্থির হয়ে উঠল।
ইব্রাহিম আঃ : আরেকটা বার শুনাও না ভাই আমার!
পথচারী : এখন আপনার কাছে আমাকে দেয়ার মত আর কী আছে?
ইব্রাহিম আঃ : ভাই বকরীগুলো চরাবার জন্য তোমার তো একজন রাখালের প্রয়োজন, তুমি তাসবীহটি আরেকবার শুনাও। আমি তোমার রাখাল হয়ে যাব।
এ কথা শুনা মাত্র পথচারী বলে উঠল, ওহে আল্লাহর বন্ধু ইব্রাহিম! মোবারক হোক আমি তো একজন ফিরিশতা। আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঠিয়েছেন, বলেছেন যাও। আমার বন্ধু ইব্রাহিম এর সন্মুখে আমার নাম উচ্চারণ কর, দেখ, আমার নামের মূল্য তিনি কী নির্ধারণ করেন?
অতএব অন্তর যখন পরিশুদ্ধ হয়, তখন বান্দা আল্লাহ তা’আলার নামের উপর নিজের জীবনও উৎসর্গ করে দেয়।
“বিলিয়ে দেয়েছে জীবন তাকে
জীবন তো তারই দান,
হয়নি শোকর আদায় যে তাই
কাদে আমার প্রাণ”।
আল্লাহওয়ালারা প্রাণ তো উৎসর্গ করেনই, আবার এটাকে আল্লাহ তা’আলার বিশেষ অনুগ্রহ মনে করেন। অন্তর গড়লে গড়ে, আর বিনষ্ট করলে বিনষ্ট হয়। আমাদের এ অন্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস।