somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুরু আর শেষের মিল অমিলের গল্প

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত প্রায় একটা । সেন্টমাটিন এর গাড়ি ছাড়তে আরও ঘণ্টা দেড়েক বাকি আছে। অনেক দিন পর আবার সেই সেন্টমাটিন ট্যুর। এবারো তোমাকে ছাড়া।

– নাহ…নাহ……নাহ……তুমি আমাকে ছেঁড়ে এবার আর একা সেন্টমাটিন যেতে পারবেনা। এখনি তুমি ঢাকা ফেরত যাও
– এইসবের মানে কি জান ?
– নাহ তুমি আর একা ওখানে যেতে পারবেনা।
– একে বারে বিয়ের পর
– ঠিক আছে যাও, এবারের মত আমাকে যেতে দাও। তারপর তোমার সাথেই যাবো
– নাহ…নাহ……নাহ……
– জান আমি এক জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছি, প্লিজ আমার মুড টা নষ্ট করে দিও না।
– এতবার ওইখানে যাওয়ার কি দরকার ?
– বললাম তো আর যাবো না, এবারই শেষ। তারপর শুধু তোমার সাথেই যাবো।
– আচ্ছা তুমি চিটাগং এসেছো, আর আমার সাথে দেখা করবানা ?
– এখন তো রাতের দেড়টা বাজে, এত রাতে কিভাবে আসব ?
– জানিনা কিভাবে আসবা, বাট তোমাকে আসতে হবে।

এরপর আর কোন উপায় না পেয়ে উৎসব তার এক বন্ধু কে নিয়ে প্রচেতার বাসার যাওয়ার জন্যে রাজী করায়। একটা সি.এন.জি করে প্রচেতার বাসার সামনে যেয়ে নামে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। পাশের একটা খাবারের হোটেলে কিছু লকের আড্ডা চলছে । উৎসব প্রচেতার বাসার সামনে এসে মোবাইলে কল দেয়।

– হ্যালো
– হুম, আমি তোমার বাসার সামনে
– কই তুমি, আমি তোমাকে দেখতে পারছিনা।
– ওকে দাড়াও, আমি আমার মুখে মোবাইলের অন্য মোবাইলে থেকে লাইট মারছি।
– হুম দেখতে পারছি।
– আমি তো তোমাকে দেখতে পারছিনা
– দাড়াও, আমি চার্জ লাইট নিয়ে আশি……………এবার দেখতে পাচ্ছ ো ?
– হুম………এতো পাগলামু করো কেন জান তুমি ?
– তুমি আমাকে ছেঁড়ে ওইখানে গেলে আমার ভালো লাগেনা। আমি কি করবো বল ?
– তুমি আমার সাথে ওইখানে কিভাবে যাবা ? বিয়ের আগে এটা সম্ভব ?
– তাহলে তুমিও আর বিয়ের আগে কত্থাও যেতে পারবেনা।
-আচ্ছা। কিন্তু তুমি এত রাতে আমার সাথে এমন করলে কেন ? এখন যদি আমাদের ছিনতাইকারী ধরত ?
– এই মোবাইল ঠিক করে ধরো, তোমাকে দেখা যায়না ?
– ও সরি
– তুমি তাহলে আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাবা ?
– জান আবার শুরু করেছো…………………




আশে-পাশের সেই মানুষ গুলু এবার বিষয় টা লক্ষ করে।কেউ কেউ হোটেল থেকে বের হয়ে উৎসব কে লক্ষো করে। তারা বুঝতে পারে, ছেলেটা সামনের বিল্ডিং এর ছয় তালার একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। রাতের প্রায় ২ টা। উৎসবের বন্ধু আশে-পাশের পরিস্থিতি দেখে তাকে এবার ব্যাস স্ট্যান্ড যাওয়ার জন্যে তাগাদা দেয়। ………তারপর উৎসব একরকম বাধ্য হয়ে মাঝরাতের এই উদ্ভূত ডেটিং পর্ব সমাপ্ত করে বাস স্টপেজ এ ছুট দেয়।


উৎসব এবার আবার চট্টগ্রাম এসেছে, তবে এবার আর সেন্টমাটিন যাওয়ার জন্যে না। ওই পাগল টার সাথে সময় কাটানোর জন্য ………পাগল টাকে কাছে থেকে দেখার জন্যে………
উৎসবের কাছে প্রচেতার পোশাক আশাক সবসময় অদ্ভুত লাগে। বেশি স্টাইল এর করতে যেয়ে ওকে উৎসবের কাছে মাঝে মাঝে কাটুন কাটুন মনে হয়।
– এই তুমি এইসব উদ্ভূত জিনিস কই পাও ?
– মানে ?
– এইযে তোমার ব্যাগ টা দেখে মনে হচ্ছে তুমি কোন জাদুকর, স্যান্ডেল টাতো পুরাই কার্টুনের মত আর এই শাল টা পড়ার থেকে তো না পরাই ভালো।
– তুমি তো একটা ক্ষেত, তুমি এসবের কি বুঝবা ?
– ও আচ্ছা …………… সরি, বাট গতবার কিন্তু এই টাইপের একটা শাল পরে আসছও, পরে ঠাণ্ডায় আমার সুয়েটার টা খুলে নিজে পরেছও, এবার আর আমি দিবনা।
– যাহ, না দিলে নাই। কেমনে নিতে হয় আমার জানা আছে।
-শয়তান মেয়ে
– এইখানে এসেও ঝগড়া করবা ?
– নাহ…ভুল হয়ে গেসে




তারা এবার একটা সি.এন.জি করে ফয়েয লেক এসে নামে। কতক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে এবারে প্রচেতার মাথায় শয়তানি খেলা করে। উকি জুকি দিয়ে যেখানেই দেখে কোন জুটি রোমাঞ্চ করছে, সেখানেই উৎসব কে ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের সামনে হাঁটাহাঁটি শুরু করে। তাদেরকে দেখে জুটি গুলো সাবধান হয়ে যায়।
– এই মেয়ে, তোমার সমস্যা টা কি ?
– বেচারারা একটু ডেটিং করতে চিপায় আসছে, আর তুমি ওদের কে জ্বালাচ্ছ ?
– বাইরে এইসব করবে কেন ওরা ?
– কেন আপনি কখনো করেন নাই ?
– ওইটা তো তুমি করো, আমি করি না।
– আর আপনি তখন কি করেন ? দূরে তাকিয়ে তামাশা দেখেন ?
– নাহ, তবে তাই করতাম। কিন্তু তুমি এত কষ্ট করে ঢাকা থেকে আসো, তাই না করতে পারিনা
– ও তাই না …………………
– এই……দূরে জাও………সবাই তাকিয়ে আছে……

-তুমি এমন করলে কেন ?
– তুমি বল আমি নাকে তোমাকে আলগাতে পারবনা, তাই তোমাকে দেখিয়ে দিলাম
– তাই বলে সবার সামনে এইভাবে ? আমার পরিচিত কেও যদি দেখত ?
– তোমার পরিচিত কেউ এখানে আসবে কেন? আর আসলে সেউ হয়তো কাউকে নিয়ে রোমাঞ্চে এসেছে।

উৎসবের এমন আচরণে প্রচেতা একটু ভয় পেয়ে যায়, কে না কে আবার দেখে ফেলেছে…………তারা এবার ফয়েয লেক থেকে বের হয়ে লাঞ্চ করে নেভালের দিকে ছুটে যায়।

– এই উৎসব আমি নৌকায় উঠবো।
– নাহ, আমরা কেউ সাতার জানিনা
– আর না জানলেও সমস্যা নেই, নৌকার মাঝি রা হেল্প করবে, আর এখানে কখনো নৌকা ডুবে না
– আমাদের দুইজনের একা অন্য কারো সাথে এইভাবে নৌকায় উঠা ঠিক হবেনা, আর আমার কাছে এখানের সব কিছুই অপরিচিত
– আমি বললাম তো কিছু হবেনা, প্লিজ চলনা, আমি উঠবো

এবার উৎসব একটু রেগে গিয়ে উঠে,
– তোমার মাথায় বুদ্ধি শুদ্ধি কবে হবে ? একটু ও সেন্স নেই তোমার ?
– ওইখানে নৌকা ডুবা ছাড়া ও অনেক প্রবলেম হতে পারে…… এটা বুঝো না তুমি ?
– ঠিক আছে যাও, উঠতে হবেনা।
– বুঝার জন্যে ধন্যবাদ

তারপর ওখানে কিছু ভালো সময় পার করে, তারপর যায় পতেঙ্গা। এবারের উৎসবের যাবার পালা। ২ জনেরই মন খারাপ।
-এই আবার কবে আসবে
– নেক্সট মান্তে অথবা তার পরের মাসে
– ঠিক আছে
– তোমার কাছে টাকা আছে তো, নাকি সব শেষ ?
– আরে আছে আছে
– শুনো তুমি কিন্তু আমার উপর রাগ করে কখনো মোবাইলে অফ করে রেখনা, আমার তখন খুব কষ্ট হয়। আর ঢাকা পোঁছে আমাকে ফোন করবে কিন্তু। আর আমার উপর রাগ করে থেকো না। আসলে আমিই তোমার সাথে শুধু শুধু ঝগড়া করি। এখন থেকে আর না করার চেষ্টা করবো
– এই আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা।
– হিঃ হিঃ……… তাহলে থেকে যাও তুমি
– না এক কাজ করো। তুমি আমার সাথে চল
– তোমার মা তো আমাকে ঘরে ঢুকতে দিবেনা, বলবেন কাকে ধরে নিয়ে আসছিস ?
– আরে না, কিছু বলবেন, বলবো আমার বউ






পূর্ণিমার রাত……… চারিদিকে কোলাহল হীন অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা। একটা ঢেউর উপর আরেকটা ঢেউ আছড়ে পড়ছে সাগরের তীরে। বালির উপর রাখা একটা ট্রলারে উপর উৎসব হেলান দিয়ে বসে আছে। উৎসবের গায়ে ভর দিয়ে প্রচেতা অতীত টাকে বারবার স্মরণ করছে। সেন্টমাটিন আসা নিয়ে প্রচেতার সেই মুহূর্ত মনে করে প্রচেতা আর উৎসবের কি হাসাহাসি। এই সেই সেন্টমাটিন…………… ঢেউর সাথে তীরে আছড়ে পরা কোন এক নাম না জানা পদার্থের উজ্জ্বল আলো দেখে প্রচেতা দৌড়ে যায় সেই আলোর কাছে, ধরতে যায়, নিমিষেই সেটা হারিয়ে যায়……… প্রচেতা তীরে দাড়িয়ে আছে আর তার পা একটু একটু করে জোয়ারের পানিতে ভিজে যাচ্ছে……… তখন ও খুব উৎসাহিতও হচ্ছে।প্রচেতার এমন শিশু শুলুভ আচরণ উৎসবের কাছে ভালোই লাগছে। অনেক দিনের ভালবাসা-বাসির পর তাদের মিলন, তারপর প্রথম কোথাও দূরে ঘুরতে আসা………………………
বালির উপর তারা দুজন খালি পায়ে হাঁটছে।দুজন বালির উপর হাঁটতে হাঁটতে দুষ্টমি শুরু করে দিলো…………… এবারের ধাক্কাটা একটু জোরেই লাগলো। প্রচেতা ব্যাল্যান্স হারিয়ে সোজা বালিতে লুটূপুঁটি……………
– এমন করলে কেন?
– আমি সরি জান, এবার একটু জোরে হয়ে গেছে
– না আমি কোন কথা শুনবো না, তুমি এবার নিজ থেকে বালিতে শুয়ে ৩ টা ডিগবাজি খাবা। এটা তোমার শাস্তি।
– হায় আল্লাহ্‌… আমার পুরো শরীর পরে চুলকাবে গোছল না করলে, আর এত রাতে এখানে গোছল করাও সম্ভব না
– না, তোকে এখানে ডিগবাজি খেতেই হবে
– প্রচেতা আমার ভুল হয়েই গেছে, সরি

প্রচেতা এই বলে উৎসব কে বালির উপর ফেলে দেওয়ার জন্যে কিছুক্ষণ বৃথা ধাক্কাধাক্কি করে যায়, তারপর কলার চেপে, ” আমার সাথে শক্তি দেখাস ? ” তোকে আজকে এখনে ডিগবাজি খেতেই হবে,………”
উৎসব এবার শক্ত করে প্রচেতাকে জড়িয়ে ধরে, প্রচেতা আরো কিছু বলার আগেই…………… প্রচেতা নিজেকে হারিয়ে ফেলে। সমস্ত শুক্তি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। সে তার সবটুকু উৎসবের কাছে সপে দেয়ার জন্যে যেন প্রস্তুত। উৎসবও যেন…………

[না, গল্পের শেষ পর্ব টা এমন না……….. আবার কিছুটা হয়তো এমনও। শেষটায় প্রচেতার সাথে উৎসব নেই কিংবা উৎসবের সাথে প্রচেতা নেই, আছে অন্য কোন কেউ অথবা অন্য কেউ বা কারো সাথে আছে উৎসব কিংবা প্রচেতা… “কারণ আমাদের স্বপ্ন ভাঙ্গে আজও কষ্ট নিয়ে, দুঃখ আঁকি আজও সাদা রঙের……জানি সবই রুঢ় বাস্তবতা জীবনের ]
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×