গার্মেন্টস্ শিল্প বিরোধী আমি নই ।
আপনার স্কুলপড়ুয়া বোন যদি আপনাকে বলে একটি ছেলে তাকে স্কুল থেকে আসার সময় প্রতিদিন বিরক্ত করে ,
এতেই তো আপনার রক্ত মাথায় উঠবে । ঐ ছেলেটি কিন্তু আপনার বোনের শরীরে হাত দেয় নি, বিরক্ত করেছে মাত্র ।
ছেলেটিকে শায়েস্তা না করা পর্যন্ত আপনি ঘুমাতেই পারবেন না ।
এবার ভাবুন তো .....
আপনাদের মা -বোনেরা যদি তাদের অফিসের বস দ্বারা নির্যাতিত হতেন, তাহলে কি করতেন আপনারা ?
১. মুখে প্রতিবাদ করতেন ?
২. আপনি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় বা রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে সেই বসকে পেটাতেন ?
৩. পুলিসের কাছে যৌন নির্যাতনের কেস করতেন ?
৪. ভূক্তভোগীকে চাকুরি করতে নিরুৎসাহিত করতেন ?
আপনি উপরের সবগুলোই করতেন । দম থাকতে কমে ছাড়তেন না । কারণ আপনার টাকা, ক্ষমতা , প্রভাব সবই আছে ।
আপনার মা-বোনদের পেটের কোন তাগিদ নেই । চাকুরি না করলেও কিছু যায় আসে না ।
কিন্তু পেটের তাগিদ আছে একজন পোশাক শ্রমিকের । সে হোক পুরুষ কিংবা মহিলা ।
একজন পোশাক শ্রমিক আপনাদের মত প্রতিবাদ করতে পারা তো দূরে থাক মুখ খুলতেই সাহস পায় না ।
আর যারা সাহস করে মুখ খোলে তাদের চাকরি থাকে না ।
তারা সমস্ত দুঃখ কষ্টের নীরব শ্রোতা । কিছুই করার নেই তাদের ।
যেখানে কোম্পানির মালিক অফিসেই যৌনতা করেন, সেখানে তার কর্মচারীরা কি করবেন ?
আর মালিকেরা তাদের ফ্যাক্টরির তৈরীকৃত মাল বা পোশাক বিদেশী বায়াদের দিয়ে পাশ করাতে , তাদের কাছে গাদা-গাদা সুন্দরী তরুনী এনে দেন ।
বিষয়টা এই রকম ,
সুন্দরী নারী + কিছু ড্রিংকস = goods are passed .
পোশাক শিল্পের একজন সামান্য লাইন চীফ(line chief) বা সুপারভাইজার (supervisor) , তারা তাদের অধিনস্থ কোন সুন্দরী মেয়েকে বাদ রাখেন না ।
অফিসারদের কথা তো বাদ ই দিলাম ।
কোন মেয়ে যদি তার শরীর দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাদের বস তাদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন । প্রশাসন বিভাগে বিচার দেন , এই মেয়েকে দিয়ে প্রডাকশন হচ্ছে না ।
কিংবা টার্গেট অনুযায়ী কাজ করছে না ।
তাকে বের করে দেন ।
একজন ভদ্রলোক যিনি কিনা একসময় লাইনচীফ ছিলেন ,
তিনি এখন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার । কারন তিনি বিদেশী জি.এম এর জন্য ভালো ভালো মেয়ে জোগার করতে পারতেন ।
একজন ভদ্রমহিলা , তিনিও একসময় লাইন চীফ ছিলেন। কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই ।
কিন্তু বর্তমানে সে এখন ওয়েলফেয়ার অফিসার ।
অসহায় -দরিদ্র বাঙালী নারীরা আজীবন ভোগের পাত্রই রয়ে গেল ....।
স্কুল-কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটিত মেয়েলি কেলেঙ্কারি কে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যায় ।
কিন্তু গার্মেন্টস এর এই বিষয়গুলো বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয় । এখানে এইগুলো সচরাচর ঘটছে ....।
পোশাকশিল্পে শুধুমাত্র কঠোর নীতিমালা না থাকার কারনে,
শত শত পরিবার ভেঙে যাচ্ছে ......
এর পূর্বে আমি আরও একটি লেখা পোষ্ট করেছিলাম , "গার্মেন্টস এবং অবাধ যৌনতা "
শিরোনাম দিয়ে । ওখানে অনেকেই বলেছেন
যে, পরিসংখ্যান ব্যতীত কিভাবে আমি ওই লেখাটি পোষ্ট করেছিলাম ? আরও বলেছেন কোন গবেষণা ছাড়া ঐ ধরনের লেখা মানে পোশাকশিল্পের বিরোধিতা করা ।
আমি তাদের বলতে চাই, গার্মেন্টস এ কেউ জাতীয়ভাবে পরিসংখ্যান এবং গবেষণার জন্য আসবে না । আসলে তো শ্রমিকদের উপর অমানবিকতার সমস্ত গুমর ফাঁস হয়ে যাবে ।
আর কত ভাবে পোশাকশ্রমিকদের দুর্দশার বর্ণনা দিলে বিষয়টি সরকারের নজরে আসবে ?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৪৮