somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুগন্ধি চাল সমাচার

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব: - ০২

বিশেষ জাতের ধান থেকে সুগন্ধি চাল তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এলাকাভিত্তিক প্রচুর সুগন্ধি ধান আবাদের প্রচলন আছে। দেশি জাতগুলোর চাল আকারে ছোট ও অনেকটা গোলাকার হয়। সুগন্ধি ধানের জাতগুলোর বেশির ভাগই আলোক সংবেদনশীল, দিনের দৈর্ঘ্য কমে গেলে হেমন্ত কালে ফুল ও দানা গঠন হয়। প্রধানত আমন মৌসুমে (খরিফ-২ তে) সুগন্ধি ধানের চাষ করা হয়। এ মৌসুমে প্রায় ১০% জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ করা হয়। প্রধান পোলাও, বিরিয়ানি, কাচ্চি, জর্দা, ভুনা-খিচুড়ি, ফিরনি, পায়েশসহ আরও নানা পদের সুস্বাদু ও দামি খাবার তৈরিতে সুগন্ধি চাল বেশি ব্যবহার হয়। বিয়ে, পূজা-পার্বণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানে সুগন্ধি চালের ব্যবহার অতি জনপ্রিয়। অনেক সচ্ছল পরিবারে, বনেদি ঘরে সাধারণ চালের পরিবর্তে সুগন্ধি (কাটারিভোগ, বাংলা মতি) সিদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার রেওয়াজ অহরহ দেখা যায়।

চাইনিজ, ইটালিয়ান, ইন্ডিয়ান হোটেল/ রেস্টুরেন্ট, পাঁচ তারকা হোটেল/ মোটেল পর্যটন কেন্দ্রে প্রধানত সুগন্ধি চালের ভাত, পোলাও নানা পদের খাবার পরিবেশনে সুগন্ধি চাল ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এ দেশি অতি উন্নত মানের সুগন্ধি চালের জাতগুলো সম্বন্ধে ধারণা ও প্রচারণার অভাব দেখা যায়। এর ফলে নামি-দামি হোটেলে আমাদের জনপ্রিয় সুগন্ধি ধানের জাতগুলোর পরিবর্তে বিদেশি বাসমতি জাতের চাল ব্যবহার প্রচলন মাঝে মাঝে দেখা যায়। এ অবস্থার উন্নয়নে ও দেশি সুগন্ধি জাতগুলো যেন তারা নানা পদের খাদ্য তৈরিতে বেশি আগ্রহী হয়, সেজন্য সব ধরনের উদ্বুদ্ধকরণ ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক।

জাত: বিভিন্ন জেলায় অঞ্চলভিত্তিক প্রচুর সুগন্ধি ধানের জাত আছে। জাতগুলোর মধ্যে অধিকাংশই অতি সুগন্ধি। এ জাতগুলো প্রধানত চিনি গুঁড়া, কালিজিরা, কাটারিভোগ, তুলসীমালা, বাদশাভোগ, খাসখানী, বাঁশফুল, দুর্বাশাইল, বেগুন বিচি, কাল পাখরী অন্যতম। হালকা সুগন্ধযুক্ত জাতগুলোর মধ্যে পুনিয়া, কামিনী সরু, জিরাভোগ, চিনি শাইল, সাদাগুরা, মধুমাধব, গোবিন্দভোগ, দুধশাইল প্রধান। প্রচলিত জাতগুলোর বেশির ভাগই হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ক্ষমতা তুলনামূলক অনেক কম। এজন্য সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রচলিত সুগন্ধি ধানের জাতগুলো উন্নয়নে ও নতুন উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনে তৎপর হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে মোট ৫টি এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে দুটি মিলে এ দেশে মোট ৭টি সুগন্ধি ধানের জাত অবমুক্ত করা হয়েছে।



দেশি সুগন্ধি চাল জনপ্রিয়করণ ব্যবস্থা: এ দেশে উদ্ভাবিত ও প্রচলিত সুগন্ধি ধানের জাতগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে যেভাবে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল ততটা অনুসরণ করা হয়েছে বলে মনে হয় না। এ কারণে ঢাকাসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরের নামি-দামি হোটেল মোটেল ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এ দেশি সুগন্ধি চালগুলো থেকে তৈরি নানা পদের খাবার পরিবেশন অর্জন কাক্সিক্ষত মাত্রায় খুব একটা দেখা যায় না। উৎপাদক ও গবেষকদের এ চাল উৎপাদন এবং উদ্ভাবন তৎপরতার পাশাপাশি নামি-দামি হোটেল, রেস্তোরাঁ ও মোটেলে দেশি সুগন্ধি চাল ব্যাপকহারে জনপ্রিয়করণ ব্যবস্থা নেয়া সংশ্লিষ্ট সবারই কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে করণীয় দিকগুলোর কিয়দংশ তুলে ধরা হলো।

১। গুরুত্বপূর্ণ হোটেল মোটেলগুলোর ও পরিবেশিত খাদ্যতালিকা নিরূপণ: ঢাকাসহ বড় বড় শহরস্থ নামি-দামি হোটেলগুলোর শুরুতেই একটা তালিকা তৈরি করে নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে তারা চাল দিয় যেসব খাদ্য আইটেম তৈরি করে পরিবেশন করে থাকে সেগুলো সংগ্রহ করে নিতে হবে। নির্ধারিত সার্ভে ফরম তৈরি করে নিয়ে তা পূরণ ব্যবস্থা করা হলে কাক্সিক্ষত তথ্য বেরিয়ে আসবে। এরপর দেশের দামি বাবুর্চিকে (টমি মিয়া) দিয়ে আমাদের উপযোগী সুগন্ধি চাল দিয়ে সব ধরনের রেসিপি তৈরি করে নিয়ে তার ছবিসহ উপকরণ বিবরণী উল্লেখ করে উন্নত মানের আকর্ষণীয় রঙিন পুস্তিকা তৈরি করে নিতে হবে। সে আলোকে হাতে-কলমে এ রেসিপির অনুসরণে খাদ্য তৈরি করে তালিকাভুক্ত নামি-দামি হোটেলে প্রশিক্ষণ আয়োজনের মাধ্যমে হাতে-কলমে গুরুত্বপূর্ণ উদ্বুদ্ধকরণ দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এছাড়াও হোটেলগুলোর তালিকাবহির্ভূত কিছু নতুন রেসিপি চিহ্নিত করে তা ওইসব দামি হোটেলগুলোতে জনপ্রিয় করার ব্যবস্থা একইভাবে নিতে হবে। এ কাজের দায়িত্ব এআইএস, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এমনকি কে.জি.এফ এর মাধ্যমে নতুন প্রকল্প সহায়তা আকারে জনপ্রিয় করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন উদ্যোগ নিতে হবে।

২। সুগন্ধি চালে তৈরি ফাস্ট ফুড: দেশ-বিদেশে আজ কাল নানা পদের আধা সিদ্ধ চালের সঙ্গে কিছু পরিমাণ ডাল, সবজি ও প্রক্রিয়াজাত মিট একত্রে মিশিয়ে ম্যালামাইন জাতীয় গ্লাসে বা মগে সংরক্ষণ করে তা সিল করে বিপণন করা হয়। ফাস্ট ফুড দোকান থেকে তা কিনে উপরের মোড়ক সরিয়ে তাতে পরিমাণমতো গরম পানি মেশানো হলে তা উপাদেয় পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। যুবক-যুবতী বিশেষ করে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে এ খাবার অতি জনপ্রিয়। সুগন্ধি চাল দিয়ে এ ধরনের ফাস্ট ফুডের অনুকরণে তা তৈরি ও বিপণনে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিলে সুগন্ধি চাল জনপ্রিয়করণে গুরুত্বপূর্ণ একনতুন মাত্রা যোগ হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এ ফাস্ট ফুড তৈরির রেসিপি তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করে তা উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তা বাজারজাত করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

৩। খাদ্য মেলার আয়োজন: এ উদ্বুদ্ধকরণ ব্যবস্থাকে বেগবান করতে হলে এলাকাভিত্তিক দিনব্যাপী কিছু সংখ্যক খাদ্য মেলার আয়োজন করার প্রয়োজন হবে। সেখানে বিদেশি মিশনসহ বিভিন্ন তালিকাভুক্ত হোটেল, রেস্তোরাঁ ও মোটেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াত পত্র বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারীরা খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া ও দেশি সুগন্ধি চালের নানা গুণাগুণ সরেজমিন দেখে উদ্বুদ্ধ ও আকর্ষিত হবে।

৪। ভিডিও তৈরি করে তা সরবরাহ: দেশি সুগন্ধি চাল সংশ্লিষ্ট হরেক রকম খাবার ও এর তৈরি রেসিপির ভিডিও তৈরি করে নানা পদের আকর্ষণীয় খাবারগুলোর প্রচার উপযোগী দিকগুলো তা হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করে তাদের এ খাবার পরিবেশনে আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশি সুগন্ধি চালের উপকারী ও আকর্ষণীয় দিকগুলো সুন্দরভাবে ভিডিওতে তুলে ধরে প্রচারের সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৫। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে সুগন্ধি চালের তৈরি খাদ্য পরিবেশন: রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যেন দেশি সুগন্ধি চালের তৈরি নানা পদের আকর্ষণীয় খাদ্য পরিবেশিত হয় সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও যেন একই পন্থা অবলম্বন করতে সক্রিয় হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬। বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার: দেশি সুগন্ধি চাল ব্যবহার জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে গণমাধ্যম ব্যবহারের সব ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। সে মতে সরকারি/বেসরকারি রেডিওগুলোতে যেন সুগন্ধি চাল ও তা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবারের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়, তার সুব্যবস্থা নিতে হবে। একইভাবে বিভিন্ন টেলিভিশনে কৃষি বিষয়ক সংশ্লিষ্ট সব অনুষ্ঠানে এমনকি টকশোতে দেশি সুগন্ধি চাল ও তা থেকে তৈরি খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে ব্যাপক প্রচার ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে।

৭। ওয়ার্কশপ ও সেমিনার আয়োজন: দেশি সুগন্ধি চালের ওপর আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয়ভাবে সেমিনার/ওয়ার্কশপ আয়োজনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকবে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণবিদ, নামি-দামি হোটেলের বাবুর্চি, ম্যানেজার, উৎপাদনকারী ও বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিবর্গ। আলোচনায় যেসব সুপারিশমালা উঠে আসবে সে আলোকে উৎপাদনকারীরা প্যাকিং, গ্রেডিং, লেবেলিংয়ের মান উন্নয়ন এবং তা থেকে নিত্যনতুন সুস্বাদু খাবার তৈরি ও পরিবেশন জনপ্রিয়করণে সংশ্লিষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে।



সুত্র:
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ




সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×