মজার ব্যাপার হলো তিনি একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখেছেন নাকি মনগড়া কথা লিখে অনুসন্ধানের নামে চালিয়ে দিয়েছেন এটা বোঝা যায় নি।
ফিউশান ফাইভের উল্লেখিত ১৭টি অনুসন্ধানী গল্পের ১৭টিই রেফারেন্স বিহীন কাল্পনিকতায় দুষ্ট। দয়া করে পর্যাপ্ত রেফারেন্স ছাড়া গল্প তৈরী বন্ধ করুন, পাঠকদের বিভ্রান্ত করবেন না।
প্রথমে আসুন দেখি প্রথম সন্ধর্ভ-http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5/29247245
অনুসন্ধান -১
“একাধিক পর্বতারোহী নিশ্চিত করেছেন, পর্বতে হোয়াইট আউট (হঠাৎ করে মেঘ এসে চারদিক ঢেকে দেওয়া) হওয়া একটা স্বাভাবিক ঘটনা।“
প্রশ্ন- এখানে একাধিক পর্বতারোহী বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে? আপনি কাদের সাথে কথা বলেছেন? এটা কি উল্লেখ করা জরুরী না? আমি নিজে একটা কিছু বানিয়েও বলে দিতে পারি একাধিক পর্বতারোহী নিশ্চিত করেছেন।
অনুসন্ধান -২
“ অনুসন্ধানে জেনেছি, অন্নপূর্ণা ফোর পর্বতাভিযানে ওই পর্বতের চূড়ায় যে সময়ে (১১টা ৫৪ মিনিট, স্থানীয় সময়) মুসা ইব্রাহীম আর তৌহিদ হোসেন পৌঁছেছিলেন, সে সময়ে পর্বতের চূড়ায় পুরোটাই হোয়াইট আউট ছিল।”
প্রশ্নঃ কোথা থেকে অনুসন্ধানে কিভাবে জেনেছেন? এটা যোগ করে দেয়া কি জরুরী না? আমি অনুসন্ধান না করেও বলে দিতে পারি অনুসন্ধানে জেনেছি মুসা চাঁদে গিয়েছেন।
অনুসন্ধান- ৩
“অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এনএসিবির (নর্থ আলপাইন ক্লাব) অন্নপূর্ণা ফোর অভিযানে লিয়াঁজো অফিসার নিজে সামিটের ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে নেপাল ট্যুরিজম বোর্ডে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর পরই নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড এনএসিবি দলকে অন্নপূর্ণা ফোর পর্বতে সাফল্যসূচক সনদ দিয়েছে।”
প্রশ্নঃ আবারও সোর্স বিহীন অনুসন্ধান এর গল্প কেন? কার সাথে কথা বলেছেন আপনি? সেটার প্রমান কোথায়?
অনুসন্ধান – ৪
“যেমন, মুসা ইব্রাহীমের অন্নপূর্ণা ফোর পর্বত জয়ের ছবিকে যদি সন্দেহের চোখে দেখতে হয়, তাহলে মুনতাসির মামুন ইমরানের দাবিকৃত কেওক্রাডং বাংলাদেশ ক্লাবটির ভারতে রুবল কাং পর্বত জয়ের যে ছবি রয়েছে, সেগুলো নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়”
প্রশ্ন- অন্য কেউ একজন চুরি করে বেচে গেছে বলেই কি সমস্ত চোরদের ছেড়ে দিতে হবে?
অনুসন্ধান- ৫
“অনুসন্ধানের স্বার্থে সন্দেহবাদীদের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ঠিক কোন্ কোন্ পর্বতের চূড়ায় ঢাল নেই এবং কোন্ কোন্ পর্বতের চূড়া সমতল- তা কি দয়া করে জানাবেন? না, তারা জানাতে পারেননি।”
প্রশ্ন- সেই সন্দেহবাদীরা কারা যাদের সঙ্গে আপনি কথা বলেছেন? সেই কথা বলার রেকর্ড কোথায়? হাজার হাজার লোক এখন মুসা অভিযান নিয়ে সন্দেহ করছে। এমন লোকজনও করছে যারা আগে কখনো অন্নপূর্নার নামও শুনে নি। তাই কাদের সাথে কিভাবে আপনি কথা বলেছেন জানা জরুরী নয় কি?
অনুসন্ধান -৬
“এনএসিবির (নর্থ আলপাইন ক্লাব) প্রমাণাদি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অন্নপূর্ণা ফোর অভিযান শুরু হয়েছিল ২৯ মে ২০০৯ তারিখে।”
প্রশ্ন- কি ধরনের প্রমানাদি পরীক্ষা করেছেন? সেই প্রমানাদি পাঠকের দেখার অধিকার আছে কি? নাকি আপনার মুখের বানীকের প্রশ্নহীন মেনে নিতে হবে?
অনুসন্ধান -৭
“এখানে লাংসিসা রি পর্বতাভিযানের সময়ের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে সেটা ঢাকা থেকে লাংসিসা রি হয়ে আবার ঢাকায় ফেরার হিসেব।”
“ব্লগে এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটে যে রেফারেন্স টেনে কথা বলা হচ্ছে তা ১৯৫০ সালের রেফারেন্স।”
প্রশ্নঃ এই তথ্য আপনি কোথা থেকে কোন অনুসন্ধান থেকে পেয়েছেন উল্লেখ করা জরুরী নয় কি?
এরপর ১৯৫০ সালের একটা ওয়েবসাইট আপনি আবিষ্কার করে ফেলেছেন! সেটা কোনটা একটু জানাবেন কি? আর এখানে একটা লিঙ্কে আপনি ডেইলি স্টার এর লিঙ্ক দিলেন, ডেইলি স্টার এর সাথে ১৯৫০ সালের কি যোগ আছে বলবেন কি?
অনুসন্ধান -৮
“খোঁজ নিয়ে জেনেছি, রিয়াজ আহমেদ এই পর্বতাভিযান শেষ হওয়ার বহু আগেই দেশে ফিরে এসেছিলেন।”
প্রশ্নঃ কোথা থেকে কিভাবে খোজ নিয়েছেন? আসলেই নিয়েছেন কিনা পাঠক কিভাবে বুঝবে?
অনুসন্ধান – ৯
“চাইলে এর ফুটেজও সংগ্রহ করা যাবে।”
প্রশ্ন- এটা কি চাইলে মুসার এভারেস্ট এর ছবি সং গ্রহ করার মতো হলো না? যদি সম্ভব হতোই তাহলে সংগ্রহ করে দিলেন না কেন?
আমরা দেখলাম, প্রথম পর্বে ফিউশন সাহেব চমৎকার একটি গল্প উপহার দিয়েছেন যেখানে তাঁর নয়টি অনুসন্ধানের কোনোটিরই পর্যাপ্ত রেফারেন্স নেই। এ ধরনের সন্ধর্ব কোনো ডিসার্টেশন হিসেবে দিলে ভর্তিই বাতিল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবার আসুন আমরা তবুও কষ্ট করে একটু দ্বিতীয় সন্ধর্বে যাই-http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5/29249112
অনুসন্ধান- ১০
“অনুসন্ধানে জেনেছি, মুসা তার এভারেস্ট অভিযানের সঙ্গী তিন শেরপাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে এবং কক্সবাজার বেড়াতে নিয়ে গিয়ে তাদের প্রতি যে ধরনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, একই ধরনের কৃতজ্ঞতা ব্রেন্ডান ওমামানি ও স্টিফেন গ্রিনের কাছেও প্রকাশ করেছেন ওই একই সময়ে বাংলাদেশে ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে। কিন্তু তারা সময় বের করতে না পারায় মুসা ইব্রাহীমের অনুরোধ রক্ষা করতে পারেননি।”
প্রশ্ন- কোথা থেকে কিভাবে অনুসন্ধান করেছেন? তথ্য প্রমান কই?
অনুসন্ধান - ১১
“তারপরও পাঠকদের মধ্যে কারো যদি সন্দেহ বর্তমান থাকে, তিনি চাইলে বিষয়টা নিয়ে হিমালয়ান গাইডসের প্রধান ঈশ্বরী পাডওয়েলের (উনি কিন্তু জলজ্যান্ত পুরুষ, মহিলা নন) সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।”
প্রশ্নঃ আপনি লিখছিলেন অনুসন্ধানী সন্ধর্ব, হঠাৎ অনুসন্ধান এর দায়িত্ব পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলেন কেন?আপনি এখানে বেশ কিছু গল্প শুনিয়েছেন এগুলোর যথার্থতা পাঠক কি করে বুঝবে?
অনুসন্ধান – ১২
“খোঁজ নিয়ে দেখেছি, পর্বতারোহী এমএ মুহিতের এভারেস্ট অভিযানে শুধু ট্রান্সকম বেভারেজই ২৫ লাখ টাকা দিয়েছে। মুহিতের অন্যান্য স্পন্সর সিটি ব্যাংক ও আকিজ গ্রুপও তাকে অভিযানের জন্য বড়ো অংকের টাকা দিয়েছিল।”
প্রশ্নঃ কোথা থেকে কিভাবে খোজ নিয়েছিলেন জানানো জরুরী নয় কি? এখন মুহিত এসে বলতেই পারে যে না আমি ট্রান্সকম এর কাছ থেকে কোনো টাকা নেই নি বা সিটি ব্যাংক এর কাছ থেকে টাকা নেই নি!
অনুসন্ধান -১৩
“ এটা করতে গিয়ে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকরা এভারেস্ট জয়ের সনদের ভাষা শুনে নোট নিয়েছেন এবং তা তিন চার হাত বদল হয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ভাষায় কোনো বিচ্যুতি ঘটলে তার দায় কার ঘাড়ে পড়ে?”
প্রশ্নঃ ২৭ মে'র ডেইলি ষ্টার, বিডি নিউজ এবং অন্যান্য পত্রিকা মারফত আমরা জানতে পারি"This is to certify that on 23 May, 6:50 am, Md Musa Ibrahim climbed the peak of Everest, Chomolungma of Mount Everest" is written on Musa's certificate.
এবার ইনভার্টেড কমা'র ভিতরের লাইনগুলো দেখুন- এভাবে ইনভার্টেড কমা দেয়ার মানে নিশ্চয়ই জানেন(?)- এর মানে হলো সার্টিফিকেটে কি লেখা হয়েছে তা হুবুহু তুলে আনা। এবার আপনার আপলোডকৃত ছবিটা দেখুন--কি লেখা আছে? "This is to certify that on 23 May, 6:50 am, The Md Musa Ibrahim Bangladesh has reached the altitude of 8848m above sea level onan expedition to peak Everest Chomolungma of Mount Everest"
এবার মিলিয়ে দেখুন। হুম বলতে পারেন, নেপাল থেকে কেউ একজন পড়ে শুনিয়েছে ফোনে (সব পত্রিকাকে) তাই ভুল হয়েছে। হুম পড়ে শোনালে ভুল হতেই পারে। কিন্তু একটি বাক্য এতগুলো ভুল! তাও আবার সবগুলো পত্রিকায়?
আর পত্রিকাওলারা কি ভাবে লিখেছে সেই তথ্য আপনি কিভাবে পেয়েছেন?
অনুসন্ধান – ১৪
“একটা ট্যুর অপারেটর পর্বতারোহীর অনুপস্থিতিতে তখনই সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে, যখন সেই পর্বতারোহী সম্পর্কে লিয়াজোঁ অফিসার এবং শেরপারা সাক্ষ্য দেয় যে তিনি সেই পর্বতে উঠেছেন”
প্রশ্ন- ভালো কথা এই তথ্য’র জন্য রেফারেন্স কোথায়? আআমার আগের পোস্টে (Click This Link) আমি স্ক্রীন শট সহ মুসা’র দাবীকৃত দিনে সামিট করেছেন এমন একজনের মতামত দেখিয়েছি। তাহলে পাঠক কোনটা বিশ্বাস করবে? আপনার টা নাকি আমার টা?
অনুসন্ধান – ১৫
“এছাড়া সামহোয়্যারইন ব্লগেই এসব ছবি ইতিপূর্বে প্রকাশ করেছেন একাধিক ব্লগার। এসব ছবি নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ থাকলে গুগলে সার্চ দিয়ে অন্যান্য দেশের পর্বতারোহীদের এভারেস্ট জয়ের ছবিগুলো কেমন, সেটা দেখে নেওয়া যায় সহজেই। ”
প্রশ্নঃ ব্লগার দের ছবিগুলোকেই কি অফিসিয়াল বলে ধরে নিতে হবে? এই ছবিগুলোতে যদি ফটোশপিং এর প্রমান পাওয়া যায় তাহলে কি প্রমানিত হবে যে মুসা সামিট করেনি?
অনুসন্ধান - ১৫
“তারা দুজনেই সন্দেহাতীতভাবে এর সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং একইসঙ্গে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন এই ধরনের কৌতূহলে। তাদের ইমেইলের কপি দুটি আমার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।”
প্রশ্নঃ সেই ইমেইলকেই যদি আপনি বিশ্বাসযোগ্য ভাবেন তাহলে শুরু থেকে শেষ ওটার স্ক্রীন শট দেয়া জরুরী নয় কি? আর একটা ইমেইল আপনার কাছে কতোটা গ্রহনযোগ্য? কেউ যদি এমন পাঁচটা সংগ্রহ করতে পারে যে না মুসা সামিট করেনি, তাহলেই কি প্রমান হয়ে যাবে?
অনুসন্ধান – ১৬
“ মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট চূড়ায় ১৯টি ছবি তুলেছিলেন- দু’য়েকটা বাদে সবগুলোই ফ্ল্যাশ দিয়ে। এভারেস্ট চূড়ার ভয়াবহ ঠাণ্ডার কথা ওয়াকিবহাল মাত্রেরই জানার কথা। বিশেষ করে ভোরবেলায় এভারেস্ট চূড়ার তাপমাত্রা সম্পর্কে গুগলের কল্যাণে ধারণা নেওয়া অতি সহজ। সেখানে ঠান্ডায় ব্যাটারির স্বাভাবিক অবস্থা থাকে না। কেউ কেউ বলছেন, একাধিক ব্যাটারি নিয়ে গেলে কী সমস্যা হতো? তাতেও বোধহয় কাজের কাজ কিছু হতো না। ঠান্ডার প্রভাব সকল ব্যাটারির উপরই পড়ে। আপনার যদি নৌকাডুবি হয় তাহলে আপনার সঙ্গে থাকা একটা ব্যাটারির যে অবস্থা হবে এক ডজন ব্যাটারিরও সেই একই অবস্থা হবে।”
প্রশ্নঃ এখানেও আপনি তথ্যসূত্র বিহীন কিছু গল্প শোনালেন, আচ্ছা তবুও দেখি। মুসা কি পর্বতে এই প্রথম উঠেছেন যে জানেন না ঠান্ডার প্রভাব ব্যাটারীর উপর পড়ে? আর আপনিই বলছেন একটি ব্যাটারি দিয়ে ১৯টি ছবি তুলেছেন, তাহলে দুইটি ব্যাটারীতে কতটি হয়? কি করে ১ ডজন ব্যাটারীতে একই অবস্থা হয়?
অনুসন্ধান – ১৭
“ ব্লগে প্রকাশিত ওই ছবিগুলো হিমালয়ের যেকোনো জায়গারই হতে পারে, বেশ তো বলুন তাহলে কোন্ জায়গার? সেই জায়গাটার পরিচয় খুঁজে বের করতে পারলেই বোঝা যাবে ছবিটি আসলে কোন্ জায়গার।”
প্রশ্নঃ আপনার দেয়া এই ছবিগুলোকেই কি আপনি চুড়ান্ত বা অরিজিনাল বা এডিটেড না এমন দাবী করছেন?
মুসা বন্ধুদের গোটা দশেক নিকের কাজই হলো মুসার অভিযান নিয়ে সত্যানুসন্ধানী কোনো লেখা আসলেই সেই পোস্টে গিয়ে গালিগালাজ করে আলোচনা বা সুষ্ঠ মতামত প্রদানকে বিঘ্ন করা। এই চিন্তা করে কমেন্টে মডারেশন যুক্ত করছি। আমি পাঠকদের এর কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত। আপনারা দয়া করে বিরক্ত হবেন না, প্রাসঙ্গিক এবং গালিগালাজমুক্ত যে কোনো মন্তব্য প্রকাশ করা হবে এবং উত্তর দেয়া হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৪৫