somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার প্রথম কবিতা পর্বঃদ্বিতীয় পত্র

১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link
ভালোবাসার প্রথম কবিতা পর্বঃ প্রথম পত্র এর পর.।

আমার মনে আছে সেদিন সারারাত কেদেছিলাম।তারপর ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছিলাম মরার মত।ঘুম থেকে যখন জাগলাম তখন সমস্ত পৃথিবী আমার কাছে বিবর্ণ হয়ে গেছে।সেই দিন আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম প্রেম ক্ষুধাতৃষ্ণা,ঘুম,প্রসাব,পায়খানা এগুলো জয় করতে পারে নি।তবে যে মানুষ প্রেম করে গাছ তলায় থাকতে চায়,না খেয়ে দিন পার করার কথা বলে?এসব কি মিথ্যা?দেখতে দেখতে পরীক্ষা এসে গেল।কি পরীক্ষা দিলাম আমি জানি না। শুধু এটুকু জানি পরীক্ষার রেজাল্ট বেরনোর পর বাবা আমার সাথে ৩ মাস কথা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।সেই সময় টাতে কি করে যে চলেছি তা আজও আমার কাছে রহস্য।মাঝে মাঝে নিজের প্রতি প্রচণ্ড রাগ হত।ভাবতাম মরে যাই!যে বাবা মা আমাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেন আর আমি তাদের সেই স্বপ্নকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করছি!মনে পড়ে কতবার আমাদের নদীর ব্রিজের ওপর দাড়িয়ে মরবার শপথ করেছি এখান থেকে লাফ দিয়ে।কতবার মাঝ রাত্রে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চেয়েছি এই মুখ বাবা মাকে দেখাব না বলে।কিন্তু ঐ ভাবনাতেই আমার চিন্তা সীমাবদ্ধ ছিল।মরার জন্য যে সাহস দরকার তা আমার কোন কালেই ছিল না।থাকবে কি করে আমি যে কাপুরুষ গোত্রের!কলেজে গিয়ে ক্লাসের শেষ মাথায় বসে থাকতাম।আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম যে বাবা মা এতদিন সামান্য অন্যায় কিছুতেই মারধর করতেন,একটু অসুস্থতাই অস্থির হতেন সেই বাবা মা আমার কোন খোঁজ খবর ই রাখছেন না।কোথায় যাই?কি করি?পড়াশুনা কেমন চলছে?কোন খোজই তাঁরা জানতে চান না।টাকার প্রয়জন পরলে শুধু টাকা দেন।তখন থেকেই কেন জানি নিজেকে অর্থহীন মনে হতে লাগলো।মনের মধ্যে যে এক শুন্যতার বসবাস তখন থেকেই টের পেতে থাকলাম।তাই শত কষ্টের ভালোবাসা কে এক পাশে রেখে আবার পড়াশুনায় মন দিলাম।এরই মাঝে হয়তো সেই প্রিয় মুখটির সাথে দেখা হয়।কেমন আছেন?ভালো আছি?পর্যন্তই সে আলাপ সীমাবদ্ধ রাখি।বাসায় অনেক রাত্রে কঠিন কঠিন সাহসের স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে পরি।বাস্তবের কড়া গন্ধে আবার জেগে উঠি এই রুঢ় সমাজে।আবার জেগে উঠি নতুন করে।ভালোবাসার প্রথম কবিতা টি সেই পকেটে নিয়ে ঘুরি।মাঝে মাঝে গন্ধ শুঁকি।এইস,এইস,সি পরীক্ষার আগে আবার কি হল কে জানে?ঘন ঘন ঐ মেয়ের স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।কঠিন বাস্তব কে ছাপিয়ে স্বপ্ন আমায় যেন জড়িয়ে নিতে চাইছে।আর তাই আমার স্বপ্নের কাছে আত্তসমর্পণ।স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতেই একদিন পকেট থেকে বের হয়ে এল আমার সেই কবিতা খানি।তাঁকে বললাম তোমাকে একটা জিনিস দিতে চাই।সে বলল কি?দেন না।আমি বললাম যদি তুমি কিছু মনে কর! সে বলল আমি কি মনে করব?দেখি না কি?দেন না ভাইয়া।তার এত আগ্রহ দেখে আমি মনে মনে কলা অনেক খানি খেয়ে ফেললাম।তাই সাহস করে তাঁকে কবিতা টা দিয়ে বললাম এর উত্তর আগামীকাল চাই!কবিতাটা হাতে দেবার পর কেমন যেন লাগতে শুরু করলো।মনে হতে লাগলো কি যেন হারিয়ে ফেলেছি।কি যেন নেই!বাসায় গিয়ে সে যে কি দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে দিন পার করতে লাগলাম।মনে হতে লাগলো যেন আজকের দিনের কোন শেষ নেই।একসময় ভাবতে শুরু করলাম আচ্ছা আগামী কাল আসবে তো!সকল প্রতিবন্ধকতা এরিয়ে আগামীকাল এল।কিন্তু সে এলো না।কলেজের অন্য মেয়েদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সে আসে নি।এই প্রথমবারের মত আমার মনে অন্য চিন্তা ভঁর করলো।তবে কি সে আমায় ভালবাসে না।আসলে এলাকার নাম,আর একটু ভালো ছাত্র হবার সুবাদে তখন সবকিছুই রঙ্গিন চোখে দেখতাম।ভাবতাম আমি প্রেম পত্র দেব আর কোন মেয়ে সেটা গ্রহন করবে না তা কি হয়?কিন্তু সব যে এক তরফা হয় না তা বুঝলাম।এই ভাবনাটা মাথায় আসতেই আমার কেমন যেন লাগতে লাগলো।নিজেকে কেমন যেন ওজন হীন মনে হতে লাগলো।ধীর পায়ে বাসায় চলে এলাম।আর নিজেকে দুষতে লাগলাম কেন এমনটি করলাম।মেয়েটা জানত না সেও এক ভালো ছিল।কিন্তু ঐ মেয়ের সামনে আমি এখন মুখ দেখাব কি করে?পরের দিন কলেজে গিয়ে দেখলাম সে এসেছে।আমার মন আনন্দে নেচে উঠল।এই বুঝি সব আশংকা দূরে ঠেলে সে আমার প্রস্তাবে সাড়া দিবে।কিন্তু কিসের কি সে যে আমার দিকে ভালো করে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত।নিরুপায় হয়ে তার কাছে গেলাম উত্তর জানতে।সে যে উত্তর দিল সে উত্তরের থেকে আমাকে তিন বার ফায়ার স্কোয়াডে নিয়ে গুলি করলেও এতটা ব্যথিত হতাম না।সে যাই হোক তার সাথে আমার কথোপকথন নিম্নরূপঃ
(তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছি)
মেয়েঃআপনার সাথে নাকি সাবিহার(আমাদের নিচের ক্লাসের প্রথম বালিকা) সম্পর্ক?
আমিঃ(পুরোপুরি অবাক)।
মেয়েঃএকটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকার পরেও আপনার আমার সাথে কি?
আমিঃএসব কথা কার কাছ থেকে শুনলে?এসবের কোনটি সত্যি নয়।কে বলেছে এসব তোমাকে?
মেয়েঃকে বলেছে এটা জরুরী নয়।জরুরী আপনি তাঁকে ভালবাসেন কি না?
আমিঃবিশ্বাস কর আমার ওর সাথে এমন কোন সম্পর্ক নেই।
মেয়ে(রেগে)ঃতাহলে ও যে বলল আপনাদের মধ্যে আর কি সব হয়েছে।যা আমি মুখে বলতে পারব না।
আমিঃনির্বাক চোখে তাকিয়ে রইলাম।
একপর্যায়ে ওকে বুঝাতে সক্ষম হলাম যে ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।এবার ওর কাছে আমি আমার কবিতার উত্তর জানতে চাইলাম।
এবারেও ও আমাকে হতাশ করে দিয়ে বলল “যদি আমি আপনাকে বলি আমি আপনাকে ভালোবাসি না তাহলে কষ্ট পাবেন না”।আমি যথারীতি কাব্যিক ভাষায় ওকে বুঝালাম যে ওর যদি আমাকে ভালো না লাগে তাহলে ও অবশ্যিই না বলবে।তা আমি কষ্ট পাই কি না পাই!এবারে ও আমাকে পুরোপুরি হতাশ করে দিয়ে বলল “ঠিক আছে তাহলে আমি না বলব না’।বলেই চলে গেল।এদিকে সে যে আমাকে হ্যাঁ ও বলল না।তাহলে কি ধরব?শেষ মেশ আমার গাধা মস্তিষ্ক আমাকে জানান দিল সে যদি তোমাকে পছন্দ করত তাহলে হ্যাঁ বলত।কিন্তু সে তোমাকে যেহেতু ভালবাসে না এবং সমাজে সংখ্যা গরিষ্ঠ জাত হওয়ায় তোমাদের ভঁয়ে ঐ রকম করে বলেছে।সেদিন রাত্রেও বাসায় গিয়ে বৃষ্টির মত কেদেছিলাম।এভাবে দিন গড়িয়ে যায়,আসে রাত আবার রাতের পড়ে দিন।আমি পারত পক্ষে ঐ মেয়েটির সামনে যেতাম না।নিজেকে এতটা ছোট লাগত যে বলে বোঝাবার নয়।এইস এস সি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে আসলাম।সংগে করে নিয়ে আসলাম কিছু ভালোবাসার হাতছানি আর এখানে এসে আর এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম।সে অভিজ্ঞতা আজ নয় অন্য কোন দিন বলব।এভাবে দিন পার হতে লাগল ধীর গতিতে।একদিন হঠাৎ আমার মোবাইলে অপরিচিত একটি নাম্বার ভেসে উঠল।আমি অতি অনাগ্রহ নিয়ে ফোন রিচিভ করলাম।ওপাশে যার কথা শুনতে পেলাম তার কণ্ঠ শোনার জন্যই আমার এতদিনের অপেক্ষা।আমি আনন্দে মোটামুটি দিশেহারা হয়ে গেলাম।কি বলব খুজে পাচ্ছিলাম না।ও আরেকটা কথা বলে রাখি আমার মোবাইলে আমি সব সময় ৩০০ টাকা ভরে রাখতাম।সেটা কার জন্যে টা বলার অপেক্ষা রাখে না।আমার এই টাকা খরচ হত না কখনই।কেননা তখনও মোবাইলের চল এতটা হয় নি।অনেকক্ষণ কথা বলার পর সে আমাকে বলল আপনি কি আমাকে একটু দেখতে আসবেন।আমার শরীর টা খুব খারাপ।কেন যেন আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।আপনি একটু আসবেন প্লিজ?আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম বলে কি?আমি তাঁকে বললাম তুমি কোথায় আছ?সে একটা ক্লিনিকের নাম বলল।আমার মনে হতে লাগলো অসুখ টা তার হয়নি হয়েছে আমার।কিন্তু আমি তাঁকে কোন কথা দিলাম না।কিন্তু ফোন রাখার পর আমি মোটামুটি দিশেহারা হয়ে গেলাম।কি করব?কিভাবে অখানে যাব?আর যদি যায় তাহলে কি বলব?অবশ্য সন্দেহ তেমন করবে না।কারণ জাত তো আর এক নয়।আর তাদের মেয়ে একটা মুসলমান ছেলেকে ভালবাসবে এটা অবিশ্বাস্য একটা ব্যপার।আর অসুস্থ মানুষকে তো সবাই দেখতে যেতে পারে।এইসব ভেবে নিয়ে রাত্রেই রওনা হবার সিদ্ধান্ত নিলাম।আর যেখানে থাকি অতা তো একটা জেলখানা।সেই জেলখানায় অনেক মিথ্যা বলে ম্যনেজ করে রওনা হলাম।মনে আমার ভয় যদি ধরা পড়ে যায়।আর তখন থেকেই কেন যেন মনে হতে লাগলো মেয়েটি আমাকে ভালবাসে।তাই সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে সমাজের চোখে নিসিদ্ধ প্রেমের প্রতি ছুটে চলতে লাগলো আমার বাস,আমি আর রাতের সমস্ত তাঁরা।


চলবে...............।


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৩:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×