somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার প্রথম কবিতা পর্বঃ প্রথম পত্র

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি প্রেম করেছিলাম সেই কবে ২০০৩ এ!মেয়েটির নাম ছিল শিল্পী।চোখ কান বুজে পড়াশুনা করতাম বলে ভালো ছাত্রের তকমা ও একটি গায় বসেছিল।মায়ের তুলধুনা আর পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম সারিতে না থাকলে বাড়ি থেকে বাবার তাড়া খেয়ে বাইরে বের হয়ে যাবার চেয়ে পড়াশুনা শ্রেয় মনে করায় ঐ কাজ টা অনাগ্রহ স্বত্বেও ভালভাবে করতাম।ভালো ছাত্রের সুবাদে ভালো ছেলে হিসেবেও একটা সুখ্যেতি জুটে গেলো। তাই অন্যদের মত প্রেম করা আর বখাটে পনা করা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করতাম।মন কি চাইত তা আর নাই বা বললাম।তবে ভালো জিনিস আর সুখ নাকি বেশি দিন টিকে না।তাই ঐ সুখ্যেতি কে দুখ্যেতি তে পরিণত করার জন্যই কিনা কে জানে! আমার ভিতরে প্রেম ভর করল।যে সে প্রেম নয় ভয়াবহ প্রেম।ঘটনার সুত্র পাতটা এরকম,শীতের সকাল।২০০২ এর শেষের দিক। হালকা শীত আর নরম রোদে পরিবেশ টা বেশ উপভোগ্য।আমাদের এখানে মাঝে মাঝে কিছু পিরিয়ড মিস হয়, শিক্ষকদের অনুপস্থিতির দরুন।শিক্ষকরা আবার বিরাট ব্যস্ত মানুষ।আসবেন কি করে? তাঁরা তো বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা সমাবেশ নিয়েই ব্যস্ত।তাই আমরা কয়েকজন গোল হয়ে বসে কিছুক্ষণ বিভিন্ন শিক্ষকের মুন্ডু পাত করে,তাদের দুর্নীতির ফিচার তুলে হৈ হৈ করে অবশেষে আলোচনাটা স্কুলের মেয়েদের উপর এনে ফেললাম।দশম শ্রেণীর ছাত্র হলেও মেয়েদের সম্পর্কে দু’একজনের জ্ঞান রীতিমত বিস্ময়ের।আমি ওঁদের দলের হলেও অতটা পরি পক্ক হয়ে উঠি নি।শরীরের মত বুদ্ধির জোর ও বড় হতে হতে থেমে গেছে।এখানে যা হচ্ছে তাঁকে আলোচনা না বলে সমালোচনা বলাটাই অধিক যুক্তি যুক্ত হবে।তো সমালোচনাটা এসে ঠেকল সুন্দরী প্রতিযোগিতায়।সুন্দরীরা যে আমাদের স্কুলের এ বিষয়ে না বললেও অনুমান করে নেওয়া কষ্টসাধ্য নয়।বিচারক,দর্শক,স্পন্সর সবই আমরা শুধু সুন্দরীরা অনুপস্থিত।এ আলোচনা যাদের নিয়ে তাদের কানে এ কথাগুলো গেলে তাঁরা বিষের শিশি হাতে নিতে এতটুকু পিছপা হত না।কার ও মতে অমুক সুন্দরী কার ও মতে তমুক!মত নিয়ে যখন বেশি রকমের মাতামাতি তখন কেউ একজন বলে উঠল এই স্কুলের সেরা সুন্দরী গতকাল স্কুলে জয়েন করেছে ক্লাস নাইনে।আমরা অবাক বলে কি?শেষে ওকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখলাম।আর যায় হোক অন্য ক্লাসের মেয়ে আমাদের ক্লাস থেকে সুন্দরী হবে তা নির্মম সত্য হলেও মানা যায় না।তাই আলোচনায় আমরার ক্লাসের মেয়েরাই যে শ্রেষ্ঠ তা সবার বক্তব্যে বার বার প্রতীয়মান হচ্ছিল।কিন্তু আমার কেন জানি ঐ মেয়েকে দেখার খুব ইচ্ছা করতে লাগল।একদিন সকালে স্কুলে আসছি প্রাইভেট পরতে।স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকতে যাব এমন সময় আমার সাথে থাকা বন্ধুটি বলল"এই সেই মেয়ে যার কথা ঐদিন উঠছিল"।আমার মধ্যে কি যেন হয়ে গেল আমি সব ভুলে আমার বন্ধুটিকে বললাম ওর সাথে কথা বলব।তুই ওকে ডেকে নিয়ে আয় স্কুলের পিছনের গেটে।এ কথা শুনে বন্ধুটি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল।তারপর হন হন করে হেটে গেলো মেয়েটির কাছে।এরমধ্যে আমি গিয়ে দাঁড়িয়েছি স্কুলের পেছনের গেটে।কিছুক্ষণ পর দেখি ওঁরা আসছে কিন্তু যত কাছে আগাচ্ছে তত আমি ভাষা হারিয়ে ফেলছি।আমার মনে হতে লাগল কোথা থেকে দমকা বাতাস এসে আমায় উরিয়ে নিতে চাইছে,কোন এক গহীন বনের কোকিল আমার কানে কুহূ কুহূ ডাকছে,সমস্ত পৃথিবী যেন আজ নতুন করে সেজেছে।কাছে এসে মেয়েটি যখন বলল"ভাইয়া ভালো আছেন?"তখন আমি মনে হল অন্য কোন জগত থেকে পৃথিবীতে আসলাম।কিন্তু একি যে আমার সামনে দারিয়ে আছে সে কে?আমি কোনদিন কোন পরী দেখিনি কিন্তু অবলীলায় বলে দিতে পারি এই মেয়ে পরীর চেয়েও বেশি সুন্দর।কিংবা কে জানে আমার চোখ একে অন্যভাবে আমার সামনে উপস্থাপন করছে।চোখের কথা মনে হতেই মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম।মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে গেল।কবিরা যে সব কবিতা লিখেছেন তা এ মেয়ের চোখের সাথে যায় না।হঠাৎ কি হল কে জানে!খুব উচ্চকণ্ঠে বলে উঠলাম
“চোখের পানে চাহিনু অনিমেষে
বাজিল বুকে সুখের মত ব্যথা”
মেয়েটি এ কথা শুনে খিল খিল করে হেসে উঠল।কবি গুরুর প্রতি সেই দিন শ্রদ্ধাটা যে কোথায় গিয়ে পড়ল তা শুধু আমি জানি।মেয়েটি হেসেই আবার গম্ভীর হয়ে বলল“ঠিক আছে ভাইয়া আজ আসি পরে কথা হবে,ভাল থাকবেন”।বলেই আবার খিক করে হেসে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল।আমার কি যে হল?কোনকিছু তে মন বসাতে পারি না,খেতে ইচ্ছে করে না,ঘুম আসে না,কি যে কষ্টে দিন পার করতাম!স্কুলে গিয়ে বসে থাকতাম অনেক সকালে গিয়ে শুধু মেয়েটিকে দেখার জন্যে।কোন কোন দিন ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা হয়ে যেত আর আমার সে কি আনন্দ!দারুন দারুন পাগলামি আমার মধ্যে ভর করলো,আগে যে কবিতা পড়তাম এখন সেই কবিতা লিখার চেষ্টা করতে লাগলাম।সব যে খুব উচু দরের হত তেমনটি ভাবার কোন কারণ নেই কিন্তু মন নামক বস্তুটা ওতেই সন্তুষ্ট থাকত।এর মধ্যে একটি কবিতা খুব পছন্দ হল ।সিদ্ধান্ত নিলাম এই কবিতা টা ওকে দেব।কবিতা টা ছিল এরকম
আমি ভালবাসতে শিখি নাই
আমি দারাই মুখোমুখি
হয় তোমাতে আমাতে চোখাচোখি
তবু বলতে পারি নাই আমি ভালিবাসি তোমায়

তুমি পাশে আছো ঠিক বলে
বলি কত না নানান ছলে
তবু তুমি বুঝ নাই
কি করে বলি আমি ভালাবসি তোমায়

তোমার সামনে এলে
এলোমেলো সব বলে
ফুরিয়েছি সময়
তবু বলা হয়ে উঠে নাই আমি ভালবাসি তোমায়

আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাব আকাশ কত নীল
বুকের ভিতর নীল বেদনার কাটা হচ্ছে যে বিল
দেখাতে যদি পারতাম আমি তোমায়
বুঝতে আমি কতটা যে ভালবেসেছি তোমায়

আমি ভালর মাঝে মন্দটাকে খুঁজি
তোমাতে আমাতে মিলন হবে না বুঝি
বলতে আমার চাপা কান্নায় কণ্ঠ রোধ হয়
তবু বলি আমি ভালবাসি তোমায়

নীল বেদনার রক্তক্ষয়ী দিন
আশায় রব আসবে যেদিন সুদিন
বলব আমি হেসে মিষ্টি মাখা গলায়
প্রিয়া শোন আমি ভালোবাসি তোমায়।


কবিতা টার নাম দিয়েছিলাম “ভালোবাসার প্রথম কবিতা”।ভাগ্যিস রবী ঠাকুর, জীবনানন্দ বেচে নেই।এই কবিতা দেখলে ভদ্রলোক দুইজন যে মাইল্ড স্ট্রোক করেই মারা যেতেন তা গণক না হলেও নির্দ্বিধায় বলা যায়।এই কবিতা যার উদ্যেশ্যে তাঁকে দেবার জন্যে প্রতিদিন প্যেন্তের পকেটে নিয়ে ঘুরি।কিন্তু অনেক কথা বলার পরেও ঠিক সাহস হয় না।এভাবে দিন পেরিয়ে রাত আসে,আবার রাতের পর দিন।আস্তে আস্তে এস.এস.সি. পরীক্ষা ঘনিয়ে আস্তে শুরু করলো।একদিন আমার ঐ বন্ধুটি আমাদের বাসায় এসে অনেক ক্ষণ বসে থেকে বলল, তোকে একটা কথা বলার ছিল।আমি বললাম বল কি কথা?সে বলল ঐ মেয়েটির নাম তুই জানিস?আমি বললাম হ্যাঁ।শিল্পী। ও বলল পুরোটা জানিস?আমি বললাম না।ও বলল ওর পুরো নাম শিল্পী বিশ্বাস।আমি বললাম তাতে কি?বিশ্বাস দের সাথে কি প্রেম করা হারাম?ও বলল ওর বাবার নাম শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস।আমার মাথায় বোধহয় বাজ পরলেও আমি এতটা আহত হতাম না।কারণ আমি ধর্মে মুসলমান।আমি নির্বিকার চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।ও আস্তে করে উঠে চলে গেলো।আমি ওর চলে যাওয়া দেখতে পাচ্ছি না দেখতে পাচ্ছি একটা ঝাপসা মূর্তি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।সেদিন আমার ছোট্ট সুন্দর স্বপ্নের মাঝে এই সমাজ,ধর্ম কোথা থেকে যে এসে কি করে গেলো তা আমি নিজেই জানি না।


চলবে..........................................।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×