somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

In The Land of Blood and Honey {রক্তের দেশে, তবে মুধুর দেশে নয়}

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

♣♣ সাল ১৯৯২। পৃথিবীর ইতিহাসে কালো একটি সাল। মানুষের সভ্যতা আর মানবিকতাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয় এই সময়ে। স্থান বসনিয়া। ঐ সময়ে একটি যুদ্ধ শুরু হয় সেখানে। ইতিহাস একে বসনিয়ার যুদ্ধ বলেই জানে। যুদ্ধ তো কতই হচ্ছে, তাহলে এটা আলাদা হবে কেন? কারন আছে। মানব সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত যুদ্ধ সম্ভবত ২য় বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু এর পরে কার স্থান? হ্যাঁ, এক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ-ভাবে বিজয়ী বসনিয়ার এ যুদ্ধ। এর পিছনে অনেক কারন অবশ্য রয়েছে। একটি যুদ্ধে কয়টি পক্ষ থাকে? উত্তর সবাই জানে ২ টি। কিন্তু এই যুদ্ধে কখনই ২ টি পক্ষ ছিল না। যুদ্ধ শুরু হবার পরে অনেকগুলি স্বতন্ত্র সংগঠন তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য গণহত্যা শুরু করে। বাস্তবিক অর্থেই কুরুক্ষেত্র রচনা হয় সেখানে। যে যাকে পারছে, মারছে।


মূলত যুদ্ধ শুরু হয়েছিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মধ্যে। কিন্তু স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অন্যান্য সংগঠন নরহত্যা শুরু করে। এদের মধ্যে রয়েছে সেখানে বসবাসরত স্বতন্ত্র পরিচয়দাবীকৃত বসনীয় সার্ব ও বসনীয় ক্রোয়েট গোষ্ঠী, রেপুব্লিকা স্পোর্সকা ও হার্জে-বসনিয়া, যারা ছিলো যথাক্রমে সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সহায়তাপুষ্ট। এছাড়াও পরবর্তীতে এ যুদ্ধ ধর্মীয় যুদ্ধেও রূপ নেয়। মুসলমান আর খ্রিস্টানদের মধ্যে চলে তুমুল যুদ্ধ আর পাশবিক নির্যাতনের প্রতিযোগিতা। সাড়ে তিন বছর চলে যুদ্ধের নামে এই পাশবিকতা। ১৯৯৫ সালে এটি শেষ হয়। এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যায় ও সোশালিস্ট ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোস্লাভিয়া ও সোশালিস্ট রিপাবলিক অফ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা নামের নতুন দুটো রাষ্ট্রের জন্ম হয়।



♣♣♣ ইতিহাসের ক্লাশ নিচ্ছি না। তবে পরবর্তী লেখা ভালো ভাবে বুঝার জন্য আরেকটু জানা দরকার। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২-এ তাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাস করে। কিন্তু এই ঘোষণা বসনীয়-সার্ব রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলেই যুদ্ধের অবতারণা। পরে সমগ্র বসনিয়া এই যুদ্ধে আক্রান্ত হয়। আর কিছু তথ্য দিয়ে আপনাদের একটু বিরক্ত করব।


▼ আন্তর্জাতিক সাহায্য (UN) বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব হয়নি।

▼ সারাজেভোদের মিলিটারি অবরোধ আধুনিক যুগের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলে।

▼ যুদ্ধের সময় প্রতি ২ জন বসনিয়ান এর মধ্যে ১ জনকে বাস্তু থেকে উৎখাত করা হয়। মানে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়।

▼ এই সময় জনসম্মুখে এবং ক্যাম্প করে ধর্ষণ করা হয় ৫০ হাজারেরও বেশী নারীকে।

▼ ১৯৯৫ সালে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেও এটা শুধুই মৌখিক। এখনও তাদের মধ্যে উত্তপ্ত সম্পর্ক বিদ্যমান।

এতগুলি তথ্য দেবার একটাই কারন। আজ যে মুভিটা নিয়ে বলব সেটা বসনিয়ার এই যুদ্ধের উপরে নির্মিত। মুভির নাম In The Land of Blood and Honey



♣♣♣ আঞ্জেলিনা জোলিকে আমরা সবাই চিনি একজন অভিনেত্রী হিসেবে। এই মুভির মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। খুব অসাধারণ কাজ দেখিয়েছেন বলা না গেলেও ভালো কাজ দেখিয়েছেন মানতেই হবে। এছাড়াও মুভিটির লিখেছেন এবং যৌথভাবে প্রযোজনাও করেছেন তিনি।


♣ প্লট→ ২টি কথায় আগে কাহিনীটা বলে নিই। স্পয়লার থাকবে না আশা করি। গল্পটা আসলে যুদ্ধের সময় বসনিয়ায় থাকা মুসলিমদের উপর অত্যাচারের নমুনা। সে সময়ের একজন চিত্রশিল্পী Ajla (Zana Marjanović)। তিনি থাকেন তার বোনের সাথে। তাকে বন্দি করে নিয়ে যায় বসনীয়-সার্ব বাহিনী। সেখানে চোখের সামনে ধর্ষিত হতে দেখে সাথের একজনকে। তার সাথেও শুরু হয় অবর্ণনীয় নির্যাতন। এর মধ্যেই তার সাথে দেখা হয় আর পুরানো প্রেমিকের যে কিনা বসনীয়-সার্ব বাহিনীর একজন সৈন্য। বন্দীর উপর কোনরকম ভাবাবেগ প্রকাশ করার নিয়ম নেই। কিন্তু পুরানো হলেও প্রেমকে তো অস্বীকার করা যায় না। এই সম্পর্কের পরিণতি কি? কি ঘটবে Ajla এর ভাগ্যে? তার প্রেমিকের পরিণতিই বা কি হবে? এসব জানতে চাইলে মুভিটা দেখতে হবে আপনাকে।



♣♣♣ এ যুদ্ধে আমেরিকা এবং ইউনাইটেড নেশন দুই পক্ষেরই ভূমিকা রয়েছে। তবুও এ যুদ্ধ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনও উচ্চবাচ্য শোনা যায় না। তেমন কোনও মুভিও নির্মাণ হয় না। এর প্রধান কারন হল, এই যুদ্ধে ১টা/২টা, না অনেকগুলি পক্ষ কাজ করেছে। তাই কোনও একটা পক্ষের হয়ে কথা বলতে গেলে অন্য পক্ষের উপর দোষের খড়গ নেমে আসে। জোলিকে আমি জাস্ট এ জন্যই ধন্যবাদ দিতে চাই যে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় তিনি তুলে এনে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। মুভিতে কোনও যুদ্ধ দেখাতে গেলে সবসময়ই এক পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়। আমার মনে হয় এ ক্ষেত্রে অবিচার করা হয় অন্য পক্ষের সাথে। এই মুভিটির রেটিং সবজায়গায় কম হবার পিছনে এটি একটি বড় কারন বলে আমার মনে হয়েছে।

উপরের কথার রেশ ধরে বলতে হয় এই বিশেষ ক্ষেত্রে পক্ষ আর বিপক্ষ নির্বাচন করা আরও দুঃসাধ্য। কেননা এই যুদ্ধে আপনি কোন পক্ষে যাবেন? সার্ব দের নাকি ক্রোয়েশিয়ানদের? মুসলিম নাকি খ্রিস্টানদের? আপনাকে মনে রাখতে হবে এরা সবাই এক দেশের লোক। তাই আসলে কারো পক্ষেই কথা বলা যায় না।

বাস্তবিকভাবেই আমরা দেখতে পাই যুদ্ধের সময় অনেকেই মনে করে যেন কোনও একটা ইউনিফর্ম পরে কোনও দলের হয়ে যুদ্ধ করা মানেই হল তাকে ধর্ষণ করার স্বাধীনতা দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের নিজেদের মুক্তি যুদ্ধের দিকে তাকালেও আমরা এই একই দৃশ্য দেখতে পাই। বসনিয়াতে যা দেখা গিয়েছিল তা ছিল আরও ভয়ংকর। যুদ্ধ যারা করেছিল তাদের সাথে সাথে যারা যুদ্ধ থামাতে এসেছিল সেই আমেরিকান সৈন্যরা অনেক নাবালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। বলা বাহুল্য, এই মুভিতেও তাই নুডিটির পরিমাণ অনেক বেশী।



☺☺☺ আগেই বলেছি, পরিচালনা আমার মনের মত হয়নি। তবুও একে আমি ভালোর কাতারেই ফেলব। এরপর আসি সিনেমাটোগ্রাফিতে। সত্যি কথা বলতে আমার কাছে ভালই লেগেছে। চোখের জন্য পীড়াদায়ক তেমন কিছু পাইনি। কিছু জায়গায় শেকি ক্যামেরার কাজ খারাপ লাগলেও অন্য জায়গায় বেশ ভালো লেগেছে। এছাড়াও বেশ কিছু ভালো এঙ্গেল শট দেখলাম।

ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক কার কেমন লাগবে জানি না তবে আমার কাছে ভালো লেগেছে। বিশেষ করে শেষের দিকে বেশ ভালো কাজ হয়েছে বলে মনে হয়েছে।

অভিনয় এর কথা বলতে গেলে বলতে হবে Zana Marjanović এর অভিনয় খুবই ভালো লেগেছে। আর মূলত তাকে কেন্দ্র করেই ছবি আবর্তিত হওয়ায় অন্যদের ত্রুটি তেমন চোখে পরে নাই। তবে Goran Kostić এর কাজ খুব একটা মনঃ-পূত হয় নি।



☻☻☻ মুভির দুর্বল দিক বেশ কিছু আছে। প্রথমত পরিচালনায় নবিশতা প্রকাশ পেয়েছে। এই মুভিতে মূলত রোমান্টিক দিকটাই তুলে ধরা হয়েছে। আসলে যুদ্ধের দিকটা আরও একটু তুলে ধরা উচিত ছিল। শুধু রোমান্টিকতার বিচারে ছবির রানটাইম একটু বেশী হয়ে গিয়েছে। মাঝের অনেক জিনিস রয়েছে যা আমার মতে কাহিনীর জন্য কোনও প্রয়োজন ছিল না। আর এর প্লট নিয়ে জোলি খেটেছেন বুঝা যাচ্ছে। তবে আরও খাটলে আরও ভালো কিছু আশা করা যেত। আরও একটি বিষয় এখানে অকারণে কিছু নুড দৃশ্য দেখানো হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশী। এর কোনও প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয় না।

♣♣♣ ছবিটাকে কোনও মাস্টারপিস মানতে আমি রাজি নই। তবে সব যায়গায় এর যে রেটিং দেয়া আছে তা মানতেও আমি নারাজ। আমার দেখা অন্যতম আন্ডাররেটেড মুভি হিসেবে একে মেনে নিলাম। আমি কোনও দিক থেকেই এটি কম রেটিং পাবার যোগ্য বলে একে মনে করি না। এটি আবার গোল্ডেন গ্লোব, পিডিএ এর মত কিছু পুরস্কার এবং নমিনেশনও পেয়েছে।

►►►এখন চলুন এক নজরে মুভিটা নিয়ে কিছু জানি◄◄◄
★IN THE LAND OF BLOOD AND HONEY★
সাল- ২০১১
পরিচালনা এবং লেখা- Angelina Jolie
মিউজিক- Gabriel Yared
সিনেমাটোগ্রাফি- Dean Semier
দৈর্ঘ্য- ১২৮ মিনিট
অভিনয়- Zana Marjanović, Goran Kostić
আইএমডিবি রেটিং- ৪.৪
রটেন টোম্যাটো রেটিং- ৫৬%
মেটা ক্রিটিক রেটিং- ৫৬%
☻☻☻এই রেটিং আগে দিলে কেউ হয়ত পোস্টই পড়ত না। তাই শেষে দেয়া।☻☻☻ :P ;) ;)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×