somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রম মিরর অব দ্যা ম্যমরি- পর্ব- ১(জীবনের প্রথম ও শেষ)

২৪ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. ঘুড়ি ওড়ানো।

আমার চাচাতো ভাইয়েরা নিয়মিত ঘুরি ওড়াতো। মাঝে মাঝে আমি যেতাম। কিন্তু আমি ঘুড়ি ওড়াতে পারতামনা কারন আমার কোন ঘুড়ি ছিলনা। তাছাড়া চাচাতো ভাইদের সাথে ঘুড়ি ওড়াতে যেতে দেখলেই আম্মার বকাঝকা এবং সাথে ফ্রি লাঠির বাড়ি। তাই গেলেও আম্মার কথা মনে হলেই চলে আসতাম। আমাদের বাড়ির ওঠোন থেকেই ঘুড়ি দেখা যেত। বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি। খুব ইচ্ছে হতো আমিও যাদি ঘুড়ি ওড়াতে পারতাম আর বাড়ি থেকে সবাই আমার ঘুড়ি দেখতো!

অবশেষে আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের বুদ্ধি মোতাবেক আব্বার পকেট থেকে ৫ টাকা চুরি করমাল। আমার সেই ভাই আমাকে নিয়ে বাজার থেকে ৪ টাকা দিয়ে সুতা এবং ১ টাকা দিয়ে কাগজ কিনল। দুজনে মিলে তৈরি করলাম ঘুড়ি। আমাদের বাড়ির কাচারি ঘরে রাখলাম ঘুড়িটি। ঐদিন বোধ হয় আমি জীবনের সবচেয়ে বেশী খুশি ছিলাম। বাড়ি এসে ভাত খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। আম্মাও ঘুমাতে গেল। পিছন বারান্দা দিয়ে আমি চম্পট দিলাম। চাচাতো ভাইকে নিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে একটু দুরের জমিতে।

আমি যেহেতু কখনো ঘুড়ি উড়াইনি তাই আমার চাচাতো ভাইয়ের হাতে থাকলো নাটাই আর আমার হাতে থাকলো ঘুড়িটি। ঘুড়িটি উড়িয়ে দিয়ে আমি দৌড় দিলাম নাটাই ধারা জন্য। কিন্তু বিধি বাম। জমিতে থাকা খেজুর কাঁটা আমি খেয়াল করিনি। ফলে যা হওয়ার হলো। আমার ডান পায়ে ঢুকে গেল কয়েকটি কাঁটা। যন্ত্রনায় চিৎকার করতে লাগলাম। আমার চাচাতো ভাই দৌড়ে এসে আমাকে বাড়ি নিয়ে এলেন। বাড়িতে দাদু এবং কাকারা মিলে কাঁটা তুলতে দিলেন।

কিন্তু ১দিন পরেই দেখলাম আমার ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পুঁজ বেরোচ্ছে। আব্বা সেভলন দিয়ে ভাল করে ড্রেসিং করে দিলেন এবং চেক করলেন আর কাঁটা আছে কিনা। কোন কাটা না দেখে ভাবলাম আগে যে কাঁটা ঢুকেছে হয়তবা সেই ময়লা থেকে পুঁজ ঝরছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্টার ভালো করে দেল ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন এবং ওষুধ দিলেন। কিন্তু ওষুধ এ কাজ হচ্ছেনা। পুঁজ পরাও থামছেনা। অবশেষে ডাঃ ঐ জায়গায় ছোট্ট একটা অপারেশন করলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হলোনা। তাই আবারো সেই অপারেশন। কিন্তু এবারও ব্যার্থ। আগের মতোই পুঁজ বেরুচ্ছে।

অবশেষে সবাই ভাবল সেখানে একটা কাঁটা রয়ে গেছে। তাই এবার ঝাড় ফুঁকের পালা। ঠিক কত জনের কাছ থেকে ঝাঁর ফুক নিয়েছি তা মনে নেই। তবে সংখ্যাটা যে বিশের কম হবেনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত। এর মাঝে কবিরাজি চিকিৎসাও চলছে। আমার আব্বার বন্ধু ছিলো আমাদের এলাককার সবচেয়ে ভাল হোমিও ডাক্টার। তার ওষুধ ও খাওয়া হলো। একজনের কথা মতো আব্বা এক জীনের চিকিৎসাও করিয়েছেন। আবাল জ্বীনও আমার পায়ের কোন কুল কিনারা করতে পারেননি। ততদিনে আমার এক পা খোঁড়া। কোথাও যেতে লজ্জা লাগে। স্কুলে যেতে পারিনা। ক্লাস ফাইবে পড়ি। আব্বা আম্মার ইচ্ছে আমি বৃত্তি পরীক্ষা দিবো। কিন্তু আমিতো স্কুলেই যেতে পারিনা। পড়ালেখা করব কি করে।

অবশেষে আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো বরিশাল শহরে। আমার এক খালাত দুলাভাই সবে মাত্র এমবিবিএস পাশ করে বেড়িয়েছেন। নিজশ্ব চেম্বারে চিকিৎসা করেন। আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো তার কাছে। তিনি ঘটনার বিবরণ শুনে মোটামুটি নিশ্চিত হলেন আমার পায়ে কাঁটা নেই। তবুও তিনি একটা এক্স রে করতে দিলেন। এক্সরে রিপোর্টে দেখা গেল কোন সমস্যা নেই। তাই তিনি ঐ জায়গায় একটা নরমাল অপারেশন করলেন। এক মাসের ওষুধ দিয়ে বললেন ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তার অপারেশন কোন কাজে আসেনি। আমার পায়ের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। এবার তিনি আবার অপারেশন করার জন্য বললেন। এ অপারেশনের সময় পায়ের ত্বক কেটে তার ভিতর গজ ঢুকিয়ে দিলেন। এক সপ্তাহ পর গজ খুলে ব্যান্ডেজ করে দিলেন এবং বললেন গজে যেহেতু কোন পুঁজ জমেনি তাই কোন সমস্যা হবেনা। আমরাও বাড়ি চলে এলাম।

কিন্তু আমার অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। বাড়ি আসার সাথে সাথেই আগের অবস্থা। তবুও ১ মাস ওষুধ খেয়ে আবার গেলাম বরিশাল। এবার আমার ছোট খালুর পারমর্শ মোতাবেক আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো তাদের পারিবারিক ডাক্টার আমিন ডাক্টারের (ঐ ডাক্টারের নামটা আমার খুব একটা মনে নেই) নিকট। তিনি বিস্তারিত বর্ণনা শুনে যা বললেন তাতে আমার মরমর অবস্থা। তিনি বললেন আমার পায়ের হাড়ে দাগ পড়েছে। তাই পুঁজ পরা বন্ধ হচ্ছেনা। তাই এখনই আমার হাড়ের দাগ উঠাতে হবে। না হয় এটার ইনফেকশনে আমি পুরো অবচেতন হয়ে যাব। তখন আমার কোমরের দিকের একটা রগ কেটে দিতে হবে। আমার আম্মা তার কথা শুনেই বেহুশ হয়ে গেলেন। খালু তার কাছে আমার অপারেশনের জন্য সায় দিলেন। কিন্তু আব্বা রাজি হলেননা। আর আমি তখন কি করব বুঝতে পারছিলমনা। অবশেষে সেদিনের মতো অপারেশন না করেই বাসায় ফিরলাম।

কিন্তু তাই বলেতো বসে থাকা যায়না। আব্বা ও খালু মিলে আমাকে নিয়ে গেলেন বরিশালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্টার মতিউর রহমানের কাছে। তিনি সব শুনে আমার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না। তবে আমিন ডাক্টার যে ঠিক বলেনি এটা নিশ্চিত করলেন। তিনি বললেন তিনি একটি অপারেশন করে দেখতে চান। কিন্তু আমি অপারেশনে আর রাজি ছিলামনা। বললাম আমি এরকমই থাকব। অবশেষে আমাকে বেহুশ করে অপারেশনের কাথা বলা হলে আমি সেটায় রাজি হলাম। নির্দিষ্ট দিনে আমার অপারেশন হলো। তবে তিনি অন্যদের মতো অপারেশন করলেন না। তিনি আমার ঐ জায়গার চারদিকে অপারেশন করলেন এবং ঐ জায়গায় খুজলেন কোন কাঁটা আছে কিনা। তবে কোন কাঁটা না পেয়ে ঐ জায়গাটা ব্যান্ডেজ করে দিলেন আর বললেন যে ১ সপ্তাহ পরে ব্যান্ডেজ খুলে নিজেই ড্রেসিং করে নিতে।

এক সপ্তাহ পর আমি নিজেই ব্যান্ডেজ খুললাম। ততদিনে অবশ্য ড্রেসিং করার কাজটা বেশ ভালো ভাবেই শিখে ফেলেছি। ব্যান্ডেজ খুলে দেখি পায়ের ভয়াভহ অবস্থা। ঐ জায়গাটার চারিদিকে অপারেশন করায় এখন পুরো জায়গাটাই ফাঁক হয়ে আছে। সেখানে পুঁজও জমেছে। আমি নিচের দিক দিয়ে একটা ঐ জায়গা একটা চাপ দিলাম আরো পুঁজ বেরোনোর জন্য। তখন দেখি পুঁজের সাথে কালো কি যেন একটা দেখা যাচ্ছে। আব্বাকে ডাক দিলাম । আব্বা বললেন হয়তোবা কোন ময়লা পরেছে। তিনি চাইলেন ময়লাটা তুলতে। কিন্তু আমি ভয়ে চিৎকার শুরু করেছি। তাই বাধ্য হয়ে আব্বা আমাকে নিয়ে গেলেন ডাক্টারের কাছে। ডাক্টার সাহেব আমাকে তার সিটে শুইয়ে দিয়ে বললেন এটা হয়তবা কাঁটা। ডাক্টার আমার পা থেকে কাঁটা বের করে আনলেন। দেখলাম দের ইঞ্চি সমপরিমান একটা কাঁটা।

অবশেষে আমি কাঁটা থেকে মুক্তি পেলাম। ততদিনে ৯ মাস পেড়িয়ে গেছে। হাজার হাজার টাকার এন্টিবায়োটিক এবং ইনজেশনে আমার শরীরের অবস্থা যথৈচ। ১টি কাঁটা যে আমাকে কি পরিমান ভুগিয়েছে তা হয়তবা কখনো ভুলার নয়। তবে যে আমার ঘুড়ি ওড়ানোর শখ চিরতরে নিভিয়ে দিয়েছে এ কথা সত্যি। এর পর কখনো ঘুড়ি ছুয়েও দেখিনি।


সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৫৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×