somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শবেবরাত উপলক্ষে শবেবরাত নিয়ে স্মৃতিহাতরানো একটি পোষ্ট।

২৭ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শবে বরাত। মানে ভাগ্য রজনী। এ দিনে রিজিক লিখা হয়। এই দিন যে যত বেশী আল্লাহর ইবাদত করবে তার রিজিক তত বেশী বাড়বে। এমনটাই শুনতাম মসজিদের ইমামদের কাছে। তাই শবে বরাত ছিল আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বন্ধুরা দলবেধে মসজিদে যেতাম ইবাদতের জন্য। তার আগে বাজার থেকে জিলাপি কিনে এনে মসজিদে বিলানোও একটি নৈমত্তিক দ্বায়িত্ব ছিল। আর রাতে গোসল করাও ছিল অন্যতম একটি পবিত্র কাজ। কারন এরাতে গোশল করলে গোশলের সাথে সব গুনাহগুলো ঝরে যায় এবং মানুষ একেবারেই নিষ্পাপ হয়ে যায়।

অন্যান্য দিনের মতো সেদিন ও আমরা কজন মিলে বাজারে গেলাম জিলাপি কেনার জন্য। মাগরিব নামাজ বাজারে পরে জিলাপি নিয়ে গ্রামের দিকে আসছিলাম। পথিমধ্যে দেখলাম একটি বিলের পাশে বসা আমাদের শহর আলী। শহরআলী হলো আমাদের গ্রামেরই ছেলে। তখন আমাদের বয়স ১৪ হলেও ওর বয়স কমপক্ষে ২৪। আমাদের ক্লাশেই পড়তো। খুবই দরিদ্র একটি ছেলে যার অধিকাংশ সময়ই কাটত কামলা দিয়ে। যতটা মনে পরে তখন তার বাবা ছিল প্যারালাইজ। তাই তাকেই সংসার চালনোর সমস্থ আয়োজন করতে হতো।

এই শহর আলী বিলর পারে বসে উদাস ভঙিতে বিড়ি টানছে। তখন তরুন বয়স। তাই তার এই দিনে বিড়ি খাওয়াটা আমাদের বেশ উত্তেজিত করে তোলে। কিন্তু তার যে শারীরিক সক্ষমতা তাতে আমরা তাকে কিছুই করতে পারবনা। তাই মোটামুটি বিনয়ের সাথে বললাম কিরে আজকেও বিড়ি খাবি তো সারা বছরইতো বিড়ি খেতে হবে। চল বাসায় গিয়ে গোসল করে মসজিদে আয়। কিন্তু সে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আমাদের বসার জন্য অনুরোধ করল তার কিছু কথা শুনার জন্য। আমরা ও বসলাম শুনিইনা শহরআলীর কথা।

দেখ এ দিনে আল্লাহ তার প্রত্যেক বান্দার রিঝিক লিখেন। আমাদের ও লিখেন। সে তার গল্প এভাবেই শুরু করল। পৃথিবীতে যদিও ধনী লোকের সংখ্যা কম তবুও তাদের খাদ্য খানা বেশী। তাই ফেরেস্তাদের অর্ডার করেন আগে বড়লোকের রিঝিকের তালিকা তৈরি করতে। কিন্তু এরা এত বেশী খায় যে ফেরেস্তারা এদের রিঝিক লিখতে লিখতে রাত প্রায় শেষ করে ফেলে। এর পরে আসে মধ্যবিত্ত দের রিঝিক লিখার কাজ। এরা কিছুটা কম খেলেও বড়লোকের তুলনায় এদের সখ্যা অনেক বেশী। তাই ফেরেস্তারা এদের রিঝিক লিখতে লিখতে রাত্রি শেষ করে ফেলে। তখন আযান দিবে দিবে অবস্থা। এই অবস্থায় ফেরেস্তারা আল্লার কাছে বিনীত নিবেদন করেন আল্লাহ আরতো সময় নেই। অথচ গরিবদের রিঝিকের কোন ব্যবস্থাই করা হলো না। আল্লাহ ও দেখেন যে আরতো সময় নেই। তাই তিনি ফেরেস্তাদের আদেশ করেন যে লিখে দাও "পূর্বাকার অবস্থাই বলবৎ রইল"। ফেরেস্তারাও তাই করেন। সুতারং সবার অবস্থার পরিবর্তন হলেও আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়না।

তার কথা শুনে আমরা প্রায় থ। তাকে কি মুসলমান বলব না অন্য কিছু বলব তা আর খুজে পাচ্ছিনা। তবে এক বন্ধু বলল ও হিন্দু হয়ে গেছে। তাই আল্লাহকে নিয়ে এমন কথা বলে। তবে সেদিন ওকে আর কিছু না বলে চলে এলাম। একটু দুরে এসে মাটি ঢিল নিয়ে ওর গায়ে মেরে ভোঁ দৌর।

এখনো শবেবরাত এলে আমার সেই ছোটবেলার কথা মনে পরে। মনে পরে সেই শহরআলীর কথা। জানিনা সে কোথায় আছে। তবে মনে হয় তার সেদিনের কথা অনেকাংশে সত্য। করুনাময়ের শুধু ধনীদের প্রতিই করুনা হয়। আর দরিদ্ররা তার দৃষ্টির অন্তরালেই থেকে যায়। যে মুহুর্তে বাসা বাড়িতে হালুয়া রুটি বিলানো আর নতুন পোশাক পড়ার ভিড় জমে যায় সে মুহুর্তে ঐ দরিদ্ররা প্রতি বছরই ভীর করে আজিমপুর গোরস্থানে ১ টি টাকা বা কিছু উচ্ছিট্ট পাওয়ার লোভে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×