চীন বিষয়ে সংবাদ মানেই ‘সফলতা’র খবর। সাগরে ৩৪ মাইল লম্বা ব্রিজ, অতিকায় যাত্রী পরিবহন বিমান তৈরি, চাঁদের অপর পিঠে অবতরণ ইত্যাদি। রাবিয়া কাদিরের ‘গল্প’ এ তালিকায় বেমানান। ১৪১ কোটি জনসংখ্যার চীনে রাবিয়া মাত্র সোয়া কোটি উইঘুরের প্রতিনিধি। চীনে তো নয়ই, চীনের বন্ধুদেশগুলোর প্রচারমাধ্যমও তাঁর সংবাদ এড়িয়ে চলে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। রাবিয়া থাকেনও চীন ছেড়ে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। তারপরও তিনি চীনের এক প্রবল প্রতীকী প্রতিদ্বন্দ্বী। দেশটির অবিশ্বাস্য সফলতার দীপ্তি রাবিয়া কাদিররা অনেকাংশে ম্লান করে দেন।
বিশ্বে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অন্যতম বধ্যভূমি আজকের জিনজিয়াং। তবে চীন বলছে, তারা সেখানে লড়ছে ‘উগ্রবাদ’ ও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদ’-এর বিরুদ্ধে। পূর্ব তুর্কিস্তানজুড়ে সন্ত্রাসী আক্রমণগুলো চীনের বক্তব্যকে সমর্থন করে। তবে সেটা এ সত্যও বলে, অহিংস পথে হয়তো উইঘুরদের কথা বলার সুযোগ নেই আর।
জিনজিয়াংজুড়ে নিরাপত্তা কড়াকড়ি ছাড়াও চীনের হ্যাকাররা উইঘুরদের অনলাইন কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। রাবিয়া কাদিরকে নিয়ে তৈরি ৫৪ মিনিটের ‘টেন কন্ডিশন অব লাভ’ তথ্যচিত্রটি প্রদর্শন করতে গিয়েও বিশ্বের অনেক চলচ্চিত্র উৎসব কর্তৃপক্ষ বাধার মুখে পড়েছে। রাবিয়া নিজেও এখন অনেক দেশে ভিসা পান না। শক্তিশালী চীনের সঙ্গে কোনো দেশ আর সম্পর্ক খারাপ করতে চাইছে না!
চীনের বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র উইঘুরদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সেটা যতটা চীনকে বিব্রত করতে, ততটা নয় উইঘুরদের স্বার্থে। প্রচুর উইঘুর রাজনৈতিক কর্মী যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়ে আছেন। ১১ সন্তানের জননী রাবিয়া কাদিরও তাঁদের একজন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে কারাভোগ শেষে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন তিনি।
২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্ব উইঘুর কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অনেকে তাঁকে মুসলমানদের ‘দালাই লামা’ বলেন।
তবে তিব্বতের দালাই লামার মতো রাবিয়াকে নিয়ে পশ্চিমে উচ্ছ্বাস নেই। ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘তিব্বত স্টাডিজ’ নিয়ে যতটা আগ্রহী, উইঘুররা তার ছিটেফোঁটা মনোযোগও পায় না। এর কারণ অস্পষ্ট নয়। রাবিয়ারা মুসলমান। আবার চীনের প্রভাবে মুসলিম ‘উম্মাহ’ও উইঘুরদের সমর্থনে সোচ্চার নয় কখনো।
এ রকম বহুমুখী প্রতিকূলতায় উইঘুরদের সামনে ভবিষ্যতের কোনো স্পষ্ট ছবি নেই। তাদের চাওয়া-পাওয়ার ইতিবাচক পরিণতি জড়িয়ে আছে চীনের মূল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্বাধীনতার ভবিষ্যতের সঙ্গে। ৭২ বয়সী রাবিয়া কাদির কি তা দেখে যেতে পারবেন? এর উত্তর তাঁর জানা নেই। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দমবন্ধ জনপদের মতোই তাঁরও ভরসা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২১