somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ই-ফ্রেন্ড : পর্ব-৫

০৫ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাঁচ

পরদিন দুপুরেই অন্যসব কাজ ফেলে শাহিদ নীলক্ষেতের শাহানা বুক হাউজে মিমির জন্য তরুণ কণ্ঠ রাখতে গেল। এক মিমির জন্য চার কপি তরুণ কণ্ঠ একটা বড় খামের ভিতরে ঢুকিয়ে স্টাপলার দিয়ে মুখ আটকে দিল। খামের ওপরে আঁকাবাঁকা অক্ষরে লিখলো জ্ঞতিশা, কিংবা মিমি, কিংবা যার নাম আজও জানা গেল না, তার জন্যঞ্চ। কিন্তু কোথাও তার নিজের নাম লিখলো না।
আরো একটা কাজ সে করেছে। একটা কবিতা লিখেছে, নাম দিয়েছে জ্ঞদূরভাষিণীঞ্চ। জ্ঞদূরভাষিণীঞ্চ ছোটগল্পটা কার লেখা তা সে জানতে পারেনি, পারলে কবিতাটা আরো সমৃদ্ধ হতো। প্রথমবার কবিতা লিখে পরদিন আবার পড়তে হয়, তখন অন্য রকম লাগে, শ্রুতিকটু শব্দগুলো তখন কানে ধরা পড়ে, ওগুলো বদলে নতুন শব্দ যোগ করতে হয়। ছন্দপতনও কানের কাছে বিশ্রীভাবে বেজে ওঠে, ওগুলো ঠিক করা হয়। এভাবে প্রতিদিনই একটু একটু করে পরিমার্জন করা হয়, একটা মনের মতো শব্দ যা প্রথম দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি, একদিন তা-ও এসে অনায়াসে কবিতায় বসে পড়ে। রেজাউদ্দিন স্টালিন একবার বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, একটা যথোপযুক্ত শব্দের জন্য কবিকে বছরের পর বছর, যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করতে হতে পারে, শাহিদ সেই অনুষ্ঠানটি দেখেছিল। সে শুধু কবিতার ক্ষেত্রেই নয়, গদ্য রচনার জন্যও তাই করে। কিন্তু জ্ঞদূরভাষিণীঞ্চ কবিতাটা সে এক বসায় লিখে ফেলেছে, তারপর আর একটা শব্দেরও পরিবর্তন করা হয়নি। কঠিন প্রেমে পড়লে মুখ দিয়ে যা বের হয় তার সবই কবিতা হয়, কলমে যা লিখা হয় তার সবই হয়ে ওঠে কালোত্তীর্ণ অমর কবিতা। শাহিদ ভাবে, সে কি তাহলে সত্যিই কঠিন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে? জ্ঞএখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়ঞ্চ। হেলাল হাফিজের এই কবিতার বিরুদ্ধে তার মন সোচ্চার হয়ে ওঠে, ভুল, সবই ভুল, এখন যৌবন যার প্রেমে পড়বার তার শ্রেষ্ঠ সময়। যৌবনে প্রেমে না পড়লে কি বৃদ্ধ বয়সে প্রেমে পড়বে মানুষ? এসব ভাবতে ভাবতেই সে মনে মনে হেসে ওঠে, মনটা ব- ছেলে-মানুষের মতো ভাবছে আজকাল।
কম্পিউটার কম্পোজ করে অফসেট কাগজে লেজার প্রিন্ট বের করেছে। কবিতার বিষয়-বস্তু ও ভাষার মাধুর্যের চেয়ে ঝকঝকে ছাপার অক্ষর অবশ্য তার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।
অতি মোলায়েম হাতে চার ভাঁজ করে কবিতাটা তরুণ কণ্ঠের ভিতরে গুঁজে দেয়া হয়েছে, পৃষ্ঠা খুললেই ভীষণ ফর্সা কবিতার কাগজটা মিমির চোখে পড়বে, প্রথমে ওটা দেখেই তার মনে হবে একটা চিঠি। কিন্তু ভাঁজ খুলে দেখবে চিঠি নয়, অন্য কিছু, একটা ঝলমলে কবিতা, কিন্তু কী করুণ!


দূরভাষিণী

দূরভাষিণী, আপনি বলেছিলেন অন্য সবার চেয়ে
আমি নাকি অন্যরকম, একেবারে অন্যরকম। আমি বহুবার আপনার কাছে
জানতে চেয়েছিলাম আমার সেই অন্যরকম ~েবশিষ্ট্যের কথা।
আপনি টেলিফোনের প্রান্তে হাসিতে গলে পড়ে
বারংবার সেই একই কথার ফুলঝুরি ছড়ালেননআপনি ব- অন্যরকম।

আমি জানি না দূরভাষিণী কী আপনার সত্যিকারের নাম যে নামে
আপনাকে ডেকে ডেকে প্রাণান্ত হতে কেবলই সাধ হয়। যে মেয়ে তার নাম বলে না অথবা গোপন করে তাকে সবাই জ্ঞঅনামিকাঞ্চই ডাকে,
আমি ডাকিন্দূরভাষিণী।
আমি বলেছিলাম, অনামিকা, আপনি কি রাবেয়া খাতুনের জ্ঞদূরভাষিণীঞ্চ পড়েছেন, সেই অদ্ভুত মিষ্টি কণ্ঠস্বরের করুণ মেয়েটির বেদনার কাহিনীটি কি
আপনার জানা আছে? অবশ্য রাবেয়া খাতুন না হয়ে সেলিনা হোসেন বা অন্য যে কেউ-ই হতে পারেন সে কাহিনীর জননী।
সেলিনা হোসেন কিংবা রাবেয়া খাতুন কিংবা অন্য কেউনজ্ঞদূরভাষিণীঞ্চ
আপনি পড়েননিনখুব নরম করে জানিয়েছিলেন।
আমি বলেছিলাম, জ্ঞঅনামিকাঞ্চ ব- সাধারণ অনামিকাদের নাম, আপনার নামটি বরং জ্ঞদূরভাষিণীঞ্চই থাক।

দূরভাষিণী, আমি জানি না কিংবা হয়তো সুনিশ্চিত জানি, আপনিই
সেই দূরভাষিণী, সারাটা ক্ষণ আপনার টেলিফোনের প্রতীক্ষায় আমি কান পেতে থাকি, প্রতিদিন কতো কথা হয়ন
টিএসসি কিংবা পাবলিক লাইব্রেরি, জাতীয় যাদুঘরে কবিতাসন্ধ্যা, বাংলা একাডেমিতে বইমেলায় যাবার কথা বললেই
আলসেমিতে আপনার অবশ কণ্ঠস্বরনআপনি কি সেই দূরভাষিণী, করুণ সুমিষ্টকণ্ঠী দুঃখিনী বালিকাটি নন?

দূরভাষিণী, আপনি জানেন না আপনার কণ্ঠস্বরে কী অপূর্ব মাদকতা আছে, যা সারাক্ষণ আমার কানে বাজে, অবিরাম কানে বাজে,
প্রতিধ্বনির মতো সেই কণ্ঠস্বর অবিরাম কানে বাজে,
হাঁটতে চলতে কানে বাজে,
খেতে বসি, তখনো কানে বাজে,
বেসিনের সামনে যাই, দাঁত ব্রাশ করি, আয়নায় চেহারা দেখি,
সেই কণ্ঠস্বর কানে বাজে, যখন গোসল করি, তখনো কানে বাজে,
শুতে যাই, ঘুমের ঘোরে আপনার মধুর কণ্ঠস্বর শুনে চমকে জেগে ওঠি,
শুনি কানের কাছে সেই কণ্ঠস্বরনঅবিরাম বেজে চলে।

দূরভাষিণী, আমি জানি, আপনার দেখা কোনদিনই পাবার নয়, আপনিই রাবেয়া খাতুনের সেই দূরভাষিণী।
একদিন হঠাৎ ফোন করে দেখবো ও-প্রান্তে নেই আপনি, অন্য কণ্ঠস্বর,
আমি তৎক্ষণাৎ ক্র্যাডল চেপে লাইন কেটে দেবো,
তারপরদিন আবার ফোন করবো, সেদিনও আপনি নেই,
এরপর প্রতিদিননপ্রতিদিন অস্থির ফোন করা হবে, আপনি নেই,
ক্লান্ত একদিন থেমে যাবো হয়তো বা, দিনের পর দিন এভাবেই ব্যর্থ বিষণ্ন সময় চলে যাবে, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর,
যুগ পেরিয়ে. যাবে, একদিন আপনার ফোন নম্বরটিও কীভাবে ভুল হয়ে যাবে, কিংবা বদলে যাবে, কিংবা বদলে যাবেন আপনি নিজেই।

সেই দুঃসহ বুকফাটা সময়ের বেদনায় কেবলই আমার অন্তর বিদীর্ণ হয়।

কবির নাম লিখা হয়নি যদিও, কিন্তু মিমি নিশ্চিত বুঝতে পারবে এটি কে লিখেছে। প্রথম অর্ধেক সে পড়বে আর হাসবে, কতো কী যে বানিয়ে বানিয়ে কবিতায় লিখা হয়েছে, এতোসব বিষয়ে কি ফোনে তার সাথে কথা হয়েছে? সেটাই শাহিদের কৃতিত্ব, তার স্বপ্নচারী কবি-মন এসব ভাবে আর লিখে। কিন্তু শেষের দিকে এসে পড়তে পড়তে মিমির মন বেদনায় ভরে উঠবে, কী এক নিদারুণ বিচ্ছেদের সুর!
শাহানা বুক হাউজের মামুনের সাথে আগে তার দু-একবার দেখা ও কথা হয়েছে, এর কাছ থেকে একত্রে অনেকগুলো বই কিনেছিল বলেই এতোটুকু সখ্যতা হয়েছিল। তার হাতে খামটি সঁপে দিয়ে শাহিদ বললো, এই খামটা একটু আপনার স্টলে রাখতে হবে। আমার দাদা তাঁর এক ছাত্রীর জন্য পাঠিয়েছেন।
আজই নিতে আসবে?
আজই আসার কথা। তবে দাদা বলেছেন যে সপ্তাহ খানেক দেরিও হতে পারে, এমনকি এক মাস বা আরো বেশিও দেরি হতে পারে।
আসলে কিছু বলতে হবে?
কিছু বলতে হবে না। দাদা বলেছেন যে উনি এসে তরুণ কণ্ঠের কথা জিঞ্চাসা করবেন। আপনি তখন এই পুরো খামটাই তার হাতে তুলে দিবেন। ঠিক আছে?
কোন অসুবিধা নেই স্যার।
আপনার চা খাওয়ার জন্য দাদা আপনার জন্য একশোটা টাকাও পাঠিয়েছেন।
টাকা দিয়ে আমাকে লজ্জা দিবেন স্যার? আপনার দাদাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলবেন। ম্যাডাম কি শুধু তরুণ কণ্ঠই নিতে আসবেন, নাকি অন্য বই-টইও কিছু নিবেন?
ও হ্যাঁ, দাদা বলেছিলেন জ্ঞকঞ্চ বইটা কিনে এই খামের মধ্যেই ভরে দিতে।
স্যার, অরিজিন্যাল জ্ঞকঞ্চ কিন্তু নাই। ডুপ্লিকেটটা দিলে হবে তো?
হবে হবে, কোন অসুবিধা নেই।
মামুন কী বুঝে একটু মুচকি হাসলো, তবে তা শাহিদের নজরে পড়লো না। সে জিঞ্চাসা করে, স্যার, আপনার নামটা যেন কী?
শাহিদ বলে, আমার নাম বললে তো মহিলা চিনতে পারবেন না। আমার দাদার নাম বলবেন। বলবেন, আবিদ করিম সাহেব পাঠিয়েছেন। আমার দাদার নাম আবিদ করিম। মহিলা অবশ্য দাদাকে তাঁর ডাকনামেই চিনেন। দাদার ডাকনাম হলো রনি।
ও-কে বস।
আচ্ছা, জ্ঞকঞ্চ বইটার দাম কতো?
স্যার, অরিজিন্যালটার দাম ২৫০ টাকা। নকলটার দাম ১০০, তবে আপনার জন্য মাত্র ষাট টাকা।
শাহিদ পকেট থেকে দুটি একশো টাকার নোট বের করে মামুনের হাতে তুলে দেয়। বলে, বইয়ের দাম ষাট টাকা, বাকি একশো চল্লিশ আপনার চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য।
কিন্তু মামুন প্রথমে তা নিতে রাজি হলো না, অনেক জবরদস্তির পর অবশ্য রাখতে বাধ্য হলো।
শাহানা বুক হাউজ থেকে কয়েক কদম দূরে গিয়ে সে আবার ফিরে আসে। একটা সুন্দরী মেয়ে মামুনের স্টলের সামনে এসে দাঁড়ালো। সে বইয়ের স্তুপের একদিক থেকে আরেক দিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। শাহিদ মনে মনে বলে, এ মেয়ে তরুণ কণ্ঠ খুঁজছে না তো? মেয়েটা অবশ্য কোন কথাবার্তা না বলেই চলে গেল।
শাহিদকে পুনর্বার দেখতে পেয়ে মামুন একগাল হাসি দিল।
একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, শাহিদ বলে, খামের মুখটা খুলে তার ভিতরে জ্ঞকঞ্চ বইটা ঢুকিয়ে দিন।
আপনার খামটা স্যার খুবই ছোট। আরেক কাজ করি, আপনার খামটা এবং জ্ঞকঞ্চ বইটা একত্রে আরেকটা বড় খামের মধ্যে রেখে দেই।
ভেরি গুড আইডিয়া। এটা তো আমার মাথায়ই ঢোকেনি। তাই করুন, তাই করুন।
ও-কে বস।
আসি তাহলে, খোদা হাফিজ।
খোদা হাফিজ, বস।
চলে যাওয়ার সময় সে আশেপাশের স্টলের দিকে তাকালো। তার মনের মধ্যে সূক্ষ্ম আশা জাগেনএমন কাকতাল হয়তো ঘটেও যেতে পারেনমিমি এখনই চলে এসেছেনসে ইডেন কলেজের ছাত্রী, ক্লাস শেষে চলে আসাটাই স্বাভাবিক, হ্যাঁ, কলেজ এখন খোলানএর চেয়ে মধুর কাকতালীয় ঘটনা আর হয় না।
আবারো আরেকটা কথা শাহিদের মনে পড়ে যায়। এমনও তো হতে পারে যে শাহিদের আসার আগেই মিমি সকালবেলা এসে এক প্রস্ত ঘুরে গেছেনহয়তো ক্লাসে ঢোকার আগেই সে ম্যাগাজিনটা নিতে এসেছিল, এমন তো হতেই পারে। মামুনকে অবশ্য এই কথাটা জিঞ্চসা করা হয়নি।
স্যরি, আরেকবার ডিস্টার্ব করতে এলাম, স্টলের সামনে ফিরে এসে মামুনের উদ্দেশে সে বলে। কিন্তু মামুন তখন অন্য এক খদ্দেরের সাথে দরাদরিতে ব্যস্ত ছিল এবং স্বভাবতই শুনতে পেল না।
শাহিদ গলার স্বর আরেকটু উঁচু করে বলে, মামুন সাহেব, জিঞ্চাসা করতে ভুলে গিয়েছিলাম, সকালবেলা কি তরুণ কণ্ঠের খোঁজে কোন মহিলা বা মেয়ে এসেছিল?
মামুনের মুখে সামান্য একটু বিরক্তির ছায়া। সে বলে, স্যার, সকালবেলা থেকে তো বহুত মেয়ে মানুষই আসলো গেল, আপনি কার কথা বলছেন?
শাহিদ থতমত খায়। বলে, আই মিন, কেউ এসে তরুণ কণ্ঠের কথা জিঞ্চাসা করেছিল কিনা তাই জানতে চাইছি।
স্যরি বস। তরুণ কণ্ঠ করুণ কণ্ঠ চাইবার জন্য কেউ আসেনি।
শাহিদের মুখটা ভীষণ কালো হয়ে যায়। সে অত্যন্ত বিব্রত ও বিমর্ষ ভাবে স্টল ছেড়ে চলে যেতে থাকে। চলে যেতে যেতে সে ভাবেনপ্রেমে পড়লে বোধ হয় এমনই ঞ্চান বুদ্ধি লোপ পায়।
এরূপ বোকামির জন্য শাহিদের মন বেশ অনুশোচনায় ভরে উঠলো। তিন চারদিন পর্যন্ত এই ঘটনাটি তার মনের মধ্যে আগুন জ্বালতে থাকলো।
তবে তার মনের মধ্যে একটা অকারণ পুলকও সারাক্ষণ লেগে থাকলো। আগের চেয়ে অনেক কাছাকাছি চলে আসা গেছেনমিমির মনটা যে কিছুটা গলেছে তা সহজেই অনুমেয়, সে নিজে নীলক্ষেতে গিয়ে তরুণ কণ্ঠ আনতে রাজি হয়েছে।
মিমি তরুণ কণ্ঠ আনলো কিনা তা জানার জন্য শাহিদ খুব চঞ্চল হয়ে উঠলো। তরুণ কণ্ঠ মিমির হাতে পৌঁছলে তার কী লাভ হবে এ সম্পর্কে অবশ্য শাহিদ খুব একটা স্বচ্ছ নয়। তবু তার মনে হলোন্দুজনের মুখোমুখি হবার এটা একটা প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।
মিমির হাতে তরুণ কণ্ঠ পৌঁছেছে কিনা তা জানার জন্য শাহিদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। প্রথমতঃ মিমিকে ফোন করে তা জেনে নেয়া যায়। কিন্তু মিমি যদি বলে এখনো আনা হয়নি তা শুনে শাহিদের খুব খারাপ লাগবে। অন্য কাজটি যা সে করতে পারে তা হলো নীলক্ষেতে শাহানা বুক হাউজে গিয়ে জিঞ্চাসা করা। কিন্তু সেখানেও যদি একই জবাব পাওয়া যায় তবে লজ্জায় ও অপমানে তার মরে যাওয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না।
মিমি বলেছিল সে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তরুণ কণ্ঠ নিয়ে যাবে। অসীম ~েধর্য্য নিয়ে শাহিদ এক সপ্তাহ পার করলো। তারপর একদিন বিকেলে মিমিকে ফোন করলো।
হ্যালো স্লামালাইকুম। মিমির মিষ্টি কণ্ঠস্বর।
স্লামালাইকুম। ভালো আছেন?
জ্বি।
আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে আমি আমার কথাটা রাখতে পারিনি।
কী কথা?
আমি আসলে গত সপ্তাহটা খুবই ব্যস্ত ছিলাম, তাই নীলক্ষেতে যেতে পারিনি। তরুণ কণ্ঠ না পেয়ে খুব রাগ করেছেন?
মিমি সামান্য একটু সময় নিয়ে বলে, আপনি যাননি, অথচ দেখুন আমি সেদিন পুরো বিকেল জুড়ে নীলক্ষেতের মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আই এ্যাম সো স্যরি, কিন্তু আপনি কি শাহানা বুক হাউজে গিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, কিন্তু ওটা তো ঐদিন বন্ধ ছিল।
কিন্তু শাহানা বুক হাউজ তো কোনদিন বন্ধ থাকে না।
ঐ দিন ছিল। পাশের লোক বললো যে দোকানের লোক দেশের বাড়ি গেছে। দুদিন পর ফিরবে।
আমার এখন প্রচুর আফসোস হচ্ছে। আচ্ছা, আজ কি ফ্রি আছেন?
কেন?
বিকেলে নীলক্ষেতে আসুন না একবার।
হ্যাঁ, সম্ভাবনা একটু আছে বইকি, বলা যায় না, আসতেও পারি।
আসবেন তো?
কিন্তু না-ও আসতে পারি।
আসুন না প্লিজ।
আসলেই যে আপনার সাথে দেখা হবে তা-ও কিন্তু নয়।
কেন?
আপনার সাথে দেখা করে আমার কী লাভ?
দেখা করুনই না একবার।
আচ্ছা, আপনি যেন কী করেন?
নীলক্ষেত আসুন, সবই বলবো।
কথা দিতে পারছি না।
ও, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি।
কী কথা?
আমি একটা মোবাইল কিনেছি।
খুব ভালো।
আমার নম্বরটা রাখবেন?
বলুন।
০১৭৫০২৯৫৩০। লিখেছেন?
হুম।
একটা রিকোয়েষ্ট করি?
করুন।
যখনই অবসরে থাকবেন, প্রতিদিন অন্তত একবার আমার মোবাইলে একটা মিসকল দিবেন। দিবেন তো?
মিসকল কেন দিব?
প্রতিদিন অন্তত এক মিনিটের জন্য হলেও আপনার কণ্ঠস্বর শুনতে চাই। আপনার মিসকল পেয়ে আমি রিটার্ন কল করবো।
আমি চেষ্টা করবো।
এ্যাট এনি টাইম।
ও-কে।
আমি কিন্তু সারাক্ষণ আপনার মিসকলের প্রতীক্ষায় থাকবো।
ও-কে।
ল্যান্ড ফোন থেকে যখন তখন ফোন করে মিমিকে পাওয়া যায় না। এটাই সবচাইতে ড~ত্তম হয় যে মিমি যখন অবসর থাকবে তখন সে মোবাইলে মিসকল দিবে। সঙ্গে সঙ্গে শাহিদ রিটার্ন কল করে কথা বলবে।

মিমির মিসকল আসবে এই আশায় শাহিদ বহু অস্থির সময় কাটালো। কিন্তু পরবর্তী সপ্তাহ খানেকে কোন মিসকল এলো না। শাহিদের সন্দেহ হলো, মিমি নিশ্চয়ই মোবাইল নম্বরটা ঠিকমতো লিখে রাখেনি, কিংবা ভুলে গেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অবশ্য সহজেই মিমিকে ল্যান্ডফোনে পাওয়া যাচ্ছে, মিমির বাবা কিংবা বাসার বুয়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। কাজেই মিমির মিসকলের জন্য অপেক্ষায় থাকাটাও হয় অর্থহীন। কিন্তু তারপরও যদি একটা মিসকল আসে তার মনে হবে নিশ্চয়ই মিমি এখন তার কথা ভাবে, দু-দণ্ড অবসরে ফোনে কথা বলার জন্য সে-ও উন্মনা হয়, তারও মন আনচান করে।
মিমিকে এবার সব কিছু খুলে বলতে হবে। প্রেমে পড়লে এতো মিথ্যে বলতে হয় এটা মনে করে শাহিদের খুবই অনুশোচনা হতে লাগলো। কৌতুক করেও কখনো মিথ্যে বলতে নেইনএ হাদিসটি সে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করেছে এতোদিন। কিন্তু মিমির সাথে ফোনে আলাপ হবার পর থেকেই সে-কথা সে বেমালুম ভুলে গেছে।
সে কী কারণে যে এতোদিন ধরে এতোগুলো মিথ্যে বলেছে তাও একটা রহস্য বটে। সে মনে করার চেষ্টা করে, তার একদম স্থির মনে আছে, মিমির কাছে যেদিন সে প্রথম ফোন করেছিল তার আগে পর্যন্ত সে এক বিন্দুও ভাবেনি যে তাকে কোনদিন এতোগুলো মিথ্যে বলতে হবে। মিমি যখন সহসা বলে উঠেছিল সে বিবাহিতা, তখন সে-ও তাকে ঝোঁকের মাথায় বলেছিল তারও স্ত্রী-পুত্র, পুত্রবধূ আছে। সে মিমিকে প্রাণপনে বোঝাতে চেয়েছিল যে স্রেফ বন্ধুত্বের খাতিরেই কিংবা শুধু বন্ধুত্ব স্থাপনের জন্যই সে নিজে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ বিবাহিত পুরুষ হয়েও তার সাথে ফোনে এতো আলাপ করেছিল। মিমি যে বড় একটা বিপদের মধ্যে পড়েছিল এটা সে নিশ্চিত বুঝতে পেরেছিল, তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধারেরও একটা গোপন সদিচ্ছা তার মনের মধ্যে ছিল। কিন্তু মিমি তার এই পরোপকারী মনোভাবের বিষয়টা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিল কিনা সে সম্পর্কে শাহিদ আজও নিশ্চিত হতে পারেনি।
মিমিকে সব সত্যই খুলে বলতে হবে, শাহিদ ভাবে, সে একজন যুবক, তার আছে নিজস্ব পেশা ও যোগ্যতা; এ-ছাড়াও তার আরো একটা পরিচয় আছে, যা সে সচরাচর বলে বেড়াতে অপছন্দ করে, কারণ সে খুবই প্রচার-বিমুখ। সত্রী, পুত্র, পুত্র-বধূদ্বয়, নাতি-নাতনিনএসব তার স্বপ্নের কথানতার আগামী সংসারটি এমন সুখময় হবে। মা, ছোটবোনকে নিয়ে মিরপুরে নিজস্ব একতলা ছোট এক বাসায় তারা থাকে, সেখানে একদিন মিমিকে নিয়ে আসতে হবে, তার মা মিমিকে দেখবেন, পুত্রবধূটি ভয়ানক সুন্দরী, মহল্লার ডজন ডজন যুবক এর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, ব্যর্থ হয়ে ইন্টারনেটে তার নামে যতোসব আজেবাজে তথ্য সম্বলিত বায়োডাটা ছেপে দিচ্ছে। কিন্তু আশংকা এখন একটাই, মিমি যদি সত্যি সত্যিই বিবাহিতা হয়ে থাকে, তখন কী হবে?
মিমি যে বিবাহিতা নয় তার বেশ কয়েকটি জলজ্যান্ত প্রমাণ মেলে। সবচেয়ে বড় প্রমাণনমিমি আগাগোড়া অনেক মিথ্যে বলে এসেছে, সত্যিকারেই তার নাম তিশা, মিমি নয়, তার শ্বশুরের যে বিরাট গার্মেন্টস শপের কথা বলা হয়েছে সেটা সত্যি হলে শ্বশুর বাড়ি খুবই ধনী পরিবার, ধনী পরিবারের বউটি যে দিনের পর দিন বাপের বাড়ি পড়ে থাকবে তার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সে সত্যিকারেই ইডেন কলেজে ছাত্রী, থার্ড ইয়ার সোশ্যাল ষ্টাডিস অনার্সে পড়ছে সে, তার আগে যেসব পরীক্ষার কথা সে বলেছিল তা বানোয়াট।
এরূপ অনেক বিশ্লেষণের পর শাহিদ নিশ্চিত হলো মিমি কিংবা তিশা নামের মেয়েটি এখনো অবিবাহিতা, কুমারী।
এরপরের বার যেদিন মিমিকে ফোন করা হলো, কেউ ফোন ধরলো না। চার পাঁচবার রিং করেও কেবল নো রিপ্লাই পাওয়া যেতে থাকলো। মিমি কি তাহলে শ্বশুর বাড়ি চলে গেল নাকি, যদিও তার বিয়ে হওয়া নিয়ে এখনো যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
তারপরের দিন, পরের দিন, এভাবে পরপর পাঁচদিন ফোন করেও মিমিকে পাওয়া গেল না। শাহিদের মনটা খারাপ হয়ে যায়, মিমি আসলেই বিবাহিতা নারী। আসলেই সে বাপের বাড়ি চলে গেছে। কিন্তু এ বাসায় কি ফোন ধরার জন্য অন্য কেউ নেই?


প্রায় মাস দুয়েক পর শাহানা বুক হাউজের মামুনের সাথে দেখা করতে গেল শাহিদ, যদিই বা তিশা কিংবা মিমি নামের সেই রহস্যময়ী নারী কিংবা যুবতী তার দেয়া তরুণ কণ্ঠ নিয়ে গিয়ে থাকে। তরুণ কণ্ঠটি মিমির হাতে পৌঁছলে সে নিশ্চয়ই শাহিদের সাথে যোগাযোগ করবার জন্য অস্থির হয়ে উঠবে। ওখানে সম্পাদকীয় দফতরে প্রধান সম্পাদকের নামটি দেয়া আছে আবিদ করিম, মিমি যদি খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করে তাহলে দেখবে আবিদ করিম নামটার নিচে একটা ফোন নম্বর দেয়া আছে, তার নিচে আরো একটা মোবাইল নম্বর লেখা আছেন০১৭৫০২৯৫৩০, মিমিকে এই মোবাইলে ফোন করতে বলেছিল সে। মিমির সন্দেহ হবে, কে এই আবিদ করিম লোকটা? সে-ই কি রনি নয়? ওই ফোন নম্বরটি থেকেই কি এতোদিন ধরে কেউ একজন তার সাথে কথা বলছে না? তারপর ভিতরে সুন্দর ভাঁজ করা কাগজটা খুলবে, ঝলমলে অক্ষরের একটা নিদারুণ করুণ কবিতা তার সামনে প্রতিভাত হবে। কবিতা সে ভালোবাসে না, তারপরও রুদ্ধ নিঃশ্বাসে সে এটি পড়বে, কারণ এটি তাকে নিয়ে লেখা, পড়তে পড়তে কবির প্রতি এক প্রচণ্ড আকর্ষণবোধ জন্ম নিবে তার মনের ভিতরে। কে এই কবি? নিশ্চয়ই রনি ওরফে আবিদ করিম নামের এ লোকটা, কিংবা টগবগে যুবকটা। এভাবেই হয়তো নতুন করে পরিচয়ের একটা সূত্র পাওয়া যাবে। তাতে যে ঠিক কতোখানি লাভ হবে তা-ও শাহিদের মাথায় পুরোপুরি ঢুকছে না।
তবে তরুণ কণ্ঠ এখনো মিমির হাতে গিয়ে পৌঁছেনি এ ব্যাপারে সে কিছুটা নিশ্চিত। পত্রিকা নিয়ে আসার জন্য যে মেয়ের এতোখানি আগ্রহ থাকবে, সে অবশ্যই ওটি নিজের কাছে নিয়ে আসার পর শাহিদকে ফোন করবেইনতাকে নিয়ে লেখা একটা কবিতার জন্য মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া ও কৃতঞ্চতা জানানোর জন্য।
শাহিদের ধারণাই সত্যি, মিমি তরুণ কণ্ঠ নেয়নি। তার বুকের আবেগ এখন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছেনযদিও তার মনের মধ্যে এখনো একটা সূক্ষ্ম আশা জেগে আছে যে একদিন মিমি এসে মামুনের কাছে তরুণ কণ্ঠ চাইবে, শাহিদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিবে, অতঃপর তাদের ঝিমিয়ে যাওয়া পরিচয় ও পরিণয় নতুন মাত্রা পাবে। প্রেম গাঢ়তর হবে। তবে সে মনে মনে এ কথাটি শোনার জন্য প্রস্তুতই ছিল যে কেউ তরুণ কণ্ঠের খোঁজ করেনি।
মামুনের কাছ থেকে সে তরুণ কণ্ঠের খামটা ফেরত চাইল না। পড়ে থাকনযুগ যুগ ধরে এখানেই পড়ে থাক, সে নিজ হাতে এগুলো আর কক্ষণোই স্পর্শ করবে না। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলেও না।
নীলক্ষেতের মোড় থেকে খুব অলস পায়ে ভার্সিটি এলাকার দিকে হাঁটতে থাকে শাহিদ। বাম দিকে হোটেলের সারি, ডানদিকে খোলা রাস্তায় বইয়ের স্তুপ। রঙিন কপোতীরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে প্রিয় বইয়ের সন্ধান করে। শাহিদ অপরাপর সময়ে এ পথে হাঁটতো, আর দণ্ডায়মান ললনাদেরকে এক নজর দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটাতো। আজ তার কাছে সব কিছুই বিতৃষ্ণনপানসে, বিস্বাদময় মনে হয়। সোজা সামনের দিকে মাথা নিচু করে সে হাঁটছে। অন্য কোনদিকে চোখ নেই, মন নেই।
জ্ঞকঞ্চ বইটা আছে?
হঠাৎ শাহিদ চমকে দাঁড়ায়। ঠিক তার এক কদম পেছনে ডানপাশের বইয়ের দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে যে মেয়েটি জ্ঞকঞ্চ বইটি চাইল, সেটি তার বহুদিনের পরিচিত কণ্ঠস্বরনসে মিমি।
ঘুরে দাঁড়িয়ে সে মিমির কাছাকাছি চলে আসে। এটা কি বসন্তকাল? মিমি একটা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরেছে। তার চুলগুলো বাঁধা। শাড়ির রঙের মতো তার ঘাড়খানি কাঁচা হলুদ বাটার মতো ফুটে আছে।
মিমির প্রায় কানের কাছে গিয়ে শাহিদ খুব নরম স্বরে বলে ওঠে, এক্সকিউজ মিনমিমি চকিতে ফিরে তাকায় ও মুখোমুখি হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত বিসময় ও আনন্দ দুজনের চোখে মুখে বিজলির মতো ঝিলিক দিয়ে ওঠে।
শাম্মী! শাহিদের কণ্ঠস্বরে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের উচ্ছ্বাস।
শাহিদ! তুই এখানে! আবেগে শাম্মীর মুখে কথা সরে না।
দুজনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বললো। তারপর ঢুকলো পাশের এক হোটেলে। সেই কতো বছর আগের কথা, এক স্কুলে পড়েছে। শাহিদ এরপর গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে এলো, কিন্তু শাম্মী কোথায় লেখাপড়া করেছে তা সে জানে না। স্কুলে পড়ার সময় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মতোই এদের মধ্যে অতি সাধারণ কথাবার্তা হতো। কিন্তু এতোদিন পর হঠাৎ দেখা হওয়ায় মনে হচ্ছে যেন কতোদিন ধরে এদের মধ্যে বিশেষ হৃদ্যতা ছিল, আজ তা প্রবল আবেগে প্রকাশ পেয়ে গেছে।
শাহিদ কৌতুক করে বলে, তুই যে কতো সুন্দর হয়েছিস তা কি তুই জানিস?
যাহ্! শাম্মী কৃত্রিম ভর্ৎসনা করে বলে, আমি আবার সুন্দর হতে যাবো কেন? আমি হলাম কালো হাঁড়ির মতো কালো। বলেই মিষ্টি করে হাসতে থাকে শাম্মী। সেই হাসির ছটায় ওর সর্বাঙ্গ খলখল করতে থাকে। শাহিদের মনও ব্যাকুল হয়ে ওঠেনসেই কণ্ঠস্বর, মিমির মতো ঠিক সেরকম করে শাম্মী বলেনআমি হলাম কালো হাঁড়ির মতো কালোনমেয়েদের কণ্ঠস্বরে এমন অদ্ভুত মিল হয় কী করে? শাহিদ আশ্চর্য হয়ে ভাবে।
তোর কথা বল, শুনি। শাম্মী বলে।
আমি আর কী বলবো, তোকে দেখে দেখেই আমি পাগল হচ্ছি। তুই কথা বল, আমি শুনি আর তোকে প্রাণ ভরে দেখি।
ইশ্! শাম্মীর চোখে মুখে মিষ্টি হাসির ঝিলিক, সে বলে, আমার জীবনটা ধন্য হয়ে গেল রে।
তার চেয়েও বেশি ধন্য হলাম আমি, তোর মতো একটা অসাধারণ সুন্দরীর সাথে দ্বিতীয় জীবনে দেখা হলো বলে।
খুব চাপা মারছিস কিন্তু।
চাপা মারবো কেন? তুই যে একটা জ্বলন্ত আগুন এটা কে না বলবে?
তুইও বলিস? শাম্মী খুব গভীরভাবে শাহিদের দিকে তাকায়।
বিশ্বাস হয় না?
আগে তো কখনো বলিসনি।
আগে কখনো বলবার সুযোগ দিয়েছিস?
সুযোগ কি কেউ কাউকে করে দেয়? এটা নিজেকেই করে নিতে হয়। হয় না? বলে আরো গাঢ়ভাবে সে শাহিদের দিকে তাকায়। সেই চাহনিতে যে আকর্ষণ, সৌন্দর্য, মমতা ও ভালোবাসা মিশে আছে তা মুহূর্তে শাহিদের বুকের গহীনে গিয়ে একটা প্রচণ্ড আঘাত হানে।
তোর কথা আগে কখনো ভাবিনি তা নয়। তবে এতোটা গভীর করে ভাবিনি এটা সত্যি। কিন্তু আমার কথা কি কেউ কখনো ভেবেছিল? শাহিদ জিঞ্চাসা করে।
কেউ কি কখনো তা বোঝার চেষ্টা করেছিল?
আশ্চর্য, আমি কিন্তু কোনদিন ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি।
তোর কি একটা ঘটনার কথা মনে আছে?
কোন্টা?
মনে নেই, কে যেন তোর কবিতার খাতাটা দেখতে চেয়েছিল?
সত্যিই মনে নেই। কে দেখতে চেয়েছিল? তুই?
থাক।
বল না?
আরেকটা দিনের কথা বলবো?
বল।
স্কুলের গাছ থেকে তোকে আম পেড়ে দিতে বলেছিলাম।
দিইনি?
প্রচুর আম পেড়েছিলি।
তো?
সেগুলো ক্লাসের সবগুলো মেয়েকে বিলিয়ে দিলি।
আর তোকেই দিইনি?
আমাকে দিলেই বা আমি নিব কেন?
কেন? নিসনি কেন?
আমি বললাম আম পাড়তে, তুই আম পাড়লিও, সবার মধ্যে সেই আম বিলিয়ে সবার মন জয় করবি, আমি তা মেনে নিব ভাবছিস?
শাম্মী, তুই বিশ্বাস কর, আমার এই মুহূর্তে আম-টাম পাড়ার কথা কিচ্ছুই মনে পড়ছে না। তবে সত্যি সত্যিই যদি আম পেড়ে থাকি তবে সব মেয়ের মন পাবার জন্য নিশ্চয়ই আমি আম বিলিয়ে দিইনি। এমন হয়তো হয়ে থাকতে পারে যে আমগুলো পেড়ে এনে মেয়েদের সামনে টেবিলের ওপর ফেলে রাখলাম, মেয়েরা কাড়াকাড়ি করে ওগুলো নিয়ে নিল।
আমার কথায় আম পেড়ে এনে আমাকে না দিয়ে তা সবার মধ্যে বিলিয়ে দিলি, আমাকে তাহলে কতোটুকু গুরুত্ব দিলি?
গুরুত্ব তো তোকেই দেয়া হলো। তা না হলে আমি আমই বা পাড়বো কেন? আমাকে দেখেছিস না মেয়েদের সামনে কতোখানি লাজুক লতার মতো মাথা নিচু করে থাকতাম?
তাই বুঝি?
তাই নয় তো কী? আমাকে কখনো মেয়েদের সাথে গল্প করতে দেখেছিস? মেয়েদের দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকতে দেখেছিস? অথচ অন্য ছেলেরা কতো সহজভাবে তোদের সাথে মিশতো, হাসি-ঠা-া করতো। আমার খুব আফসোস হতো ওভাবে পারতাম না বলে।
কিন্তু মেয়েরা তোর সম্পর্কে অন্যরকম ভাবতো।
কী ভাবতো?
ভাবতো তুই ব- অহংকারী।
তাই? আমাকে তুই হাসালি। কিন্তু আমার মতো নিরেট নিরহংকারী ছেলেটাকে বিনাদোষে এরূপ অহংকারী ভাববার কারণটা কী ছিল?
তুই আসলেই খুব অহংকারী ছিলি। ক্লাসের ফার্স্ট বয়, তোর মতো ব্রিলিয়ান্ট ছেলে চৌদ্দগ্রামে নেই; গল্প, কবিতা, গান লিখিস, এ্যাথলেটিক্সে চ্যাম্পিয়ন, বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন, এমন কী ছিল যাতে তুই নেই? তোর কাছে মনে হতে স্কুলের একটা মেয়েও তোর সমকক্ষ নয়।
শাহিদ জোরে হেসে উঠে বলে, কী অদ্ভুত কথা রে! কী আশ্চর্য!
তোর সাথে কথা বলার আগে মেয়েরা খুব ভেবে-চিন্তে নিত, কী বলতে কী বলে ফেলে। আমি সবচাইতে বেশি নার্ভাস হয়ে পড়তাম, তোর ধমক খেয়ে আবার হার্টফেইল করি কিনা।
আমি কি এতোখানিই টেরর ছিলাম?
তোর প্রতি মেয়েদের আকর্ষণের মূল কারণ ছিল এটাই।
কিন্তু মেয়েদের সাথে কেউ কখনো ধমকে কথা বলে?
তুই খুউব বলতি। একদিন টিফিনের সময় রাকা তোকে বাজার থেকে সিঙ্গারা এনে দিতে বলেছিল। সঙ্গে সঙ্গে চার-পাঁচটা ছেলে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়লো, তুই কিন্তু পাত্তাই দিলি না।
শাম্মী, আমার কিন্তু এসবের এখন কিচ্ছুই মনে পড়ছে না।
তোর তো মনে না থাকারই কথা। আমাদের কারো কথা কখনো ভেবেছিস যে মনে পড়বে?
এটা কিন্তু মিলাতে পারছি না। তুই আম পাড়তে বললি, আমি আম পেড়ে দিলাম, অথচ রাকা সিঙ্গারা আনতে বললো আমি ওকে পাত্তাই দিলাম না। এটা যদি সত্যও হয়, তবু কিন্তু তোর খুশি হবারই কথা।
কেন?
অন্তত তোর কথাটি আমি শুনেছিলাম বলে।
এখন বললে কি শুনবি? বলে গাঢ় চোখে সে তাকায়। একটি হাত তার নেমে এসে টেবিলের ওপর রাখা শাহিদের এক হাতের ওপর আলতোভাবে পড়ে। শাহিদ হারিয়ে যেতে থাকে।
এবার তোর কথা বল। শাহিদ বলে।
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হাত সরিয়ে নেয় শাম্মী। বলে, আমার কথাই তো এতোক্ষণ বললাম। এবার তোর কথা বল।
তুই এখন কোথায় থাকিস?
আমাদের বাসায়ই থাকি। দু-মাস পর কানাডা চলে যাচ্ছি।
কানাডা? কানাডা কেন?
ওখানে আমার হাজব্যান্ড থাকে।
ওওওন। শাহিদের বুক থেকে ক্ষীণ একটা দীর্ঘশ্বাসের মতো বের হয়।
তুই কি এতোদিন কানাডা ছিলি? শাহিদ জিঞ্চাসা করে।
নাহ্, দেশেই ছিলাম। ও অনেক আগেই কানাডার সিটিজেনশীপ পেয়ে গেছে। আমারও শীঘ্রই হয়ে যাবে।
তাহলে তো আর দেশে আসবি না। কারো কথা মনে থাকবে?
শাম্মীর মুখটা ম্লান হয়ে আসে। বলে, সবাইকে ভুলে থাকতে পারাটাই ভালো। এই যে এতোদিন পর তোর সাথে দেখা হলো, এটা না হলেই বরং ভালো ছিল রে। এখন খুব খারাপ লাগবে। খুবই খারাপ লাগবে।
খারাপ লাগবে কেন, কতো ভালো আছিস! স্বামী আছে, তোর আছে সুন্দর সংসার।
সংসার! পাঁচ বছরের বিয়ে-জীবন, সংসার কী জিনিস তাই বুঝতে পারলাম না।
তোর বাচ্চা-কাচ্চা কই?
আকাশের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে শাম্মী বলে, ওখানে।
আর দেরি করিস না।
যাহ্! লজ্জায় শাম্মীর মুখ রক্তিম হয়ে ওঠে।
একটু নীরবতার পর লাজরাঙা মৃদু ম্লান হাসিতে শাম্মী বলে, একটা বেবির জন্য আমার মনটা পাগল হয়ে আছে রে! বলতে বলতে ওর কণ্ঠস্বর ভারি হয়ে ওঠে। দুজনের কথা বন্ধ হয়ে যায়, কী এক নিদারুণ করুণতায় ছেয়ে যায় ওদের মন।
নীরবতা ভেঙ্গে শাহিদ বলে, তোর মোবাইল নম্বর কতো?
০১৭২০৮০৬৬৭।
আমি সেইভ করে নিচ্ছি। আমার মোবাইল নম্বর ০১৭৫০২৯৫৩০।
একটা মিসকল দে তো।
শাম্মীর মোবাইলে মিসকল দেয়া হয়। শাম্মী ওর মোবাইলে শাহিদের নম্বরটা সেইভ করে রাখে।

বাসায় ফেরত আসার পর থেকেই শাহিদ ছটফট করতে থাকলো। মানুষের মন কতো বিচিত্র! কিছুক্ষণ আগেও যে-মন জুড়ে ছিল তিশা কিংবা মিমি নামের কোন এক মেয়ে, সে এখন প্রায় ভুলে যাওয়া নাম।
বিষম গভীর রাত, অন্তরে দারুণ ঝড়। যখন একান্ত অস্থির হয়ে উঠলো, ঠিক সেই সময়ে শাহিদ মোবাইলে ফোন করলো।
হ্যালো স্লামালাইকুম। একদম মিমির কণ্ঠস্বর। আবার সেই মিমির কথা মনে পড়ে যায়। শাহিদ পাগল হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে সে বলে, তুই কি ঘুমিয়েছিস, শাম্মী?
আমি ঘুমাইনি। তুই? আবেশ-জড়ানো স্বরে শাম্মী বলে।
ঘুমাসনি কেন?
আমি জানি না। শাম্মীর কণ্ঠস্বরেও অস্থিরতা।
আমি এখন কী করবো রে, শাম্মী? তোকে ছাড়া বোধ হয় আমি বাঁচবো না।
আমাকে তুই মেরে ফেলতে পারবি?
আমি তোকেই চাই। খুব গভীরভাবে চাই।
আমাকে কেন এতো পাগল করছিস, লক্ষ্মীটি? তোর কী লাভ তাতে?
আমার এই সুদীর্ঘ শুকনো জীবনে আমি কোন নারীর ঘ্রাণ পাইনি। তোর সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে মনে হচ্ছে তুই ছাড়া আমার অন্য কোন পথ নেই।
আমারও তাই মনে হচ্ছে।
শাম্মী, কী হবে তোর কানাডায় গিয়ে?
আমি জানি না। আমি কি যেতে চাই?
পারবি না তুই ওসব কানাডা-ফানাডা বাদ দিতে?
আমি তোকে চাই। আমি জানি না আমার কী হয়েছে।
তুই ওসব বাদ দে। চলে আয়।
আমি ওসব চাই না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না রে।
আমার বাসায় চলে আয়। আসবি?
আসবো।
কবে আসবি?
যখন আসতে বলিস।
এখন?
হুঁম, মনে মনে।
ঠিক তাই।
কবে আসবো?
কাল। ঠিক সাড়ে এগারোটায়।
শেষে তাড়িয়ে দিবি না তো?
তোকে আমার বুকের গহীনে রাখবো।
তোর মা কি আমাকে পছন্দ করবে?
তোর মা-বাবা-ভাইয়েরা কী বলবে?
আমি কিচ্ছু তোয়াক্কা করি না।

বাসার ঠিকানা বলে দিয়ে খুব ব্যাকুলভাবে রাত পার করে শাহিদ।
সকালবেলা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলো সে। তার মনটা বেশ ফুরফুরে, কিন্তু দারুণ চঞ্চল। নাস্তা খেতে বসেই সে মায়ের কাছে কথাটা পাড়লো।
মা, আজ তোমাকে একটা মেয়ে দেখাবো।
প্রসন্ন কিন্তু আশ্চর্য চোখে মা তাকান। বলেন, কোন্ মেয়ে?
এটা একটা বিধবা মেয়ে। খুব গরীব। অসহায়। আমার ক্লাসমেট। ওর কষ্ট আমার আর ভাল্লাগে না। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।
মায়ের মুখ কালো হয়ে যায়। বলেন, তুই খুশি হয়ে যা বিয়ে করে আনবি আমি তাকে নিয়েই খুশি।
শাহিদ হেসে দিয়ে বলে, এই তো তুমি আমার মায়ের মতো কথা বললে। কিন্তু আমি তোমাকে এতোখানি হতাশ করবো না। মেয়েটা দারুণ সুন্দরী। ওর বিয়ে হয়েছিল কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সাথে। গতকাল নীলক্ষেতে আমার সাথে দেখা, আমাকে দেখেই সে পাগল। স্বামীর সংসারে সে সুখে নেই। আজ হোক কাল হোক এই স্বামীকে সে ডিভোর্স দিবেই। এখন আমি যদি এই মেয়েকে বিয়ে না করি সে পাগল হয়ে পাবনা যাবে। তুমি এতো মুখ কালো করছো কেন, এই মেয়ে তোমার চেয়ে তিনগুণ বেশি সুন্দরী।
ছেলের কথা শুনে মায়ের মাথা ঘুরে যায়।

পরের পর্ব

আগের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×