বিদেশে অবস্থান রত বা যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক সেই সব ভাই দের জন্য আমার এই লেখা । অনেক দিন যাবত চেষ্টা করছিলাম এই লেখা টা লিখবো কিন্তু অনেক ভেবে পাচ্ছিলাম না কি লিখবো কারন ব্লগে এখানে যারা লিখেন তারা অনেক এই আমার থেকে অনেক বেশি জানেন । আমি অতি ছোট একজন মানুষ । তার পর চিন্তা করলাম অন্তত আমি যা জানি তা যদি একজনের ও উপকারে আসে তাহলে তাহলে আমার বিগত দিন এর যত কষ্ট তা সফল হবে । কারো কোন প্রশ্ন থাকলে করবেন সমাধান দেয়ার চেষ্টা করব ।
আমি ১৯৯৮ সাল থেকে আমার বন্ধু দের কাছে একজন ভ্রমন প্রিয় মানুষ হিসাবে পরিচিত । তখন আমি লেখা পড়া করা অবস্থায় প্রথম আমার এক মামুর এর সহযোগিতায় মালায়সিয়া বেরাতে যাই । আমার মামু ছিল লাগেজ বেবসায়ি। তখন মামু যেভাবে বলত সেভাবেই ঘুরতে যেতাম অন্তত যে টাকা খরচ হত তা উঠে আসতো । যে কারনে তখন মাঝে মাঝেই থাইলেন্ড মালায়সিয়া যাওয়া হত । পরে আমার ফেমিলি থেকে আমাকে একরকম জোর করে সিমেন্ট ডিস্ট্রিবিউসন বেবোসাতে বসিয়ে দেয় । তার পর থেকে আর ঘন ঘন যাইয়া হত না কোথাও কিন্তু তার পর ও ৩ মাসে একবার হয়তো নেপাল না হয় ইন্ডিয়া না হয় চিন বা মালায়সিয়া ,থাইলেন্ড ঘুরতে যেতাম । কিন্তু দুবাই যাই সর্ব প্রথম ২০০৭ সালে আমার খালাত ভাই এর দেয়া দাওয়াতে ,উনি আবার দুবাই এর দিউয়া (দুবাই ইলেক্ট্রিসিটি এন্ড ওয়াটার ) তে চাকরি করেন । উনি দেশে আসার পর উনি আমাকে বললেন দুবাই তে বেরাতে আসো অখানে ব্যাবসা করার অনেক সুজোগ সুবিধা আছে । আমার ও সব সময় বাইরে যাওয়ার বেপারে খালি মন টানে । সাথে সাথে লুফে নিলাম তার প্রস্তাব , আর কিছু না হোক দুবাই তো দেখা হবে । কিন্তু যেতে গিয়ে বুঝলাম দুবাই যাওয়া এতো সোজা কথা নয় , বাঙ্গালিদের জন্য ভিজিট ভিসা বন্ধ । পরে আমার খালাত ভাই পরামর্শ দিলো এমিরেটস এয়ার এর পেকেজ ভিসা তে যাওয়ার জন্য । গেলাম এমিরেটস এর গুলশান অফিসে ওরা আমার পাসপোর্ট দেখে বলল ভিসা হবে কিন্তু ইন্টারনেশনাল ক্রেডিট কার্ড লাগবে , ক্রেডিট কার্ড ছারা নাকি ভিসা হবেনা । আমি ক্রেডিট কার্ড দেয়ার পর তারা সর্ব সাকুল্যে আপডাউন টিকেট সহ ২দিন তিন রাতের ফাইভস্টার হোটেল এর ভাড়া বাবদ ৮০,০০০ টাকা কেটে রাখলো । তার পর ২ দিন পর ভিসা পাসপোর্ট হাতে হাতে দিয়ে দিলো ।
আমি জানি না আমার ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে । আমি নির্ধারিত দিন এর ঠিক সময় মত এসে আমি এয়ার পোর্টে হাজির , রাত ১০ টায় আমার ফ্লাইট ।
দুবাই টাইম রাত ২ টার সময় আমি দুবাই তে হাজির । ইমিগ্রেসন কম্লিট করতে ১০ মিনিট সময় নিলো তার পর বের হলাম সেই সপ্নের শহরে । বের হতেই দেখি ফাইভ স্টার হোটেল থেকে মার্সিডিজ গাড়ী এসে হাজির আমাকে নেয়ার জন্য । কিছুক্ষন পরেই হাজির হলাম দি কান্ট্রিক্লাব হোটেলে , খালাত ভাইকে ফোন দিতেই সেও এসে হাজির হলো । আমি জানতাম না তার বাসা পাসাপাসি । একটু ফ্রেস হয়ে এসে ভাই এর বাসায় গেলাম খাওয়ার জন্য । ভাইয়া, ভাবি আমাকে হোটেলে থাকতেই দিবেনা তার পর ও চলে আসলাম হোটেলে , এতো টাকা দিয়ে হোটেল নিয়েছি টাকার মায়াতে চলে গেলাম হোটেলে ।
কিন্তু গরিব এর কি ঘুম হয় ফাইভ স্টার এর বিছানাতে । ঘুম না ঘুম দিয়ে রাত কেটে গেলো , পরের দিন সকালেই ভাইয়ার ড্রাইভার এসে নিয়ে গেলো ।সারাদিন বিভিন্ন যায়গায়তে ঘুরলাম দেখলাম , দুবাই এর প্রথম ধাক্কা খেলাম বিকালে হোটেলে ফেরত এসে। রুম এর দরজা খুলেই দেখলাম ১০০০ দিরহাম এর মদের বিল । অথচ আমি সিগারেইট পর্যন্ত চেখে দেখিনি । গেলাম রিসিপ্সনে ওরা বলল রুম এর মিনি বার এর যা ড্রিঙ্ক ছিল তা খেয়ে শেষ করেছি তাই বিল দেয়া হইছে । ওরা কোন ভাবেই মানবেনা । ওদের অনেক করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম আমি ওসব খাইনা তাদের বুঝাতেই পারলাম না । শেষে বিল দিয়ে বিদায় নিলাম ভাইয়ার বাসার উদ্যেশে।
২ দিন পর আমি আর ভাইয়া মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে বেবসা করবো , টাকা উনি দিবেন । আমি উনার টাকা ফেরত দিবো দেশে আমার কোন একটা জমি দিয়ে । কে জানতো খালি ধোকা আর ধোকা । বেবসা মানে ক্লিনিং কোম্পানি সব আমার নামেই থাকবে আমি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো । স্পন্র ও হলো উনার ভাই এর পরিচিত ।নাম হোসেইন আল রেসাই । আজমান পুলিশ এর কর্তা । লাইসেন্স হলো খরচ হল আরবাব (স্পন্সর ) এর টাকা সহ ৬০,০০০ হাজার দিরহাম । লাইসেন্স কম্পলিট করে দিলো দেরা দুবাই ফিরোজ আল মুরার এর আলী ভাই । উনি ইন্ডিয়ান কেরালাইট মুস্লিম , উনি টাইপিং সেন্টার এর মালিক , দুবাই তে যারা থাকেন তারা জানেন যে সরকারি সব কাজ টাইপিং সেন্টার এর মাধ্যমে হয় । আমার ভিসা ফুরিয়ে আসছে আমাকে বেক করতে হবে এবং দেশে গিয়ে পরে কোম্পানি পার্টনার ভিসায় আসতে হবে ।এর মধ্যে দেশের বেবসাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি বলে দেশ থেকেও ফোন আসতে ছিল , এর মধ্যে যখন আমার পার্টনার ভিসার বেপারে আলী ভাই এর কাছে গেলাম তখন আলি ভাও আমাকে বলল আমার ভিসার ডিপোজিট দিতে হবে হবে ১০০০০ দিরহাম তখন উনাকে বললাম আলি ভাই আমি লাইসেন্স করা বাবদ ৬০ হজার খরচ করেছি আবার ১০,০০০ হাজার । আলি ভাই বলল ৬০ হাজার মানে আপনার লাইসেন্স বাবদ ত খরচ হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার , আমাকে সমস্ত কাগজ পত্র দেখালো । আমি কি বলব আর কি করব বুঝে উঠতে পারলাম না । আরো বলল তুমি তো নতুন আসছো তাই তুমাকে বলি তুমার ভাইদের কাছ থেকে দূরে থাকো , তা না হলে সবাই তুমাকে তুমার ভাই দের মত মত মনে করবে । আমার ভাই রা কেমন তা ইতিমধ্যে আপনারা বুঝে গেছেন । আরো কত দেখবো তা খালি বাকি আছে । আলি ভাই কে বললাম আমি দেশে চলে যাচ্ছি আপনার কাছে যদি টাকা পাঠিয়ে দেই উনি আমার ভিসা করতে পারবে কি না উনি বললো তুমার স্পন্সর যদি আসে তাহলে করতে পারবো । তখন উপায় না দেখে আবার খালাত ভাই দের কাছে সরনাপন্ন হলাম আমার ভিসার বেপারে , যেহেতু স্পন্সর আমার ভাই দের লোক ।
আমি যে ভাই এর কথা লিখছি সে ভাই এমন ছিল না দেশে থাকতে বা হয়তো ছিল আমি বা আমার ফেমিলি জানতো না । তবে আমি যতদিন দেশে দেখেছি উনি সৎ ছিলেন , উনি উদিচি করতেন । উনার সাথে আমি নিজেও উদিচি করতাম । উনাকে খারাপ হতে দেখিনি কোন্ দিন ।
দেশে ফিরে আসলাম । একবার ভাবলাম যা করার করেছি যাবনা আর , আর একবার ভাবলাম যাই শেষ দেখে ছারি । পরে আমার ফেমিলি থেকে সিদ্ধান্ত দিল প্রতি মাসে একবার করে যাবা , আর কোম্পানি টা যেভাবেই হোক দাড় করাবা । এর মধ্যেই যে শুনে দুবাই তে কোম্পানি করেছি সেই বাহবা দিতে থাকে , আর বলতে থাকে দুবি তে কোম্পানি । এর মধ্যে আমার ভাইরা আমার ভিসা পাঠিয়ে দিল আর তাগাদা দিতে থাকল তারা তারি আসতে , যে আমি না গেলে লেবার কার্ড হবেনা ইমিগ্রেসন কার্ড হবেনা । আর না হলে লেবার নিতে পারবো না ।
দেশের কাজ শেষ করে আবার রওনা হলাম দুবাই এর উদ্যেশে , কিন্তু এবার নিজের ভিসাতে । এয়ার পোর্টে এসে দেখি গাড়িও হাজির । কে জানতো আমার কোম্পানি দেখিয়ে তারা আদম বেপারিদের কাছ থেকে অলরেডি কয়েক লক্ষ টাকার উপর নিয়ে ফেলেছে । রিতিমত আদম দের এজেন্ট রা ওদের বাসায় যাওয়া আসা শুরু করেছে । যখন বুঝতে পারলাম তখন আমি ওদের জাল থেকে বের হয়ে আস্তে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পারছিলাম না । কারন কোম্পানি চালু করতে প্রথম যা দরকার তা হল কোম্পানি লেবার । তা আনতে হবে । আমি অনেক চেষ্টা করেও আদম দের আমার কাছে ভিরাতে পারছিলাম না । এর ওদের মানসিক ব্লেক মেইল , ওরা অনেক টাকা নিয়ে ফেলেছে , ভিসা না দিলে ওরা দুবাই থাকতে পারবেনা । আরো অনেক কিছু । পরে সম্মতি দিলাম ঠিক আছে আমি আপনাদের কাছ থেকে লোক নিবো । কিন্তু সর্ত হচ্ছে সব লোক শিক্ষিত হতে হবে , আর কোন লোক এর কাছ থেকে বারতি টাকা নেওয়া যাবেনা , কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি । আমি এর মধ্যে আলি ভাই এর ওখানে প্রতিদিন বসি আর পি আর ও এর কাজ শিখি । আলি ভাই ও আমাকে খুব হেল্প করছে । কিন্তু সমস্যা হল আমার কোম্পানির লেবার কার্ড হচ্ছে না , কারন আমার স্পন্সর এর নামে জরিমানা আছে ( দুবাই তে সব কিছু অনলাইন সিস্টেমে চলে , ১০০% ই গভ চালু ওখানে )পরে আলি ভাই বললো আমার ভালো ওয়াস্তা আছে তুমাকে পরিচয় করিয়ে দেই তুমি ওকে দিয়ে সব কাজ করাতে পারবে । তখন জানলাম দুবাই তে ঘুষ দুর্নিতি আমাদের থেকে অনেক অনেক বেশি কিন্তু গোপনে গোপনে ওয়াস্তা দের মাধমে (ওয়াস্তা হল ততবির কারি ) আমাদের সাথে পার্থক্য হল আমরা ঢোল পেটাই ওরা পিটায় না । কিন্তু সব ক্ষেত্রে সিস্টেমিকেলি চলে । পরে ওয়াস্তার মাধ্যমে আমার লেবার কার্ড চলে এলো । এখন লোক নেয়ার পালা আমি তখন ও জানতাম না লোক নিতে কত লাগে বা লেবার ভিসা করতে কত লাগে কারন আলি ভাই এর অখানে বেশির ভাগ ইন্ডিয়ান কোম্পানির মালিক আসে । বাঙ্গালি উনার ওখানে আসে না বললেই চলে ।আর আমি জানতাম না বাঙ্গালি ভিসা আর বাঙ্গালি কোম্পানির ক্ষেত্রে এখানে পাকিস্থানি আর ইন্ডিয়ান দের অনেক পার্থক্য । যেখানে ইন্ডিয়ান , পাকিস্থানিদের ভিসা করতে ১০০০ – ৪০০০ টাকা খরচ হয় সেখানে বাংলাদেশি দের ক্ষেত্রে খরচ হয় ৬৫০০ দিরহাম আর যদি ঘুস লাগে সে ক্ষেত্রে আরো ১০০০ হাজার টাকা বেড়ে যাবে । নিচে একটা ছক দেয়া হল তাহলে আপনাদের এক্তা ধারনে হয়ে যাবে , সেই ক্ষেত্রে আপনার ভাই বা পরিচিত কেও গেলে আদম দের কে বুঝতে পারবেন ওরা কত চসম খোর ঃ
দুবাই টাকা দিরহামে এর হিসাবে =
দেশ কোম্পানি ব্যাংক গেরান্টি পটাকা (আইডিকার্ড ) আনুসাংগিক
ইন্ডিয়া বাংলাদেশি ছারা ০- ৩০০০ ১০০০ ৪৮০
পাকিস্থান ঐ ০-৩০০০ ১০০০ ৪৮০
বাংলাদশ ঐ ৩০০০ ৩০০০ ৪৮০
এখানে বাংলাদেশি কোম্পানি আর অন্য সব কোম্পানি এর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য কারন ওরা প্রথম থেকে এ গ্রেড এর কোম্পানি থাকে আর আমরা বাংলাদেশি কোম্পানি গুলো আদম বেবসা বা আদম দের খপ্পরে পরে সি গ্রেড এর কোম্পানি হিসাবেই থেকে আর কুটনৈতিক কারনে আমাদের দেশের প্রতি বছর শত কোটি টাকা অবৈধ ভাবে দুবাই গভ এর পকেটে চলে যায় ।
চলবে