somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মিনিটের মোরাল গল্প- সুখের ঘুড়ি

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্রষ্টা বললেন- হে মানুষ বলো তোমাদের কি চাই। ঐ যে দেখো এক মাঠ। সেখানে রয়েছে একই রঙের ,একই আকৃতির অনেকগুলো ঘুড়ি। যাও সেখানে গিয়ে তোমরা যার যার ঘুড়িতে তোমাদের নাম লিখে রাখো। আর নামের পাশে লিখো তোমাদের কার কি চাই ?

স্রষ্টার নির্দেশনা পেয়ে প্রথম মানুষের দল মাঠে গিয়ে একেকটা ঘুড়িতে একেকজন নিজেদের নাম লিখে। এরপর নামের পাশে লিখে সুখ, শান্তি, শিক্ষা, সৌন্দর্য্য, বিত্ত, ক্ষমতা, সন্তান, পরিবার, বন্ধুত্ব ইত্যাদি। একই রকমের শত শত ঘুড়ি আকাশে উড়তে লাগলো।

স্রষ্টা বললেন- এবার ঘুড়ি'র নাটাই ছেড়ে দিয়ে এখানে আসো। ভয় নেই ঘুড়িগুলো কোথাও যাবেনা। ওরা ওদের মতো করে উড়ুক। কিছুক্ষণ পর স্রষ্টা বললেন- যাও যার যার নাম লিখা ঘুড়িগুলো নামিয়ে নিয়ে আসো, তোমাদের যার যা ইচ্ছা ঘুড়িতে লিখা আছে, তাই তোমাদের পূর্ণ হবে।

মানুষগুলো এবার মাঠে এলো । এখন আকাশে দেখে ঘুড়িগুলোর আর একই রঙের নেই, নেই একই আকৃতির। সবগুলো ঘুড়ির যেন আলাদা আলাদা রঙ। আলাদা আলাদা আকৃতি।

মানুষগুলো মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে। মাঠের এদিক থেকে অন্যদিকে যায়। এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এই বুঝি পেয়ে গেলো নিজের সুখের ঘুড়িখানা। নাটাইয়ের সুতো টেনে টেনে নীচে নামিয়ে দেখে ঘুড়িতে অন্য জনের নাম। আবার ছেড়ে দেয় আকাশে। ঘুড়ি আগের মতো ওড়তে থাকে। শুরু হয় ছুটোছুটি । কেউ কারো ঘুড়ি যেন আর চিনতে পারেনা। মানুষগুলো সুখের ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়। ছুটতে গিয়ে একজনের সাথে আরেকজনের ধাক্কা লাগে, কথা কাটাকাটি হয়, মারামারি হয়, হৈ চৈ হয়, উত্তেজনা বাড়ে।

এরিমাঝে হঠাৎ করে কেউ আকাশ থেকে ঘুড়ি নামিয়ে যখন দেখে নিজের নাম তখন আনন্দে আত্মহারা হয়।এতে অন্যদের জ্বালা আরো বাড়ে। তখন কৌশলে বাকি সবাই মিলে ওর নাটাইয়ের সুতো কেটে দেয়। ঘুড়ি তখন আবার আকাশে অন্য ঘুড়ির সাথে মিশে যায়। লোকগুলোর ছুটোছুটি আর শেষ হয়না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস লোকগুলো ঘুড়ির পেছনে এভাবেই দৌড়াতেই থাকে।

একদিন ওরা দেখে মাঠের এক কোণে শান্ত, ধীর, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক বয়োজ্যেষ্ঠ লোক। উনি চেয়ে চেয়ে আকাশে ঘুড়ির খেলা, আর নীচে অবিশ্রান্ত কোলাহলমুখর মানুষের অস্থির ছুটোছুটি দেখেন।

উনি এবার দাঁড়িয়ে বলেন- হে ভাইয়েরা অনর্থক এভাবে ছুটোছুটি করছো কেন? তোমরা যা করছো, তাতে সারা জীবন ছুটোছুটি করবে , কিন্তু কেউ নিজের সুখের ঘুড়ি খুঁজে পাবেনা। আমার কথা শুনো ভাইয়েরা।

উনি নাটাইয়ের সুতো ধরে একটি ঘুড়ি নামান। ঘুড়িতে একজনের নাম দেখে তিনি জোরে ডাকেন। নাম শুনে লোকটি দৌড়ে এসে পাশে দাঁড়ায়।
উনি লোকটিকে বলেন- এবার তুমি আরেকটি ঘুড়ি নামাও।
লোকটি বলে- আমি কেন অন্যের ঘুড়ি নামাবো?আমার ঘুড়িতো আমি পেয়েই গেছি।

বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি বলেন- তোমার ঘুড়ি পাওয়ার শর্ত হলো- তুমি আরেকটি ঘুড়ি নামিয়ে সেটাতে যার নাম লিখা তাকে পৌঁছে দিবে।
বয়োজ্যেষ্ঠের কথা মতো লোকটি আরেকটি ঘুড়ি নামায়। সেখানে দেখে অন্য জনের নাম। নাম ঘোষণার সাথে অন্য লোকটিও দৌড়ে আসে।

এবার বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি বলেন- শুধু খামোখা নিজের ঘুড়ি খুঁজছো বলেই এভাবেই ছুটোছুটি করছো। কিন্তু ঘুড়ির নাগাল পাচ্ছোনা। কিন্তু তা না করে যদি সবাই যে ঘুড়িটি নামাও সেখানে যার নাম লিখা তাকে পৌঁছে দাও তাহলেতো সবাই যার যার ঘুড়ি অতি সহজেই পেয়ে যায়।

ওরা বলে -আপনি কে?
আমি হলাম "নিঃস্বার্থ স্থির প্রাগ্গ বিশ্বাস, ভালোবাসা"

তো আপনি কিভাবে বুঝলেন-এভাবেই সবাই সবার সুখের ঘুড়ি পেয়ে যাবো।

কারণ-একদিন এই মাঠে আমিও তোমাদের মতো সুখের ঘুড়ির পেছনে আজীবন ছুটেছিলাম। আমাদের মাঝেও ছিলো শুধু আত্মকেন্দ্রিকতা। অন্যের ঘুড়ির কথা চিন্তাই করিনি। শুধু নিজেরটা চিন্তা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। স্বার্থপরতা ছিলো, অবিশ্বাস ছিলো, অস্তিরতা ছিলো, ঘৃণা ছিলো।

তারপর একদিন মাঠের পাশে দেখলাম, ছোট একটি টিকটিকি। একটা বেতকাটায় দুপা আটকে পড়ে আছে। প্রাণ আছে কিন্তু নড়তে পারছেনা।
দিন যায়। টিকটিকিটা দেখি। ভাবলাম-এই টিকটিকি না খেয়ে এভাবে বেঁচে আছে কিভাবে?

এরপর একদিন দেখি এক অবাক করা ব্যাপার। একটা লাল বর্ণের বিদঘুটে গিরিগিটি টাইপের একটা প্রাণী মুখে খাবার নিয়ে এসে তারপর টিকটিকিটির মুখে তোলে দেয়। টিকিটিকি গিরিগিটির মুখ থেকে খাবার খেয়ে কী সুন্দর বেঁচে আছে।( জাপানে ভূমিকম্পের পর একটা বিল্ডিং এ এরকম ঘটনা ঘটেছিলো)।

ঘটনাটি আমাদের জীবনকে পাল্টে দেয়। এতোদিন এ কি করছি আমরা। সমস্ত স্বার্থপরতা ঝেড়ে ফেলি। ঘৃণা মুছে যায়। যে ঘুড়িটি নামাই সেখানে যার নাম লেখা তাকে পৌঁছে দেই। আমরা পেয়ে যাই আমাদের সুখের ঘুড়ি ধরার সূত্র। আমরা বুঝি, নিঃস্বার্থ হওয়াটাই সুখের প্রথম সূত্র।

বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটি নিজের কথা শেষ করে আপনমনে হেঁটে হেঁটে চলে যান। মাঠ একসময় খালি হয়। এরপর আবার আরেকদল মাঠে আসে। আবার সুখের ঘুড়ির পেছনে নতুন দলের ছুটোছুটি শুরু হয়। আর যতদিন ওরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে শুধু নিজের সুখের ঘুড়ি খুঁজবে, ততদিন ওদের ছুটোছুটি এভাবেই চলতে থাকবে।
A srory of same theme
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩০
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×