3055
2:45 pm
ক্রিসমাস ইভ, Hofsjökull গ্লেসিয়ার, আইসল্যান্ড। কেবিন থেকে বেরিয়ে এল যুবক। নর্থ আটলান্টিকের হিমশীতল বাতাস হু হু করে বয়ে চলেছে। কান পাতলে সমুদ্রের মৃদু গর্জন শোনা যায়। দিগন্তের ম্লান আলোতে সামনের আইসবার্গটা দেখা যাচ্ছে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে চেষ্টা করলো, দমকা বাতাসে সাথে সাথে আগুন নিভে গেলো, একবার ,দুবার, তিনবার...হ্যাঁ এবার সে সফল হয়েছে। একরাশ ধোঁয়া উড়িয়ে সে চেয়ে রইলো দিগন্তের দিকে, চোখ মুখে এক অদ্ভুত শূন্যতা।
কেবিনে ঢুকলো সে। সামনে একপাশে পড়ে রয়েছে Roland কী-বোর্ডটা, তার অন্যতম প্রাইজড পজেশন। স্বল্প পরিসরের ভিতরেই বিক্ষিপ্ত পায়চারি চললো কিছুক্ষন। একসময় গিয়ে বসলো কী-বোর্ডের সামনে, Grand Piano তে সাউন্ড সেট করা। অন্যমনস্ক আঙুলগুলো চলে বেড়াচ্ছে,টুংটাং আওয়াজ.....মনের পর্দায় ভেসে আসছে একটা কমনীয় মুখ, তারপর একটা ক্র্যাশিং আওয়াজ, আগুনের লেলিহান শিখা......বারবার সুর কেটে যাচ্ছে।
মনে পড়ছে ভিয়েনায় কনজারভেটরীতে গিয়ে প্রথম পরিচয়ের কথা, যেদিন দুজনে নিজের অজান্তেই একই জিনিস বাজাচ্ছিলো, একজন পিয়ানোতে আরেকজন ভায়োলিনে। সমতান শুনে দুইজন একজন আরেকজনের দিকে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে তাকিয়েছিল, সেইদিন স্টেলার চোখে যে দ্যুতি দেখেছিল সে অনির্বচনীয়। তারপর পরের তিনটে মাস যেন স্বপ্নের মত কেটে গিয়েছে। সেই রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরগুলোতে ভিয়েনার স্ট্রিটগুলো চষে বেড়ানো,মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে রাস্তাতেই বসে পড়া, ছুটিতে সুইস আল্পসে স্কিইং করতে যাওয়া, গ্র্যাজুয়েশনের পর ভবিষ্যতে একটা অর্কেস্ট্রার পরিকল্পনা!
আনমনে ল্যাপটপটা আনফোল্ড করে যুবক, বেজে উঠলো Bach এর ভায়োলিন কনসার্টো, বেহালার প্রতিটা সুর যেন হৃদয়তন্ত্রী ছিড়ে দিচ্ছে।
পরিকল্পনা ছিলো ক্রিসমাসে কিছুটা সময় দুজনে একান্তে কাটাবে, তারপর ভিয়েনায় ফিরে যাবে তাদের সংগীতালয়ে, নতুন কোন কালজয়ী সুরের সৃষ্টির প্রত্যাশায়......মাঝপথে একটা যান্ত্রিক গোলযোগ, প্লেন ক্র্যাশ......তারপর আর ভাবতে পারে না যুবক, ভাবে কোনটা বেশি সোনালী ছিলো? স্টেলার চুল নাকি সুইস আল্পসে ভোরের সূর্যরশ্মি??
হঠাৎ রক্তকণিকাগুলোর গতি বেড়ে গেলো!! স্নায়ুতন্ত্রের উপর দিয়ে যেনো একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে, বাতাসে কান পাতলো যুবক। এ এক পাগল করা সুর, মোহময়, ক্রমশঃ দ্রুতলয়ে উঠে যাচ্ছে, হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আবারো কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো যুবক, আকাশে অরোরা বোরিয়ালিসের রংবেরঙের খেলা দেখা যাচ্ছে। আইসবার্গের ওপাশে মনে হচ্ছে প্রাণের উৎসব চলছে, যুবকের চোখে প্রতিফলিত হয়ে স্পর্শ করে গেলো সে উৎসবের দ্যুতি। কানে বাজছে এক অপার্থিব সঙ্গীত, ক্রমশ যেটা ক্লাইম্যাক্সে পৌছাচ্ছে! Ecstacy!!
আইসক্যাপের প্রান্তে এসে দাঁড়ালো যুবক। "প্রিয়তমা, আমি আসছি"! আলতো করে হাত বাড়িয়ে দিলো শূণ্যে.....
কিয়দক্ষণ নীরবতা, আবারো হু হু করে বয়ে চলেছে হিমশীতল হাওয়া........
এক বন্ধুর পরামর্শে আইসল্যান্ডের তরুণ কম্পোজার এর ৩০৫৫ নামের ট্র্যাকটা শুনেছিলাম, মনে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গিয়েছিলো সেটা, এই অনুগল্প সেটারই ফলশ্রুতি......শুভেচ্ছা সবাইকে
3055 (video)