somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

3055....

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

3055

2:45 pm

ক্রিসমাস ইভ, Hofsjökull গ্লেসিয়ার, আইসল্যান্ড। কেবিন থেকে বেরিয়ে এল যুবক। নর্থ আটলান্টিকের হিমশীতল বাতাস হু হু করে বয়ে চলেছে। কান পাতলে সমুদ্রের মৃদু গর্জন শোনা যায়। দিগন্তের ম্লান আলোতে সামনের আইসবার্গটা দেখা যাচ্ছে। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে চেষ্টা করলো, দমকা বাতাসে সাথে সাথে আগুন নিভে গেলো, একবার ,দুবার, তিনবার...হ্যাঁ এবার সে সফল হয়েছে। একরাশ ধোঁয়া উড়িয়ে সে চেয়ে রইলো দিগন্তের দিকে, চোখ মুখে এক অদ্ভুত শূন্যতা।

কেবিনে ঢুকলো সে। সামনে একপাশে পড়ে রয়েছে Roland কী-বোর্ডটা, তার অন্যতম প্রাইজড পজেশন। স্বল্প পরিসরের ভিতরেই বিক্ষিপ্ত পায়চারি চললো কিছুক্ষন। একসময় গিয়ে বসলো কী-বোর্ডের সামনে, Grand Piano তে সাউন্ড সেট করা। অন্যমনস্ক আঙুলগুলো চলে বেড়াচ্ছে,টুংটাং আওয়াজ.....মনের পর্দায় ভেসে আসছে একটা কমনীয় মুখ, তারপর একটা ক্র্যাশিং আওয়াজ, আগুনের লেলিহান শিখা......বারবার সুর কেটে যাচ্ছে।


মনে পড়ছে ভিয়েনায় কনজারভেটরীতে গিয়ে প্রথম পরিচয়ের কথা, যেদিন দুজনে নিজের অজান্তেই একই জিনিস বাজাচ্ছিলো, একজন পিয়ানোতে আরেকজন ভায়োলিনে। সমতান শুনে দুইজন একজন আরেকজনের দিকে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে তাকিয়েছিল, সেইদিন স্টেলার চোখে যে দ্যুতি দেখেছিল সে অনির্বচনীয়। তারপর পরের তিনটে মাস যেন স্বপ্নের মত কেটে গিয়েছে। সেই রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরগুলোতে ভিয়েনার স্ট্রিটগুলো চষে বেড়ানো,মিউজিয়াম ঘুরে দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে রাস্তাতেই বসে পড়া, ছুটিতে সুইস আল্পসে স্কিইং করতে যাওয়া, গ্র্যাজুয়েশনের পর ভবিষ্যতে একটা অর্কেস্ট্রার পরিকল্পনা!

আনমনে ল্যাপটপটা আনফোল্ড করে যুবক, বেজে উঠলো Bach এর ভায়োলিন কনসার্টো, বেহালার প্রতিটা সুর যেন হৃদয়তন্ত্রী ছিড়ে দিচ্ছে।

পরিকল্পনা ছিলো ক্রিসমাসে কিছুটা সময় দুজনে একান্তে কাটাবে, তারপর ভিয়েনায় ফিরে যাবে তাদের সংগীতালয়ে, নতুন কোন কালজয়ী সুরের সৃষ্টির প্রত্যাশায়......মাঝপথে একটা যান্ত্রিক গোলযোগ, প্লেন ক্র্যাশ......তারপর আর ভাবতে পারে না যুবক, ভাবে কোনটা বেশি সোনালী ছিলো? স্টেলার চুল নাকি সুইস আল্পসে ভোরের সূর্যরশ্মি??

হঠাৎ রক্তকণিকাগুলোর গতি বেড়ে গেলো!! স্নায়ুতন্ত্রের উপর দিয়ে যেনো একটা ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে, বাতাসে কান পাতলো যুবক। এ এক পাগল করা সুর, মোহময়, ক্রমশঃ দ্রুতলয়ে উঠে যাচ্ছে, হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আবারো কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো যুবক, আকাশে অরোরা বোরিয়ালিসের রংবেরঙের খেলা দেখা যাচ্ছে। আইসবার্গের ওপাশে মনে হচ্ছে প্রাণের উৎসব চলছে, যুবকের চোখে প্রতিফলিত হয়ে স্পর্শ করে গেলো সে উৎসবের দ্যুতি। কানে বাজছে এক অপার্থিব সঙ্গীত, ক্রমশ যেটা ক্লাইম্যাক্সে পৌছাচ্ছে! Ecstacy!!


আইসক্যাপের প্রান্তে এসে দাঁড়ালো যুবক। "প্রিয়তমা, আমি আসছি"! আলতো করে হাত বাড়িয়ে দিলো শূণ্যে.....

কিয়দক্ষণ নীরবতা, আবারো হু হু করে বয়ে চলেছে হিমশীতল হাওয়া........



এক বন্ধুর পরামর্শে আইসল্যান্ডের তরুণ কম্পোজার এর ৩০৫৫ নামের ট্র্যাকটা শুনেছিলাম, মনে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গিয়েছিলো সেটা, এই অনুগল্প সেটারই ফলশ্রুতি......শুভেচ্ছা সবাইকে

3055 (video)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:০৪
১৪টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×