somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অনন্ত যাত্রা

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তার সাথে কথা বলার সুবাদে যে অধিকারটুকু পাওয়া তার স‍ৎ ব্যবহার আমি করেছিলাম। কথা বলা, ভাল লাগা আর তারপর ভালবাসা। কিন্তু কখনোই বুঝতে পারিনি এমন করে কেও রাস্তার ধুলার মত জীবন থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তার সাথে আমার সর্ম্পক ছিলো প্রায় ৪ বছর। সে ছিল “সাদা গোলাপের রানী যা রাত হলেই ফুটতো।” কিন্তু তার সাথে সর্বশেষ যে রাতে দেখা হয় সেদিন সে ফুটেছিল! তবে অন্য কারো জন্য।
একটা দামি টেক্সিতে করে আমি আসছি, স্থান একটি কমিউনিটি সেন্টার। কারণ একটা বিয়ে? কার? চিন্তা গুলো তখন কেমন জানি ঝাপসা হয়ে গেলো। সময়ও শেষ হলো তখনি যখন গন্তব্য স্থলে উপস্থিত টেক্সিটা। কালো কাচের জানলা দেওয়া টেক্সিটার থেকে বাম পা প্রথমে দিয়ে নামলাম, আমার জীবনে এখন প্রথমে ডান বা বাম পা কি আর বেশি? টাকা দেওয়া শেষ করলাম, ড্রাইভারকে বললাম আপনি কি আমার জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে পারবেন? আমি আবার যাবো, এয়ারর্পোটে। ড্রাইভারটা হয়তো বুঝতে পারলো আবার না।
আমি আস্তে আস্তে ঘুড়ে এক পা, এক পা করে খুবেই সচেতন বা অস্থিতির সাথে এগিয়ে চলছি প্যান্ডেল এর দিকে। বাইরের ‍আলো গুলো এমন ভাবে জ্বলছিলো আর নিভছিলো যেন হাসছে আমায় নিয়ে। তাদের কতই মজা। ভাবলাম মনে মনে।
হাটতে হাটতে এসে পড়লাম দরজার কাছে, বাইরে থেকে দেখলাম দূরে দাড়িয়ে (চেয়ারম্যান) মেয়ের ভাই ওর ছোট ভাইটাকে আমি চেয়ারম্যান বলেই ডাকতাম। কারণ চেয়ারম্যান যেমন একজন থাকে, তার এই একমাত্র ভাই সে কিছু মেয়ের সাথে হাসি আর কথায় ব্যস্ত। আরেকটু দূরে মুখ ঘুড়াতেই দেখলাম তার বোনকে, বোনটাকে আমি পিচ্ছি বলে ডাকতাম। পিচ্ছিটা কত ছোট ছিল, আর এখন কত বড় হল। মনে মনে ভাবলাম এটা কি রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছাপূরণের ম্যাজিক!? আরে নাহ। আরেকটু তার দূরে আব্বু আম্মু আর চারপাশে অনেক অত্নিয়। কিন্তু সবার মধ্যমনি হয়ে বসে আছে তারা একটি মঞ্চের লাল গালিচার উপর, আর সাদা সুতি রেশমি কাপড়ে ঘেরা একটা রাজসিংহাসনের উপর। মনে হলো তারা যেন দুইজন রাজা ও রাণী বসে আছে, তাদের কেমন মানালো? কি জানি? আস্তে আস্তে হেটে হেটে গেলাম মঞ্চের দিকে কেও তো আমায় দেখছে না! কি জানি, আমি কি এখন একটা মৃত অতৃপ্ত আত্মা? আমার দামি বুট গুলো যেন মাটিতে সুপারগ্লু এর মত আটকে যাচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে বুট গুলো তুলে এগিয়ে যেতে। তাও আমি এগিয়ে যাচ্ছি, এমন দিন আমার জীবনে এই প্রথম আর এই শেষ। আমি মঞ্চের সামনে, একজন প্রফেশনার ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে, এমন সময় আমার চির চেনা চোখ গুলো আমার দিকে। স্বভাবতই আমার চোখগুলোও তার দিকে, ফটোগ্রাফার বার বার বলছে ম্যাডাম প্লিজ লেন্সের দিকে তাকান। সে যেন তাকিয়েও চোখ ফেরায় ২টা ছবি দুইবারেই মিস। ফটোগ্রাফার যেন বললো আচ্ছা ছেড়ে দেন। সবাই নেমে গেল মঞ্চ থেকে শুধু বসে রইল দুইজন। আমি আস্তে আস্তে এগুলাম মঞ্চের সিড়ির দিকে, কাঠের সিড়ি আমার বুট গুলো ঠক ঠক শব্দ করছে, যা ওর একদমেই পছন্দ না। ধুর এসব চিন্তা করে এখন আর কি হবে? চারটা সিড়ি উঠতে আমার যেন চার যুগ লেগে যাচ্ছে। কিন্তু নাহ সহসাই শেষ, গেলাম তাদের কাছে দুইজনেই উঠে দাড়াল। সালাম দিল ছেলেটা মুচকি হাসলো, আর সে কি করলো? লক্ষ করিনি ছেলেটার হাসির প্রতি উত্তরে আমি হেসেছিলাম কিনা মনে পড়ছে না।
ছেলের সাথে আমার হ্যান্ডশ্যাপ হল আর তারপর..............
আমি ‍ঃ অভিনন্দন
ছেলে ‍ঃ ধন্যবাদ
আমি‍ঃ আপনি অনেক সৌভাগ্যবান এমন কেও জীবনে পেয়েছেন। তাকে কোন দিন কষ্ট দিবেন না। মেয়েটা কাদলে কেও বুঝে না, বা কাউকে বুঝতে দেয় না। আপনি তার কষ্টটা বুঝে চোখের পানি পড়ার আগেই তা মুছে দিবেন।
ছেলে ‍ঃ একটু মুচকি হাসলো, আর তার দিকে তাকাল।
আমি ‍ঃ তার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। অনেক কষ্টে তাকালাম আর জিজ্ঞাস করলাম, “অন্ধকার কেমন আছো?” আমি যেন সেই ঝড়ের রাতের না বলা কথার মায়ায় দিয়ে, দুই দিন বা চার বছরের একটু একটু করে সাজানো একটা বক্তব্য বলে এক নির্মিষেই বলে ফেললাম।
মেয়ে‍ঃ “ভাল”। ২ মিনিট চুপ আবার “ভাল”।
আমি ‍ঃ ছেলেকে বললাম, আপনি কি করেন?
ছেলে ‍ঃ ব্যবসা করি। অনেক বড় ব্যবসা, বিশাল প্রোপার্টি। সব তারেই দেখাশোন করতে হয়।
আমি ‍ঃ তেমন বড় কিছু না, কানাডায় থাকি আর সেখানেই একটা পেট্রোল পাম্পে আছি।
পকেট থেকে প্লাটিনাম এর রিং বক্সটা বের করে দিলাম। ভালবাসা আর আমার উপহারটা রাখবেন। মাথা নাড়িয়ে ছেলেটা সায় দিল।
আমি ‍ঃ আচ্ছা তাহলে আমি আসি, ভাল থাকবেন। সারা জীবন যাতে ভাল আর ভালবাসায় কাটে।
মেয়ে ‍ঃ অবশ্যই খেয়ে যাবা কিন্তু।
আমি ‍ঃ রোজার মাসের একদিন রাতে আমি খাইনি আজো হয়তো তেমন। আর কিছু বলল না।
মঞ্চ থেকে নামলাম চলে যাবো এমন সময় মেয়ের কিছু বন্ধু আমাকে আগে চিনতো তারা খুব কথা, আর আড্ডা শুরু করলো। বিষয়টা যন্ত্রনা দায়ক হলেও ইচ্ছা করেই ১০ মিনিট হজমের পর, সবার অলক্ষেই বের হয়ে আসলাম আমার জীবিত কালের দোজখ থেকে। দেখলাম টেক্সিটা এখনো আছে? বাহ, বাংলাদেশে এখনো এমন লোক আছে? গেলাম বসলাম। ব্যাক মিরর এ ড্রাইভার আমায় দেখলো, বললো কারো বিয়ে ছিল? হুম, ভাই মন খারাপ করবেন না। জীবনটা আসলে এমনেই!!! যারে বেশি ভালবাসবেন সেই দেখবেন চলে যাইব। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ড্রাইভারের ব্যাক মিররের দিকে তার চোখ গুলোও আমার মতই ছলছল করছে। গাড়ি র্স্ট্যাট হল যাচ্ছে এয়ারর্পোট এর দিকে আর আমি ভাবছি, ড্রাইভার এতকিছু কিভাবে বুঝলো? lOG এর অংকের মতো সূত্র ধরে অংক শেষ করলাম, এই পৃথিবীতে ‍আমিই একা না আরো অনেকেই আছে।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×