somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামীদের হ্যাঁ বলুন এমন প্রচারণা কবে নাগাদ শুরু হবে বাংলাদেশে?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষ কেনো সমকামী হয়- এই প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ে বিতর্কের অবসান হবে না।
সমকামীতা কি শাররীক কোনো দায়? জিনঘটিত কারণ উদঘাটনের প্রচেষ্টা থেকে এমনটাই অনুমিত হয় যে সমকামী সমর্থক গোষ্ঠী চেষ্টা করছে এটাকে জীবের স্বাভাবিক বিচ্যুতি হিসেবে প্রমাণ করতে। শিম্পাঞ্জীর সমগোত্রীয় একটি প্রাণী সমকামীতার লক্ষণ প্রকাশ করে, তারা সমলিঙ্গের প্রানীদের সাথে যৌনক্রীড়ায় লিপ্ত হয়।

পুরুষ কিশোরদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে এমন বর্ণনা প্রাচীন সভ্যতাগুলোতেই উপস্থিত। সুতরাং পুরুষ এবং পুরুষের যৌনমিলন তেমন অশ্রুত ঘটনা নয় বিশ্বের ইতিহাসে। নারী এবং নারীর ভেতরে সমকামীতার সম্পর্ক নিয়ে বিশদ কিছু উঠে আসে নি প্রাচীন পুস্তকে- তবে এর কারণ জানা নেই। সম্ভবত যৌনতার ইতিহাসে পুরুষই সবসময়ই সক্রিয় ভুমিকা পালন করতো বলেই নারীকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয় নি, যৌনতার ইতিহাসও পুরুষকতৃক লিখিত, তাই সেখানে নারীর সমকামীতা তেমনভাবে চিত্রিত হয় নি।

সমাকমীতা কোনো মানসিক ব্যধি? তবে বাংলাদেশের সামাজিক নীতি অনুসারে এটা যৌনবিকৃতি, মানসিক বিকৃতির উদাহরণ। এখানে স্বাভাবিক যৌনসম্পর্ক বিবেচিত হয়ে থাকে পুরুষ নারীর মিলন। এর থেকে ব্যতিক্রম কিছুই বিকৃতি চিহ্নিত হয়।

মানুষের যৌনতার বোধের উন্মেষের সাথে সাথে কি তার যৌনআনতি নির্দিষ্ট হয়ে যায়? ঠিক কত বয়েসে মানুষ নিশ্চিত ভাবে ঘোষণা করতে পারে সে সমলিঙ্গের কোনো ব্যক্তির প্রতি প্রবল যৌণাকর্ষণ বোধ করছে।

আই থিঙ্ক আই এম এ গে পর্যায় থেকে ইয়েস আই এম ডেফিনিটলি গে পর্যায়ে যেতে একটা মানুষের কতদিন প্রয়োজন হয়।

তবে অধিকাংশের অভিমত তারুণের শেষ পর্যায়ে অন্তত মানুষ উপলব্ধি করে সে তার লিঙ্গের অন্য সব মানুষের তুলনায় একটু ব্যতিক্রম, তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোনো যৌনাকর্ষণ নেই। এই বয়েসটা টেনে নীচে নামাতে নামাতে ১৬ র কোঠায় আনা হয়েছে।

সাম্প্রতিক হুজুগে অন্তত ১৬ বছর বয়েসী ছেলে-মেয়েরা নিজেদের সমকামী ঘোষণা দিচ্ছে। ব্যতিক্রম হলো লরেন্স কিং বলে এক বালক, যে ১৪ বছর বয়েসে নিজেকে সমকামী চিহ্নিত করে এবং নিজের স্কুলের একটি ছেলেকে এই ভ্যালেন্টাইন'স ডেতে নিজের প্রেমিক হওয়ার অনুরোধ জানানোর পরে সেই ছেলের গুলিতে নিহত হয়।

গতকালই আর্জেন্টিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি বিল উত্থাপন করেছে, সমকামী হওয়ার জন্য যেনো কোনো ব্যক্তি তার মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়- এই দাবি সম্বলিত বিলটির রুপরেখা প্রদান করেছে ফ্রান্স এবং হল্যান্ড যৌথ ভাবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৬ জন সদস্য এই বিলের পক্ষে সাক্ষর করেছে।

এবং সিরিয়া এর বিপরীতে একটি বিল উত্থাপন করেছে এবং এই বিলটিতে সাক্ষর করেছে ৬০টি সদস্য দেশ। তাদের বক্তব্য অনেক দেশের সামাজিক পরিস্থিতই সমকামীতাকে স্বাভাবিক যৌনআনতি চিহ্নিত করতে পারে না।

চুড়ান্ত বিবেচনায় ফলাফল যাই হোক না কেনো, অন্তত জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় সমকামীদের সমান অধিকার থাকবে কি না এটার পক্ষে এবং বিপক্ষে সদস্য রাষ্ট্রগুলো বিতর্ক শুরু করেছে।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমার ধারণা যদি মানুষ সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষিত হয় এবং যার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে ব্যক্তি সেই ব্যক্তি যদি এটাকে গ্রহন করে তবে এটাতে সমাজ- জাত- মান-কূল চলে যাওয়ার কিছু নেই। সমকামি বিয়েকে বৈধ ঘোষণা করার ভেতরে তাবত লিঙ্গই যে আক্রান্ত হয়ে যাবে এমনও না, এটা বিপরীত লিঙ্গের পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহের মতোই একটি বিষয়। নিশ্চিত ভাবেই সামাজিক চেতনা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণেই সমকামী ব্যক্তিরা সবাইকে গিয়ে আকৃষ্ট করবার চেষ্টা করবে না।

তারা নিঃসঙ্গ মানব, বিশেষ করে এমন কোনো এক দেশে যেখানে সমকামীতা সামাজিক ভাবে বৈধ নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যেখানে সমকামীতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড- এমন সব দেশে সমাকমী মানুষেরা নিতান্তই অসহায় এবং নিঃসঙ্গ।

সমকামীতার সমর্থন আমি করতে রাজি, যতক্ষণ না কোনো সমকামী আমাকে তাড়া করছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের প্রতি আমার সমর্থন থাকবে।

ক্রস ড্রেসিং সমকামিতার পরিচায়ক নয় মোটেও, তবে সমকামী হওয়া যদি ফ্যাশন হয়ে যায় তবে সেই হুজুগে অনেকেই নিজেকে সমকামী ঘোষণা দিতে পারে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের মতো নির্বোধদের দেশে, যেখানে সবই ফ্যাশনের হুজুগে চলে।

সমকামীদের প্রতি সমব্যাথী হয়ে উঠবার একটা হুজুগ চলছে বিশ্বে- তারই প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘেও এদের অধিকারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে। তবে সমকামী হওয়ার কারণে যদি কাউকে বঞ্চিত করা হয় কিংবা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও একজন সমকামীর বদলে একজন সাধারণ ব্যক্তিকে যদি অধিকতর সুবিধা দেওয়া হয়- এই বঞ্চনার বিরুদ্ধেই আদতে বিলটি। যেনো কোনো ব্যক্তি তার যৌনআনতির জন্য বঞ্চিত না হয় আইনগত অধিকার থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় সমকামীদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়েছিলো আদালতে, এই রায় ঘোষণার পরে প্রায় ১৮ হাজার সমকামী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারা আদালতের রায়ের কারণেই দত্তক নেওয়ার অধিকার পায়, মেয়ে সমকামীরা নিজের সন্তান নেওয়ার এবং সেই সন্তান লালন পালনের অধিকার অর্জন করে। অন্যান্য বিবাহিত দম্পতি যেসব রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করে, এইসব সুবিধাও সমাকমী দম্পতিরা পাওয়ার অধিকার রাখে, এমন আইনি অধিকার প্রদানের পরে নভেম্বরের ৪ তারিখে পৃথক ব্যলটে সমাকমী বিবাহ আইনসম্মত হওয়া উচিত কি অনুচিত এই নিয়ে একটি গণভোট হয়, এবং ক্যালিফোর্ণিয়ার জনগণ এটার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করে ঘোষণা করে সমকামী বিবাহ আইনসিদ্ধ হওয়াটাকে তারা সমর্থন করে না।

এই রায়ের ফলে ইতিপূর্বে যেই ১৮ হাজার সমকামী দম্পতি বিবাহ করেছে, তাদের বিবাহ কি বাতিল গন্য হবে না কি এটা বৈধ বিবাহ থাকবে এই নিয়ে বিতর্ক চলছে সেখানে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস এবং কানেকটিকাটেই সমকামী বিবাহের আইনগত বৈধতা আছে। অন্য সব স্টেটগুলোতে এটা হয় নিষিদ্ধ কিংবা এখনও গণভোটের অপেক্ষায় আছে এসবের বৈধতা ও অবৈধতা।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি? বাংলাদেশে এখনও বিষমলৈঙ্গিক বিবাহকেই আদর্শ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, বাংলাদেশ সমকামীদের বিকৃত মানসিকতার কিংবা মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করে। আইনগত বৈধতা নেই এই বিয়ের।

প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে কি সমকামী নেই? বাংলাদেশের কোনো উঠতি কিশোর কিংবা কিশোরি কি হঠাৎ করেই নিজের এই বৈচিত্র উপলব্ধি করতে পারে না?

অবশ্য সামাজিক কারণে কিংবা ধর্মীয় ন্যয়বোধ সংক্রান্ত জটিলতায় অনেকেই এটাকে লুকিয়ে রাখতে চায় কিংবা এটাতে অসস্তি বোধ করে- কিংবা এটা কোনো একটা অসুখ এমনটাই ধারণা করে- এই অসস্তির বোধ নিয়েই তারা জীবনযাপন করে, সুখী দাম্পত্যে জড়িত হতে পারে।

সমকামী মানুষকে যদি আইনী অধিকার প্রদান করা হয় বাংলাদেশে তবে
বাংলাদেশের সমাজে কতজন স্বাধীন ভাবে ঘোষণা করবে তারা সমকামী এবং এমন একজন কি পাওয়া যাবে যে এই অধিকার অক্ষুন্ন রাখবার জন্য আদালতে উপস্থিত হবে? বাংলাদেশের মতো রক্ষণশীল সমাজে এমন একটি ঘটনা নিশ্চিত ভাবেই মাইলফলক বিবেচিত হবে এবং উল্লেখিত ব্যক্তি নিশ্চিত ভাবেই আন্তর্জাতিক প্রচারণা পাবে এবং চাইলে ফ্রান্স কিংবা হলান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে।
৩৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×