somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকা: এরপর পদ্মা মেঘনা যমুনায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। মুজিবের প্রতিশ্রুত ৩ বছরও পেরিয়ে গেল। ভয়ঙ্কর হতাশা, নৈরাজ্য, অর্থনৈতিক সংকট ঘিরে বসল গোটা জাতিকে।

২৮ শে মে, ২০০৭ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এরপর পদ্মা মেঘনা যমুনায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। মুজিবের প্রতিশ্রুত ৩ বছরও পেরিয়ে গেল। ভয়ঙ্কর হতাশা, নৈরাজ্য, অর্থনৈতিক সংকট ঘিরে বসল গোটা জাতিকে। গলাবাজি আর সন্ত্রাস দিয়ে বিবেকবান প্রতিবাদী মানুষের কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা অব্যাহত থাকল। কিন্তু তবু মুজিব ধুমায়িত গণ-অসন্তোষকে ঢাকতে ব্যর্থ হল। পনের আগস্ট সূর্য ওঠার আগেই সুপ্তোত্থিত মোহমুক্ত দেশপ্রেমিক সৈনিকদের গুলীতে মুজিবের বুক বিদীর্ণ হল। তার খুন আর লাশের ওপর পা দিয়েই সম্ভবত সেদিন এদেশে সূর্যোদয় হয়েছিল। বুক ভরা নিঃশ্বাস নিয়েছিল এদেশের কোটি কোটি মানুষ। সেদিন তার ঠ্যাঙারে বাহিনী লাল নীল বিচিত্র বাহিনী তার সমর্থক জালেম লুটেরার দল ভীরু শৃগালের মত লকিয়ে ছিল অন্ধকার গহ্বরে। সেদিন বাঙালীর চোখে অশ্রু নয় উল্লাসের হাসি দেখেছিল পৃথিবী।

আমরা কারাগার থেকে জাতীয় জীবনের এই নাটকগুলো নীরব দর্শকের মত দেখলাম। বোবা শ্রোতার মত শুনে গেলাম অনেক কিছু। আমাদের কি করণীয় আছে? একাত্তরে আমাদের বিবেক আমাদের সত্তা সব শেষ হয়ে গেছে। আমাদের হাত আছে হাতয়ার নেই তূন আছে, তীর নেই।

কারাগার ছিল একটি নাট-মঞ্চ। দৃশ্যপট বদলের সাথে সাথে এই মঞ্চে আসতে শুরু করল নতুন নতুন মুখ। প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, দলনেতা, কর্মী ও অনেকেই। যারা এইমাত্র ক্ষমতাসীন ছিলেণ তাদেরও ঠিকানা হল এই কারাগার। কালের সাক্ষী হয়ে আমরা সবকিছু দেখেছি। এই কারাগারে ডান, বাম, মধ্য সবপন্থী নেতা ও উপনেতাদের পেয়েছি তাদের অনেকের সাথে অন্তরঙ্গ আলাপ হয়েছে। স্মৃতি থেকে যতটুকু পেরেছি, আমার এই সাজান স্বরলিপিতে টেনে আনার চেষ্টা করেছি। এর বাইরেও রয়েছে অনেক কিছু। পরবর্তীতে তুলে ধরার আশা রাখি।

অনেক দেরী হয়ে গেছে। কারাগার থেকে বেরিয়ে আমার সামনে নিñিদ্র অন্ধকার ছাড়া অবশিষ্ট কিছু ছিলনা। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। স্মৃতি রোমন্থনের সময় কোথায়? কারাগারের শেষ দিনগুলোতে এ. কে. এম শফিউল্লাহ ও মোহাম্মদ ফারুক ডায়েরী সরবরাহ করে স্মৃতিগুলো লিখে রাখার জন্য। নৈরাশ্য অথবা আলস্য, যে কারণেই হোক না কেন সেগুলো ঠিকমত লিখে রাখা হয়নি। তবে স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে এখনও অনেক কিছু। এর কিছুটা এই বইটিতে সন্নিবেশিত হয়েছে।

অনেক দেরী হলেও বইটা প্রকাশ করতে পেরে আনন্দিত। অবশ্যি এর জন্য বাকস্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশও অপরিহার্য ছিল। বইটিতে আমার মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। আমি লুকোচুরি রাখঢাক অথবা ডিপ্লোম্যাসির আশ্রয় নিইনি। কাউকে ুণœ করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। কেবল আমার বিশ্বাসকে তুলে ধরেছি। আমার বিশ্বাস অহিপ্রাপ্ত অথবা সমালোচনার উর্ধে এমনটি নয়। নিয়মতান্ত্রিক সমালাচনাকে আমি স্বাগত জানাব।

আমার অতীত জেনে শুনে যে মহিলা আমাকে বিয়ে করেছেন সেই আনোয়ারা খন্দকার বেবীর প্রেরণায় বইটা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। পত্র-পত্রিকার পাতায় পাতায় যেভাবে আলবদরকে বর্বরতার প্রতীক হিসাবে দাঁড় করান হয়েছে, এতে ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নেয়া একজন মহিলার আমার প্রতি বিরূপ ছাড়া অনুরক্ত হওয়ার কোন সঙ্গত কারণ নেই। এমন কোন প্রচুর্যের জৌলুসও আমার ছিলনা। আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের একতরফা বিশ্রী প্রচারণায় প্লাবিত সমাজের একজন হয়েও আনোয়ারা আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে। শুরু থেকে চাপ দিয়ে আসছে আমার অভিজ্ঞতায় নিরপেক্ষ কিছু লেখার জন্য।

তার ভাষায়--‘ইতিহাস তার নিজস্ব গতিধারায় এগিয়ে চলে। একদিন নিরপেক্ষ নির্ভেজাল ইতিহাস লেখা হবে। সেই আগামী দিনের ঐতিহাসিকদের জন্য কিছু তথ্য রেখেযেতে পার।’ আনোয়ারার সাধ কতটুকু পূরণ করতে পেরেছি জানি না। তবে আমার বিক্ষিপ্ত কলমের আঁচড় আলোর মুখ দেখতে পেয়েছে তারই প্রেরণায়--একথা বলতে দ্বিাধা নেই।
২২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×