"রাজনীতি একটা বুলশিট জিনিস।" "বাচ্চা বাচ্চা পোলাপান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবে ক্যান, অইডা তো বুইড়াদের জিনিস।"-এইটা এদেশের তরুণ সমাজের কমন ফিলোসফি। তবে কিছু কিছু তরুণ থাকে যারা ছোটকাল থেকেই একটু আধটু দেশের রাজনীতি নিয়ে ঘাটাঘাটি করে থাকে। সাধারণত তাদের বাবা-মারা এই ব্যাপারটা নিয়ে একই সাথে বিরক্ত ও চিন্তিত থাকেন। এরা আবার মুরুব্বি সমাজে ইঁচড়ে পাকা নামে সুপরিচিত থাকে।
এদেশের মুরুব্বি ও তরুণ সমাজের অনেকেই মতিউর রহমান মল্লিকের নাম শোনেনি। সদ্য শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা দিতেই রাজনীতি তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করতে থাকে।'৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের সময় স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিছিলে ১২ বছরের এই কিশোর ছিল এক পরিচিত মুখ। বারবার তার কণ্ঠ সোচ্চার হয়েছে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে।
'৬৯ সালে ছাত্র জনতার এক বিরাট মিছিল সচিবালয় ঘিরে ফেললে সশস্ত্র পুলিশের সাথে সঙ্ঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশের গুলিতে ১২ বছরের অকুতোভয় মতিউর শহীদ হন।
আগেই বলেছি এরকম রাজনীতি সচেতন ছেলেমেয়েদের পিতামাতা অতিশয় বিরক্ত থাকেন তাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে। কিন্তু সেই সময়ের বাবা-মারা আসলেই শোককে শক্তিতে পরিণত করতে জানতেন। নাহলে সেদিন কিভাবে মতিউরের পিতা বলেছিলেন, "এক মতিউরকে হারিয়ে আজ আমি হাজার মতিউরকে পেয়েছি।"
তৎকালীন ইকবাল হল (বর্তমান জহুরুল হক হল)-এর মাঠে সেদিন হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়। এই মিছিল ও জমায়েত থেকেই '৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের সূচনা হয়।
মতিউরের জন্মদিন ছিল ২৪শে জানুয়ারি। প্রতিবছর ২৪শে জানুয়ারিকে গণ অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী প্রাঙ্গণে এই কিশোর শহীদের নামে স্থাপিত হয়েছে শহীদ মতিউর মঞ্চ।
আজকে যদি মতিউররা বেঁচে থাকতেন তাহলে দেশের বোধহয় এমন অবস্থা হত না। পাকি শুয়োররা এদেশের যে বড় ক্ষতি করে গেছে তা বোধহয় শত বছরেও পূরণ হবার নয়।