"সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে অফিসে যাবার জন্য রেডি হলেন রিপ। বৌ তার বড্ডো খারাপ। সাত সকালে চেঁচিয়ে বাড়ি একাকার করে ফেলে। আজকে চেচানোর বিষয় রিপ কেন সকালে বাজারে যায়নি। রিপ ঘুম থেকে উঠে দেখল বাজারে যাবার মত সময় হাতে নেই। তাই অগত্যা বৌ এর ঝাড়ি শোনা অপেক্ষা না খাওয়া উত্তম মনে করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন।
বাস স্ট্যান্ডে যেয়ে দেখলেন তার মত অনেকেই একটি বাসের আশায় তীর্থের কাকের মত বসে আছেন। কত্তরকম অদ্ভুত মানুষজন, কত্তরকম প্রয়োজন তাদের। অনেক কুতাকুতির পর উঠলেন রিপ। ঢাকার বাসে সিট পাওয়া আর অমাবস্যায় চন্দ্র দর্শন সমার্থক শব্দ বিশেষ। আজকে রিপের ভাগ্য ভাল। কিছুক্ষণ বাদেই তার সাম্নের সিটের ভদ্রলোক উঠে গেলেন। হুড়মুড় করে সেই সিট দখলে নিলেন রিপ।
বাস ফার্মগেট মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক্ষণ হল। আশেপাশে চেয়ে দেখলেন রিপ, বুঝলেন এই জ্যাম ছাড়তে সময় লাগবে। মাথাটি সামনের সিটের সাথে ঝুঁকে পরম আবেশে চোখ বন্ধ করলেন রিপ।
হঠাৎ রিপের ঘুম ভেঙ্গে গেল। আশেপাশে চেয়ে দেখলেন সবকিছু কেমন আমূল বদলে গেছে। যেসব মধ্যবয়স্ক লোক বাসে উঠেছিল তাদের এত্ত বড় বড় দাড়ি, মুখের চামড়াও ঝুলে গেছে। নিজের হাতের দিকে চেয়ে দেখলেন হাতের চামড়া কুঁচকে গেছে। তার নিজের মুখেও ফিনফিনে দাড়ির উপস্থিতি লক্ষ্য করলেন রিপ। হাতের সাদা ফাইলের কাগজ হলদে বর্ণ হয়ে গেছে। চোখ কূচকে বাইরে তাকালেন রিপ। দেখলেন বাস ফার্মগেট মোড় থেকে কেবল কাওরান বাজারের আন্ডারপাসের সামনে আছে। এখনো জ্যামে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেই হতভাগা হেল্পার এখন তরুণ থেকে প্রৌড় হয়েছেন। কিন্তু এখনো বলে বেড়াচ্ছেন, "বরাবর টানেন বরাবর। ঐ গুলিস্তান, সায়দাবাদ, সদরঘাট।" একটা ঘোরের মধ্যে আছেন রিপ। বুঝে উঠতে পারছেন না কি হচ্ছে?
মোবাইল বের করে রিপ দেখলেন মোবাইলটা স্ট্যান্ডবাই থাকতে থাকতেই পটল তুলেছে। একজন পত্রিকাওয়ালার কাছ থেকে একটা পত্রিকা কিনে তারিখের দিকে তাকিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন এরই মধ্যে পার হয়েছে ২০টি বছর আর বাস কেবল ফার্মগেট মোড় থেকে কাওরানবাজারে এসে পৌছেছে।"