ক্লাস শুরুর প্রথম দিক থেকেই আনিকা মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লেগে যায় । এমন ফর্সা ও কিউটি মেয়ে পুরো স্কুল জুড়ে যে একটিও ছিলনা তা আমি হলফ করে বলে দিতে পারি । চাশ্মীশ এই কিউটিটাকে দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায় । তবে আনিকা আমার চেয়ে বেশ লম্বা ছিল । সম্ভবত বয়সে আনিকা আমার চেয়ে বড় হবে । আনিকাই আমার স্কুল জীবনের প্রথম ক্রাশ ছিল ।
মেয়েটাকে নানান ভাবে আমার অনূভূতির কথা জানাতে চেষ্টা করেছি , কিন্তু তার থেকে তেমন কোন সাড়া শব্দই পাইনি । ম্যাডাম যখন বোর্ডে দুষ্টু ছাত্র-ছাত্রদীরে নাম লিখতে দিত তখন অতি কৌশলে আনিকার নামটি এড়িয়ে যেতাম ।
তবুও মেয়েটার মাঝে কোন প্রকার ভাবের পরিবর্তন দেখতাম না ।
যাই হোক , একদিন টিফিন বিরতিতে ক্লাসের সকল ছাত্র-ছাত্রী বাইরে গেল । ক্লাসে তখন আমি আর আনিকা ।আনিকাকে একদম একা পেয়ে আমার বুকটা ধুকপুক করছিল । বারে বারে আড়চোখে আনিকার দিকে তাকাচ্ছিলাম । কিন্তু কিছু্ই মুখ ফুটে বলতে পারছিলাম না ।
সহসা বিধি মুখ তুলে তাকালো আমার দিকে । আনিকা আমাদের ইশারা করে ডাক দিল ।
আর পত্রপাট আমিও এগিয়ে গেলাম ।
-কিছু বলবা ?
এ্যাই , পুচকে তুই আমারে তুমি করে বলছিস ক্যান ? আপনি করে বল ? আমি তোর অনেক বড় ।
আনিকার কথা শুনে আমি তো পুরাই টাস্কি খেলাম । । কী বলব বুঝে বুঝে উঠতে পারছিলাম না । আনিকাই নিরবতাই ভাঙ্গলো ।
--এ্যাই শোন , এই নে- , আমার টিফিন বক্সটা ধুয়ে আন । ভাল করে ঘষে-মেজে ধুয়ে আনবি কিন্তু ।
কী বলে মেয়েটা ? শেষ পর্যন্ত আমাকে দিয়ে তার টিফিন বক্স মাজাবে । তবে তখন তার মুখের উপর আর মানা করতে পারলাম না । সুবোধ বালকের মত ভাল করে গায়ের শার্ট ভিজিয়ে টিফিন বক্সটা ধুয়ে এনে দিলাম ।
এর পর থেকে আমি আর আনিকার দিকে ফিরেও তাকাইনা ।
তো এমন করে বহু দিন চলতে লাগল । আমি আনিকাকে এক প্রকার এড়িয়েই চলছি ।
হঠাৎ একদিন আনিকা নিজের থেকেই ডাক দিল ।
--এ্যাই , পুচকে এদিকে আয়তো ,
আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলাম ।
একদম কাছে গিয়ে বলা শুরু করলাম , ,
--ইয়ে মানে , আনিকা আপু , আমার আজকে খুব ঠান্ডা , জ্বর ও মাথাব্যাথা । আপনার টিফিন বক্সটা আজ কষ্ট করে আপনি ই ধুয়ে নিয়েন ।
আমার কথা শুনে , আনিকা বলে উঠে ,
--আরে নাহ্ , তোকে আজ আর কষ্ট করে টিফিন বক্স ধুতে হবেনা । শোন , তুই আগে খালি আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতিস কেন ? সত্যি কথা বলবি কিন্তু ,
আনিকার কথা শুনে আমি একটু ভয় মত পেলাম । তবে এতটুকু বুঝেছি আনিকা সম্ভবত আন্দাজ করতে পেরেছি । তো এতদিন বাদে যখন সুযোগ পেলাম , তখন আর তাকে হাতছাড়া করছিনা ।
আজকে আনিকাকে মনের কথা জানিয়ে দিতেই হবে ।
--ইয়ে মানে , আপনাকে আমার খুব পছন্দ । আমি আমার “ইয়ে” হবেন ।
আনিকা তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন করল , ইয়ে মানে কী ?
--আমি এবার লজ্জ্বা-শরম ভুলে বলেই ফেললাম, মানে প্রেমিকা আরকী ।
কথাটা বলেই আনিকার মুখ পাণে তাকিয়ে থাকলাম , কেমন প্রতিক্রিয়া হয় দেখতে । যদি অনাকাংখিত কিছু হয , তা এড়াবার জন্যও আমি প্রস্তুত ।এককথায় , সোজা দৌড় লাগাবো ।
যাই হোক ,
আনিকা আমার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো ,
--ছেলেটা দেখি খুব ইচড়েপাকা হয়েছে । তা এতটুকু যখন জানিস , তখনতো এও জানার কথা ,
প্রপোজ করতে গেলে , ফুল দিয়ে করতে হয় । তো আমার ফুল কই ?
আনিকার কথা শুনে , এতক্ষনের হালকা হার্টবির্টটা বেড়ে
ত্রিগুন হয়ে গেল ।
কী ঘটতে যাচ্ছে , বুঝতে উঠতে মিলি সেকেন্ডের মত সময় নিলাম । বললাম ,
--তুমি প্লিজ দাড়াও আমি এক্ষুনি তোমার জন্য একটা গোলাপ নিয়ে আসছি । প্লিজ একটু ওয়েট করো ।
ক্লাস থেকে বেরিয়ে এক দৌড়ে স্কুল গেইট পার হয়ে পাশের একটি বাড়ির ফুলের বাগানে ঢুকে পড়লাম ।
কিন্তু বিধিবাম । আমি ফুল চুড়ি অপরাধে ধরা পড়ে গেলাম । বাড়ির মালিকটি স্কুলের হেডমিসট্রেস কে নালিশ জানালো । আমায় অনেকগুলো বেত মারা হল । এবং সেই সংগে গার্ডিয়ান কল তো ছিলই । তারপর কী হয়েছিল শুনতে চান ?
আনিকা সাফ সাফ জানিয়ে দিলো , ফুল চোর ছেলের সাথে সে আর প্রেম করবেনা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮