somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের মুল্য, জীবনের মুল্য, ব্লগিংয়ের মুল্য

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

.
যাত্রাপথের কান্তি কাটানোর জন্য সহযাত্রী একজনের সাথে অল্প স্বল্প গল্প চলছে। ভদ্রলোক বলছিলো ছোটবেলায় স্কুলে স্যার সময়ের মুল্য রচনা লিখতের দিয়েছেন। সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না ইত্যাদি ইত্যাদি ধাপাই পানাই লিখে অবশেষে লিখলেণ জীবনের চেয়েও সময়ের মুল্য অনেরক বেশী। খাতা দেখতে গিয়ে স্যারের চোখ কপালে। ডেকে নিয়ে কান ধরে আদর করতে করতে বললেন ওরে গাধা জীবনের চেয়ে সময়ের মুল্য অনেক বেশী তাই না ! বলি জীবন যদি তোর না থাকে সময় দিয়ে কি করবি শুনি। স্যারের শক্ত হাত থেকে লাল হয়ে যাওয়া কান ফেরত নিয়ে ভাবতে লাগলেন তাই তো বিষয়টাতা আগে কখনো ভাবিনি।

স্যারের কথাটা খুবই সত্য তবে কাজের চাপে যখন সকাল সন্ধা দুইদিন নাওয়া খাওয়া ঘুম ভুলে যেতে হয় তখন মনে হয় ভদ্রলোক মোটেই মিথ্যে লিখেননি সে সময়। আসলেই কখনো কখনো সময়ের মুল্য হয়ে যায় জীবনের চেয়ে বেশী। সেই মুল্যবান সময় থেকে খানিকটা অবসর নিয়ে আবার কেউ কেউ আসেন ব্লগিং করতে। আমি তো অবাক হয়ে যাই। বিশেষ করে সংসার জীবনে ছোট বাচ্চাদের মাত্রা ছাড়া দুষ্টামী আর বিবিধ কাজের ভীড় দুহাতে ঠেলে যেসব নারী ব্লগাররা একটু সময়ের জন্য হলেও উকি দিয়ে যান তাদের আর কি বলব... সালাম বস্ সালাম।

ব্লগিংয়ের কথা বলছিলাম। আমার ব্লগিং সময় দেড় মাস পুর্তি হয়েছে বলা যায়। গত কয়েকদিন একটু কম হলেও প্রথম এক মাস লাগামহীন সময় নষ্ট করেছি। ব্লগিংয়ে আসার আগেও অনেকে লেখালেখির সাথে যুক্ত থাকেন, পাঠকের ভালো লাগা মন্দ লাগা অনুভুতির সাথে পরোক্ষভাবে পরিচয় থাকে অনেকেরই। তবে ব্লগিং ব্যাপারটা সম্পুর্ণ আলাদা। এই ”অলাদা”র টানেই ক্ষনে ক্ষনে লগড ইন হয়েছি। এলোপাতাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছি ব্লগ থেকে ব্লগে। ভাল লাগলে কমেন্ট করেছি। নিজের ব্লগে পোষ্ট করে অপেক্ষায় থেকেছি কেউ কমেন্ট করে কি না। হয়তো কেউ কিছু লিখেছে অমনি জবাব দেয়ার জন্য দ্বিগুন উৎসাহে ঝাপিয়ে পড়েছি কী বোর্ডের উপরে। আমার বালসুলভ আচরনে বিরক্ত কেউ কেউ। তবে আমি বেপরোয়া। নষ্ট করেছি মুল্যবান সময়। নষ্ট করেছি কি না সেটাই এখন পর্যালোচনার বিষয়।

আমার ব্লগ বাছাই কাহিনী।

এক.
ঈদের দিন সকালে পাজামা পাঞ্জাবী পড়ে ঈদের জামাতে যাবার জন্য প্রস্তুত। ভাবলাম একবার ব্লগে ঢু মেরে যাই। ঈদ মোবারক জানিয়ে যাই। সতীর্থ ব্লগারদের। কোরবানীর গরু জবাই নিয়ে কিছু ফাউল লেখালেখিতে ফ্রন্ট পেজ ভরে গিয়েছে । গ্রুপে ঢুকে দেখি একটা লেখা ” ঈদ মোবারক/ঝাপসা হয়ে যাওয়া স্মৃতি/ঝাপসা হতে থাকা স্বপ্ন” লিখেছেন মেহরাব শাহরিয়ার নামক একজন ব্লগার। দারুন একটা লেখা। ভীষন ভালো লাগলো। অনেকেই রেসপন্স করলো। আমিও নিজেও একটা কমেন্ট করলাম। পরেও কয়েকবার পড়েছি লেখাটা। সেদিন থেকে মেহরাব আমার প্রিয়দের একজন (খেয়াল করলে দেখবেন এই মুহুর্তে আমার লিংক তালিকায় মেহরাব আছে এক নম্বরে।)



দুই.
টিভি ব্যক্তিত্ব আব্দুন নুর তুষারের একটি লেখা ছিল শাহীনের কথার জবাব। আমি ভাবলাম শাহীন চট্টগাম এমন কি লিখলো যে স্বয়ং আব্দুন নুর তুষার জবাব দিতে বসে গেছেন। পড়বো পড়বো করে আর পড়া হয়নি। কয়েকদিন পরে দেখি শামসুজ্জামন সিদ্দীকি শাহীন নামে একটা লেখা এসেছে ফ্রন্ট পেজে। ব্লগাররা কমেন্টের শোরগোল তুলেছে। হু এতক্ষনে পরিস্কার হল। ব্লগে ঢুকলাম, পড়লাম, আর ভাবলাম এমনই হওয়া উচিত। এমন ভাল একজন লেখককে এতদিন পরে চিনলাম ! আমার শো কেসে শাহীনের লেখাটি আছে একোনো।

তিন.

মাদারীর লাল গাড়ি ও আমাদের লাল বালিকারা পড়তে গিয়ে জানলাম লাল গাড়ি ও লাল বালিকার স্বপ্ন নামে একটা পোষ্ট আছে নিধিরাম সর্দারের। একসময় পড়ব ভাবলেও আর পড়া হয়ে ওঠে নি। দুয়েকদিন আগে হঠাৎ কার পোষ্টে লিংক পেয়ে পড়ে ফেললাম। থ হয়ে ছিলাম কিছুক্ষন। চমৎকার একটা পোষ্ট অথচ নিধিরামের কমেন্টস পড়লে চিন্তা করা যায় না এত ভাল লেখা লেখতে পারেন। আমি একসময় চিন্তা করছিলাম। ইস, লোকটা যদি কমেন্ট করা ছেড়ে দিয়ে শুধু পোষ্ট করে যেতো।
কেউ যদি জোর করে তার মুখ বন্ধ করে দিতে পারত ! কি হতো নিধিরাম সর্দার কমেন্ট করা ছেড়ে দিলে ? অনেক কিছুই ঘটতে পারতো। হয়তো কমেন্ট না করতে পারলে তার পেটের ভাত হজম হতো না। এভাবে চলতে থাকলে একসময় প্রচন্ড বদহজম হতো তারপর হর হর করে যা উদগীরন করত তা নিধিরামের জন্য পেটের বিষ হলেও অনেক ব্লগারের জন্য হত চরম উপাদেয়। লোকজন তার ব্লগে হুমড়ি খেয়ে পড়ত কে কত আগে স্বাদ নিতে পারে তার জন্য।

ঘটনা আছে অনেক সময় বাচানোর জন্য কেবল এগুলোই লিখলাম। ব্লগে অবাধ ছোটাছোটি আর তড়পানি (অগ্রজ, অভিজ্ঞ ব্লগারদের ভাষায়) ফলাফল এমনই কিছু ভার্চুয়াল ইমেজের সাথে পরিচয় কি আত্বীয়তা। প্রিন্ট মিডিয়ার সুবাদে মাহবুব মোর্শেদ, ব্রাত্য রাইসু, আহমেদ ফারুক, জেবতিক আরিফদের লেখালেখির সাথে আগেই পরিচিত। একমাসে পরিচয় হলো আরো কতজনের সাথে। দেশের স্বার্থ সংল্ষ্টি বিষযে দারুন সোচ্চার মিরাজ। অনেকদিন পরে এসে একবার কাপিয়ে দিয়ে যান চতুরভুজ। নতুন ব্লগারদের উৎসাহ দিতে উম্মু আব্দুল্লাহর জুড়ি নেই। ঢাবি শিক্ষক ফাহমিদুল হকের সাথে হেড টু হেড ফাইট দিতে চান তারই ছাত্র আবাবিল। জামাল ভাস্করের ব্লগচারিতায় ব্যাপক পড়াশোনার আভাস আর মাথামোটার রসবোধে জমে ওঠা ব্লগ সবই আস্তে আস্তে ধরা দেয়। কাউকে শোকেসে তুলেছি। কাউকে লিক করেছি অনেককে চিনে যাচ্ছি এখনও।

সেদিন এক ব্লগারের ব্লগে ঢুকলাম অনেক আগ্রহ নিয়ে। বয়সে জুনিয়র কিন্তু ব্লগিংয়ের বয়স হয়তো অনেকের চেয়ে বেশী হবে। বাহবা দেয়ার মত নিজস্ব কিছু ভক্তও আছে। তবে ব্লগে নেড়ে চেড়ে দেখলাম কাজের কিছু নেই। প্রচুর পোষ্ট কিন্তু বেশীরভাগই হচ্ছে ভাইয়েরা কেমন আছেন, গান ডাউনলোড করতে চাই,বাংলাদেশ জিতে যাচ্ছে, আমাকে কেউ সাহায্য করবেন আমার ভাতিজার ছবি দেখেন, সখিনা তুমি কোথায় ইত্যাদি ইত্যাদি। পর পর তিন মাসের লিষ্ট দেখে আমি চরম হতাশ। আর কোন দিন তার ব্লগে ঢুকবো কি না সন্দেহ।

মুল্যবান সময়কে আর নষ্ট হতে দেয়া যায় না। তাই কাজের কাজ যারা করেন তাদের চিনে নিতে চাই। স্বল্প সময় নিয়ে লগড ইন হলেও বেশী আউটপুট প্রয়োজন। লিংক ধরে ঘুরে আসব আপন জগত। আরেকটু সুযোগ হলে চোখ বুলাবো ফ্রন্ট পেজে।

যারা আমার আজকের লেখা পড়বেন তারাও হয়তো প্রচুর সাজেশন্স দিতে পারবেন। সন্ধান দিতে পারবেন অনেক নিভৃতচারী কলমের। আত্বার আত্বীয়দের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাবে। সময় আর জীবনকে ছাড়িয়ে এটাই হোক ব্লগিংয়ের মুল্য।

পরবর্তী পোষ্ট: সবুজ চাদর ধুয়ে দিয়ে যাক বুড়িগঙ্গার শীতল স্রোত
২০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×