somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রেট জেনি মসজিদ: বিস্মৃত আফ্রিকার স্থাপত্য ঐতিহ্য

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গ্রেট জেনী মসজিদ একটি ভিন্ন দর্শন মাটির ভবন যা কিনা পৃথিবীব্যাপী সুদানো-সাহেলিয়ান স্থাপত্যের শেষ্ঠ্রতম নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত। মসজিদটি বানী নদীর বন্যা প্রবন সমতল এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে দৃশ্যমান কাঠামো আসলে ১৯০৭ সালের পুননির্মিত। তবে এর সূচনা বেশ অনেক আগে যার নির্ভরযোগ্য তারিখ পাওয়া যায়না।

১২শ সালের প্রথমদিকে তৎকালীন শাসনকর্তা কানবুরু ইসলাম গ্রহন করেন। তিনি নিজের রাজকীয় প্রাসাদ ছেড়ে দেন মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এবং এটাই আসলে মসজিদের সূচনা। ১৮৯৩ সালে সাংবাদিক ফেলিক্স ডুবোই শহরটি ভ্রমন করে আসল মসজিদের ধ্বংসস্তুপ সম্পর্কে বর্ননা দেন।


রেনে ক্যালির বর্ণিত পুরাতন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ

১৮১৮ সালে ফুলানী উপজাতি নেতা সেকু আমাদু মসজিদের দূরাবস্থা দেখে নতুন মসজিদের পরিকল্পনা করেন। বর্তমান মসজিদের সামনে স্থানীয় নেতাদের যে কয়েকটি সমাধি দেখা যায় এই সীমানা পর্যন্ত মুল মসজিদ বিদ্যমান ছিল। একই সময় আশে পাশের কিছু ছোট মসজিদ বন্ধ করিয়ে জেনি মসজিদকে কেন্দ্রিয় মসজিদের মর্যাদা দেন। এই মসজিদের উচ্চতা অনেক কম ছিলো এবং কোন ধরনের মিনারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

১৯০৬ সালে যখন মসজিদের বড় ধরনের মেরামতের প্রশ্ন আসে তখন মুল মসজিদের স্থলে পুনরায় মসজিদ নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেকু আমাদু যেখানে মসজিদ স্থানান্তর করেছিলেন সেটা ব্যবহৃত হতে থাকে মাদ্রাসা হিসেবে।


মসজিদের সম্মুখ দৃশ্য


মসজিদের একটি প্রবেশ পথ


১৯০৭ সালে মতান্বরে ১৯০৯ সালে এ কাজ শেষ হয়। ২৪৫ ফিট মাপের বর্গাকৃতির একটি ভিত্তির উপরে মসজিদটি নির্মান করা হয়েছে। এই ভিত্তি সাধারন ভূমি লেভেল থেকে প্রায় নয়ফুট উচু। বানী নদীর বন্যা থেকে বাঁচার জন্য এই ব্যবস্থা। চতুর্দিকে ছয়টি আলাদা সিড়ি দিয়ে এই উচু ভিত্তির উপরে উঠা যায়। সিড়িগুলো পিনাকলস দ্বারা অলংকৃত। ভবনের উত্তর দেয়ালে প্রধান প্রবেশ পথ। নির্মান ত্রুটির জন্যই হোক আর যায়গায় সহজলভ্যতার অভাবে হোক মসজিদের নকশা একদম সমকোনে করা যায়নি । চতুর্দিকের আউটলাইন একটু ট্যাপিজিয়াম ধাচের হয়ে পড়েছে।


সাধারন ভূমি থেকে প্রায় নয়ফুট উচ্চতায় মসজিদের ভিত্তি


মসজিদ কমপ্লেক্সের ত্রিমাত্রিক মডেল

আফ্রিকার কিবলা হচ্ছে পূর্ব। প্রজেক্টের পূর্ব অংশ হচ্ছে মুল মসজিদ আর পশ্চিম অংশ হচ্ছে অভ্যন্তরীন উঠোন মসজিদের পরিভাষায় যেটিকে শান বলা হয়। পশ্চিম গ্যালারী মহিলাদের জন্য নির্দিস্ট।পূর্ব দিকের কেবলমুখী দেয়ালের পুরুত্ব হচ্ছে তিন ফিট। এই দেয়ালকে মজবুত করার জন্য আঠারোটি পায়ার মত সংযুক্ত করা হয়েছে যার প্রত্যেকটির মাথায় একটি করে পিনাকেল। তিনটি টাওয়ার দেয়াল থেকে একটু বের হয়ে আছে। মাঝের টাওয়ারের বর্ধিত অংশে মেহরাবের অবস্থান।


মাটির তৈরী সীমানা প্রাচীর

উত্তর দক্ষিন বরাবর প্রলিম্বত কোনাকৃতির আর্চওয়ে সমৃদ্ধ নয়টি দেয়ালের উপর ভর দিয়ে বসানো হয়েছে মসজিদের ছাদ । মাটির দেয়াল হবার কারনে খুব বেশি জানালা দেয়ার সুযোগ হয়নি। দুটো সিড়ি সরাসরি ছাদে উঠে গেছে।এর একটি মসজিদ হলের দক্ষিন পশ্চিম কর্নারে এবং অপরটি উত্তর দেয়ালে প্রধান প্রবেশ পথে সংলগ্ন। দ্বিতীয়টিতে মসজিদের বাইরে থেকে সরাসরি প্রবেশ করতে হয়। ছাদের উপরে ছোট ছোট ছিদ্র ছিদ্র আছে যার মুখে মাটির কলসির মত পাত্র বসানো এবং এর মুখ ঢাকা। গরমের বাতাস বেড়োনোর জন্য প্রয়োজনে এর মুখ খুলে দেয়া যায়।


ছাদের উপরে বায়ু নিস্কাশনের ব্যবস্থা

গ্রেট জেনি মসজিদ আফ্রিকার স্থাপত্য চরিত্রে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। নির্মান সময়কালে মালি ফরাসী শাসনযন্ত্রের আওতায় ছিলো বিধায় এতে ফরাসী স্থাপত্যের একটা ছাপ পাওয়া যায়। কেউ কেউ একে আফ্রিকান স্থাপত্য বলে মেনে নেয়ার চেস্টা করলেও বাস্তবতা হচ্ছে মসজিদের বাহ্যিক দর্শনে ফরাসী স্থাপত্যের ছাপ যতটা স্পস্ট মুসলিম স্থাপত্য ততটাই উপেক্ষিত হয়।১৯১০ সালে ফেলিক্স ডুবোই যখন পুনরায় মসজিদ পরিদর্শনে আসেন তখন মসজিদের এই চেহারার পরিবর্তন দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন। তার দৃস্টিতে এটি ছিলো একটি দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ ।


মসজিদের অভ্যন্তরভাগ
গ্রেট মসজিদের দেয়াল রোদে পোড়া ইট এবং বালু ও এটেল মাটির মিশ্রনে তৈরী মসলার পলেস্তারা লাগানো হয়। দেয়ালের উপরের দিকে সারা গায়ে পাম গাছের গুড়ি বের করা থাকে। মেরামতের সময় বাঁশ, কাঠ দিয়ে মাচা বানানোর প্রয়োজন পড়েনা।


দেয়ালের গা জুড়ে পাম গাছের গুড়ি
মাটির মসজিদ মালির মুসলিম সমাজের দিনযাপনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ফরাসী উপনিবেশিকরা যখন এই স্থাপনা দেখে ভালো নির্মানর জন্য তারা অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয় কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এই মাটির স্থাপনা তাদের গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রতিবছর এর মেরামত উৎসবে অংশ নিতে পারাটা বরং তাদের জন্য উত্তম ও সম্মানজনক কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রথমে প্লাস্টার প্রস্তত করা হয়। উপরের অংশে কাজের জন্য একটি গ্রুপ ভবনের গায়ে চড়ে এবং নিচে থেকে মসলা তুলে দেবার জন্য আরেক গ্রুপ কাজ করে। জনপদের মহিলারাও বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহন করে।

১৯৮৮ সালে মসজিদসহ পুরো জেনি শহরটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষনা দেয়া হয়। মালিতে আরো কিছু মসজিদ আছে যা গ্রেট জেনি মসজিদের চেয়েও পুরাতন তবে নির্মান শৈলী এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারনে গ্রেট মসজিদটিই জেনি শহর এবং পুরো মালির জন্য বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২১
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×