somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব্দ বোমা

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সকাল চৌধুরী বাড়িতে একটা বোম পড়লো। সে যে-সে বোম না। একেবারে এটম বোমের চেয়েও ভয়ংকর। সে কি তার শব্দ। এরপর বাসা পুরো নিস্তব্ধ। সবাই হতবাক!!! এত বড় বোম!! তাও আবার চৌধুরী বংশে!! ভাবাই যায় না। চৌধুরী বাড়ি আমাদের পাড়ার একেবারে খান্দানি বাড়ি। সে ভদ্রতা, শিক্ষা, সভ্যতা, আচার ব্যবহার... যাই বলি না কেন। এক নামে সবাই চেনে। এই বাসায় কেউ কোন দিন কাউকে গালি দিতে শোনেনি। বাড়ির বুড়ো থেকে শুরু করে সবাই উচ্চ শিক্ষিত। কি নেই এই বাসায়? উকিল, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কলেজের প্রফেসর...। মোট কথা সবাই এক নামে এই বাড়ির লোকদের চেনে। বাড়ির লোক তো বটেই এমনকি গাছের ওপরে বসা পাখিও এই বাড়ির গাছে বসে চুপটি মেরে বসে থাকে। বাড়ির ভেতর খুব গম্ভীর একটা পরিবেশ। নাহিদের বন্ধুরা দু’একবার এসেছিল বাসায় ঘুরতে। পরে বাসা থেকে ফিরে গিয়ে নিজেরা প্রমিস করেছে খুব বেশি বিপদ না হলে তারা আর নাহিদের বাসায় যাবে না। পাড়ার ছোকড়া গুলো পর্যন্ত চাঁদা তুলতে গেলে বাংলা ডিকশনারি মুখস্ত করে যায়। তাও এমন সব কঠিন কঠিন প্রশ্ন করা শুরু করে দেয় ওদিক থেকে যে শেষ পর্যন্ত চাঁদার খাতা কলম টেবিলের ওপর ফেলেই দৌড়ে পালিয়ে বাঁচে।

এ হেন চৌধুরী বাড়ির বংশপ্রদীপ, বাড়ির একমাত্র বড় ছেলের একমাত্র পুত্র অর্ণব চৌধুরীর একমাত্র ছেলে ইমন, যার এই কদিন আগে খুব ঘটা করে দুইবছরের জন্মদিন পালন হল, সে কিনা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই তার মা বাবার দিকে তাকিয়ে এমন একটা শব্দ উচ্চারণ করলো যার কম্পনমাত্রা হিমালয় ছাড়িয়ে চলে গেল। বাড়িতে জরুরী মিটিং ডাকা হল... আর সবাইকে সেই মিটিং এ থাকা বাধ্যতামূলক করা হল। সবাই এল ভয়ে জড়সড় হয়ে। কি করে ইমন বাবু এই শব্দটা উচ্চারণ করলো তা নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত। শব্দটা হল “বাল”।

বাবা মা হতবাক এই ব্যকরণ বহির্ভূত শব্দ শুনে। ইমনের বাবা ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করা কার্ডিয়াক সার্জন। তিনি সকাল সকাল বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। ইমনের মা ঢাকা ভার্সিটির বাংলার লেকচারার। তারও মাথা ঘুরে গেল এই কথা শুনে। আর তার থেকেও বড় কথা এক কালের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য অর্ণবের বাবা, তার কানে যখন গেল এই কথা... যেন পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে গেল।চোখের সামনে দেখতে পেলেন তার নিজের হাতে লাগানো পেয়ারা গাছের পাতা পাশের বাসার রামছাগলটা আরাম করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে...সেটা দেখেও যেন দেখলেন না। ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন। অথচ গত পরশুই ছাগলটার লেজে আগুন লাগিয়ে দেবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। বাসায় কারো এই শব্দ উচ্চারণ করা তো দূরের কথা, চিন্তাও করার কথা না। কিন্তু কি করে এই দুই বছরের শিশু এই শব্দ শিখলো?? বাসার পরিস্থিতি বেশ গম্ভীর। বাসার চাকর বাকর, ড্রাইভার, মালি সবাইকে ডেকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হল। সবাই দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে।সবাই খুব চিন্তিত।শুরু হল জেড়া। অর্নব চৌধুরী একে একে করে সবার দিকে তাকাচ্ছেন। কে শেখাতে পারে? ওরা জানেনা কি এমন শব্দ যেটা শুনে সবাই এমন বোম হয়ে আছে।তাই ওরা সব চেয়ে বেশি চিন্তিত।

বাড়ির চাকর বাবু এই কদিন হল ক্লাশ ১০ এ উঠেছে। এই বাড়িতে সে ৫ বছর বয়স থেকেই আছে। এখানেই কাজ করে আর কাজের পাশাপাশি পাশের পাড়ার এক স্কুলে পড়াশুনা করছে। ওর ওপরেই দায়িত্ব ইমনের। তাই বাবুর ওপরেই ঝড়টা গেল সবার আগে। অর্ণব জিজ্ঞেস করলেন, “ দ্যাখ, বাবু, তোকে ছোট থেকে বড় করেছি। তোর ওপর আমার অনেক বিশ্বাস। আমি জানি তুই মিথ্যে বলিস না। সত্যি করে বল তো কে শিখিয়েছে ওকে এই শব্দ??” বাবু তো যেন আকাশ থেকে পড়লো... “ কি শব্দ স্যার?” অর্ণব তো মহা ঝামেলায় পড়ে গেলেন। কি করে এই শব্দ উচ্চারণ করবেন? এত বাজে শব্দ। তাই বুদ্ধি করে একটা কাগজে ছোট করে লিখে দিলেন শব্দটা। বাবু কাগজটা পড়ে একটু অবাক হয়ে বলল , “স্যার, আমি কেন এই অশালিন শব্দ ব্যবহার করবো? আমার কি বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে?” এই কথা শুনে অর্ণব বেশ শান্তি পেলেন। ছেলেটাকে তিনি নিজে হাতে পড়ান রোজ। ও এই রকম ভুল করতে পারে না। একে একে সবাই অস্বীকার করলো। কেউ এই শব্দ ব্যবহার করেনা। তাহলে কি করে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলো? বাবু রোজ বিকেলে ইমনকে নিয়ে পার্কে যায় খেলতে। নিশ্চই ওখান থেকে শিখেছে। অর্ণব তাই তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, আজ থেকে ইমনের পার্কে যাওয়া বন্ধ।

মিটিং শেষ। কিন্তু অর্ণব কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেন না। বারবার মাথায় শব্দটা ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকদিন আগে একবার মেডিকেলে পড়া অবস্থায় এক ছেলে তাকে “বালের ডাক্তার” বলে গালি দিয়েছিল। তখন খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তার। এই রকম একটা গালি দিল তাকে? স্কুলে থাকতে একবার এক বন্ধু এই শব্দটা বলেছিল। সেটার মানে জানতো না তখন সে। তাই তিনি খুব ভদ্র হয়ে বাংলার স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলেন এটার মানে। তখন স্যার ঠাস করে একটা চড় মেরে বলেছিলেন, আর কোনদিন এমন বেয়াদবি করলে বাসায় নালিশ চলে যাবে। এরপর তিনি খুব ভয়ে ভয়ে স্কুলের পিওনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিলেন এই শব্দটার মানে চুল। তবে মাথার চুল না। বিশেষ কোন জায়গার চুল। এরপর যখন তাকে ওই ছেলেটা “বালের ডাক্তার” বলে গালি দিয়েছিল তখন তিনি তিনদিন ঘুমাতে পারেননি। আজকে তার সেই সব দিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কত বড় সাহস!!! তার ছেলেকে মানুষ এই বাজে শব্দ শেখায়!! তাই তিনি ঠিক করে ফেললেন আজ তিনি ইমন আর বাবু কে নিয়ে পার্কে যাবেন। খুঁজে বের করবেন কে তার এত বড় সর্বনাশটা করলো।

বিকেলে ওরা তিনজন যখন পার্কে পৌঁছল তখন পার্কে বেশ ভিড়। অনেক বাচ্চা কাচ্চা একসাথে খেলছে। ইমন ছুটে গিয়ে তাদের সাথে ফুটবল খেলতে শুরু করে দিল। অর্ণব আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন সবাই তার পরিচিত। এরা সবাই অনেক ভালো বংশের লোক। এদের ছেলে মেয়েরাই খেলছে ইমনের সাথে। এদের কাছ থেকে কি করে শিখলো ইমন এমন বাজে কথা?? ছিঃ ছিঃ। ভাবতেই পারছেন না অর্ণব। এমন সময় পাশ থেকে হঠাত, “ আরে, ডাক্তার বাবু যে! আজ হঠাত পথ ভুলে এদিকে যে?” এই কথা শুনে নিতান্তই বিরক্ত হলেন অর্ণব। “কেন? আমার পার্কে আসা নিষেধ নাকি? হ্যাঁ?” লোকটাকে অর্ণব পছন্দ করেন না মোটেও। ব্যাঙ্কার পেশায়। খালি টাকা টাকা করে। তাই তিনি একে পছন্দ করেন না। লোকটা এমন অ্যাটাক আসবে আশা করেনি। আমতা আমতা করে বললো... “না মানে, আপনি তো রোগী পত্তর নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাদিন। তাই আর কি...” বলেই সটকে গেল। মেজাজ সকাল থেকে চড়া অর্ণবের। তার ওপর এমন খোঁচা মারা কথা শুনে আরো গেল বিগরে। তাই মাথা ঠান্ডা করার জন্য পাশে শরিফ সাহেবকে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলেন। লোকটা বেশ ভালো। কলেজের প্রফেসর। ইনি আর যাই হোক বাজে বকবেন না। তাই গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ শরিফ সাহেব, কি খবর? কেমন আছেন? আপনার বুকের ব্যথা কমেছে?” শরিফ সাহেব সাথে সাথে, “হ্যাঁ, ভালোই আছি এখন। আপনি কেমন আছেন? কেমন যেন বিমর্ষ দেখাচ্ছে আপনাকে? শরীর ভালো তো?” অর্ণব কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক তখনই ওই ব্যাঙ্কার লোকটা কোত্থেকে এসে বলে বসলো... “আরে, উনি ডাক্তার মানুষ। ডাক্তারদের আবার অসুখ করে নাকি? ডাক্তারদের অসুখ করলে আমাদের মত ছোট খাটো মানুষদের কি হবে? বাসায় বোধ হয় ঝগড়া হয়েছে, তাই আজ এ মুখো হলেন। কি ডাক্তার বাবু?”

এই শুনে অর্ণব আর মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না। এমন ঠ্যাস মারা কথা শুনে মাথায় রক্ত চড়ে গেল ডাক্তারের। অমনি ব্যাংকারের দিকে তর্জনী উঠিয়ে বললেন, “আপনার কি কাজ কর্ম নেই কোন? কি তখন থেকে বালের আজাইরা প্যাচাল পাড়ছেন? খুব বাল বোঝেন আপনি বুঝলেন? আপনি পুড়াই একটা বাল। একটা বড় সড় বাল... যত্তসব বালের কথা বলে...” যার উদ্দেশ্যে এই কথা গুলো বলা হল সে এক খানা খাবি খেয়ে “ছেঁড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি করে” কাচু মাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। পাশে দাঁড়ানো শরিফ সাহেব বিশাল এক ভিরমি খেয়ে মাথা নিচু করে ফেললেন। বাবু পাশে পাশে হাঁটছিল। সেও ভয় পেয়ে ছুটে গিয়ে ইমনের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। আর যাকে নিয়ে এত কিছু সে তার বন্ধুদের সাথে ফুটবল নিয়ে ছুটোছুটি করছে। সকালের বোমার চেয়েও বিশাল আকারের বোমা ফাটলো এখন পার্কে। স্বয়ং অর্ণব চৌধুরী, উরফ ডাক্তার সাহেব, নিজের নিক্ষেপ করা বোমায় নিজেই কাহিল হয়ে পাশের বেঞ্চে ধপাস করে বসে পড়লেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×