somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্রনন্দিনী... নহি দেবী, নহি সামান্যা নারী...

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৪শে আগস্ট, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। কজন মানুষ জানেন আমি জানিনা সেটা। এই দিবস হওয়ার পেছনে যে কারণ সেটাও বা ক’জন জানেন আমি জানিনা। আসলে আমিও জানতাম না অনেকদিন। ঘটনা সেই ১৯৯৫ সালে। আজ থেকে ২১ বছর আগের ঘটনা। তখন আমি ক্লাস টু তে পড়তাম। আমার সেই তখনকার কথা খুব একটা মনে পড়ে না। শুধু এত টুকু মনে পড়ে আমাদের স্কুল অনেক দিন বন্ধ ছিল। দিনাজপুরে তখন কার্ফিউ চলছিল। বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ ছিল। আমি ছোট মানুষ। কিছুই বুঝতাম না। শুধু খুব বড় কিছু একটা ঘটছে এটা বুঝতাম। যাই হোক বেশ কদিন চারপাশ বেশ গম্ভীর ছিল। এরপর আর একটু বড় হলাম, দেখতাম দিনাজপুরে প্রতি বছর এই দিনে অনেক মিছিল বেরোত। তখন মা বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ইয়াসমিন নামের একটা মেয়ে খুন হয়। কিছু খারাপ লোক তাকে মেরে ফেলে। এই জন্য প্রতি বছর অন্য কোথাও কি হয় জানিনা, কিন্তু দিনাজপুরে এই দিনে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। তখন কিছু খারাপ মানুষ কি করে মেরে ফেললো একটা মেয়েকে তা বুঝতে পারতাম না। এরপর আরো বড় হলাম। তখন জানতে পারলাম আসল ঘটনা।



১৩ বছর বয়সী মেয়ে ইয়াসমিন ঢাকা থেকে দিনাজপুরে ফিরছিল। বাসটি ঠাকুরগাঁ যাচ্ছিল। তাই বাসের স্টাফরা ভোর রাতে ইয়াসমিনকে দিনাজপুর- দশমাইল এর একটা চায়ের দোকানে বসিয়ে রেখে চলে যায় যেন সকাল হলে দিনাজপুরের বাসে তাকে তুলে দেয়া হয় এই বলে। এর কিছুক্ষন পর সেখানে আসে দিনাজপুর কোতয়ালি থানার পুলিশের গাড়ি টহল দিতে। সেখানে ইয়াসমিন কে দেখে তারা তাকে জোড় করে তুলে নিয়ে যায়। এরপরদিন ইয়াসমিন এর লাশ পাওয়া যায় একটা ভ্যান এর ওপর। ধর্ষন করে খুন করে তাকে ফেলে রেখে যায় তারা। এই ঘটনার পর দিনাজপুরে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মারা যায় অনেক আন্দোলনকারীরা। এরপর পুরো দেশেই প্রতিবাদ শুরু হয়ে যায়। দিনাজপুরের পরিস্থিতি সামলাতে হিমসিম খাচ্ছিল দিনাজপুরের পুলিশ বাহিনি। তখন ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি করা হয়। অনেক আন্দোলন এর পর অবশেষে অপরাধীদের বিচার হয়। ২০০৪ সালে তাদের ফাঁসি হয়।

এই কারণে প্রতি বছর ২৪ শে আগস্ট নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজ ২১ বছর পরেও এখন মাঝে মাঝে ভাবিয়ে তোলে, আসলে আমাদের এই সমাজে নারীরা ঠিক কতটুকু নিরাপদ? ইয়াসমিন হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা কি পরিবর্তন হয়েছে? তনু, সোমা সহ আরো কত কত মেয়েরা নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের বিচার হচ্ছে কি? জানিনা আমি, আমাদের দেশ ঠিক কতটুকু এগিয়েছে? এখন নারীরা ঠিক কতটুকু নিরাপদ এই ডিজিটাল যুগে? এই যে কদিন পর পর আমাদের দেশে এখানে সেখানে মেয়েরা নির্যাতিত হচ্ছে, কিন্তু তাদের বিচার হচ্ছে কোথায়? একটা ঘটনার নিচে আরেকটা ঘটনা চাপা পড়ে যায়। একটা খুনের নিচে আরেকটা খুনের ঘটনা ঢাকা পড়ে যায়। আমরা বাঙ্গালিরা আবার ভুলেও যাই। নতুন নতুন সংবাদে আমরা পুরোনো ঘটনাগুলোকে ভুলে যাই। তনু হত্যার সময় কদিন বেশ আলোচনা হল, এরপর সব ঠান্ডা। কোথায় গেল তাদের অপরাধীরা? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আচ্ছা এই যে, যে সব অপরাধীরা পায়ের ওপর পা তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা নারী দিবসে কি করে? তাদের বাসাতেও মা, বোন, বউ তো আছে। তারা নিশ্চয় কিছুটা হলেও বুঝতে পারে যে তাদেরই বাবা-ভাইরা এই অপরাধগুলো করছে। সেই মা- বোন-বউরা কি করে মেনে নিয়ে আছে?তাদের কি একবারও মনে হয় না যে খুনিদের তারা প্রশ্রয় দিচ্ছে, এদের শাস্তি হচ্ছে না বলে, ঘরে ঘরে আরো খুনির জন্ম হচ্ছে? আর সবচেয়ে অবাক লাগে আমার এটা ভাবলে, আমাদের দেশ চালাচ্ছে নারীরা। সে প্রধানমন্ত্রী হোক বা বিরোধি দলের নেত্রী। তারা থাকতেও আমাদের দেশে এই রকম অপরাধ চলছে তো চলছেই। কিন্তু তার কোন বিচার হচ্ছেনা, অপরাধীরা দিব্যি আইন ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। জানিনা কিভাবে এই পরিস্থিতি থেকে আমরা মুক্তি পাবো? কবে এইসব অপরাধীদের বিচার হবে। তবে আমি এটা মনে প্রাণে আশা করি, আমরা নিজেরা যদি শক্ত হই, অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করি, তাহলে হয়তো আমরাই এই সব অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারবো। শুধু তাই না, আমাদের সমাজকে কলুষিত হওয়ার থেকে রক্ষা করতে পারবো। আমাদের এখনও অনেক বাঁধা পেরোতে হবে। আমাদের হেরে গেলে চলবে না। আরো শক্ত হয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে। নাহলে প্রতি বছর ঠিক এভাবেই আমাদের দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×